1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজনৈতিক দখল, আধিপত্য ঘিরে বাংলাদেশে বাড়ছে সংঘাত-সংঘর্ষ

১৩ এপ্রিল ২০২৫

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাবে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে দেশে রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ১০৪টি৷ এইসব সংঘাতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন৷

পুড়ে যাওয়া স্থাপনা
গত ডিসেম্বরে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে হাত বোমার আঘাতে তিন জন নিহত হনছবি: Mithun Ray/DW

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘাত, সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ এসব ঘটনায় প্রাণহানীও হয়েছে৷ জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও তাদের সংঘাতের খবর পাওয়া গেছে৷ বছরের প্রথম দুই মাসের পরিসংখ্যানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের নিজেদের মধ্যকার কয়েকটি সংঘাতের তথ্য উঠে এসেছে৷ তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কোথাও কোথাও সংঘাতে জড়াচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসে মোট ১০৪টি রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে৷ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এরমধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের নিজেদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ৫৬ টি, যা মোট ঘটনার অর্ধেকেরও বেশি৷ আর বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ৭৬টি৷ এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০ জন, আহত হয়েছেন ৮৫৪ জন৷ শুধু বিএনপির নিজেদের মধ্যে সংঘাতে আহত হয়েছেন ৬৪৬ জন, নিহত সাত জন৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাজনৈতিক সংঘাতের ৭৩ ভাগেরও বেশি হচ্ছে বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের মধ্যে৷

এই  সময়ে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে আটটি, এতে আহত হয়েছেন ১২৯ জন৷ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে ৮৫টি৷ তিনজন আহত এবং একজন নিহত হয়েছেন৷ ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে তিনটি সংঘর্ষের ঘটনায় ১৮ জন আহত হয়েছেন৷ ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের, যুবদল ও যুবগলীগ এবং বিএনপি ও শ্রমিক লীগের মধ্যে একটি করে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে৷

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে পাঁচটি সংঘর্ষে জড়িয়েছে৷ এইসব  ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছেন৷ এছাড়াও পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একটি করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র৷

২০২৪ সালে ৬৪৯টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনায় মারা যান ১০০ জন৷ আর চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে গত ১৪ মাসে সংঘাতের ৭৫৩টি ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১১৬ জন৷ 

যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছি ব্যবস্থা নিচ্ছি: এমরান সালেহ

This browser does not support the audio element.

সংঘাতের কারণ আধিপত্য

দেশের কয়েকটি এলাকায় কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাত বেড়ে যাওয়ার কারণ স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য৷ রাজনৈতিক গ্রুপিং-এর আধিপত্যের সঙ্গে আছে দখলদারি৷ অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাদের নেতা-কর্মীদের দখলে যা ছিলো বিভিন্ন স্থানে তা এখন বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দখলে নিচ্ছেন৷ আর তা নিয়েই নিজেদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনা ঘটছে৷

সর্বশেষ রোববার সকালে পাবনার ইশ্বরদীতে বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক বিএনপি নেতা গুলিবিদ্ধসহ সাত-আটজন আহত হয়েছেন৷ এমনকি বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিনবাদে নেতানিয়াহুর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো নিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রামে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শনিবার ১০ জন আহত হয়েছেন৷ বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে এই সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে৷

বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের পাগলা থানার কান্দিপাড়া বাজারে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে৷ এই সংঘর্ষে স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদল জড়িয়ে পড়ে৷ এতে আট জন আহত হন৷ স্থানীয় পর্য়ায়ে কথা বলে জানা যায় কান্দিপাড়া বাজারের ইজারার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ হয়৷

একই দিনে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হন৷ এখানেও রাজনৈতিক আধিপত্য ও বাজারে মহড়া দেয়া নিয়ে সংঘাত হয়৷

ভোলার বিএনপির তৃণমূলের নেতা আল ইমরান জানান, আওয়ামী লীগ চলে যাওয়ার পর তাদের দখলে থাকা বিভিন্ন কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির মধ্যে সংঘাত হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নানা গ্রুপ গড়ে তোলায়ও সংঘাত বাড়ছে৷”

একই ধরনের কখা বলেন বাগেরহাটের একজন নেতা আব্দুস সালাম৷ তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন৷ তাদের মধ্যে দখলের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে৷ এর কারণ হলো আধিপত্য এবং সামনের নির্বাচন৷”

তারা এখন নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী: জাহেদ উর রহমান

This browser does not support the audio element.

মানবাধিকার সংস্থার পরিসংখ্যান তথ্যভিত্তিক নয়: বিএনপি

নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি গঠনের পর কম হলেও তাদের সঙ্গে সংঘাত হচ্ছে বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের৷ ২৪ মার্চ হাতিয়ায় এনসিপির সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়েছে৷ এতে এনসিপি নেতা আব্দুল হান্নান মাসউদসহ ৩০ জন আহত হন৷ ওই সংঘর্ষের পর এনসিপি এক বিবৃতিতে দাবী করে স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির ওপর নিয়ন্ত্রণ নাই কেন্দ্রের৷

তবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের অভিযোগ , বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও গণমাধ্যম সেগুলোকে বড় করে দেখাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত বিরোধ, জমিজমা দখলের ঘটনাকেও তারা বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ হিসাবে দেখাচ্ছে৷ তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যে পরিসংখ্যান দিচ্ছে তা সঠিক তথ্যভিত্তিক নয়৷

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘তারপরও আমরা সতর্ক আছি৷ যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছি ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ বহিষ্কার করছি৷''

পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন ,"আমরা তো সরকারে নাই৷ পুলিশ কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিতে পারে মামলা নিতে পারে৷ অভিযুক্তদের আটক করতে পারে৷”

তবে বিএনপির এই নেতার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিস হোসেন প্রিন্স৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা ১২ আগস্ট যখন প্রধান উপদেষ্টার সাথে দেখা করি৷ তখন বলেছিলাম ৫ আগস্টের গণভ্যুত্থান কোনো দলের বিজয় নয়৷ তাই আমরা বলেছিলাম সব জায়গায় দলীয় প্রভাবমুক্ত লোকজনকে বসাতে৷ ফলে কোনো দল তারা জয়ী হয়েছে বলে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না৷ কিন্তু সেটা হয়নি৷ ফলে এখন আমরা দাখলদারি ও পাল্টা দখলদারি দেখতে পাচ্ছি৷”

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি যতই অস্বীকার করুক, যতই বলা হোক ব্যস্থা নেয়া হচ্ছে, বাস্তবে তাদের আধিপত্য ও দখল-পাল্টা দখলের লড়াই চলছে৷ তারা এখন নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে৷ আওয়ামী লীগ আগে এই কাজ করেছে৷ তাদের ফেলে যাওয়া অবস্থানে এখন বিএনপি ঢুকেছে৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমানের মতে, ‘‘পতিত সরকারের যে চাঁদবাজির একটি কালো অর্থনীতি ছিলো বিএনপি সেটার দখল নিতে চাইছে৷ দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন আসনে বিএনপির ১০-১২ জন করে সম্ভাবনাময় প্রার্থী আছে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য৷ তারা নিজেরা প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে৷ ফলে এই সংঘাতগুলো হচ্ছে৷ একটি কারণ অর্থনৈতিক এবং আরেকটি অভ্যন্তরীণ রাজনীতি৷”

এক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ড. জাহেদ উর রহমানও৷

তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি এখন ক্ষমতায় নাই ফলে এটা তার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন৷ সরকারের এখানে দায়িত্ব আছে৷ পুলিশের দায়িত্ব আছে৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ