1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশুদের মানবাধিকার

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

রাজধানীতে ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডে সম্প্রতি ছাত্রশিবিরের একটি মিছিল বের হয়৷ মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হলে, পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে৷ এতে মাসুদ মিয়া নামে এক শিক্ষার্থী গুলিবদ্ধ হয়৷

Bangladesch Kinderarbeit Hausangestellte
ছবি: imago/epd

অন্যান্য মিছিলকারীরা পালিয়ে গেলেও মাসুদ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে৷ সে ক্যামব্রিয়ান কলেজের লালমাটিয়া ক্যাম্পাসের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র৷ পরিবারের সঙ্গে নিউ পল্টনের ইরানী কবরস্থানের পাশের একটি বাসায় থাকে মাসুদ৷ তার বাবা মীর কাশেম আহমেদ পেশায় একজন ঠিকাদার৷ কাশেম আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমার ছেলের বয়স ১৬ বছর ৭ মাস৷ অথচ পুলিশ তার বয়স ১৮ বছরের বেশি দেখিয়ে তাকে মামলার আসামী বানিয়েছে৷ এখন পুলিশ পাহারায় পঙ্গু হাসপাতালে তার চিকিত্‍সা চলছে৷''

কাশেম বলেন, ‘‘আমার ছেলে কোনো অপরাধ করলে তার বিচার শিশু আইনে হওয়ার কথা৷ কিন্তু আমাদের কোনো কথাই পুলিশ শুনছে না৷''

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে মাসুদের দাবি, ‘‘পুলিশ আমাকে ধরার পর পায়ে গুলি করেছে৷'' তবে ধানমন্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মিছিল থেকে যখন একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছিল, তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে গুলি করতে হয়েছে৷ তারই একটা গুলি হয়ত মাসুদের পায়ে লাগে৷ তখন তো কে সামনে ছিল, তা দেখার সুযোগ ছিল না৷ তবে মাসুদের বয়স ১৮ বছরের বেশিই হবে৷

শুধু মাসুদ নয়, এই ঘটনার তিন দিন আগে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি তিনটি শিশু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়৷ এতে ওই শিশুদের মধ্যে একজন আহতও হয়৷ স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে৷ শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই তিনটি শিশুর কাছে কে বা কারা ককটেল দিয়েছিল, তা জানা যায়নি৷ কিন্তু যারা এই শিশুদের হাতে ককটেলগুলো তুলে দিয়েছে, তারা কি মানুষ?''

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শিশুদের ব্যবহার নতুন কিছু নয়৷ কিন্তু একদিকে হাতে বোমা তুলে দিয়ে তাদের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করা হচ্ছে৷ অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বয়স বাড়িয়ে বড় অপরাধীদের সঙ্গে রাখছে শিশুদের৷ এতে শিশুরা অপরাধ করে সংশোধনের সুযোগ তো পাচ্ছেই না, বরং জেল থেকে অপরাধী হয়ে বের হচ্ছে৷

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি এমরানুল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে শিশুদের নিয়ে ছোট-বড় ৩৫টি আইন আছে৷ কিন্তু এর একটি বা দু'টির বেশি মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা জানেন না৷ আসলে এখন যে অবস্থা, তাতে শিশুদের নিয়ে বড় ‘মুভমেন্ট' দরকার৷ কারণ আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী শিশুদের দেখার দায়িত্ব নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের৷ কিন্তু এই মন্ত্রণালয়ে শিশুদের কোনো ‘ডেস্ক'-ই নেই৷ সারাদেশে নারী বিষয়টি দেখার জন্য কর্মকর্তা থাকলেও শিশুদের দেখার জন্য কোনো কর্মকর্তা নেই৷ পুলিশ যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে দেখবে কে? এর জন্য তো লোকজন থাকতে হবে? আমাদের দেশে সে ধরনের কোনো ব্যবস্থাই তো নেই৷''

২০১৩ সালের ১৬ই জুন জাতীয় সংসদে শিশু বিল-২০১৩ পাস হয়৷ এই বিলে বলা আছে কোনো ব্যক্তি যদি শিশুকে সন্ত্রাসী কাজে নিয়োজিত করেন, তবে তার বিচার হবে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে৷ এ ধরনের অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ এ আইনে বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করাকে সন্ত্রাসী কাজ আখ্যায়িত করা হয়েছে৷ এই আইন পাসের পরেও কিন্তু থেমে নেই সন্ত্রাসী কাজে শিশুদের ব্যবহার৷

সাধারণ মানুষের দাবি, হরতাল-অবরোধের মতো বিভিন্ন কর্মসূচিতে আর যেন কোনো শিশু চোখ না হারায়, আর যেন কোনো শিশুর হাত উড়ে না যায়৷ সবারই সন্তান আছে, অন্তত নিজের সন্তান মনে করে এই শিশুদের রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার৷

পুলিশ কেন শিশুদের বয়স বাড়িয়ে মামলার আসামী করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা করে তো পুলিশের কোনো লাভ নেই৷ অনেক সময় বৈধ অভিভাবক না পাওয়ার কারণে বয়স এদিক-সেদিক হয়ে যেতে পারে৷ কিন্তু ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ এছাড়া অপুষ্টির কারণে অনেকের বয়স ঠিতমতো বোঝা যায় না৷ এর কারণেও বয়স বেড়ে যেতে পারে৷''

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পুলিশ ভুল করতে পারে, অনেক সময় ইচ্ছে করেও করতে পারে? কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব আছে৷ পুলিশ যাই বলুক না কেন, কোনো শিশুকে আদালতে হাজির করার পর ম্যাজিস্ট্রেটকেই বুঝে সিদ্ধান্ত দিতে হবে৷ কারো বয়স নিয়ে সন্দেহ হলে পরীক্ষার জন্য মেডিক্যালে পাঠাতে পারেন৷ কোনো একটি শিশুও যেন বড়দের মধ্যে চলে না যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে ম্যাজিস্ট্রেটদের৷ পাশাপাশি পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারাও দায় এড়াতে পারেন না৷''

মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আলোচনা-সমালোচনা যাই হোক শিশুদের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে এটাই তো আসল কথা৷ আসলে দীর্ঘদিন ধরে যে প্রবণতা চলে আসছে, আমরা তা থেকে বের হতে পারিনি৷ বয়স বাড়িয়ে মামলার আসামী করা, বয়স বাড়িয়ে শিশুদের বিয়ে দেয়া – সবই কিন্তু অপরাধ৷ আমাদের সমাজে এই অপরাধগুলো হরহামেশাই হয়ে যাচ্ছে৷ গণতন্ত্রের ভিত যখন দূর্বল হয়ে যায় তখন শুধু শিশু নয়, সব ধরনের মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হতে থাকে৷ এখন বাংলাদেশে যা হচ্ছে এগুলো তারই সব আলামত৷''

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ই মে৷ ঐ দিন হেফাজতে ইসলামের ডাকা অবরোধ ও শাপলা চত্বরের সমাবেশেও মাদ্রাসার অজস্র শিশু-কিশোরকে নিয়ে আসা হয়৷ ঐ শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ যদিও সেই ঘটনায় কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ৪৮ জন শিশুর মৃত্যুর হয়েছে৷ আহত হয়েছে প্রায় দুইশ'৷

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শিশুদের ব্যবহারের বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই কাজটা অত্যন্ত অমানবিক৷ আমাদের সবার পরিবারে শিশু আছে৷ তাই আমাদের সবাইকে শিশুদের রাজনীতিতে ব্যবহারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে৷ বর্তমান অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে জাতির জন্য ভবিষ্যতে ভয়ংকর দিন অপেক্ষা করছে৷ তখন শত চেষ্টা করেও আর পরিত্রাণ মিলবে না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ