একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ ছিল৷ পরের বছর দেশের ৬৩টি জেলায় যে বোমা হামলা করে জেএমবি সেই জেএমবি-র উত্থানের পেছনেও ছিল রাজনৈতিক মদদ৷ আজ সেই জঙ্গিদের প্রধান টার্গেট ব্লগার ও মুক্তচিন্তার মানুষ৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার প্রথম বড় ঘটনা ২০০১ সালে রমনা বটমূলে পহেলা বৈশাখে ছায়ানটের বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে৷ এরপর পল্টনে সিপিবি-র সমাবেশে বোমা হামলা হয়৷ তারও পরে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তখনকার বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশ স্থলে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত হন৷
এর পরের বছর ১৭ই আগস্ট দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় জমিয়তুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)৷ জেএমবি-র আরেকটি শাখার নাম জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি)৷ এরপর তারা আদালত এলাকায় হামলা চালিয়ে বিচারক হত্যাসহ আরো হত্যাকাণ্ড ঘটনায়৷
২০০১ এবং ২০০৪ সালের বোমা এবং গ্রেনেড হামলার পরই জানা যায় হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের নাম৷ তার প্রধান মুফতি হান্নান এখন কারাগারে৷ আর জেএমবি ও জেএমজেবি-র দু'জন নেতা শায়খ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাইকে বিচারক হত্যা মামলায় ফাঁসি দেয়া হয়েছে৷
সহিংসতায় প্রধান হাতিয়ার ‘পেট্রোল বোমা’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার সময় পেট্রোল বোমার ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে৷ হাতে তৈরি এই বোমা ব্যবহার করে গাড়িতে আগুন দেয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পেট্রোল বোমায় পুড়ছে জীবন
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ৷ নির্বাচনসংক্রান্ত জটিলতা ছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এসময়৷ হরতাল, অবরোধ চলাকালে ব্যাপক আকারে ব্যবহার হয়েছে পেট্রোল বোমা৷
ছবি: imago/imagebroker/theissen
যেভাবে তৈরি হয় এই বোমা
কাঁচের বোতল, পেট্রোল আর কিছু ভাঙা কাঁচ বা মার্বেলের টুকরা ব্যবহার করে পেট্রোল বোমা তৈরি করছে দুর্বৃত্তরা৷ এরপর সুযোগ বুঝে সেগুলো নিক্ষেপ করছে যাত্রীবাহী গাড়িতে৷ ফলে গাড়ি পুড়ছে, সঙ্গে পুড়ছে মানুষ৷ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতার আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেশ কয়েকজন৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture alliance/abaca
রয়েছে অন্য বোমাও
তবে শুধু পেট্রোল বোমাই নয়, লাল বা কালো টেপে মোড়া ককটেলও ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে৷ ককটেল তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ এবং ছোট পেরেক বা লোহার টুকরা৷ এছাড়া বোমা তৈরিতে গান পাউডারও ব্যবহার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বোমা বাণিজ্য
রাজনৈতিক অস্থিরতায় সময় হাতে তৈরি বোমার চাহিদা বেড়ে যায়৷ তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও পেশাদারি গ্রুপও বোমা তৈরি করে৷ চড়া দামে এসব বোমা বিক্রিও করা হয়৷ গত বছর পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, একেকটি হাত বোমার দাম ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত৷
ছবি: Reuters
বড় পর্যায়ে বোমা হামলা
বলাবাহুল্য, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে আত্মঘাতী বা বড় পর্যায়ে বোমা হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল৷
ছবি: dpa - Bildfunk
আত্মঘাতী হামলা
১৭ আগস্টের সেই সিরিজ হামলার পর কয়েকটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটে৷ দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেসময় ‘‘বোমা হামলায় বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ৩৩ জন নিহত হন৷’’ তবে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর হাতে জঙ্গিবাদের উত্থান দমনে সক্ষম হয়৷ ২০০৭ সালে জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: AP
বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম
ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন জানান, বাংলাদেশ পুলিশের শক্তিশালী বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম রয়েছে৷ তাদের কাছে আধুনিক সরঞ্জামও রয়েছে৷ ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের বোমা নিষ্ক্রিয় করে প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের এই টিম৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
7 ছবি1 | 7
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম আসামি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ জন আসামি আজও পলাতক৷ সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও মুফতি হান্নানসহ অন্য আসামিরা আছে কারাগারে৷ এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মামলাটির বিচার কাজ চলছে৷ ডিসেম্বরের মধ্যেই বিচার শেষ হবে বলে আশা৷'' তিনি আরো দাবি করেন, ‘‘মামলার তদন্ত এবং সাক্ষ্য প্রমাণে এটা স্পষ্ট যে, জঙ্গিরা তখনকার বিএনপি সরকারের ছত্রছায়ায় গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে৷''
এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে ময়মনসিংহ অঞ্চলে চরমপন্থি আন্দোলন দমনে তখনকার মন্ত্রী-এমপিদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই জেএমবি-র উত্থান৷ তখনকার মন্ত্রী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী বাংলা ভাইয়ের পক্ষ নেন৷
২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগারণ মঞ্চের আবির্ভাব থেকে জঙ্গিদের নতুন ধরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ হরকাতুল জিহাদ এবং জেএমবি বাদে শোনা যাচ্ছে এক নতুন নাম – আনসারুল্লাহ বাংলা টিম৷ তারা ব্লগার ও মুক্ত চিন্তার মানুষকে হত্যার মিশনে নেমেছে৷ এ পর্যন্ত তারা পাঁচজন ব্লগারকে হত্যা করেছে৷ তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, আনসার বাংলা সেভেন, আনসারুল্লাহ, আনসার বিডি, আনসার আল-ইসলামসহ নানা নামে কাজ করছে৷ পুলিশের দাবি, তাদের প্রধান মুফতি জসিম উদ্দিন রাহমানি কারাগারে থাকলেও সেখানে বসেই নিয়ন্ত্রণ করছেন জঙ্গি কার্যক্রম৷
অবরোধ-হরতালে বিপর্যস্ত জনজীবন
বাংলাদেশে টানা অবরোধ ও হরতালের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা৷ ক্রেতার অভাবে বেচাকেনা প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে৷ শুধু অর্থনীতি নয়, চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় মুষড়ে পড়েছে পরিবহন ও শিক্ষা ব্যবস্থাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন
পুরনো ঢাকার বাবু বাজারে কাগজ বোঝাই একটি ট্রাকে জ্বলছে দুষ্কৃতিকারীদের দেয়া পেট্রোল বোমার আগুন৷ গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে চলছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ৷ ডাকা হচ্ছে হরতালও৷ অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে আলোচিত পেট্রোল বোমা৷ শুধু পেট্রোল বোমার আগুনেই পুড়ে মরেছে কমপক্ষে ৬৫ জন সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুলিশ প্রহরায় চলছে পরীক্ষা
ঢাকার মতিঝিল আইডিয়িাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে পুলিশ প্রহরা৷ চলমান এ অবরোধ-হরতালে যাঁরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তার মধ্যে শিক্ষার্থীরা অন্যতম৷ বর্তমানে সারা দেশে চলা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন তাই অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে৷ টানা অবরোধের মধ্যে ছুটির দিনগুলোতে চলছে পরীক্ষা৷ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
দূরপাল্লার বাস নেই বললেই চলে
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলির ডাকা অবরোধে বাংলাদেশের প্রধান সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিত্ত৷ দুপুর বেলায় তোলা এ ছবিতে মহাসড়কটি প্রায় যানবাহন শূন্য৷ কিন্তু সাধারণ সময়ে এ সড়কটি থাকে যানবাহনে ভরা৷ বাংলাদেশে চলমান অবরোধে দূর পাল্লার গাড়ি চলাচল কমে গেছে বহুলাংশে৷ একের পর এক পেট্রোল বোমার ঘটনায় ঝুঁকি নিয়ে বাস চালাচ্ছেন না অনেক মালিকই৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিজিবি-র টহল পর্যাপ্ত নয়
অবরোধের মধ্যে বাংলাদেশের মহাসড়কগুলোয়, মানে ঢাকার বাইরে বিজিবি-র টহল থাকলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য৷ এছাড়া সম্প্রতি রাত ন’টার পরে বাস চলাচলে সকলকে নিরুৎসাহ করার কারণে বাস মালিকদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকায় অস্বাভাবিক নয় যানজট
বাংলাদেশে চলমান এই অবরোধে ঢাকার ভেতরের সড়কের দৃশ্য অবশ্য আলাদা৷ যান চলাচল অন্যান্য সময়ের চেয়ে তুলনামূলক কম হলেও, অনেক জায়গাতেই যানজট দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসযাত্রীরা
ঢাকার ফার্মগেটে অফিস শেষে গাড়ির অপেক্ষায় বাড়িমুখী মানুষের ভিড়৷ টানা অবরোধে গণ পরিবহন ব্যবস্থা বেহাল হলেও, অর্থাৎ গাড়িঘোড়ার চলাচল কম থাকাতে দুর্ভোগ বেড়েছে অফিসমুখী ও অফিস ফেরত মানুষের৷ অফিসে যেতে বা অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে সাধারণ মানুষ তাই পড়ছেন দুর্ভোগে৷
ছবি: DW/M. Mamun
অবরোধে নদীপথের ভিন্ন চিত্র
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নদীবন্দর ঢাকার সদরঘাটের চিত্র এটি৷ গত একমাসেরও বেশি সময়ের এই অবরোধে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উল্লেখযোগ্য বড় কোনো সহিংসতা ঘটেনি নদীপথে৷ তাই নদীপথে যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিকই আছে৷ ঢাকা থেকে প্রধানত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি৷
ছবি: DW/M. Mamun
যাচ্ছে না দূরপাল্লার বাসগুলো
বিএনপি ও সমমনা দলের জোটসমূহের ডাকা হরতাল-অবরোধে ঢাকার অন্যতম প্রধান বাস স্টেশন গাবতলীর দৃশ্য এটি৷ বেশিরভাগ দূর পাল্লার রুটের বাসই এ স্টেশনে পার্ক করে রাখা৷ হরতাল-অবরোধে দূর পাল্লার বাস চলাচল অনেকাংশেই বন্ধ আছে বাংলাদেশে৷
ছবি: DW/M. Mamun
খদ্দেরহীন এক রেস্তোরাঁ
ঢাকার গাবতলী বাস স্টেশনের খদ্দেরশূন্য মোহাম্মাদীয়া রেস্তোরাঁ৷ অবরোধের কারণে এ রেস্তোরাঁর লোকবল ১৬ জন থেকে ৮ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে৷ বাকি যে আটজন আছেন তাঁদেরও নিয়মিত বেতন পরিশোধ করতে পারছেন না মালিক৷ গাবতলী স্টেশন থেকে দূর পাল্লার বাস চলাচল কম থাকায় এ রেস্তোরাঁটি দিনের বেশিরভাগ সময় খালি থাকছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বাড়ি ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ
অবরোধ আর হরতালকারীদের প্রধান লক্ষ্য সড়কে চলাচলকারী বাস আর ট্রাক৷ বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো হামলার ঘটনা ঘটেছে তার বেশিরভাগেই যাত্রীবাহী বাস কিংবা ট্রাকে৷ এতে কমপক্ষে ৬০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিটে পোড়ায় ক্ষত শরীর নিয়ে কাতরাচ্ছেন আরো শতাধিক সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/M. Mamun
কমলাপুর রেল স্টেশনে অপেক্ষায় যাত্রীরা
অবরোধে ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল করলেও, সময়সূচি ঠিক রাখতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ৷ বিভিন্ন সময়ে অবরোধকারীদের রেল লাইনের ‘ফিশপ্লেট’ খুলে ফেলার কারণে কয়েকটি ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনায় ট্রেনের গতি কমিয়ে চালাতে হচ্ছে৷ তাই বেশিরভাগ ট্রেনই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন৷
ছবি: DW/M. Mamun
খেটে খাওয়া মানুষের দুর্দশা
টানা অবরোধ-হরতালে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ফুটপাথের ভ্রাম্যমাণ দোকানদাররা৷ স্বল্প পুঁজির এ সব ব্যবসায়ীদের বিক্রি কমে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে অনেকেরই৷
ছবি: DW/M. Mamun
পুঁজি ভেঙে চলছে যাঁর সংসার
ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকার ফুটপাথে কম্বলের ব্যবসা করেন গাজীরুল ইসলাম৷ দুপুরবেলা পর্যন্ত এ দিন তাঁর বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৭’শ টাকার একটি কম্বল৷ তাও তার কেনা দামের থেকে ৩০০ টাকা কম৷ লাভ তো দূরের কথা সংসার চালাতে এখন পুঁজি টুকুনিই ভরসা৷
ছবি: DW/M. Mamun
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রই যখন ভরসা
ঢাকার নবাবপুর থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ফিরছেন এক গাড়ি চালক ও তাঁর সহকারী৷ টানা অবরোধ-হরতালে পেট্রোল বোমার ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা হিসেবে নিজেদের গাড়িতে এখন থেকে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখবেন তাঁরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
14 ছবি1 | 14
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশের দৃষ্টি এড়ানোর জন্যই ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম' আলাদা আলাদা গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে৷ বিভাজিত গ্রুপের কারণে সবাইকে নজরদারির মধ্যে রাখা যাচ্ছে না৷ তাছাড়া এক গ্রুপের সদস্যদের খবর অন্য গ্রুপের কাছে পাওয়া যায় না৷ এমনকি কেউ কারো নামও বলতে চায় না, যা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে৷''
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার উত্থানের পিছনে রাজনৈতিক মদদ ছিল৷ তবে এখন তারা নিজেদের পায়ের নীচে মাটি খুঁজে পেয়েছে৷ তারা আগের চেয়ে এখন আরো শক্তিশালী এবং কৌশলী৷''
তিনি বলেন, ‘‘আগে জঙ্গিরা একটি বিশেষ শ্রেণি থেকে আসত৷ কিন্তু এখন তারা সবখানে ছড়িয়ে গেছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক এমনকি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও জড়িয়ে যাচ্ছেন৷''
তাঁর মতে, ‘‘এখন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেও জঙ্গি তৎপরতার কল্পিত অভিযোগ আনা হচ্ছে৷ জঙ্গিদের নিয়ে রাজনৈতিক খেলা এখনো থামেনি৷ আর এই খেলার কারণেই জঙ্গিরা আরো শক্তিশালী হচ্ছে৷'' নূর খান বলেন, ‘‘জঙ্গিদের নিয়ে রাজনৈতিক খেলা বন্ধ না হলে তারা বিস্তৃত হতেই থাকবে৷''
প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬টি জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ সংগঠনগুলো হলো – হরকাতুল জিহাদ, জেএমবি, জেএমজেবি, শাহদাত ই আল-হিকমা, হিজবুত তাহরির এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিম৷ কিন্তু তাতে জঙ্গি তৎপরতা থামার কোনো লক্ষণ নেই৷