1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রাজনৈতিক গ্রেপ্তার’ ভারতীয় রাজনীতির ঐতিহাসিক অঙ্গ

৩ নভেম্বর ২০২৩

স্বাধীনতার পর ৭৫ বছরের ভারতীয় ইতিহাসে অসংখ্য রাজনৈতিক গ্রেপ্তারের ঘটনা আছে৷ তবে সকলে ম্যান্ডেলা নন৷

নতুন দিল্লির তিহার জেল৷
ছবি: ROBERTO SCHMIDT/AFP/GettyImages

ঠিক ৫০ বছর পিছনে ফিরে গেলে যে সময়ে গিয়ে ভারতের রাজনীতির ইতিহাস পৌঁছাবে, তা জরুরি অবস্থার৷ ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদ দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন৷ বলাই বাহুল্য, সে সময়ে বিরোধী কণ্ঠ রোধ করতে একের পর এক রাজনীতিবিদকে জেলে ঢোকানো হয়৷ জয়প্রকাশ নারায়ণ থেকে লালকৃষ্ণ আডবাণী, লালুপ্রসাদ যাদব, জ্যোতির্ময় বসু-সহ শয়ে শয়ে রাজনীতিককে সে সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷

গোটা সত্তরের দশকজুড়ে কার্যত এক রাজনৈতিক আন্দোলনের স্রোত তৈরি হয়েছিল ভারতের রাজনৈতিক পরিসরে৷ একদিকে পার্টি ভাগ হওয়ার পর নতুন উদ্যমে ভূমিসংস্কারের কথা বলছে সংসদীয় বামদলগুলি, অন্যদিকে বিহার থেকে বিরোধী রাজনীতির মুখ হয়ে উঠছেন জয়প্রকাশ নারায়ণ৷ জনতা দলের ছত্রছায়ায় তখন বাম নেতারাও৷ পরবর্তীকালে অবশ্য এই জনতা দল ভেঙেই তৈরি হবে দক্ষিণপন্থি বিজেপি৷ অন্যদিকে জনতা দলের আরেক প্রোডাক্ট হিসেবে বিহারের রাজনীতিতে মুখ হয়ে উঠবেন লালুপ্রসাদ৷

সত্তরের দশকের রাজনীতির পাঠ নিতে হলে বার বার উঠে আসবে রাজনৈতিক গ্রেপ্তার, সহিংস আন্দোলন এবং সংকীর্ণ রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রসঙ্গ৷ এখনো ভারতের রাজনীতিতে যা প্রাসঙ্গিক এবং বহু আলোচিত৷

মজা হলো, সত্তরের দশকের বিরোধী সেই মুখগুলিই পরবর্তীকালে ভারতের মূলস্রোতের রাজনীতির অন্যতম পরিচালন শক্তি হয়ে উঠেছে৷ লালুপ্রসাদ থেকে জ্যোতি বসু, লালকৃষ্ণ আডবাণী থেকে জর্জ ফার্নানডেস বা প্রকাশ সিং বাদল-- এক থেকে দুই দশকের মধ্যে ভারতীয় রাজনীতির ক্ষমতার অলিন্দে কুচকাওয়াজ শুরু করেন এই নতুন নেতারা৷

কথায় বলে, যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ৷ একসময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার রাজনৈতিক নেতারা যখন নিজেরা ক্ষমতায় এলেন, খুব বেশি তফাত ঘটল কী? যে উদ্বাস্তুদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কার্যত নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব তৈরি করেছিল বামেরা, ক্ষমতায় এসেই মরিচঝাঁপিতে সেই উদ্বাস্তুদের উপর অকল্পনীয় অত্যাচার চালানো হয়৷ গুলি করে মেরে ফেলা হয় অসংখ্য রিফিউজিকে৷ পরবর্তী সময়ে, বিজন সেতু, বানতলা, নেতাই, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামে একের পর এক রাজনৈতিক হিংসার নিদর্শন তৈরি করেছে বাম সরকার৷ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনে বার বার পুড়তে হয়েছে বিরোধী নেতাদের৷ আর সেই আগুন থেকেই রাজ্যে বিরোধী মুখ হিসেবে উঠে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী৷

রাজ্যের রাজনৈতিক পালা বদলে কি সত্যিই বদলেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ছবি? বরং বেড়েছে৷ সাংবাদিক থেকে বিরোধী রাজনীতিক-- কাউকেই ছাড়ছে না বর্তমান শাসক দল৷ উল্টো কথা বললেই ব্যবহার করা হচ্ছে প্রশাসনকে৷ ভয় দেখানো হচ্ছে বার বার৷ একের পর এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ গ্রেপ্তার হতে হয়েছে বিরোধী নেতাদেরও৷

আর দেশের অবস্থা? বর্তমান মোদী জমানাকে অনেকেই তুলনা করছেন ৫০ বছর আগের ইন্দিরা জমানার সঙ্গে৷ নব্য জরুরি অবস্থা ফিরে এসেছে দেশে, সমালোচকদের কলমে বার বার উঠে আসছে এই অভিযোগ৷ গোটা দেশজুড়ে বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে৷ অভিযোগ, ইডি-সিবিআইয়ের মতো এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিরোধী নেতাদের জব্দ করতে৷ পশ্চিমবঙ্গের একাধিক নেতা জেলে৷ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যন্ত বার বার তলব করছে সিবিআই-ইডি৷ মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র, তামিলনাডু-- সর্বত্র বিরোধীদের জেলে পোড়া হচ্ছে৷ ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে সরকারের এই জেলে ভরো নীতিকেই রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বিরোধীরা৷

কিন্তু যাদের জেলে ভরা হচ্ছে, যে অভিযোগে জেলে ভরা হচ্ছে, তা কেবলই রাজনৈতিক চক্রান্ত? ৫০ বছর আগে জরুরি অবস্থার সময় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তা ছিল রাজনৈতিক গ্রেপ্তার৷ কিন্তু দুর্নীতির দায়ে আজ যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তারা নেলসন ম্যান্ডেলা নন৷ আন্দোলনের মঞ্চ থেকে তাদের অধিকাংশই গ্রেপ্তার হচ্ছেন না৷ গ্রেপ্তার হচ্ছেন দুর্নীতির দায়ে৷ পশ্চিমবঙ্গের নেতা-মন্ত্রীদের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হচ্ছে৷ রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে দুর্নীতির বিষ, নার্সারির শিশুও তা বিলকুল জানে৷ অর্থাৎ, যা রটে, তার কিছু তো ঘটে!

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

মূলস্রোতের রাজনীতির এই কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ির মধ্যে নিভৃতে আসলে আরো একটি ঘটনা ঘটে চলেছে নিরন্তর৷ মূলস্রোতের মিডিয়াও সেদিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে না৷ ভারাভারা রাও, সুধা ভরদ্বাজ, গৌতম নওলাখা, অধ্যাপক জিএন সাইবাবার মতো অসংখ্য নাম ছড়িয়ে আছে গোটা দেশজুড়ে৷ এই মানুষগুলোর অধিকাংশই সরাসরি মূলস্রোতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন৷ প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজের জগতে প্রতিষ্ঠিত, পরিচিত৷ সরকারের নীতি, আচরণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মুখ খুলে গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা৷ বর্তমান ভারতে তারাই আসল রাজনৈতিক বন্দি৷ সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশদের খুন আসলে রাজনৈতিক হত্যা৷ কজন মনে রাখছেন তাদের কথা? কজন মনে রেখেছেন ডক্টর বিনায়ক সেনকে? ৫০ বছর পর বর্তমান ভারতের ইতিহাস নিয়ে যখন বিদগ্ধ আলোচনা হবে, রাজনৈতিক বন্দি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অধ্যায়ে এই মানুষগুলির নাম যদি উঠে না আসে, তাহলে ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে৷

সেই জরুরি সময়ের কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং রাজনৈতিক গ্রেপ্তারের ইতিহাস আসলে দেশের সমান্তরাল গণ আন্দোলনের পরিসরে পরিচালিত হচ্ছে গত কয়েক দশক ধরে৷ যত দিন যাচ্ছে, আঘাত ততই বাড়ছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ