বিজয়ের ৫১ বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে বিজয় দিবস পালন করছে? তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে কী করছে তারা? অবাক ব্যাপার, সব দলের কর্মসূচিতেই মুক্তিযুদ্ধের গর্বের ইতিহাসই যেন অবহেলিত!
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/ZUMA Wire/IMAGO
বিজ্ঞাপন
দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে ব্যাতিক্রমী বা নতুন কিছু ছিল না৷ শোভাযাত্রা আর দুই-একটি আলোচনা সভায় সীমাবদ্ধ তারা৷ রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি ছিল আগের মতোই৷ প্যারেড গ্রাউন্ডে হয়েছে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ৷
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শুক্রবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী৷ এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন৷
জাতীয় স্মৃতিসৌধে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী৷ছবি: Abdul Halim
বিএনপির চেয়াপার্সন দুনীতির মামলায় দণ্ডিত, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রবাসে এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে থাকায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেন সিনিয়র নেতারা৷ জাতীয় পার্টির পক্ষে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু অন্যান্য নেতাদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানান৷ রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের স্মৃতিসৌধে যাননি৷
সকালের এই কর্মসূচির বাইরে আওয়ামী লীগের আর কোনো বড় কর্মসূচি ছিল না৷ যেসব কর্মসূচি ছিল, তার মধ্যে ছিল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন৷ তারা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি ও ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে৷
অন্যদিকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জনানোর বাইরে বিএনপির কর্মসূচির ছিল বিজয় মিছিল আর জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় মিছিল৷
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে, গণসংহতি আন্দোলন জোনায়েদ সাকির গণ অধিকার পরিষদ নুরুল হক নূরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করে৷ গণফোরাম, গণতন্ত্র মঞ্চ, নাগরিক ঐক্যের পক্ষে ফুল দেয়া হলেও অনেক শীর্ষ নেতাকে দেখা যায়নি৷
তবে কোনো ইসলামী রজনৈতিক দল স্মৃতিসৌধে যায়নি, যায়নি জামায়াতে ইসলামী৷ বিজয় দিবস উপলক্ষে পতাকা র্যালি করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ৷ খেলাফত মজলিস বিকালে আলোচনা সভার আয়োজন করে৷
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি প্রধানত স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল৷ কয়েকটি দল অবশ্য দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে৷
স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘বিএনপি ষড়ন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে৷ তারা মুত্তিযুদ্ধের অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়৷ তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পরাজিত করতে হবে৷’’ অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত করছে৷ মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন , যে চেতনায় দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই গণতন্ত্র আজ ভুলুন্ঠিত৷’’
মুক্তিযোদ্ধা-বিশ্লেষকের চোখে
মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রথম প্রতিরোধে অংশ নেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘‘এখন বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসে রাজনৈতিক দলগুলো যে কর্মসূচি নেয়, তা দলীয় কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে৷ যে যার গুণ গায়৷ ওইসব কর্মসূচি দিয়ে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে তেমন কিছু জানতে পারে না৷ মুক্তিযুদ্ধকে যে যার স্বার্থে ব্যবহার করছে৷’’
শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ হচ্ছে: এস এম কামাল হোসেন
This browser does not support the audio element.
তার কথা, ‘‘মুক্তিযোদ্ধারা এখন ভাগ হয়ে গেছেন৷ তারা আওয়ামী লীগে আছে, তারা বিএনপিতেও আছে৷ আর বিএনপির সাথে আছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত৷ তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেয়!’’
তিনি বলেন, ‘‘বিজয় দিবসের রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোও যেন দায়সারা গোছের৷ পালন করতে হয় তাই যেন করে৷ ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চারিত হয় না৷ আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, তারা হতাশ হচ্ছি৷’’
‘‘বিজয় দিবসের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমরা সবচেয়ে বেশি আশা করি আওয়ামী লীগের কাছে৷ গত ১৫ বছর ধরে তারা ক্ষমতায়৷ এই সময়ে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে৷ কিন্তু আমরা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখনো পাইনি৷ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আরো জোর দেয়া দরকার৷ এখানে কাজ করা দরকার,’’ বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন৷ তার কথা, ‘‘বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসে এই কাজগুলো ভালো করা যায়৷ রাজনৈতিক দলগুলো যদি সেভাবে কর্মসূচি নেয়, তাহলে তা কাজে আসবে৷ আজকে (বিজয় দিবস) যদি দেশব্যাপী একটি কর্মসূচি থাকতো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে, তাহলে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এটা নিয়ে একটা মেসেজ দিতে পারতাম৷’’
তার কথা, ‘‘বিএনপি তো একটা মিক্সার৷ তাই কৌশলগতভাবে এমন কর্মসূচি নিতে হবে যাতে সবাই শামিল হন৷’’
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে: সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স
This browser does not support the audio element.
বড় দুই দলের ভাবনা
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনে করে, বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি আরো বিস্তৃত এবং সর্বব্যাপ্ত করার সুযোগ আছে, তা করা দরকার৷ কিন্তু বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘এখন মিছিল, সমাবেশ করতেও পুলিশের অনুমতি লাগে৷ তাই চাইলেও আমরা অনেক কিছু করতে পারছি না৷” তিনি মনে করেন, "মুক্তিযুদ্ধের ইতহাস বিকৃত করা হচ্ছে৷ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বারোয়ারি করা হচ্ছে৷ এটা বন্ধ করে সঠিক ইতিহাসের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধু কোনো দিবসে নয়, সব সময়ে ছড়িয়ে দিতে হবে৷’’
এর জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘২৮ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে৷ স্বাধীনতাবিরোধীদের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসানো হয়েছে৷ শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১৫ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ হচ্ছে৷ সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়েছে৷ তবে আরো অনেক কাজ বাকি৷’’
তার মতে, ‘‘দিবসকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি আরো বিস্তৃত করা উচিত৷ তবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনো সক্রিয়৷ তারা নানাভাবে এসব কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়৷ তাদের পরজিত করতে হবে৷’’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আদ্যপান্ত
বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে কয়েকজন মুক্তিপাগল মানুষের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ সেই জাদুঘর নিয়েই এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
যাত্রা শুরু
১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচার একটি পুরনো বাড়ি ভাড়া নিয়ে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর৷ আটজন ট্রাস্টির উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও উপস্থাপনের প্রয়াস নিয়েই যাত্রা হয় এই জাদুঘরের৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নতুন ঠিকানায়
ভাড়া বাড়ির স্থান-স্বল্পতার কারণে সংগৃহীত স্মারকগুলো যথাযথভাবে প্রদর্শন করা সম্ভব না হওয়ায় ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আগারগাঁও এলাকায় জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়৷ ২০১১ সালের ৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন৷ প্রায় ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় জাদুঘরের নয়তলা ভবন৷ ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল নতুন ভবনে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বীরশ্রেষ্ঠদের প্রতীক
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সামনে সাত বীরশ্রেষ্ঠর প্রতীক হিসেবে প্রাচীন স্থাপত্যরীতির সাতটি স্তম্ভ রাখা হয়েছে৷ এই স্তম্ভগুলো নওগাঁ জেলার পত্নীতলায় দিবর দিঘিতে স্থাপিত একাদশ শতকের রাজা দিব্যকের স্তম্ভের অনুকৃতি৷ ঐতিহাসিকদের মতে, দিব্যকের সেই স্তম্ভই বাংলার প্রথম বিজয়স্তম্ভ৷ এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশিদের অবিস্মরণীয় বিজয়ের স্মারক হিসেবে এই স্তম্ভগুলো স্থাপন করা হয়েছে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বিশাল সংগ্রহশালা
মুক্তিযুদ্ধের নানান স্মারক, মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের ব্যবহৃত সামগ্রী, অস্ত্র, দলিল, চিঠিপত্র ইত্যাদি মিলিয়ে ১৭ হাজারের বেশি নিদর্শন রয়েছে জাদুঘরের বিশাল সংগ্রহশালায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শিখা অম্লান
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম তলায় রয়েছে শিখা অম্লান৷ কালো মার্বেল পাথরে পানির ভেতর থেকে জ্বলছে সেই শিখা৷ উদ্বোধনের আগে সেগুনবাগিচার পুরোনো ভবন থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও নতুন প্রজন্মের ৭১ জন মানুষ হেঁটে শিখা অম্লানটি নতুন জাদুঘরে নিয়ে আসেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য
জাদুঘরের প্রথম তলায় শিখা অম্লানের পাশে স্থাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জ নির্মিত ভাস্কর্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত বিমান ও হেলিকপ্টার
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম তলার দুইপাশে ছাদের সঙ্গে আটকানো রয়েছে একটি যুদ্ধবিমান ও একটি হেলিকপ্টার৷ একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল বিমান ও হেলিকপ্টারটি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রথম গ্যালারির নাম ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’৷ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান পর্ব, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়ে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত দেশের ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে এ গ্যালারিতে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
প্রথম গ্যালারিতে আর যা কিছু
‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’ গ্যালারিতে আরও আছে ফসিল, প্রাচীন টেরাকোটা, মৃৎপাত্র, শিলাখণ্ডসহ নানা প্রকার নিদর্শনসহ ঐতিহাসিক ঘটনা ও ব্যক্তির আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
দ্বিতীয় গ্যালারি
জাদুঘরের দ্বিতীয় গ্যালারির নাম ‘আমাদের অধিকার আমাদের ত্যাগ’৷ এই গ্যালারি থেকেই দর্শক সরাসরি ঢুকে পড়বেন মহান মুক্তিযুদ্ধের পর্বে৷ স্বাধীনতার দাবিতে রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭০ সালের ৩ জানুয়ারির সমাবেশ, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি৷ মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল আর গুলির বাক্সসহ আছে শহিদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
অপারেশন সার্চলাইট
দ্বিতীয় গ্যালারির একটি অংশে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের গণহত্যার চিত্র৷ অন্ধকার এই গ্যালারিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ইটের দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকছে হেডলাইট জ্বালানো একটি সামরিক যান৷ গাড়ির সেই আবছা আলোয় দেখা যাবে মেঝের চারপাশে পড়ে থাকা গুলিতে নিহত মৃতদেহ৷ আর দেয়ালে আছে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে চালানো গণহত্যার আলোকচিত্র৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তৃতীয় গ্যালারি
জাদুঘরের তৃতীয় গ্যালারিটি চতুর্থ তলায়৷ এর নাম ‘আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র’৷ এখানে আছে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের জীবনযাত্রা, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বড় আকারের ডিজিটাল প্রিন্ট৷ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ হওয়া, রাজাকারদের তৎপরতা, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা যুদ্ধের আশ্রয়স্থল এসব৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
তৃতীয় গ্যালারিতে আরো আছে পণ্ডিত রবিশঙ্করের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ বিটলসের বিখ্যাত শিল্পী জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ গানের জর্জের নিজ হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি ও সুরের স্টাফ নোটেশন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
চতুর্থ ও সবশেষ গ্যালারি
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সর্বশেষ গ্যালারিটির নাম ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবোধ’৷ এতে আছে নৌযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন৷ বিলোনিয়ার যুদ্ধের রেলস্টেশনের রেলিং, ট্রলি ইত্যাদি৷ এছাড়া আছে মিত্রবাহিনীর ছত্রীসেনাদের আক্রমণ, দগ্ধ বাড়িঘর৷ সবশেষে বিজয় অর্জন৷ শেষ হয়েছে ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের অনুলিপিটি দিয়ে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ভ্রাম্যমাণ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
বাংলাদেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় জেলায় ঘুরে প্রদর্শনী করা হয়৷ ২০০১ সাল থেকে দু’টি বড় বাসের মাধ্যমে এ ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর ইতিমধ্যেই ৬৪ জেলা ভ্রমণ করেছে, তুলে ধরেছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
সময়সূচি ও অন্যান্য তথ্য
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গ্রীষ্মকালীন (মার্চ-সেপ্টেম্বর) সময়সূচি সকাল ১০টা-বিকেল ৬টা৷ আর শীতকালীন (অক্টোবর-ফেব্রুয়ারি) সময়সূচি হলো সকাল ১০টা-বিকাল ৫টা৷ রোজার মাসে জাদুঘর খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত৷ জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ রোববার৷ প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা৷