জার্মানিতে প্রতিটি রাজ্য তাদের কোটা অনুযায়ী রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের নেয় এবং বসবাসের ব্যবস্থা করে থাকে৷ এই উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে একাধিক মারধোরের ঘটনার পর রাজ্যগুলি কেন্দ্রের কাছ থেকে আরো অর্থ দাবি করেছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানিতে শরণার্থী – অর্থাৎ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে এবং এ বছর তিন লাখে গিয়ে দাঁড়াতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ এর অর্থ, এই সব উদ্বাস্তুদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে রাজ্য সরকার এবং পৌরসভাগুলির খরচ বাড়বে৷ কাজেই তারা ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে আরো বেশি অর্থসাহায্য দাবি করছে৷ বিশেষ করে উদ্বাস্তু-শরণার্থীরা যখন কোনো রাজ্যে প্রথম এসে পৌঁছন, তখন তাদের প্রাথমিকভাবে রাখার জন্য আবাস তৈরির কাজে ফেডারেল সরকারের সাহায্য কামনা করা হচ্ছে৷
জার্মানিতে বাড়ি সমস্যায় অভিবাসীরা
অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ তবে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷এ সমস্যা জার্মানিতে বসবসারত তুর্কিদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়৷ কারণ জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ তুর্কি আছেন৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
অভিবাসী তুর্কিদের সমস্যা বেশি
জার্মানিতে অভিবাসীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ এগুলোর মধ্যে বাড়ির সমস্যাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে ধরা যেতে পারে৷ জার্মানিতে অভিবাসীদের মধ্যে তুর্কিদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি প্রায় ৪০ লাখ৷ কাজেই সমস্যাটাও ওদের ক্ষেত্রেই বেশি দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শীতকালে ঠান্ডায় কষ্ট পায়
তুর্কিদের সাধারণত বাসা ভাড়া দেওয়া হয় পুরনো এলাকায় বহু বছরের পুরনো বাড়িগুলোয়৷ সেই সব বাড়িতে হয়ত দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় না বা জানালা দিয়ে বাতাস ঢোকে বা খানিকটা খোলা থাকে৷ অথবা শীতকালে হিটার কাজ করে না, অর্থাৎ ঠান্ডায় কাটাতে হয়৷ বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলেও ঠিক করানো যায়নি৷ এভাবেই জানান তিন দশক আগে তুরস্ক থেকে জার্মানিতে আসা আহমেদ খালিফি৷
ছবি: DW/C. Ruta
বাড়ির অবস্থা অস্বাস্থ্যকর
আহমেদ খালিফির ছেলে আদেলের বাড়িতেও প্রায় একই সমস্যা৷ বাড়িটি ৪০ বছরের পুরনো হওয়ায় খুবই স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার এবং অস্বাস্থ্যকর৷ এ ব্যাপারে অবশ্য বাড়িওয়ালার মাথা ব্যথা নেই, কয়েকবার বলেও কোনো কাজ হয়নি৷
ছবি: DW/C. Ruta
অবশেষে নিজেই দায়িত্ব নেন
আবদাল ১৫ বছর এ বাড়িতে আছেন, কিন্তু একবারও রঙ করা হয়নি৷ আর সেকথা বাড়ির মালিককে কয়েকবার বলায় তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রয়োজনে তিনি যেন নিজেই এ কাজ করে নেন৷ তাই আবদাল এ কাজ ভালো না জানা সত্ত্বেও নিজেই করছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb
শীতের কথা ভেবে ভীত
একটি মাত্র ঘর আর সেখানেই বাচ্চাদের নিয়ে থাকেন আলিয়া৷ ঘরে যেসব জিনিসের জায়গা হয় না, সেসব জিনিস স্থান পেয়েছে বাড়ির বারান্দায়৷ কিন্তু শীতের সময় এসব প্রয়োজনীয় জিনিসের কি হবে – তা ভেবে অস্থির আলিয়া৷ এই অবস্থা অবশ্য শুধু আলিয়ার একার নয়৷
ছবি: DW/C. Stefanescu
অভিবাসীদের বেশি সন্তান
অভিবাসীদের বাড়ির বড় সমস্যা৷ তার কারণ, তাঁরা বড় শহরগুলোর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস করতে পছন্দ করেন৷ তাছাড়া জার্মানদের তুলনায় অভিবাসীরা কম রোজগার করেন এবং তাঁদের সন্তান সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাড়ি পেতেও অসুবিধা হয়৷ এছাড়া একই ধরণের বাড়ির জন্য জার্মানদের তুলনায় তাঁদের কাছে বেশি ভাড়াও চাওয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZB
বাড়ির অবস্থা করুণ
অভিবাসীদের বাসস্থান সমস্যা অবশ্য নতুন সমস্যা নয়৷ অভিবাসীরা যেসব এলাকায় থাকেন সেই পুরনো বাড়িগুলোকে ঠিকঠাক না করানোয়, দিনদিন সেগুলি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে৷ এই অবস্থা নিদিষ্ট কোনো শহরে নয়, প্রায় শহরেই এই একই অবস্থা৷
ছবি: Fars
আগুনে পরিবারের আট জনের মৃত্যু
প্রায় চার মাস আগে বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গের বাকনাং শহরে একটি বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইন ছিল বিপজ্জনক এবং একথা বারবার মালিককে বলার পরও তা ঠিক করা হয়নি৷ যার ফল হয় মর্মান্তিক৷ ঘর গরম বা পানি গরমের জন্য ব্যবহার করা হতো কাঠের চুল্লি৷ ঐ বাড়িতেই আগুন লেগে একজন তুর্কি মা তাঁর সাত সন্তানসহ মারা যান৷ ছবিতে বাকনাং শহরের কিশোর-কিশোরীরা মৃত পরিবারের প্রতি ফুল আর মোমবাতি দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাড়ি মালিকদের মত
বাড়িওয়ালাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, তুর্কি পরিবারগুলো অনেক বড়, সবসময় হৈচৈ লেগে থাকে এবং তেমন পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন নয়৷ আর সেজন্যই তাঁদের বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারে কিছুটা আপত্তি থাকে বাড়িওয়ালাদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তরুণদের ভিন্নমত
বয়স্ক অভিবাসীরা বাসস্থানের ব্যাপারে যতটা বৈষম্যের শিকার হন বলে মনে করেন, এই প্রজন্মের তুর্কিরা তেমনটা মনে করে না৷ সম্ভবত এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা জার্মান ভাষা ভালো জানার কারণেই এমনটা ঘটছে৷
ছবি: Suzheh.sub.ir
10 ছবি1 | 10
জার্মানির শহর ও পৌর এলাকা সমিতির তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, উদ্বাস্তুদের প্রাথমিক আবাসগুলি পুরোপুরি ভর্তি হয়ে গেছে এবং পৌর এলাকাগুলিকে নিজেদের প্রচেষ্টায় অন্যত্র জায়গা খুঁজতে হচ্ছে, যেখানে বাড়তি উদ্বাস্তুদের রাখা সম্ভব৷ অপরদিকে লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস পিস্টোরিউস ফেডারাল সরকারের প্রতি উদ্বাস্তুদের চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচের ভার নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ এছাড়া বর্তমান প্রণালীতে আমলাতন্ত্রের বাড়াবাড়ি আছে: উদ্বাস্তুরা ডাক্তারের কাছে যাবার আগে তাদের পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ‘‘চিকিৎসাপত্র'' নিতে হয়৷ এর পরিবর্তে উদ্বাস্তুদের সরকারি স্বাস্থ্য বিমা সংস্থাগুলির সদস্য করে নেওয়া উচিত বলে প্রস্তাব দেন পিস্টোরিউস৷
পিস্টোরিউস এছাড়া দাবি করেন যে, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনগুলির আরো তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন৷ একমাত্র লোয়ার স্যাক্সনি-তে এক লাখ চল্লিশ হাজার আবেদন এখনও পড়ে রয়েছে, বলে তিনি জানান৷ অথচ আবেদনকারীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনগুলি বিবেচনা করার জন্য আরো বেশি কর্মী দরকার৷ স্যাক্সনি-র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কুস উলবিশ-এর প্রস্তাব হলো: সরকার যখন বলেছেন যে, তিন মাসের মধ্যেই রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে – তখন চতুর্থ মাস থেকে উদ্বাস্তুদের আবাসনের ব্যয় কেন্দ্রীয় সরকারের বহন করা উচিত৷
সবুজ দল পৌর প্রশাসনগুলির প্রতি সরকারের তাৎক্ষণিক সাহায্য হিসেবে একশো' কোটি ইউরো দাবি করেছে৷ বামদলের মনোভাব হল, নানা বাধা সৃষ্টি করে উদ্বাস্তুদের স্রোত রোখার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই, বরং তাদের শীঘ্র ইন্টিগ্রেশন বা ‘‘অন্তর্ভুক্তি''-র জন্য সচেষ্ট হওয়া উচিত৷