নেতারা ‘সংসদে না, চ্যানেলে যান’
২ মে ২০১৩‘দেশ গুণিজন পদক ২০১৩' গ্রহণ করতে গত সপ্তাহে জার্মানি সফর করেন ফরিদুর রেজা সাগর৷ ফ্রাংকফুর্টে দেশ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয় তাঁকে৷ ২৭ এপ্রিল এক বৈশাখি আড্ডায় সম্মাননা গ্রহণের ফাঁকেই ডয়চে ভেলেকে সময় দেন এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব৷ বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই'-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি৷
ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের শুরুতেই একটি বিষয় উল্লেখ করেন ফরিদুর রেজা সাগর৷ চ্যানেল আই-এর বার্তাকক্ষের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নন তিনি৷ ফলে পেশাদারি দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তাঁর পক্ষে জটিল৷ অবশ্য এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক ইস্যু থেকে দূরে সরে যাননি তিনি৷ বরং ‘টক শো' বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরিই তিনি বললেন, ‘‘আমাদের দেশের সংসদে সরকারি দলের এবং বিরোধী দলের নেতারা যাননা, কিন্তু টেলিভিশন চ্যানেলে তাঁরা যান৷''
স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ক্ষেত্র ‘টক-শো'
ফরিদুর রেজা সাগরের এই মন্তব্য থেকে টক-শো'র বর্তমান গুরুত্বটা টের পাওয়া যায়৷ কার্যত বাংলাদেশে মাঝরাতে রাজনৈতিক আলোচনার অনুষ্ঠান, যা এখন ‘টক-শো' নামে পরিচিত, সেটির শুরুটা তাঁর চ্যানেল থেকেই হয়েছিল৷ তিনি এ ধরনের অনুষ্ঠানকে বিবেচনা করেন স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের ক্ষেত্র হিসেবে৷ যেখানে নিজ নিজ অবস্থান থেকে খোলামেলা কথা বলতে পারেন রাজনীতিবিদরা, পারেন ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে৷
কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টক-শোর সমালোচনা করেছেন একাধিকবার৷ সর্বশেষ সাভারে ভবন ধসের পরও টক-শোতে অংশ নেওয়াদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘‘টক শোতে বড় বড় কথা না বলে উদ্ধারকাজে সহযোগিতা করুন৷ অন্তত একটি মানুষকেও উদ্ধার করে প্রমাণ করুন, আপনারাও উদ্ধারকাজে ছিলেন৷'' সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো৷
স্বাভাবিকভাবেই ফরিদুর রেজা সাগরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, টক শো নিয়ে সরকার প্রধানের এই অবস্থান কি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে না? এই প্রশ্নের উত্তর তিনি দিলেন একটু ভিন্নভাবে৷ সাগর বলেন, ‘‘চাপটা আসলে সবার দিক থেকেই আসতে পারে৷ যখন আমরা জনগণের পক্ষে কথা বলি, তখন জনগণ একরকম কথা বলে, সরকার পক্ষ একরকম বলে, বিরোধী দল একরকম বলে৷ সুতরাং এটাকে চাপ না বলে আমি বরং বলতে চাই, সবাই যে অনুষ্ঠানগুলো সম্পর্কে সচেতন, সেটিরই প্রমাণ আমরা পাই৷''
প্রসঙ্গ: পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি চ্যানেল
ফরিদুর রেজা সাগর গর্বের সঙ্গেই জানালেন, চ্যানেল আই পৃথিবীর ছয়টি মহাদেশেই প্রচার হয়৷ ফলে দেশে-প্রবাসে বাংলা ভাষাভাষীরা খুব সহজেই এই চ্যানেলটি দেখতে পান৷ স্বভাবতই এই বক্তব্যের পর আরেকটি বিষয় জানতে চাওয়া হয় তাঁর কাছে৷ ভারতে বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি চ্যানেল প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ‘সমস্যা' রয়েছে বলে দীর্ঘদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে৷ আসলে সমস্যাটা কি? এমন প্রশ্নের উত্তরে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাগর জানালেন, বাধাটা আসলে রাজনৈতিক নয়, বাণিজ্যিক৷ ভারতে কেবেল যে সিস্টেমে চলে, সেখানে ‘ক্যারিজ ফি' বলে একটি শব্দ আছে৷ এই ক্যারিজ ফি যদি ভারতীয় কেবেল অপারেটরকে না দেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশি চ্যানেল দেখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, বিশেষ করে বড় কেবেল অপারেটরদের আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে৷ তবে তাদের আওতাভুক্ত এলাকাগুলোর বাইরে বাংলা চ্যানেল দেখানো হয়৷ ফলে এটি কোনো রাজনৈতিক জটিলতা নয়, ব্যবসায়িক জটিলতা৷
পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি চ্যানেলের প্রদর্শন নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন নন ফরিদুর রেজা সাগর৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বিষয়টি পরিষ্কারভাবেই জানিয়েছেন তিনি৷ এরকম আরো অনেক বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন তিনি৷ সেসব কথা শুনতে চাইলে ক্লিক করুন এখানে৷