1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে অর্থ পাচার বন্ধ করা যায়'

২৬ জানুয়ারি ২০২৪

অবস্থাটা এমন যেন অর্থপাচার চলছে এবং চলবে৷ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে অনেক৷ কিন্তু পাচার রোধ করা যাচ্ছে না৷

বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি আছে, ওরা মিটিং করে, কার্যকর কিছু করতে দেখি নাই: সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

অর্থপাচারের ব্যাপকতা, এর ক্ষতি, পাচার রোধে ব্যর্থতার কারণ এবং রোধের উপায় নিয়ে ডয়েচে ভেলের সঙ্গে কথা  বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ৷

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না কেন?

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: এটার মূল দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের। বাংলাদেশ তো এগমন্ট গ্রুপ (অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সংগঠন)-এর সদস্য। এগমন্ট গ্রুপ অর্থ পাচার রোধে সহায়তা করে। তথ্য বিনিময় করে। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ওরা যোগাযোগ করে। আমি গভর্নর থাকার সময় (২০০৫ সালের ১ মে থেকে ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল) নেপাল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ আরো কিছু দেশের সঙ্গে আইনগত চুক্তি হয়েছিল। ওর মাধ্যমে পাচার হওয়া টাকার ব্যাপারে তথ্য নিয়ে অ্যাকশন নিতে হয়। ওরা চায় যে, আমাদের দেশে আগে মামলা চালু হোক, তারপর তারা তথ্য দেবে। আর মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স (এমএলএ) বলতে একটা বিষয় আছে। এর সহায়তায় অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের  মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থের ব্যাপারে সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু আপনি বাংলাদেশে দেখবেন না যে, এগুলো কাজে লাগিয়ে তেমন কিছু করা হচ্ছে। এটা বাংলাদেশ ব্যাংক সিরিয়াসলি দেখছে না। দেখছি, দেখবো বলে পাশ কাটিয়ে যায়। এখানে অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও অ্যান্টি করাপশন কমিশন (দুদক) এবং সিআইডির একটা রোল আছে। তাদের সহযোগিতায় এগুলো করা উচিত। কিন্তু ইন্টার এজেন্সির যে কো-অর্ডিনেশন, সেটা এখানে নাই। একটা কমিটি আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। ওরা মিটিং-টিটিং করে। কিন্ত তেমন কার্যকর কিছু করতে আমি দেখি নাই। অন্যান্য দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকের সাথে কো-অর্ডিনেট করে, কিন্তু আমাদের দেশে করে না।

সুইস ব্যাংকে কোনো ঝামেলা হলে সেন্ট্রাল ব্যাংক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারেও তেমন সিরিয়াস না, গড়িমসি করে। তারাও (সুইস ব্যাংক) দেখে যে,  সংশ্লিষ্ট দেশের এজেন্সিগুলো কতটা অ্যাক্টিভ, সেটা দেখে সহায়তা করে।

 আপনি তো অর্থ পাচার হওয়ার পরে কী করা দরকার তা বলছেন। কিন্তু পাচার হওয়ার আগেই পাচার বন্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়?

আমদানি-রপ্তানিতে ওভার এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা অর্থ পাচার করেন। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংককে এলসি দেখতে হবে। কী দাম ধরা হচ্ছে, মেশিনারিজের দাম কত- এটা তো এখন অনলাইনেই জানা সহজ। আরেকটা হলো মালটা আসছে কিনা। সেটা তো কাস্টমস দেখবে। কন্টেইনার খালি আসে। একটার বদলে আরেকটা আসে। কয়েকবছর আগে কয়েক লাখ দামি ঘড়ি এসেছে ডিউটি ফ্রি, অন্য পণ্যের নামে। এটা তো ডিউটি ফ্রি আসার কথা না। এগুলোর ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট দুর্বলতা আছে। দু-একটা ধরা হয় স্যাম্পল হিসেবে। বাকিগুলো ধরা হয় না।

আপনি তো বাণিজ্যের নামে অর্থ পাচারের কথা বলছেন, ব্যবসায়ীদের  কথা বলছেন। কিন্তু আমরা তো হুন্ডির মাধ্যমেও অর্থ পাচারের কথা শুনি...

হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অনেক টেকনিক আছে। যেমন এখন প্রবাসীদের আয় কালেক্ট করে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুরে আর মেসেজের মাধ্যমে এখানে টাকাটা দিয়ে দেয়া হয়। এবার এখান থেকে যারা পাচার করতে চায়, তারা বলে এখানে টাকা দিচ্ছি ওখানে আমাকে ডলার দাও। ফলে দেশের বাইরে থেকে প্রবাসী আয়ের বৈদেশিক মুদ্রা আসছে না। দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেকের  অবৈধ টাকা আছে। বাংলাদেশি টাকা তো আর দেশের বাইরে নিয়ে লাভ নেই। এখানে টাকা দেয়, দেশের বাইরে তার বিনিময়ে বিদেশি মুদ্রা নেয়। এভাবে টাকা পাচার হয়ে যায়। এগুলোর ব্যাপারে সেন্ট্রাল ব্যাংক দেখতে পারে। কার অ্যাকাউন্টে কত টাকা আছে, ক্যাশ টাকা কিভাবে ট্রানজেকশন হচ্ছে এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে চিহ্নিত করতে পারে। কিন্তু এগুলোর ব্যাপারে কাজ করে বলে মনে হয় না। আর টাকা পাচার ঠেকানোর আগে তো অবৈধ আয়, ঘুস, দুর্নীতি এগুলো দেখতে হবে।

ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে তো আপনি বললেনই। কিন্তু এমপি, মন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তা তাদের ব্যাপারেও অভিযোগ আছে টাকা পাচারের। তারা এত অর্থ পান কোথায়?

এটা তো অবৈধ আয়, দুর্নীতি। যখন দেখবেন একজন এমপির দুই-তিনটা বাড়ি আছে অ্যামেরিকায়, তখন সেন্ট্রাল ব্যাংক তো তদন্ত করতে পারে যে, সে কোথা থেকে এই টাকা পেলো। তার বেতন কত. কত টাকা ট্যাক্স দেয়? আর এ ব্যাপারে দুদক সিরিয়াসলি কিছু করে বলে আমার মনে হয় না। দুদক তো এখন ডাইরেক্টেড। উপর থেকে বললে তারা কিছু করে। কেউ ১০ লাখ টাকা পাচার করলে তার নামে মামলা হয়। কিন্তু এক হাজার কোটি টাকা পাচার করলেও তার নামে মামলা হয় না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, কমিটমেন্ট না থাকলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করবে না। এটা আমাদের একটা দুর্বলতা।

বাংলাদেশে অপরাধীরা মাল্টিপল নাম্বারে বাড়ছে: ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

This browser does not support the audio element.

আপনি বলছিলেন আইনের আওতায় আসতে তেমন দেখছেন না। কিন্তু আইন তো আছে, নাকি নেই?

অবশ্যই আইন আছে। অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইন আছে। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশনে বাংলাদেশও তো সই করেছে। ওটার আন্ডারে তো বাংলাদেশের অনেক কিছু করার আছে।

রাজনৈতিক সদিচ্ছার কথা বলছিলেন। যারা সরকারে থাকে, তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছাই তো বড়। গত ১৫ বছরই যদি ধরি, তাহলে তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা কতটা দেখেছেন?

না খুব যে সদিচ্ছা আমি দেখিনি। আমি থাকতেও এটা নিয়ে অনেক মিটিং করেছিলাম। ফরেন মিনিস্ট্রির সাথেও করেছি। বলেছে দেখি, দেখবো। তারপরে আর কোনো ফলোআপ হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একার পক্ষে এগুলো সব  সম্ভব নয়। দুদক আছে, সিআইডি ও এনবিআর আছে, সবার দায়িত্ব আছে। নির্বাচনের  সময় প্রার্থীরা যে সম্পদের হিসাব দিলো সেটা তো দেখা যেতো, দেখেনি। কোনো অপরাধে যখন কারো নাম আসে, তখন যদি সুষ্ঠু তদন্ত না হয়, তখন তারা আরো এনকারেজড হয়, আরো করাপশন করা শুরু করে। তার সঙ্গে আরো পাঁচ জন যুক্ত হয়। বাংলাদেশে অপরাধীরা মাল্টিপল নাম্বারে বাড়ছে। আগে হয়ত ১০-১২ জন করতো, এখন ১০ হাজার হয়েছে।

ব্যাংকের টাকা ঋণ খেলাপের নামে চলে যায়, উদ্ধার হয় না। ব্যক্তির অর্থ চলে যায়। অর্থ পাচার সহজ বলেই কি ঋণ খেলাপি, কর খেলাপি বেড়ে যাচ্ছে? পাচারের সাথে এগুলো বেড়ে যাওয়ার কি সাম্পর্ক আছে?

যদি কোনো শাস্তি না হয় তাহলে তো এরকম হবেই। অনেকের তো নাম এসেছে। কোনো তদন্ত তো হয় নাই। বাংলাদেশ ব্যাংক কেন তদন্ত করলো না? ভারতের বিজয় মাল্য- তার দেশ  থেকে অনেক টাকা পয়সা নিয়ে চলে গেছে। সে অবৈধ কাজ করেছে। কিন্তু ভারত তাকে ট্রেস করেছে । সে পালিয়ে গিয়েছিল। তার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। তাকে ফিরিয়ে এনেছে। তাকে আইনি ব্যবস্থার মুখোমুখি করা হয়েছে। বাংলাদেশে আপনি দেখেছেন এইরকম কাউকে এরকম করতে?

ভারত কিন্তু সুইস ব্যাংকে তার  নাগরিকদের কার কী পরিমাণ অর্থ আছে সেই তথ্য আনতে পেরেছে। আমরা পারি না কেন?

পারি না, কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিরিয়াসনেস নেই। চিঠি লিখে বসে থাকে, ফলোআপ করে না। আমি তো ব্যাপারটা জানি। পারস্যু করতে হবে তো! আপনি এগমন্ট গ্রুপের সদস্য, পারবেন না কেন? যেমন মার্কোস৷  তার বিলিয়ন ডলার ছিল সুইস ব্যাংকে । তখন এত আইন ছিল না। তারপরও তার টাকা সরকার ফেরত এনেছে, সময় একটু বেশি লাগলেও। ওরা পারস্যু করেছে, লেগে ছিল। ১৫-১৬ বছর লেগেছে। তারপরও সব টাকা ফেরত এনেছে।

অর্থ পাচার অমাদের অর্থনীতির কী পরিমাণ ক্ষতি করছে?

অর্থ পাচার ফরেন এক্সচেঞ্জ হিসেবে চলে যায়। ধরেন, ১০০ ডলার চলে গেলে দুই ধরনের ক্ষতি। হার্ড কারেন্সি চলে গেল। আবার এই ফরেন কারেন্সি আমাদের ডমেস্টিক কারেন্সির ব্যাপকআপ। আমরা যে টাকা ছাপাই, তার পিছনে গোল্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ, সরকারের টাকা- এগুলো যদি কমে যায়, তাহলে আপনি যে টাকা ছাপছেন তার শক্তি তো কমে যায়। এখন ফরেন রিজার্ভ কমে অবমূল্যায়ন হচ্ছে কেন? কারণ, ফরেন রিজার্ভ চলে গেলে দুই ধরনের ক্ষতি। প্রথমত, অর্থ চলে গেল, আর এটার যে ব্যাকআপ, ইকোনমিক কনফিডেন্স, বিনিয়োগ পরিবেশ, অর্থের ব্যাকআপের ক্ষতি হচ্ছে, তাতে ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই) কমে যাচ্ছে। তাতে ডাবল ক্ষতি হচ্ছে।

এরা কি এতই শক্তিশালী যে রাষ্ট্র চাইলেও তাদের ধরতে পারে না? ব্যবসায়ী হোক, মন্ত্রী হোক, আমলা হোক...

কারণ, যারা এগুলোর মধ্যে আছে, তারা রাষ্ট্র যন্ত্রের কাছাকাছি। মাছের মুখ তো বন্ধ করতে বলা হয়নি। সেই জন্যই তো এসব বন্ধ করতে পারছে না

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ