উপজেলা নির্বাচনের পঞ্চম দফায় চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা৷ তাঁদের মতে, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের দুই যুগেরও বেশি সময়ের অর্জন প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷ এটা যেন রাজনীতি বিতাড়নের ভোট৷
বিজ্ঞাপন
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ বা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আগের চার দফা নির্বাচনের শেষের দুটি দফায় সহিংসতা, কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলেও সোমবারের পঞ্চম দফায় আরো নতুন কিছু মাত্র যোগ হয়েছে৷''
তিনি নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে জানান, ‘‘এবার কোথাও কোথাও আগেই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে৷ আবার কেন্দ্রে ঢুকে ভোটার অমোচনীয় কালি লাগানোর পর, তাঁকে আর ভোট দিতে দেয়া হয়নি৷ তাঁর ভোট দিয়েছেন অন্য কেউ৷ ভোটারদের ভোটদানে নিরুত্সাহিত করা হয়েছে৷ কিন্তু ভোটের বাক্সে ভোট ঠিকই পড়েছে৷ আবার এজন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘প্রকাশ্য সহিংসতার সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে ‘নীরব সন্ত্রাস'৷''
শুধু তাই নয়, ভোটাদের না আসতে দিয়ে ভোটের বাক্স ভরার এই প্রক্রিয়াকে নির্বাচন ব্যবস্থার ভয়াবহ ক্ষতি বলে মনে করেন তিনি৷ এটা ভোট বিমুখতা তৈরি করে৷ এছাড়া এর দায় নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷ তাঁর মতে, ভোট দানে ভোটারদের নিরুত্সাহিত করার এই পদ্ধতি গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিদায় দেয়ার একটা প্রক্রিয়া৷
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সামরিক শাসকদের আমরা আগে এই ধরণের নির্বাচনের জন্য দায়ী করতাম৷ তবে ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর কয়েকটি ঘটনা ছাড়া বাকি নির্বাচন ব্যবস্থায় একটা গ্রহণযোগ্যতা ফিরে এসেছিল৷ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল রেকর্ড পরিমাণ৷ কিন্তু সেই নির্বাচন আবার দূরে সরে যেতে শুরু করেছে৷ নির্বাচন হয়ে উঠছে একক কোনো দলের জন্য৷'' তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্য দিয়ে বিরাজনীতিকরণের একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ শুরু হয়েছে রাজনীতি বিতাড়নের কৌশল৷ ভোট আর রাজনীতি সবার না হয়ে একদলের হয়ে যাচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হতে পারে না৷''
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার যে রূপ নতুন করে প্রকাশ পেল তাতে মনে হয় যে, নির্বাচন কমিশনের হাতে তেমন কিছুই নেই৷ আর আজ্ঞাবহ সংস্কৃতির কারণে নির্বাচন কমিশনও তেমন কোনো কথা বলছে না৷ তারা একেই ‘মোটামুটি শান্তিপূর্ণ' নির্বাচন বলছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ আপাতত দেখা যাচ্ছে না৷ তবে যদি সবাই গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কথা ভাবেন, তাহলে হয়ত পরিস্থিতির উত্তরণ হতে পারে৷''
ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুরের ছবি
দশম জাতীয় নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সময় ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে৷ পাঁচ জানুয়ারি বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে হামলা, ভাঙচুর এবং জনপ্রতিক্রিয়ার কিছু ছবি পেয়েছে ডয়চে ভেলে৷ পাঠকের জন্য গ্যালারি আকারে সেসব ছবি প্রকাশ করা হলো৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মারধর
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন রাজশাহীর বাগমারায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষ চলাকালে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পেটায় বিএনপি সমর্থকরা৷ পাঁচ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের সময় বিরোধী দলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংঘর্ষে আহতকে সহায়তা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নির্বাচন চলাকালে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে সহায়তা করছেন অন্যরা৷ নির্বাচন চলাকালে একশো’র বেশি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ সহিংসতা এবং ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়ার কারণে ১৩৯টি ভোটকেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আগুনে পোড়া ভোট কেন্দ্র
নির্বাচনের দিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার আজিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
গাইবান্ধায় ভোট গ্রহণ চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় স্লোগান দিচ্ছে নির্বাচন বর্জন করা বিরোধী দলের সমর্থকরা৷ বিরোধী দলবিহীন রবিবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল৷ তাছাড়া এই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি মহলে প্রশ্ন উঠেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন পর্যবেক্ষণ থেকে বিরত থেকেছে৷
ছবি: Reuters
আহতকে সেবা
গাইবান্ধায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত এক ব্যক্তিকে ঘিরে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ রবিবারের নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বিরোধী দল বিএনপি ‘‘নির্বাচনের ফলাফল বাতিল ও ভোটের দিন সারা দেশে নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে’’ সোমবার সকাল ছ’টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে৷
ছবি: Reuters
ভোটকেন্দ্রে হামলা
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় তারা ভোটকেন্দ্রে রাখা ব্যালট বাক্স ভাঙচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
ভোটকেন্দ্রের সামনে আগুন
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যে আগুন ধরিয়ে দেয় নির্বাচন বিরোধীরা৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস
বগুড়ার একটি ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন বিরোধীরা হামলা চালানোর পর লাঠিসোঁটা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা৷ ঐতিহাসিকভাবে বগুড়া বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
সন্দেহভাজনকে আটক
বগুড়ায় একটি ভোটকেন্দ্রে হামলায় সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ নির্বাচন চলাকালে অনেক ভোটকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে নির্বাচন বিরোধীরা৷ এসময় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
বাদ যায়নি বাড়িও
বগুড়ার এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলা চালায় নির্বাচন বিরোধীরা৷ হামলার পর আগুনে পোড়া অবশিষ্টের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাওয়া যায় কিনা, তা খুঁজে দেখছেন সেই নেতার এক আত্মীয়া৷
ছবি: STRINGER/AFP/Getty Images
টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জে সড়কে টায়ার জ্বেলে অবরোধ সৃষ্টি করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা৷
ছবি: DW
আহত ভোটার
ঢাকায় বিরোধী দলের সমর্থকদের ছোড়া হাতে তৈরি বোমার আঘাতে আহত এক ভোটার৷ ভোট গ্রহণ চলাকালে নির্বাচন বিরোধীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে বোমা ফাটিয়েছে৷