রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে ব্যাংকে পুরনো ৫০০, ১০০০ টাকার নোট জমা দেওয়ার কোনো ঊর্ধসীমা নেই৷ কিন্তু এই ঘোষণার পরও ভরসা পাচ্ছে না কোনো দল৷ তাহলে কি বিরোধী দলগুলোর জন্যে আসলে একটা ফাঁদ পেতেছেন প্রধানমন্ত্রী?
বিজ্ঞাপন
ভারতে পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাজারে এখন একেবারেই অচল৷ সরকারি ওষুধের দোকান, জাতীয় সড়কের টোল প্লাজা, পেট্রল পাম্প, ট্রেন ও সরকারি বাসের টিকিট, সম্পত্তি এবং জলকর মেটানোর ক্ষেত্রে পুরনো নোট নেওয়ার যে ছাড় দেওয়া ছিল, তা পর্যায়ক্রমে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ এখন একমাত্র উপায়, ব্যাংকে, নিজের অ্যাকাউন্টে পুরনো টাকা জমা করা৷ তবে তারও ঊর্ধসীমা আছে৷ এবং এই পুরনো টাকা জমা দেওয়ার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর৷ এইরকম একটা পরিস্থিতিতে হঠাৎই সরকারের তরফ থেকে অযাচিতভাবে ঘোষণা করা হলো – রাজনৈতিক দলগুলির ক্ষেত্রে টাকা জমা দেওয়ার কোনো ঊর্ধসীমা নেই৷ শুধু তাই নয়, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলি যে আয়করের আওতায় পড়ে না, তাদের চাঁদা নেওয়ার ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা বা তার কম অঙ্কের ক্ষেত্রে দাতার নাম জানানোটাও যে জরুরি নয়, সেটাও মনে করিয়ে দেওয়া হলো৷ নেহাত অকারণেই৷
আবার সম্ভবত অকারণে নয়৷ সেটা বোঝা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির সতর্ক প্রতিক্রিয়ায়৷ এমন নয় যে এই বিশেষ ছাড়ের ব্যাপারটা কোনো দলের মনে ছিল না৷ কিন্তু মনে করিয়ে দেওয়ার পরও কোনো দলকেই দেখা যাচ্ছে না ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিতে৷ কেউ বলছেন, সরকার আসলে কালো টাকার মজুতদারদের মনে করাল যে তাদের বাতিল হয়ে যাওয়া টাকা অন্তত রাজনৈতিক দলগুলোকে চাঁদা হিসেবে দিয়ে ভারমুক্ত হওয়া যেতে পারে৷ কিন্তু সেই ধারণা একেবারেই ঠিক নয় কারণ, প্রথমত দলগুলো যে কারণে চাঁদা তোলে, মূলত ভোটের প্রচারের খরচ তুলতে, সেই খরচের ওপর নির্বাচন কমিশন কড়া নজর রাখছে বেশ কিছু বছর ধরে৷ খরচের ঊর্ধসীমাও বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে৷ আর দ্বিতীয়ত, বিশেষত শিল্প সংস্থাগুলির টাকায় রাজনৈতিক দলগুলির ভোটের খরচ মেটানোর চিরাচরিত পদ্ধতিতে রাশ টানার চেষ্টা হচ্ছে৷ কারণ এই খরচ জোগানোর বিনিময়ে শিল্প সংস্থাগুলি নির্বাচিত সরকারের কাছে নানা ধরনের অন্যায় সুযোগ-সুবিধে নেওয়ার চেষ্টা করে ভবিষ্যতে৷ ভারতে বহু দুর্নীতির উৎসই এই বিনিময় ব্যবস্থা৷ যে কারণে সরকারি খরচে ভোট করার প্রস্তাব নিয়ে ইদানীং চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে৷ ঠিক যেভাবে খরচ বাঁচাতে লোকসভা এবং বিধানসভার ভোট একসঙ্গে করার কথা ভাবছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার৷
নোট বাতিলের পর ভারতের নাজেহাল অবস্থা
ভারতে ৫০০ আর ১,০০০ টাকার নোট বাতিল হয়েছে৷ কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেবার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ কাজেই হয়রান ও অধৈর্য হচ্ছেন মানুষ, দানা বাঁধছে রাজনৈতিক প্রতিরোধ৷
ছবি: REUTERS/File Photo/A. Dave
টাকা বাতিলে আতঙ্ক সর্বত্র
৮ই নভেম্বর ২০১৬ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন যে, ৯ই নভেম্বর থেকে পাঁচশ’ ও হাজার টাকার নোট বাতিল করা হচ্ছে৷ পরের বৃহস্পতিবার থেকেই ব্যাংকে ঢুকে টাকা বদল করার জন্য মানুষের ভিড় ও ধস্তাধস্তি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Altaf Qadri
লেডিজ ফার্স্ট
নতুন দিল্লির একটি ব্যাংকে নোট বদলানোর জন্য মহিলাদের আলাদা লাইন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Qadri
ব্যাংক কর্মীরাও ব্যতিব্যস্ত
আসামের গুয়াহাটির একটি ব্যাংকে এক ব্যাংক কর্মী নোট তুলে ধরে দেখছেন, তা সাচ্চা কিনা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
অনন্ত প্রতীক্ষা
রাজধানী নতুন দিল্লির একটি ব্যাংকের সামনে সুদীর্ঘ লাইন৷ ধীরে ধীরে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে, যদিও বাড়ছে অসন্তোষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Das
ভুক্তভোগী
মুম্বইতেও মানুষজন লাইন করে দাঁড়িয়েছেন, টাকা বদলানোর আশায়৷ কিন্তু বয়স্ক মানুষদের জন্য কোনো আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়নি৷ চূড়ান্ত অসুবিধেয় পড়েছেন পেনশনভোগী ও ‘দিন-আনি-দিন-খাই’ সাধারণ মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kakade
প্রতিরোধ দানা বাঁধছে
সোমবার, ২৮শে নভেম্বর ভারত বনধ-এর ডাক দেয় বিরোধীরা৷ দেশ জুড়ে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়৷ ছবিতে বনধের দিনে মুম্বই৷
ছবি: Getty Images/AFP/I. Mukherjee
ধর্মঘটের দিনেও টাকা বদলানোর লাইন
দৃশ্যটা কলকাতার৷ ২৮শে নভেম্বর ১২ ঘণ্টা বনধের ডাক দিয়েছিল বামফ্রন্ট৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যা সমর্থন করেননি৷ জানিয়েছিলেন, জনজীবন স্বাভাবিক থাকবে৷ বস্তুত পশ্চিমবঙ্গে ছিলও তাই৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar
‘দিদি’ মাঠে নামলেন
সোমবার আঠাশে নভেম্বর কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার থেকে ধর্মতলা অবধি মিছিল করেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ সেদিন নরেন্দ্র মোদীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার হুমকিও দেন তিনি৷ মমতা আগামী ৬ই ডিসেম্বর অবধি এক বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
8 ছবি1 | 8
প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কেন রাজনৈতিক দলগুলির প্রাপ্য বিশেষ সুবিধের কথা মনে করিয়ে দিল সরকার? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি একটা আপত্তি তুলেছেন যে, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষকে কেন আলাদা করে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে! যে সুবিধে রাজনৈতিক দলগুলির প্রাপ্য, সেই একই সুবিধে দেশের নাগরিকদেরও পাওয়া উচিত৷ এবং উল্টোটা৷ কোনো বৈষম্য থাকা উচিত নয়৷ মমতার ক্ষোভ, মোদী সরকার আসলে চেষ্টা করছে দেশের মানুষ আর রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে৷ মোদী সরকার তাদের নিজেদের দল বিজেপি-কে উদ্দেশ্য করেই এই বিশেষ সুবিধের ইঙ্গিত দিয়েছেন বলেও তৃণমূল নেত্রীর সন্দেহ৷ যদিও নিজের দলকে এরকম কোনো বার্তা দিতে হলে, সেটা গোপনে দেওয়াই স্বাভাবিক, প্রকাশ্যে ঘোষণা করে নয়৷
তাই এক বড় অংশের সন্দেহ, আসলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির জন্যে একটা ফাঁদ পাতলেন নরেন্দ্র মোদী৷ কারণ বড় অঙ্কের নোট বাতিলের পর থেকেই ব্যাংকে ব্যাংকে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ পর্যন্ত সংরক্ষিত রাখতে বলা হয়েছে৷ নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে দেশের সব ব্যাংকে বড় অঙ্কের লেনদেনের ওপর৷ নোট বাতিলের পর থেকে আয়কর দপ্তর অন্তত ৬০০টি অভিযান চালিয়েছে দেশজুড়ে৷ সোনার দোকান, জমি-বাড়ি, কোনো বড় অঙ্কের লেনদেন আয়কর নজরের বাইরে থাকছে না৷ এমনকি অবৈধ উপার্জনের স্বেচ্ছা ঘোষণা প্রকল্পে যাঁরা নিজেদের বেআইনি টাকার মজুত স্বীকার করে নিয়েছিলেন, দ্বিতীয়, কিংবা তৃতীয় আয়কর হানার থেকে তাঁরাও রেহাই পাচ্ছেন না৷ আচরণেই পরিষ্কার, সরকার কাউকেই বিশ্বাস করছে না৷ ফলে সরকারের ওপরেও আর কারও বিশ্বাস নেই, যারা এখনও ঘরে কালো টাকা মজুত রেখেছে৷ রাজনৈতিক দলগুলির ভরসা করার তো প্রশ্নই নেই, বরং সবাই অপেক্ষায়, মোদী সরকারের পরের পদক্ষেপ কী হতে চলেছে!
বেশি বেতন পাওয়া সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা
কোন দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান সবচেয়ে বেশি বেতন পান? ছবিঘরে দেখুন তেমন কয়েকজনের বাৎসরিক বেতনের তালিকা৷
ছবি: Reuters
সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী
রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন পান সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং৷ তার বাৎসরিক বেতন ১৬ লাখ দশ হাজার ডলার৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Rahman
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেতন পান হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী কেরি লাম৷ তার বাৎসরিক বেতন পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার চারশ’ ডলার৷
তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রপতি৷ তার বাৎসরিক বেতন চার লাখ ৮২ হাজার নয়শ’ ৫৮ ডলার৷
ছবি: picture-alliance/robertharding
মার্কিন প্রেসিডেন্ট
বেশি বেতন পাওয়াদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ জো বাইডেনের বাৎসরিক বেতন চার লাখ ডলার৷
ছবি: Evan Vucci/AP/picture alliance
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী
তালিকার পঞ্চম স্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন৷ তার বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৭৮ হাজার চারশ’ ১৫ ডলার৷
ছবি: Sam Mooy/Getty Images
জার্মান চ্যান্সেলর
জার্মান চ্যান্সেলরের বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৬৯ হাজার ৭২৭ ডলার৷
ছবি: Clemens Bilan/Getty Images
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্নের বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৩৯ হাজার আটশ’ ৬২ ডলার৷ বেশি বেতন পাওয়া রাষ্ট্র প্রধানদের তালিকায় আট নাম্বারে আছেন তিনি৷
ছবি: Mark Mitchell/New Zealand Herald via AP/picture alliance
মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট
আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট বেশি বেতন পাওয়াদের তালিকার নয় নাম্বার স্থানে আছেন৷ তার বাৎসরিক বেতন তিন লাখ ৩০ হাজার ডলার৷ দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন মোহামেদ ঔল্ড গাজুয়ানি৷
ছবি: Reuters/R. Duvignau
লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রী
তালিকার দশ নাম্বারে আছেন ইউরোপের ছোট্ট, ধনী দেশ লুক্সেমবুর্গের প্রধানমন্ত্রী৷ দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হলেন জাভিয়ার বেটেল৷ তার বাৎসরিক বেতন দুই লাখ ৭৮ হাজার ৩৫ ডলার৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
নরেন্দ্র মোদী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বছরে ৩০ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার বেতন পান৷ দেশটির হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা জানায়, করোনার মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে নিজের বেতন শতকরা ৩০ ভাগ কমিয়েছেন মোদী৷
ছবি: Getty Images/AFP/R. Rahman
শেখ হাসিনা
২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মাসিক বেতন ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা করা হয়৷ মে মাসে এ সংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়৷ বেতন বাড়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বছরে মোট বেতন দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা ১৭ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার৷