রাজধানীতে ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডে সম্প্রতি ছাত্রশিবিরের একটি মিছিল বের হয়৷ মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হলে, পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে৷ এতে মাসুদ মিয়া নামে এক শিক্ষার্থী গুলিবদ্ধ হয়৷
বিজ্ঞাপন
অন্যান্য মিছিলকারীরা পালিয়ে গেলেও মাসুদ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে৷ সে ক্যামব্রিয়ান কলেজের লালমাটিয়া ক্যাম্পাসের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র৷ পরিবারের সঙ্গে নিউ পল্টনের ইরানী কবরস্থানের পাশের একটি বাসায় থাকে মাসুদ৷ তার বাবা মীর কাশেম আহমেদ পেশায় একজন ঠিকাদার৷ কাশেম আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমার ছেলের বয়স ১৬ বছর ৭ মাস৷ অথচ পুলিশ তার বয়স ১৮ বছরের বেশি দেখিয়ে তাকে মামলার আসামী বানিয়েছে৷ এখন পুলিশ পাহারায় পঙ্গু হাসপাতালে তার চিকিত্সা চলছে৷''
কাশেম বলেন, ‘‘আমার ছেলে কোনো অপরাধ করলে তার বিচার শিশু আইনে হওয়ার কথা৷ কিন্তু আমাদের কোনো কথাই পুলিশ শুনছে না৷''
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে মাসুদের দাবি, ‘‘পুলিশ আমাকে ধরার পর পায়ে গুলি করেছে৷'' তবে ধানমন্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিছিল থেকে যখন একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছিল, তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে গুলি করতে হয়েছে৷ তারই একটা গুলি হয়ত মাসুদের পায়ে লাগে৷ তখন তো কে সামনে ছিল, তা দেখার সুযোগ ছিল না৷ তবে মাসুদের বয়স ১৮ বছরের বেশিই হবে৷
মাত্র কয়েক টাকার জন্য
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু-কিশোরকে খনি, কারখানা ও কৃষিখাতের বিভিন্ন চরম প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
শিশুশ্রম নিষিদ্ধ
১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-র সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি কনভেনশনে স্বাক্ষর করে৷ সেখানে ১৮ বছরের কমবয়সি শিশু-কিশোরদের শ্রমিক কিংবা যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর বিষয়টি নিষিদ্ধ করা হয়৷
ছবি: imago/Michael Westermann
তোয়ালে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’
ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে তোয়ালে তৈরির কারখানায় কাজ করে এই শিশুটি৷ আইএলও-র হিসাবে এশিয়ায় প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ শিশু কাজ করছে৷ অর্থাৎ ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশু-কিশোরের প্রায় ১০ শতাংশ কাজেকর্মে নিয়োজিত৷
ছবি: imago/imagebroker
দিনে ৬৫ টাকা
লেখাপড়ার পরিবর্তে এই শিশুটি ইট তৈরি করছে৷ চরিম দরিদ্রতার কারণে ভারতের অনেক পরিবার তাদের শিশুদের কাজে পাঠিয়ে থাকে৷ দিন প্রতি মাত্র ৮০ সেন্ট, অর্থাৎ প্রায় ৬৫ বাংলাদেশি টাকা পায় তারা৷ এ জন্য তাদের কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়৷
ছবি: imago/Eastnews
সস্তা শ্রম
ভারতের সবশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটিতে প্রায় এক কোটি ২৬ লাখ শিশু-কিশোর শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে৷ তারা পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে রান্না করা, রেস্টুরেন্ট পরিষ্কার করা – সব কাজই করে৷ এমনকি ইট কাটা, মাঠে তুলা তোলা ইত্যাদি কাজও করে থাকে শিশুরা৷
ছবি: imago/imagebroker
অমানবিক অবস্থা
২০১৩ সালে প্রকাশিত আইএলও-র একটি প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শিশু শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক বিপজ্জনক পরিবেশে কাজ করে৷ তাদের অধিকাংশকেই কোনোরকম চুক্তিপত্র ও চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই কাজ করতে হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
জাতিসংঘের শিশু কল্যাণ সংস্থা ইউনিসেফ-এর হিসাবে, বাংলাদেশের প্রায় ৫০ লক্ষ শিশু-কিশোর তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করে৷
ছবি: imago/Michael Westermann
কম্বোডিয়ার পরিস্থিতি
কম্বোডিয়ায় স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরের সংখ্যা অনেক কম৷ বেশিরভাগই তাদের মা-বাবার সঙ্গে কাজ করে৷ এছাড়া হাজার হাজার শিশু রাস্তায় বাস করে কম্বোডিয়ায়৷ এই যেমন এই শিশুটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি
২০০০ সালের পর বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমিকের সংখ্যা কমলেও এশিয়ার অনেক দেশ যেমন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, নেপাল, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারে পরিস্থিতির এখনও ততটা উন্নতি হয়নি৷
ছবি: AFP/Getty Images
8 ছবি1 | 8
শুধু মাসুদ নয়, এই ঘটনার তিন দিন আগে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি তিনটি শিশু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়৷ এতে ওই শিশুদের মধ্যে একজন আহতও হয়৷ স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে৷ শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই তিনটি শিশুর কাছে কে বা কারা ককটেল দিয়েছিল, তা জানা যায়নি৷ কিন্তু যারা এই শিশুদের হাতে ককটেলগুলো তুলে দিয়েছে, তারা কি মানুষ?''
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শিশুদের ব্যবহার নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু একদিকে হাতে বোমা তুলে দিয়ে তাদের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করা হচ্ছে৷ অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বয়স বাড়িয়ে বড় অপরাধীদের সঙ্গে রাখছে শিশুদের৷ এতে শিশুরা অপরাধ করে সংশোধনের সুযোগ তো পাচ্ছেই না, বরং জেল থেকে অপরাধী হয়ে বের হচ্ছে৷
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি এমরানুল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে শিশুদের নিয়ে ছোট-বড় ৩৫টি আইন আছে৷ কিন্তু এর একটি বা দু'টির বেশি মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা জানেন না৷ আসলে এখন যে অবস্থা, তাতে শিশুদের নিয়ে বড় ‘মুভমেন্ট' দরকার৷ কারণ আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী শিশুদের দেখার দায়িত্ব নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের৷ কিন্তু এই মন্ত্রণালয়ে শিশুদের কোনো ‘ডেস্ক'-ই নেই৷ সারাদেশে নারী বিষয়টি দেখার জন্য কর্মকর্তা থাকলেও শিশুদের দেখার জন্য কোনো কর্মকর্তা নেই৷ পুলিশ যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে দেখবে কে? এর জন্য তো লোকজন থাকতে হবে? আমাদের দেশে সে ধরনের কোনো ব্যবস্থাই তো নেই৷''
২০১৩ সালের ১৬ই জুন জাতীয় সংসদে শিশু বিল-২০১৩ পাস হয়৷ এই বিলে বলা আছে কোনো ব্যক্তি যদি শিশুকে সন্ত্রাসী কাজে নিয়োজিত করেন, তবে তার বিচার হবে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে৷ এ ধরনের অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ এ আইনে বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করাকে সন্ত্রাসী কাজ আখ্যায়িত করা হয়েছে৷ এই আইন পাসের পরেও কিন্তু থেমে নেই সন্ত্রাসী কাজে শিশুদের ব্যবহার৷
শিশুরা খেলার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়
একটি শিশু নিজের বাড়িতেই নিরাপদ বোধ করে৷ কিন্তু বাবা-মায়ের মধ্যে যদি বনিবনা কম থাকে ,তাঁরা যদি মানসিক চাপে থাকেন,তবে শিশুর ওপর সারাজীবনের জন্য তার প্রভাব পড়ে৷ মানসিক চাপ শিশুর আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠার পথে বাধা সৃষ্টি করে৷
ছবি: Anke-Martina Witt
শিশুদের অবসর সময়
সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ছোট বয়স থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের অনেক কিছু শিখতে হয়, অনেক কিছু করতে হয়৷ তাই শিশুরা যাই করুক না কেন ওদের খেলার সময় প্রয়োজন৷ বন্ধুদের সাথে খেলার মধ্য দিয়েই যে ওরা সমস্ত স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে৷
ছবি: DW/S. Bogdanic
টিভির সামনে আধঘণ্টার বেশি নয়!
টেলিভিশন, কম্পিউটার, ট্যাবলেট – এগুলো বিনোদন আর তথ্য দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক চাপ বাড়ায়৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, একঘণ্টা কম্পিউটার বা টিভির সামনে বসে থাকার চেয়ে খোলা বাতাসে খেলাধুলা বা ব্যায়াম শিশুদের বেশি দরকার৷ আর তিন বছরের কম বয়সি শিশুদের দিনে আধঘণ্টার বেশি টিভি দেখা উচিত নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অ্যান্টি স্ট্রেস
বাড়ি স্ট্রেমুক্ত করতে ঘরে ফেরার পর সবাই কিছুক্ষণ সোফায় বসে আড্ডা দিন৷ তারপর খাবার টেবিলে সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা বা জরুরি কিছু থাকলে, তা নিয়ে আলোচনা করুন৷ যে কোনো সমস্যা সমাধান একত্রে করলে অনেক সহজ হয়৷ শিশুরা ছোট থেকেই যেন এটা শেখে, তার চেষ্টা বড়দেরই করা উচিত৷
ছবি: imago/epd
শিশুদের শিশুর মতো বড় হতে দিন
কিন্ডারগার্ডেনে শিশুদের ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে৷ নিজেকে চেনা এবং অন্যে সাথে সম্পর্ক তৈরি করা সেখানেই শেখে শিশুরা৷ পায় সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ৷ তাই লক্ষ্য রাখতে হবে তারা যেন নির্ভয়ে সব কিছু বলতে ও করতে পারে৷ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়াটা মূল লক্ষ্য নয়, জরুরি হলো আত্মবিশ্বাসী হতে পারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
খুঁজে বের করতে হবে...
প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে পড়াশোনা বা হোমওয়ার্ক করতে শিশুর মনোযোগ কখন সবচেয়ে বেশি৷ সরাসরি স্কুল থেকে আসার পর নাকি কিছুক্ষণ খেলার পর? সবচেয়ে বড় কথা – শিশুরা যাই করুক না কেন, মাঝে মাঝেই বিশ্রাম নিতে হবে তাদের৷ অর্থাৎ যে কোনো কাজের মাঝে কিছুক্ষণ হাঁচটাচলা, গান শোনা বা মুক্ত বাতাস সেবন করা৷ যা শুধু শিশুদের ক্ষেত্রে নয়, বড়দেরও প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিক্ষার ধরন
আজকের দিনের চাকরিজীবী মা-বাবার জীবন চলে অতি দ্রুতগতিতে এবং তাঁদের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে শিশুরা হাঁপিয়ে ওঠে৷ শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সব কিছুই সন্তানদের শেখানোর চেষ্টা থাকেন বাবা-মা৷ তাই তাঁরা নামি-দামি আধুনিক কিন্ডারগর্ডেনগুলোতে সন্তানকে ভর্তি করেন৷ তবে কিন্ডারগার্টেন বা স্কুল ভবিষ্যত জীবনে শিশুর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে একটা পাথেও মাত্র৷
ছবি: Getty Images/J. Macdougal
খেলার ছলে শিক্ষা
জার্মানির বোখুম শহরের একটি স্কুলে পড়াশোনাটা নতুনভাবে বা খেলার ছলে সেখানো হয়৷ সেখানে ‘প্রোমোশন’ বা ভালো রেজাল্টই বড় কথা নয়৷ ছোট ছেলে-মেয়েরা কারিগরি ক্লাসে তরোয়াল তৈরি করতে শেখে সেখানে৷ খেলার ছলে শেখে নানা কায়দাকানুন৷ তাছাড়া প্রতিটি শিশুর কাজ করার ধরনও আলাদা৷ তাই শিশুরাই প্রস্তাব দেয়, তারা কী করতে চায় বা না চায়৷ শিশুদের ইচ্ছেকে পুরো দাম দেওয়া হয় এখানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ভয় ছাড়া শিক্ষা
স্কুলে খুব ভালো ফল করতে হবে – এর জন্য কোনো চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়৷ কারণ এতে শিশুদের মধ্যে একটা ভয় তৈরি হয় আর ভয় মানুষের আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠতে সবচেয়ে বড় বাধা৷ তবে একটি কথা বাবা-মাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি শিশুই আলাদা৷ অর্থাৎ সবার গ্রহণযোগ্যতা সমান নয়৷ ‘আমাদের সন্তানের চেয়ে অন্য বাচ্চার রেজাল্ট ভালো কেন?’ – এ প্রশ্ন কখনই করা উচিত নয়৷
ছবি: Fotolia
ভয় মস্তিষ্ককে বিগড়ে দেয়
পরীক্ষার হলে সব কিছু ভুলে যাওয়াটা মোটেই নতুন নয়৷ একে আমরা ‘ব্ল্যাকআউট’ বলে জানি৷ এমনটা কিন্তু শুধুমাত্র ভয়ের কারণেই হয়ে থাকে৷ ‘‘ভয়ের সময় মানুষের শরীরে স্ট্রেস হরমোন ছড়িয়ে পড়ে এবং স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায় বা বাঁধাপ্রাপ্ত হয়৷ অর্থাৎ শেখা বা জানা বিষয়ও মনে পড়ে না৷’’ বলেন জার্মানির মস্তিষ্ক গবেষক৷
ছবি: Fotolia/Photographee.eu
শিশুদের আত্মবিশ্বাস গড়তে বড়দের ভূমিকা
বর্তমানে আমরা, অর্থাৎ বড়রা যে মানসিক চাপের মধ্যে জীবনযাপন করছি, তা ইচ্ছে করে নয়৷ পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করছে৷ তাই যতটা সম্ভব শিশুদের মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখা প্রয়োজন৷ কারণ শিশু বয়সেই তৈরি হয় ব্যক্তিত্ব, তাদের আত্মবিশ্বাস, যা বড় হতে, সুস্থ মানুষ হতে অনেক বেশি প্রয়োজন৷
ছবি: Anke-Martina Witt
10 ছবি1 | 10
সাধারণ মানুষের দাবি, হরতাল-অবরোধের মতো বিভিন্ন কর্মসূচিতে আর যেন কোনো শিশু চোখ না হারায়, আর যেন কোনো শিশুর হাত উড়ে না যায়৷ সবারই সন্তান আছে, অন্তত নিজের সন্তান মনে করে এই শিশুদের রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার৷
পুলিশ কেন শিশুদের বয়স বাড়িয়ে মামলার আসামী করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা করে তো পুলিশের কোনো লাভ নেই৷ অনেক সময় বৈধ অভিভাবক না পাওয়ার কারণে বয়স এদিক-সেদিক হয়ে যেতে পারে৷ কিন্তু ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ এছাড়া অপুষ্টির কারণে অনেকের বয়স ঠিতমতো বোঝা যায় না৷ এর কারণেও বয়স বেড়ে যেতে পারে৷''
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ ভুল করতে পারে, অনেক সময় ইচ্ছে করেও করতে পারে? কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব আছে৷ পুলিশ যাই বলুক না কেন, কোনো শিশুকে আদালতে হাজির করার পর ম্যাজিস্ট্রেটকেই বুঝে সিদ্ধান্ত দিতে হবে৷ কারো বয়স নিয়ে সন্দেহ হলে পরীক্ষার জন্য মেডিক্যালে পাঠাতে পারেন৷ কোনো একটি শিশুও যেন বড়দের মধ্যে চলে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে ম্যাজিস্ট্রেটদের৷ পাশাপাশি পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না৷''
মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আলোচনা-সমালোচনা যাই হোক শিশুদের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে এটাই তো আসল কথা৷ আসলে দীর্ঘদিন ধরে যে প্রবণতা চলে আসছে, আমরা তা থেকে বের হতে পারিনি৷ বয়স বাড়িয়ে মামলার আসামী করা, বয়স বাড়িয়ে শিশুদের বিয়ে দেয়া – সবই কিন্তু অপরাধ৷ আমাদের সমাজে এই অপরাধগুলো হরহামেশাই হয়ে যাচ্ছে৷ গণতন্ত্রের ভিত যখন দূর্বল হয়ে যায় তখন শুধু শিশু নয়, সব ধরনের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে থাকে৷ এখন বাংলাদেশে যা হচ্ছে এগুলো তারই সব আলামত৷''
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ই মে৷ ঐ দিন হেফাজতে ইসলামের ডাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরের সমাবেশেও মাদ্রাসার অজস্র শিশু-কিশোরকে নিয়ে আসা হয়৷ ঐ শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ যদিও সেই ঘটনায় কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ৪৮ জন শিশুর মৃত্যুর হয়েছে৷ আহত হয়েছে প্রায় দুইশ'৷
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শিশুদের ব্যবহারের বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই কাজটা অত্যন্ত অমানবিক৷ আমাদের সবার পরিবারে শিশু আছে৷ তাই আমাদের সবাইকে শিশুদের রাজনীতিতে ব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে৷ বর্তমান অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে জাতির জন্য ভবিষ্যতে ভয়ংকর দিন অপেক্ষা করছে৷ তখন শত চেষ্টা করেও আর পরিত্রাণ মিলবে না৷''