ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর গোটা ইউরোপকে ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ সম্পর্কে কড়া অবস্থান নেবার ডাক দিলেন অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুয়র্ৎস৷ তাঁর মতে, এই মতাদর্শ ইউরোপীয় মূল্যবোধের জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
সেবাস্টিয়ান কুয়র্ৎস মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আরও কড়া মনোভাব নিয়ে ‘রাজনৈতিক ইসলাম’-এর মোকাবিলা করতে হবে৷ জার্মানির ‘ডি ভেল্ট' সংবাদপত্রকে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সহিষ্ণুতা সম্পর্কে ভুল ধারণা শীঘ্র দূর হবে বলে তিনি আশা করেন৷ তাঁর মতে, ‘রাজনৈতিক ইসলাম' স্বাধীনতা ও ইউরোপীয় জীবনধারার জন্য কতটা বিপজ্জনক, ইউরোপের সব দেশ তা বুঝছে৷ অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কড়া হাতে ইসলামি সন্ত্রাস এবং সেই সমস্যার রাজনৈতিক ভিত্তি, অর্থাৎ ‘রাজনৈতিক ইসলাম’-এর মোকাবিলা করতে হবে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এবং অন্য কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তিনি বিষয়টি সমন্বয় করছেন, বলেন কুয়র্ৎস৷ অস্ট্রিয়া আসন্ন ইইউ শীর্ষ সম্মেলনগুলিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিচ্ছে৷
‘রাজনৈতিক ইসলাম’ ভাবধারার বিরুদ্ধে সংগ্রামের ডাক দিলেও অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর একাধিক টেলিভিশন ভাষণে দেশে ঐক্যের ডাক দেন৷ তাঁর মতে, শত্রু হিসেবে ‘ইসলামিস্ট টেররিজম’ শুধু মৃত্যু ও কষ্ট দিতে চায় না, সেইসঙ্গে সমাজেও বিভাজন ঘটাতে চায়৷ তাঁর মতে, বিষয়টিকে মোটেই খ্রিস্টান ও মুসলিম অথবা অস্ট্রিয়ার মানুষ ও অভিবাসীদের মধ্যে সংঘাত হিসেবে দেখা উচিত নয়৷ সে বিষয়ে সচেতন থাকার ডাক দেন তিনি৷
মঙ্গলবারই তথাকথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী ভিয়েনার হামলার দায় স্বীকার করেছে৷ আইএস জানিয়েছে, গোষ্ঠীর মুখপাত্র বলে পরিচিত ‘আমাক’ নিহত আততায়ী আইএস মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই হামলা চালিয়েছে৷ সেইসঙ্গে আইএস নেতার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে আতাতায়ীর একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে আমাক৷ অস্ট্রিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, আততায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, এমন সন্দেহের বশে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে৷ সুইজারল্যান্ডেও দুই ব্যক্তিকে একই কারণে আটক করা হয়েছে৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, ডিপিএ)
মুসলিম বিশ্বে ফ্রান্সের গির্জায় হত্যার প্রতিবাদ
মুসলিম বিশ্বেও চলছে নিস শহরে ছুরি মেরে তিনজনকে হত্যার ঘটনার প্রতিবাদ৷ ছবিঘরে দেখুন কী বলছে মুসলিম বিশ্ব...
ছবি: Serge Haouzi/Xinhua/picture alliance
কী ঘটেছিল?
ফ্রান্সের নিস শহরের এক গির্জায় ছুরি হামলায় তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন৷ আহত হয়েছেন কয়েকজন৷ তিউনিশিয়া থেকে আসা হামলাকারীকে আটক করা হয়েছে৷
ছবি: Gaillard Eric/abaca/picture alliance
ফ্রান্সের মুসলিম সংগঠনের নিন্দা
ফ্রান্সের মুসলিমদের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল ফর দ্য মুসলিম ফেইথ-এর মুখপাত্র বলেন, ‘‘মৃতদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা ও মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে আমরা ফ্রান্সের সকল মুসলমানকে (ঈদে মিলাদুন্নবী) উদযাপন স্থগিত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি৷’’ এই হামলার নিন্দাও জানায় সংগঠনটি৷
ছবি: NorbertScanella/PanoramiC/imago images
৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রের জোট ওআইসি-র বক্তব্য
অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বলেছে এই হামলার ঘটনায় তাদের ‘‘কড়া অবস্থান, যা সব ধরনের চরমপন্থা ও স্পষ্টভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে৷’’ জোটের পক্ষ থেকে বলা হয় ‘‘কারণ যা-ই হোক না কেন, আমাদের অবস্থান সব ধরনের ঘৃণা ও হিংসার বিরুদ্ধে৷’’
ছবি: Laily Rachev/Biro Pers Setpres
তুরস্ক যা বলেছে
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়াভাষায় এই হামলার সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে৷ মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘‘কাউকে মেরে ফেলা বা সহিংসতার জন্য কোনো কারণই যথেষ্ট নয়৷ একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থানে যারা এই কাজ করেছে, তাদের মধ্যে কোনো ধরনের ধর্মীয়, মানবিক বা নৈতিক গুণ নেই৷’’
ছবি: picture-alliance/TASS/dpa/S. Bobylev
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিন্দা
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ এক টুইটে বলেন, এই ধরনের হামলা আসলে ধারাবাহিক উসকানি ও সহিংসতার অংশ, যা অবলিম্বে বন্ধ হওয়া উচিত৷ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই চলমান ঘৃণা, উসকানি ও সহিংসতার ধারাবাহিকতাকে যুক্তি দিয়ে থামাতে হবে৷ আমাদের বুঝতে হবে যে, চরমপন্থা থেকে কেবল চরমপন্থাই জন্ম নেয়, এমন উসকানির মাধ্যমে শান্তি সম্ভব নয়৷’’
মিশরের রাজধানী কায়রোর আল-আজহার গ্রান্ড মুফতি আহমেদ আল-তায়েব বলেছেন, ‘‘এই ধরনের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না৷ এর সাথে উসলাম বা মহানবির কোনো সম্পর্ক নেই৷’’
হামলাকারীর দেশ তিউনিশিয়াও কড়া ভাষায় এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে৷ তিউনিশিয়া বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা এই সন্ত্রাসবাদী কাজের তীব্র নিন্দা করছে এবং পুরোপুরি ফ্রান্সের পাশে আছে৷
ছবি: Serge Haouzi/Xinhua/picture alliance
ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিল
যুক্তরাজ্যের মুসলিম কাউন্সিল টুইট করে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে৷ টুইটে বলা হয়েছে, ‘‘এই ধরনের সহিংসতা, বিশেষ করে একটি ধর্মীয় স্থানে, কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়৷’’
ছবি: picture-alliance/empics/D. Dawson
এবং সৌদি আরব
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও টুইটারে প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেশটি বলেছে, সৌদি আরব ‘‘এমন সব আচরণকেই পুরোপুরি নাকচ করে, যা সব ধর্মীয় ও মানবিক বিশ্বাসের বিরোধী৷’’