বিতর্কিত ফরাসি ব্যক্তিত্ব এরিক জিমুর। অতি দক্ষিণপন্থি এই রাজনীতিক তথা লেখক বিখ্যাত এবং বিতর্কিত তার লিবারালবিরোধী অবস্থানের জন্য। ফ্রান্সের অভিবাসন সমস্যা নিয়েও তার নির্দিষ্ট অবস্থান আছে।
রোববার এরিক প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার শুরু করেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি লড়াই করবেন। রোববার প্যারিসে সমর্থকদের নিয়ে তিনি বেশ বড়সড় একটি মিছিলের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বিরোধী শিবিরও প্রতিবাদ জানাতে তৈরি ছিল। মিছিল বার হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই এক ব্যক্তি নিরাপত্তার বেষ্টনী ভেঙে এরিকের একেবারে সামনে পৌঁছে যান। পুলিশ তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। সভাস্থলে অভিবাসনের পক্ষে আন্দোলনরত একাধিক সংগঠন জড়ো হয়। পোস্টার এবং প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা বিক্ষোভ দেখায়। অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের উপর চড়াও হয় এরিকের সমর্থকরা। তাদের মারধর করা হয়। পুলিশ সেখানেও হস্তক্ষেপ করে এবং বিক্ষোভকারীদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয়।
পাচারকারীর টাকা তুলতে ফ্রান্সে মাহমুদের সংগ্রাম
ইউরোপে স্থায়ী হতে ইরাক থেকে প্রথমে সুইডেনে যান মাহমুদ৷ সুইডেনে থাকা হয়নি৷ ফ্রান্স থেকে ব্রিটেনে যাওয়াও হয়ে ওঠেনি টাকার অভাবে৷ এখন চা, স্যান্ডউইচ বিক্রি করে টাকা জমাচ্ছেন মাহমুদ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Juan Medina/REUTERS
ভাগ্যগুণে বেঁচে আছেন মাহমুদ
দাওয়ান আনোয়ার মাহমুদ৷ ৩০ বছর৷ কয়েকদিন আগে পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন ফ্রান্স থেকে নৌকায় ব্রিটেনে পৌঁছে দিতে৷ কিন্তু নৌকার পরিস্থিতি দেখে আর সাহস হয়নি৷ ডুবে মরার ভয়ে পাচারকারীকে জানিয়ে দেন এই দফা তিনি যাবেন না৷ না গেলেও টাকা ফেরত পাননি৷ উল্টে পাচারকারীর লোকজন তাকে পিটিয়েছে, মোবাইল কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেছে৷ তারপর আবার আশায় বুক বেঁধেছেন মাহমুদ৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
অস্থায়ী তাঁবুতে মানবেতর জীবন
গত সপ্তাহে মাহমুদ ছিলেন ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলের দুঁকির্ক অঞ্চলের রেল লাইনের কাছের জঙ্গলে গড়ে তোলা অস্থায়ী তাঁবুতে৷ শীতে এমন জায়গায় বাস করা খুব কঠিন৷ প্রচণ্ড ঠান্ডার সঙ্গে বৃষ্টি যোগ হলে গাছের ডাল, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি না পুড়িয়ে আগুন না পোহালে তাঁবুতে বেঁচে থাকা মুশকিল৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
বারবার নতুন ঠিকানায়
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার পরের দিনই মাহমুদ জানতে পারেন, ফ্রান্সের পুলিশ তাদের এই জায়গা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে৷ সুতরাং আবার যেতে হবে নতুন ঠিকানায়৷ আরেক জায়গায় শুরু হবে অস্তিত্ব রক্ষার অবর্ণনীয় কষ্ট৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
ইরাক থেকে যেভাবে ফ্রান্সে...
১০ বছর আগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ইরাকের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল তাকে৷ ছয় মাসের জেল হলো৷ জেলে পুলিশের নির্যাতনে একটা পায়ে স্থায়ী সমস্যা দেখা দিলো৷ ২০১৫ সালে দেশ ছাড়লেন৷ সুইডেনে চলে গেলেন বোনের কাছে৷ ছয় বছর চেষ্টা করেও সেখানে থাকতে পারেননি৷ তার অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্য্যান করে সুইডেন সরকার৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
অস্থায়ী তাঁবুতেই বাড়তি আয়
সুইডেনে থাকার সময় কুর্দিদের এক রেস্তোরাঁয় কাজ করতেন মাহমুদ৷ ওই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এখন অস্থায়ী তাঁবুতেও বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন৷ স্যান্ডউচ, চা, কাবাব, রুটি, মুরগির কলিজা ইত্যাদি রান্না করে যা আয় হয় তা থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন৷ পাচারকারীকে টাকা দিতে হবে, পাচারকারী তাকে নিরাপদে ব্রিটেনে পৌঁছে দেবে- এই স্বপ্ন স্থায়ী হয়ে গেছে মাহমুদের মনে৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
নিরাপদ যাত্রা ব্যয়বহুল
ব্রিটেনে যাওয়ার জন্য এক পাচারকারীকে ১৬০০ পাউন্ড দিয়েছিলেন মাহমুদ৷ নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে দেখেন নৌকায় তিল রাখার জায়গা নেই৷ ছোট নৌকায় ৪৮ তম যাত্রী হওয়ার সাহস হয়নি বলে পিটুনি খেয়ে, মোবাইল হারিয়েও ফিরে এসেছেন মাহমুদ৷ তবে আশা ছাড়েননি৷ ভাবছেন ২৫০০ থেকে ৩০০০ পাউন্ড খরচ করে কম মানুষ নেয়া হয় এমন নৌকায় যাবেন৷ আরেকটু বেশি টাকা জমাতে পারলে যাবেন ট্রাকে৷ ট্রাকে যেতে চাইলে ৪০০০ পাউন্ড দিতে হবে মানবপাচারকারীকে৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
দৈনিক আয়
স্যান্ডউইচ, চা, কাবাব, রুটি ইত্যাদি বিক্রি করে দিনে ৪০ থেকে ৭০ ইউরো আয় করেন মাহমুদ৷ তবে পুরো টাকা সঞ্চয় করতে পারেন না৷ নিজের খাওয়ার খরচ তো আছেই, পাশাপাশি দুজন সহকারীকে প্রতিদিন দিতে হয় ২৫ ইউরো৷
ছবি: Juan Medina/REUTERS
লক্ষ্যে স্থির মাহমুদ
সুইডেনে থাকতে পারেননি৷ ফ্রান্সেও মেলেনি উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা৷ তাতে কী! মাহমুদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য একটাই এবং সেই লক্ষ্যের কথা সরাসরিই জানান সবাইকে, ‘‘আমার কাছে ফ্রান্স বা ইউকে বা জার্মানি বা বেলজিয়াম- সবই সমান৷ আমি এখানে এসেছি নতুন করে জীবন শুরু করতে৷ এখনো তা-ই চাই৷’’
ছবি: Juan Medina/REUTERS
8 ছবি1 | 8
এক সময় নিয়মিত টেলিভিশনে অভিবাসনবিরোধী বক্তব্য পেশ করতেন এরিক। এদিন সভায় তিনি বলেছেন, সুযোগ পেলে ফ্রান্সের মানুষকে এক নতুন দেশ উপহার দেবেন তিনি। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এর আগেও অভিবাসন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তিনি।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম এরিকের ১৫ বছর আগে লেখা একটি বিতর্কিত বই নিয়ে নতুন করে মন্তব্য করতে শুরু করেছে। এরিক বলেছেন, ''বিরোধীরা আমায় রাজনৈতিকভাবে শেষ করতে চেষ্টা করছে। সংবাদমাধ্যম সামাজিকভাবে একঘরে করার চেষ্টা করছে। আর জেহাদিরা মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ফ্রান্সের মানুষ আমার সঙ্গে আছেন।''
এদিনের ঘটনার পর বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, এরিকের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই জারি থাকবে। তার মতো দক্ষিণপন্থি রাজনীতিককে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া হবে না।