বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সবসময়ই একে অপরের অ্যান্টি ন্যারেটিভে কাজ করেছে৷ তারা একে অপরকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে৷ এটাই দেশটির সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দুর্বলতা৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ কি চৈনিক গণতন্ত্রের পথে হাঁটছে? অর্থাৎ, দল অনেক, কিন্তু নেতা এক৷ এবারের নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থীরা যেমন দলের সভাপতির দোয়া-আশীর্বাদ কামনা করে লড়াই করলেন, তেমনি লাঙল বা ঈগল প্রার্থীরাও নৌকার দলের সভাপতিরই আশীর্বাদ চাইলেন৷ ফলে চায়ের কাপের আড্ডায় কেউ একজন যখন চৈনিক গণতন্ত্রের সঙ্গে হুট করে তুলনা করে বসলেন, তখন একটু নড়েচড়ে বসতেই হয়৷
ঊনিশ শতকে চীনের গণতন্ত্র নিয়ে কাঁটাছেড়া হয়েছে ঢের৷ দেশটির নাম গণপ্রজাতন্ত্রী চীন৷ গণচীন বলে থাকেন অনেকে৷ চীনের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় গণ কংগ্রেস চীনের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার সর্বোচ্চ সংস্থা৷ গণ কংগ্রেসের স্থানীয় পর্যায়ের সদস্যেরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন৷
দেশটির বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, চীন একটি সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র এবং একটি জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব৷ চীনা কমিউনিস্ট পার্টি বা সিসিপি সরকার চালানোর দায়িত্বে৷ রাজনীতি বিশ্লেষকেরা চীনকে কর্তৃত্ববাদী একদলীয় বা স্বৈরাচারী রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করলেও সেখানে আটটি ছোট রাজনৈতিক দল আছে৷ এসব দল বৈধ৷ তবে তারা সিসিপির রাজনৈতিক বিরোধিতা করতে পারে না এবং তাদের সিসিপির প্রাধান্য মেনেই রাজনীতি করতে হয়৷
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট অনেক ভিন্ন৷ বাংলাদেশের সংবিধান এমন কর্তৃত্ববাদী অধিকার কোন দলকে দেয় না৷ তবে নির্বাচনে অংশ নেয়া দলগুলোর সরকারি দলের পোষ্যতা শিকার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর নামে সরকারি দলের লোকেরাই সংসদ বিরোধিতার একটি কাঠামো তৈরি করলে সেই সংসদের দিকে তাকিয়ে কেউ যদি একে চৈনিক গণতন্ত্রের বাংলাদেশি মডেল বলে ফেলে তাকে দোষ দেয়া যাবে না৷
এরশাদের পতনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠে জনতার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, ১৯৯১-তে গণতন্ত্র ফেরার পর ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে বিজয়ী সরকারের পতনের আন্দোলন, কিংবা ২০০১ ও ২০০৮ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনগুলো সহিংসতা বা পেশীশক্তির প্রদর্শনের মঞ্চ হলেও সেগুলো জনগণের অংশগ্রহণে একটি আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক উৎসব ছিল৷ কিন্তু এরপর কী হলো?
২০১১ বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বড় টার্নিং পয়েন্টের বছর৷ সে বছর বদলে গেল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা৷ চলতি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল সে বছর থেকে৷ আর তার বিরোধিতা করে মুখে ফেনা তুলল আওয়ামী লীগের বিরোধী দলগুলো৷ বিএনপি নির্বাচন বর্জন করল৷
বাংলাদেশে ১২ সংসদ: সরকার, বিরোধী ও গণতন্ত্র
কখনো সংসদে নেই বিরোধী দল, কখনো নেই নির্বাচনেই। কখনো নামকাওয়াস্তে বিরোধী দল, কখনো একই দল বিরোধী এবং সরকারের ভূমিকায়। নির্বাচনে নানা ধরনের নাটকীয়তার তথ্য জানুন ছবিঘরে।
ছবি: AFP
১৯৭৩: প্রথম সংসদে ছিল না বিরোধী নেতা
৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩ আসনে জয় পায় আওয়ীমী লীগ। জাসদ একটি, জাতীয় লীগ একটি এবং স্বতন্ত্ররা পান পাঁচটি আসন। ভোট পড়েছিল ৫৪.৯। উল্লেখযোগ্য আসন না থাকায় ছিলেন না কোনো বিরোধী দলীয় নেতা। সেই সময় সাতজন সংসদ সদস্য বিরোধী দল গঠনের দাবি করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা প্রত্যাখ্যান করেন। আড়াই বছর পর সংসদ ভেঙে দিয়ে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার প্রবর্তন করা হয়, গঠন করা হয় একক দল বাকশাল।
৫১.৩% ভোটার উপস্থিতিতে নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে গঠিত বিএনপি ২০৭ আসন জিতে সরকার গঠন করে। ৫৪ আসন জিতে আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান নেয়, দলের সভাপতি আসাদুজ্জামান খান হন বিরোধী নেতা। মুসলিম লীগ ২০টি, জাসদ ৮টি এবং অন্যান্য দল পায় ১০টি আসন। ১৯৮১ সালে সেনা কর্মকর্তাদের হাতে জিয়াউর রহমান নিহত হন। ১৯৮২ সালের মার্চের পর দ্বিতীয় সংসদ ভেঙে দেয়া হয়, ক্ষমতা দখল করেন সেনাপ্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ।
ছবি: imago/Belga
১৯৮৬: বিএনপির বর্জন, বিরোধী আওয়ামী লীগ
নিজের দল জাতীয় পার্টি গঠন করে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন এরশাদ। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আর জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬১.১%। আন্দোলনের মুখে ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭ সালে এই সংসদ বাতিল করেন এরশাদ।
ছবি: imago/Xinhua
১৯৮৮: প্রধান বিরোধীদের বর্জন, সম্মিলিত বিরোধী দল
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ প্রায় সবকয়টি প্রধান বিরোধী দল এরশাদের অধীনে নির্বাচন বয়কট করে। জাতীয় পার্টি পায় ২৫১টি আসন। বেশ কয়েকটি নতুন তৈরি হওয়া দলের হয়ে নির্বাচিত হয়ে আসা সংসদ সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয় ১৯ সদস্যের সম্মিলিত বিরোধী দল। কম্বাইন্ড অপজিশন পার্টি-কপ নামের ওই বিরোধী দলের নেতা করা হয় আ স ম আবদুর রবকে। নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৫২.৫%।
ছবি: bdnews24.com
১৯৯১: নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন
ব্যাপক আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন এরশাদ। সংবিধানে তখনও ছিল না নিরপেক্ষ সরকারের বিধান। কিন্তু সব দলের সম্মতিতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয় নির্বাচন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি জয় লাভ করে ১৪২ আসনে, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পেয়ে সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা পায়, বিরোধীদলীয় নেতা হন শেখ হাসিনা। নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৫.৪%। এছাড়া, জাতীয় পার্টি ৩৫ এবং জামায়াতে ইসলামী পেয়েছিল ১৮টি আসন।
ছবি: Getty Images/AFP/FARJANA K. GODHULY
১৯৯৬: আবার বর্জন, বিরোধী নেতা বঙ্গবন্ধুর খুনি
এই নির্বাচন বেশি পরিচিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নামেই। অধিকাংশ বিরোধী দল নির্বাচনটি বর্জন করে, ভোটদানের হার ছিল মাত্র ২১%। বিএনপি জিতেছিল ২৭৮ আসনে। ফ্রিডম পার্টির হয়ে একটি আসন জিতেছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশিদ৷ স্বতন্ত্ররা জয়ী হয়েছিলেন ১০ আসনে। বাকি ১১টির মধ্যে ১০টি আসনের ফলাফল ‘অসমাপ্ত' থাকে ও আদালতের রায়ে একটি আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
ছবি: Getty Images
১৯৯৬: তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন
আগের সংসদ টিকেছিল মাত্র ১১ দিন। ব্যাপক আন্দোলনের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে ১২ জুন দেয়া হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৪৬ আসনে জেতে আওয়ামী লীগ, ১১৬ আসন পায় বিএনপি। ৩২ আসন পাওয়া জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ, বিরোধী দলের নেতা হন খালেদা জিয়া।
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
২০০১: জোটের নির্বাচনে বিএনপি
এটি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বিতীয় নির্বাচন। ১৯৯৯ সালেই জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোটকে সঙ্গে নিয়ে চার দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। এরশাদ জোট ত্যাগ করলেও নাজিউর রহমান মঞ্জু জাতীয় পার্টির একটি অংশ থেকে যায় জোটে। বিএনপি একাই ১৯৩ আসনে জয় পায়, ইসলামী ঐক্যজোট ২টি এবং জামায়াত পায় ১৭ আসন। আওয়ামী লীগ পায় ৬২ আসন। বিএনপির সঙ্গে সরকারে যোগ দিয়েছিল জামায়াত।
সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ায় বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে আওয়ামী লীগ। রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী, গঠিত হয় সেনাসমর্থিত সরকার। গ্রেপ্তার করা হয় শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়াকে, অভিযোগ ওঠে এই দুই নেতাকে রাজনীতি থেকে বাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। মহাজোট গঠন করে আওয়ামী লীগ পায় ২৩০, জাতীয় পার্টি পায় ২৭ আসন। চার দলীয় জোটে বিএনপি পায় ৩০ আসন।
ছবি: picture-alliance/dpa
২০১৪: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা
বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। কোনো প্রতিপক্ষ না থাকায় ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ফলে নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন নিশ্চিত ছিল আওয়ামী লীগের। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি পায় ৩৪ আসন। এই সংসদে জাতীয় পার্টি একই সঙ্গে ছিল বিরোধী দল এবং সরকারে। রওশন এরশাদ হন সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা, মন্ত্রিসভায় ছিলেন তার দলেরই তিন জন।
ছবি: picture-alliance/AP Photo
২০১৮: বিএনপির অংশগ্রহণ, ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ
বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে একটি রাজনৈতিক ঐক্য গঠন করা হয়। এরশাদ বারবার মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গেই নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জোটসঙ্গীরা ২৮৮টি আসন পায়। আর বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র সাতটি। ২০১৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিরোধী নেতা ছিলেন এরশাদ, এরপর তার স্ত্রী রওশন এরশাদ।
২০২৪: ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্বতন্ত্র
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এত স্বতন্ত্র প্রার্থী কখনো নির্বাচিত হননি। আওয়ামী লীগ জিতেছে ২২২ আসন, স্বতন্ত্ররা ৬২ আসন এবং জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১ আসনে। বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জন করা নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসাবে লড়াই করে জয়ী হওয়াদের বেশিরভাগই বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা। দুটি আসনে নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। এবারও জাতীয় পার্টিই বিরোধী দল হবে, নাকি স্বতন্ত্ররাই জোট করবেন তা এখনো জানা যায়নি।
ছবি: Press Information Department of Bangladesh
12 ছবি1 | 12
আজকে যে ২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে এত কথা হচ্ছে, একটি অভূতপূর্ব নির্বাচনের মাধ্যমে চৈনিক গণতন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করতে হচ্ছে, তার ভিত ২০১১৷ আর ২০১১-এর ভিত ২০০৬৷ কারণ নির্বাচন একটা প্রতিযোগিতা৷ সেই প্রতিযোগিতায় সবাই জিততে চায়৷ তাতে কোন সমস্যা নেই৷ সমস্যা হলো জিততে চাওয়ার প্রক্রিয়াটি নিয়ে৷ ২০০৬ সালে প্রচলিত ইয়াজউদ্দিনের সরকার গঠন ও আওয়ামী লীগের লগি বৈঠার আন্দোলন এবং এর ফলে একটি সেনা সমর্থিত অগণতান্ত্রিক সরকারের ‘রাজনীতি সংস্কার'-এর প্রচেষ্টা হলো৷ সেই সময়টা আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের নেতাদেরই কাল হলো৷ তাই ২০১১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলেরই স্বস্তি পাওয়ার কথা৷ কিন্তু তা হলো না৷ সরকারে থাকায় আওয়ামী লীগ নিজ সরকারের অধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সমস্ত সুযোগ পাবে বলে খুশি হলো৷ উলটো দিকে এমন সিদ্ধান্ত মানল না বিএনপি৷
সে সময় ‘ট্রেন ছেড়ে গেছে' বা ‘এক চুল নড়ব না' এমন হুমকি ধমকিতে হাসিনা-খালেদা রাজপথ গরম রাখলেন৷ বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করল বিএনপি৷ তাতে অভূতপূর্ব নির্বাচনের প্রথমটি দেখল দেশ৷ ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাশ করলেন৷ সে সময় বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে, বা এক দাবিতে অটল না থেকে, এবং আওয়ামী লীগ এক চুল সরে না আসার পরিস্থিতি তৈরি না করে নির্বাচনকালীন সরকারের একটিসঠিক রূপরেখা নিয়ে দুই দল গঠনমূলক আলোচনা করে তার অধীন নির্বাচন করলে আজকে এই চৈনিক গণতন্ত্রের বাংলাদেশ মডেলের কথা শুনতে হতো না৷
এরপর এল ২০১৮৷ ‘রাতের ভোটের' এই নির্বাচনে ৯৬ ভাগ আসন পেল আওয়ামী লীগ৷ বিপুল কারচুপির অভিযোগ এলো৷ বিএনপি এবার অংশও নিল৷ কিন্তু মাত্র ছয়টি আসন কোনোভাবেই বিএনপিকে প্রতিনিধিত্ব করে না৷ বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল৷ ২০২৪ সালেও তাই তারা নির্বাচনে না যাবার সিদ্ধান্ত নিল, যদি তাদের এক দাবি প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের পদত্যাগ না মানা হয়৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনের সমালোচনা ও বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চার পথ সংকুচিত হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের চাপের কারণে এবার ভোট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা জরুরি হয়ে পড়েছিল নির্বাচন কমিশন ও সরকারের জন্য৷ সে জায়গায় তাদের জন্য সবচেয়ে বড় অসুবিধা হত বিএনপি নির্বাচনে এলে৷ এক দফা দাবিতে আগের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ধারাবাহিকতায় ২৮ অক্টোবরও সমাবেশ করলো তারা৷ কিন্তু সেখানে সহিংসতার ঘটনা বদলে দিল পুরো চিত্র৷ বিএনপির হাজার হাজার কর্মীকে জেলে দিয়ে, শীর্ষ নেতাদের আটকে আওয়ামী লীগ পরিষ্কার করে দিল যে বিএনপিকে তারা নির্বাচনে চায় না৷ অথচ বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি এবার নির্বাচনে এলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ যেমন আরো বাড়ত এই নির্বাচনে, তেমনি আওয়ামী লীগও আরেকটি অভূতপূর্ব নির্বাচনের মডেল তৈরি করতে পারত না, যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও তাদের নেতার নাম নেন, বিরোধীরাও নেন আর দলের মনোনীত প্রার্থীরাতো নেনই৷
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরের দলগুলোরও দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পাচ্ছে৷ জাতীয় পার্টি নখদন্তহীন পোষ্য দল হয়ে উঠেছে৷ বাকি দলগুলোরও কমবেশি একই অবস্থা৷ তাই আজ চৈনিক কর্তৃত্ববাদের বাংলাদেশি মডেল দৃশ্যমান৷ এর দায় সরকারি-বিরোধী সব দলেরই৷