‘রাজনৈতিক দলগুলোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে’
১৭ মে ২০২২রাজনৈতিক দলগুলোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷ এখানকার রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা শ্রীলঙ্কার মত হবে৷ তাদের কপালে দুঃখ আছে৷
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমে প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে তার জাতীয় সরকারের প্রস্তাব তুলে ধরেন রোববার দিবাগত রাত ১২টার পরে৷ তিনি তার প্রস্তাবিত জাতীয় সরকারে রাষ্ট্রপতি হিসেবে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান বা ড. কামাল হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম প্রস্তাব করেছেন৷ তার প্রস্তাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি কয়েকটি দপ্তরের দায়িত্বে কারা থাকবেন তাদের নামও উল্লেখ করেছেন৷ তাতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের নামও রয়েছে৷ রয়েছে পেশাজীবীদের নাম৷ তার এই প্রস্তাবের শিরোনাম হলো, ‘‘জাতির সংকট নিরসনে জাতীয় সরকার৷''
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই জাতীয় সরকারকে গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা দেয়া হবে৷ তারা দুই বছর দায়িত্বে থাকবেন৷ সংস্কার প্রক্রিয়া এই সময়ের মধ্যে শেষ করে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন৷''
জাতীয় সরকারকে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে এবং পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে৷ দুই বছরের বেশি মেয়াদ হলে মনে হবে যেন তারা ক্ষমতা দখল করতে এসেছে বলে মনে করেন ডা. জাফরুল্লাহ৷
জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘দেশে লুটপাটে ভরে গেছে, ভোটাধিকার নাই৷ তাই এটা ঠিক করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জাতীয় সরকার এখন খুবই দরকার৷''
এ নিয়ে তিনি প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে কথা বলবেন কী না জানতে চাইলে বলেন, ‘‘তারা না চাইলে আমি তো আর জোর করে কথা বলতে পারব না৷ তারা যদি গায়ের চামড়া বাঁচাতে চায় তাহলে তো তাদের এই পথে যেতে হবে৷ তারা যদি শ্রীলঙ্কা দেখে না শেখে, পাকিস্তান দেখে না শেখে তাহলে কপালে দুঃখ আছে৷''
রাজনৈতিক দলগুলো সাড়া দিচ্ছে কী না? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে৷ এই প্রস্তাবের পর কেউ চক্রান্ত থিওরি বের করেছে৷ কেউ বলছে এটা আর্মি আমাকে দিয়ে করিয়েছে৷ কেউ বলছে আওয়ামী লীগ করিয়েছে৷ আমার কোনো বুদ্ধি নাই! তাদের ভাবসাব দেখে মনে হয় তাদের বুদ্ধিতে আমি চলি৷''
তার কথা, তিনি তার প্রস্তাব নিয়ে নিজ উদ্যোগে আলোচনা করতে যাবেন না৷ কেউ চাইলে কথা বলতে পারেন৷
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ডা. জাফরুল্লাহর এই প্রস্তাব নিয়ে বলেন, ‘‘দেশের যে কোনো নাগরিক তার প্রস্তাব দিতে পারেন৷ জাফরুল্লাহ সাহেবও তার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ সেটা তার স্বাধীনতা৷ জাফরুল্লাহ সাহেব যা ভালো মনে করেছেন তাই বলেছেন৷ তবে আমাদের দলের অবস্থান হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে৷ সেই নির্বাচনের পর আমরা সরকার পরিচালনায় জাতীয় সরকার গঠন করব৷ সেটা হবে একটা নির্বাচিত সরকার৷ দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান মেরামত করার প্রয়োজন পড়বে, সংস্কার করতে হবে তাই আমরা জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করছি৷''
তার কথা, ‘‘জাফরুল্লাহ সাহেব তো কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম থেকে কথা বলেননি৷ ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন৷ ব্যক্তি হিসেবে তিনি বলতে পারেন৷ আমাদের দল হয়তো পরে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে৷''
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও নতুন রাজনৈতিক জোট সাত দলের শরিক মাহমুদুর রহমান মান্নার কথা, ‘‘আমরা জাতীয় সরকার কথাটি ব্যবহার করি না৷ সাত দলও করে না৷ একটি অনির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করে আরেকটি গ্রহণযোগ্য সরকার হবে নির্বাচনকে সামনে রেখে৷ আমরা বলি নির্বাচনের আগে একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার৷ তারা কতদিন থাকবে, কী কী কাজ করবে তা আমরা ঠিক করে দেব৷ তাদের মূল কাজ হবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা৷ জাফরুল্লাহ সাহেব যা বলেছেন তা দিয়ে তিনি তার নিজের একটা ইচ্ছা বা অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছেন৷ এটা তিনি করতেই পারেন৷ এটা তিনি ব্যক্তি হিসেবে করেছেন৷ আমাদের সাত দলের সাথে তার কোনো মিল নাই৷ তার মতের সাথে আমাদের মত যায় না৷''
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ মনে করেন, ডা. জাফরুল্লাহ যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা অনির্বাচিত সরকারের ধারায় ফিরে যাওয়ার মত যা ওয়ান ইলেভেনের সময় হয়েছিলো৷ বাংলাদেশে কোনো অনির্বাচিত সরকারের সুযোগ নেই৷
তার কথা, ‘‘যারা জনগণের ভোটে কখনো নির্বাচিত হতে পারবেনা তারাই এই ধরনের সরকারের প্রস্তাব করে৷ তারা বিরাজনীতিকরণের পক্ষে কাজ করছে৷ আর যে লোকটি বার বার বিরাজনীতিকরণের পক্ষে কাজ করেছেন ঘুরে ফিরে তার নামটিই তিনি প্রস্তাব করেছেন৷ বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তা রাজনীতিবিদদের হাত দিয়েই এসেছে৷ এটা মনে রাখতে হবে৷''
তিনি জাতীয় সরকারের এই প্রস্তাব দেয়ায় ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অথরিটি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শান্তনু মজুমদার মনে করেন, এটা কোনো সিরিয়াস রাজনৈতিক প্রস্তাব নয়৷ তবে নির্বাচনের আগে একটা ব্রেইন ষ্ট্রমিং৷
তার কথা, ‘‘এটার মাধ্যমে নির্বাচনকে যেন আমরা এগিয়ে আনার চেষ্টা করছি৷ তবে ভেবে দেখতে হবে এখনই জাতীয় সরকার বা এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় এসেছে কী না৷ তবে তিনি আইন বা সংবিধান বিরোধী কিছু করেননি৷ যদিও আমি এটাকে রাজনৈতিক ফান মনে করি৷''