কোনো উদ্বাস্তু জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবেন কিনা, সেটা অংশত নির্ভর করবে, কোন রাজ্যে তার বাস, সেটার ওপর – বলছে এক সমীক্ষা৷ সমীক্ষার এক রচয়িতা এর নাম দিয়েছেন ‘‘অ্যাসাইলাম লটারি''৷
বিজ্ঞাপন
কনস্টানৎস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা গত সোমবার তাদের সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন৷ দৃশ্যত জার্মানির সারলান্ড ও ব্রেমেন রাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলে, তা পাবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি: যথাক্রমে ৬৯ শতাংশ ও ৫৫ দশমিক ৭ শতাংশ৷ অ্যাসাইলাম পাবার সম্ভাবনা সবচেয়ে কম বার্লিন ও স্যাক্সনিতে: এই দু'টি রাজ্যে প্রতি চারজন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর মধ্যে একজনের আবেদন মঞ্জুর হয়৷
সমীক্ষাটির এক রচয়িতা হলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গেরাল্ড শ্নাইডার৷ বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে এই ব্যবধান দেখে তিনি এর নাম দিয়েছেন অ্যাসাইলাম লটারি৷
জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন বেড়েছে
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএএমএফ বলছে, মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Shkullaku
২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি
জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএএমএফ এর সবশেষ পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল মাসে মোট ৫৯,৬৮০টি আবেদন পড়েছে৷ মার্চ মাসে সংখ্যাটি ছিল ৫৮,৩১৫, অর্থাৎ ১,৩৬৫টি কম৷
ছবি: Brian Leli
শীর্ষে সিরিয়া
সবচেয়ে বেশি আবেদন করেছেন সিরিয়ার নাগরিকরা৷ ২৫,৭৯১ জন৷ অবশ্য মার্চ মাসে সংখ্যাটি ছিল সাড়ে সাত শতাংশ বেশি৷ ২৭,৮৭৮ জন৷
ছবি: Fotolia
প্রথম চার মাসেও শীর্ষে সিরিয়া
২০১৬ সালের প্রথম চার মাসে এক লক্ষ ১৬ হাজার ৮২৬ জন সিরীয় নাগরিক জার্মানিতে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ আর সব দেশ মিলিয়ে আবেদনের সংখ্যা দুই লক্ষ ৪৬ হাজার ৩৯৩ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/K. Nietfeld
ইরাকিদের সংখ্যা বেড়েছে
মোট হিসেবে সিরিয়ার পরেই আছে ইরাক৷ তবে সিরিয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের সংখ্যা এপ্রিলের চেয়ে মার্চে বেশি হলেও ইরাকের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো৷ অর্থাৎ মার্চের চেয়ে এপ্রিলেই বেশি ইরাকি আবেদন করেছেন৷ ৯,৫০৫ জন৷ মার্চে ছিল ৮,৯৮২ জন৷
ছবি: DW/R. Shirmohammadi
তৃতীয় স্থানে আফগানিস্থান
সিরিয়া ও ইরাকের পর তালিকায় তিন নম্বরে আছে আফগানিস্তান৷ এপ্রিলে ৮,৪৫৮ জন আফগান রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ মার্চ মাসের চেয়ে সংখ্যাটি ১১.৮ শতাংশ বেশি৷
ছবি: DW/Omid
জাতীয়তা জানা নেই
জাতীয়তা ‘অস্পষ্ট’ এমন আবেদনের সংখ্যা এপ্রিলে ছিল ১,২৯৯ জন৷ সংখ্যাটি মার্চ মাসে ছিল আরও বেশি৷ ১,৮৬৯ জন৷
ছবি: Reuters/A.Konstantinidis
পাঁচ নম্বরে ইরান
১,৯৮১ আবেদন নিয়ে তালিকায় ইরানের নাম আছে পাঁচ নম্বরে৷ ছয়-এ আছে আলবেনিয়া (১,১৮৮ জন)৷ পাকিস্তানি আবেদনের সংখ্যা ১,০৩৮; আর ইরিত্রিয়ার ১,১৫২৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Shkullaku
7 ছবি1 | 7
উদ্বাস্তুদের রাজ্য বাছার অধিকার নেই
উদ্বাস্তুরা জার্মানির যে রাজ্যে বাস করতে চান, ঠিক সেখানে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনপত্র দাখিল করার অধিকার তাদের নেই৷ ফেডারাল অভিবাসন ও উদ্বাস্তু দপ্তর বিএএমএফ বা ‘বাম্ফ' অ্যাসাইলাম দেওয়ার দায়িত্বে বটে, কিন্তু সে কাজটা সাধারণত আঞ্চলিক (অর্থাৎ রাজ্যের) ‘বাম্ফ' অফিসগুলিই সম্পন্ন করে থাকে৷
শ্নাইডার ও তাঁর যুগ্ম-লেখিকা লিজা রিডেল-এর প্রকাশিত জরিপে আরো দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন রাজ্যের অ্যাসাইলাম প্রদানের নীতি আরো একটি উপাদানের উপর নির্ভর করে: সেটি হল, আবেদনকারী কোন দেশ থেকে আসছেন, তার উপর৷ সিরিয়া থেকে আসা উদ্বাস্তুদের আবেদন গ্রাহ্য হবার হার জার্মানির ১৬টি রাজ্যে মোটামুটি এক; কিন্তু ইরাকি বা আফগানদের ক্ষেত্রে রাজ্য বিশেষে বিপুল ফারাক থাকে৷
নিম্ন স্যাক্সনি হলো উত্তর-পশ্চিম জার্মানির সবচেয়ে বড় রাজ্য; সেখানে ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল অবধি ইরাক থেকে আসা ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশ উদ্বাস্তুর অ্যাসাইলামের আবেদন মঞ্জুর হয়েছিল৷ সেক্ষেত্রে জার্মানির পূর্বাঞ্চলের স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যে এর মাত্র অর্ধেক ইরাকি অ্যাসাইলাম পান৷ জার্মানির বৃহত্তম রাজ্য নর্থ রাইন-ভেস্টফালিয়াতে আফগান অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ জার্মানিতে থাকার অধিকার পান৷ ব্রান্ডেনবুর্গে এই অনুপাত ছিল মাত্র ১০ শতাংশ৷
অ্যাসাইলামের আবেদন নামঞ্জুর হলে জার্মানি ত্যাগ বা জার্মানি থেকে বহিষ্কারের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রাজ্যের নীতি আলাদা৷ সম্প্রতি আফগানিস্তানকে ‘‘নিরাপদ'' দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে কিনা এবং সেখানে উদ্বাস্তুদের ফেরত পাঠানো যাবে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক চলেছে৷
স্থানীয় মনোভাবের প্রভাব?
‘বাম্ফ'-এর আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তাদের উপর স্থানীয় মানুষজনের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত মনোভাবের প্রভাব পড়ে, বলে শ্নাইডার ও রিডেলের ধারণা৷ যে রাজ্যে বহিরাগত বিদ্বেষ ও বিদেশিদের আবাস ইত্যাদির উপর আক্রমণ যত বেশি, সে রাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ হওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি – দেখেন তারা৷
এসি/ডিজি (এএফপি, কেএনএ)
ইউরোপে শরণার্থী সংকট কীভাবে শুরু হয়েছিল?
মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় সহিংসতা বৃদ্ধি থেকে ইউরোপের অসংলগ্ন শরণার্থী নীতি অবধি ইউরোপে শরণার্থী সংকটে কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
যুদ্ধ এবং দারিদ্র্যতা থেকে পালানো
২০১৪ সালের শেষের দিকে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চতুর্থ বছরে পা দেয়ার প্রাক্কালে এবং দেশটির উত্তরাঞ্চলে তথাকথিত ‘ইসলামিট স্টেট’-এর বিস্তার ঘটার পর সিরীয়দের দেশত্যাগের হার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়৷ একইসময়ে সহিংসতা এবং দারিদ্র্যতা থেকে বাঁচতে ইরাক, আফগানিস্তান, ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া, নিগার এবং কসভোর অনেক মানুষ ইউরোপমুখী হন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সীমান্তের ওপারে আশ্রয় খোঁজা
সিরীয় শরণার্থীদের অধিকাংশই ২০১১ সাল থেকে সে দেশের সীমান্ত সংলগ্ন তুরস্ক, লেবানন এবং জর্ডানে আশ্রয় নিতে শুরু করেন৷ কিন্তু ২০১৫ সাল নাগাদ সেসব দেশের শরণার্থী শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যায় এবং সেখানকার বাসিন্দারা সন্তানদের শিক্ষা দিতে না পারায় এবং কাজ না পাওয়ায় এক পর্যায়ে আরো দূরে কোথাও যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পায়ে হেঁটে লম্বা পথ পাড়ি
২০১৫ সালে ১৫ লাখের মতো শরণার্থী ‘বলকান রুট’ ধরে পায়ে হেঁটে গ্রিস থেকে পশ্চিম ইউরোপে চলে আসেন৷ সেসময় ইউরোপের শেঙেন চুক্তি, যার কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অধিকাংশ দেশের মধ্যে ভিসা ছাড়াই চলাচাল সম্ভব, নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ কেননা শরণার্থীরা গ্রিস থেকে ধীরে ধীরে ইউরোপের অপেক্ষাকৃত ধনী রাষ্ট্রগুলোর দিকে আগাতে থাকেন৷
ছবি: Getty Images/M. Cardy
সমুদ্র পাড়ির উন্মত্ত চেষ্টা
সেসময় হাজার হাজার শরণার্থী ‘ওভারক্রাউডেড’ নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে শুরু করেন৷ লিবিয়া থেকে ইটালি অভিমুখী বিপজ্জনক সেই যাত্রায় অংশ নিতে গিয়ে ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সাগরে ডুবে যায় অন্তত আটশ’ মানুষ৷ আর বছর শেষে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার হাজার৷
ছবি: Reuters/D. Zammit Lupi
সীমান্তে চাপ
ইউরোপের বহির্সীমান্তে শরণার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় কয়েকটি রাষ্ট্র চাপে পড়ে যায়৷ হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া, ম্যাসিডোনিয়া এবং অস্ট্রিয়া এক পর্যায়ে সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷ শুধু তাই নয়, সেসময় শরণার্থী আইন কঠোর করা হয় এবং শেঙেনভুক্ত কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে৷
ছবি: picture-alliance/epa/B. Mohai
বন্ধ দরজা খুলে দেয়া
জার্মান চ্যান্সেল আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সমালোচকরা মনে করেন, তাঁর ‘ওপেন-ডোর’ শরণার্থী নীতির কারণে বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে অনেক শরণার্থীই ইউরোপে আসতে উৎসাহ পেয়েছেন৷ এক পর্যায়ে অবশ্য অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমান্ত পথ নিয়ন্ত্রণ শুরু করে জার্মানিও৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি
২০১৬ সালের শুরুতে ইইউ এবং তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি হয়৷ এই চুক্তির আওতায় গ্রিসে আসা শরণার্থীদের আবারো তুরস্কে ফিরিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়৷ তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই চুক্তির বিরোধিতা করে৷ নভেম্বর মাসে অবশ্য তুরস্কের ইইউ-তে প্রবেশের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা স্থগিত ঘোষণার পর, সেই চুক্তি আবারো নড়বড়ে হয়ে গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
পরিস্থিতি বদলের কোনো লক্ষণ নেই
ইউরোপজুড়ে অভিবাসীবিরোধী মানসিকতা বাড়তে থাকলেও সরকারগুলো সম্মিলিতভাবে শরণার্থী সংকট মোকাবিলার কোনো সঠিক পন্থা এখনো খুঁজে পাননি৷ কোটা করে শরণার্থীদের ইইউ-ভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্রে ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চলমান সহিংসতার ইতি ঘটার কোনো লক্ষণও নেই৷ ওদিকে, সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে শরণার্থীদের মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে৷