রাজভবনে 'পিস হোম', থাকতে পারবেন সন্দেশখালির নারীরা
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
সন্দেশখালির নির্যাতিতা নারীদের জন্য অভিনব ব্যবস্থা নিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।
বিজ্ঞাপন
কলকাতার রাজভবনে তিনটি বড় ঘর সন্দেশখলির নির্যাতিতা নারীদের জন্য রাখা হলো। তার নাম দেয়া হয়েছে 'পিস হোম'।
সন্দেশখালির কোনো নির্যাতিতা নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে পিস হোমে থাকতে পারবেন। প্রতিটি ঘরে খাট আছে, টিভি আছে, লেখা বা পড়ার জন্য টেবিল-চেয়ার আছে, বসার জন্য চেয়ার-টেবিল আছে, সোফা আছে। এখানে থাকতে চাইলে আক্রান্তদের রাজভবনের কাছে আবেদন জানাতে হবে।
'এরকম উদ্য়োগ এই প্রথম'
রাজভবনে পঞ্চয়েত নির্বাচনের আগে 'পিস রুম' খোলা হয়েছিল, সেখানে পঞ্চায়েত সংক্রান্ত সহিংসতা বা কোনো ধরনের বেনিয়ম, গন্ডগোলের অভিযোগ করা যেত।
সেই অভিয়োগ পেলে রাজ্যপালের অফিস তা সরকারের কাছে পাঠিয়ে দিত। এভাবে সেই সময় মানুষের অভিযোগ করার একটা জায়গা করে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল।
এবার 'পিস হোম' করে নির্যাতিতা নারীদের একটা থাকার ব্যবস্থা করলেন তিনি।
কলকাতা রাজভবনের অন্দরে
একসময় ছিল লাটভবন, এখন রাজভবন। সেই রাজভবনই খুলে দেয়া হলো সাধারণ মানুষের জন্য।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দীর্ঘ ইতিহাস
তৈরি শুরু হয় ১৭৯৯ সালে। শেষ হয় ১৮০৩ সালে। প্রথমে এখানে থাকতেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর জেনারেল। তারপর যখন কোম্পানির শাসন শেষ হলো, তখনো এখান থেকেই ভারত শাসন করতেন গভর্নর জেনারেল বা বড়লাটরা। রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে যাওয়ার পর অবশ্য গভর্নর জেনারেলও দিল্লি চলে যান। স্বাধীনতার পর এই ভবন রাজ্যপালদের আবাস। ২৩ একর জমিতে ৮৪ হাজার বর্গফুটের রাজকীয় প্রাসাদ তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ৬৩ হাজার ২৯১ পাউন্ড।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
খুলে দিলেন আনন্দ বোস
বর্তমান রাজ্যপাল আনন্দ বোস এই রাজভবন সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই মতো তিনি কলকাতা মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষকে বলেন, রাজভবনে হেরিটেজ ওয়াকের ব্যবস্থা করতে। সেই হেরিটেজ ওয়াক শুরু হলো বাংলা নববর্ষের দিন। মিউজিয়ামের ওয়েবসাইটে নাম লিখিয়ে সপ্তাহে একদিন হেরিটেজ ওয়াকে অংশ নেয়া যাবে। প্রথম দিনের ওয়াকে সামান্য সময় ছিলেন রাজ্যপালও।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কার্জন লিফট
এই লিফটটি লর্ড কার্জন বসিয়েছিলেন। তিনিই রাজভবনে বিদ্যুৎ ও লিফট আনেন। অ্যামেরিকায় লিফট চালুর দশ বছরের মধ্যে কলকাতাতেও চলে আসে লিফট। এই লিফটকে বলা হয় বার্ড কেজ লিফট। অলঙ্করণ করা সুন্দর দেখতে ছোট লিফটটি সেসময়ের স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
চাইনিজ ক্যানন
এই কামান এসেছিল চীন থেকে। ১৮৪২ সালে চীনের নানকিং থেকে এই কামান আনা হয়। ড্রাগনের উপর বসানো কামানটি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঘোড়ার গাড়ি
গভর্নর জেনারেলের ব্যবহার করা গোড়ার গাড়ি। ঐতিহাসিক গাড়িটি দেখা যাবে হেরিটেজ ওয়াকে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাজভবন লাইব্রেরি
রাজভবনের একতলাতেই আছে এই লাইব্রেরি। ১১ হাজারের মতো বই আছে এখানে। প্রচুর দুর্মূল্য ও অসাধারণ বই আছে। রাজ্যপালদের ব্যবহার করা, রেখে যাওয়া বই আছে। তাদের হাতের লেখা রয়েছে সেখানে। এমন বইও আছে, যা এখন খুব কম স্থানেই রয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাজভবনের সিঁড়ি
এই হলো রাজভবনের বিখ্যাত সিঁড়ি। সেই সময় তৈরি করা এই সিঁড়ির আলাদা সৌন্দর্য আছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আছেন রবীন্দ্রনাথ
রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা দেখার সৌভাগ্যও হবে এই হেরিজেট ওয়াকে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আছে পালকি
এই পালকি একসময় ব্যবহার করেছেন গভর্নর জেনারেলরা। এক টুকরো ইতিহাস ধরা আছেএখানে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
হাতে টানা রিকশা
হাতে টানা এই রিকশাটিও ব্যবহার করেছেন গভর্নর জেনারেলরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাজ্যপালের গাড়ি
রাজ্যপালদের ব্যবহার করা গাড়ি। বিএমডাব্লিউ কোম্পানির।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন
রাজভবনে প্রচুর পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে। এমনই একটি অসাধারণ পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখা য়াবে হেরিটেজ ওয়াকে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এখানেই শপথ নেন রাজ্যপালরা
এই জায়াগায় সাধারণত শপথ নেন রাজ্যপালরা। রাজভবনে সবকিছুর জন্য আলাদা জায়গা আছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রাজ্যপালের ভোজনকক্ষ
এটাই রাজ্যপালের ভোজনকক্ষ। অতিথিদের সঙ্গেও এখানে খাওয়াদাওয়া করেন তিনি। ব্রিটিশ ঐতিহ্যের বেশ কিছুটা রেশ রয়ে গেছে এখনো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
14 ছবি1 | 14
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''এর আগে রাজভবনে পিস হোমের মতো উদ্যোগ কখনো নেয়া হয়নি। এখনো পর্যন্ত একজন নারীও অবশ্য ওই হোমে থাকতে আসেননি।''
রাজ্যপাল সন্দেশখালিতে গেছিলেন। সেখানে নারীরা তার কাছে নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, কীভাবে তাদের নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছিলেন, নারীদের জন্য তিনি কিছু করার চেষ্টা করবেন। 'পিস হোম' করা তারই একটা অঙ্গ।
তৃণমূল বলছে, 'হোটেল রাজভবন'
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ''রাজ্যপাল কী করছেন তার ব্যাপার। কিন্তু দাঁড়িয়ে যাচ্ছে 'হোটেল রাজভবন'। তিনি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করার কাজ করছেন।''
সন্দেশখালিতে শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে হাড় হিম করা যত অভিযোগ
04:26
রাজ্যপাল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা নিয়ে বিজেপি কিছু বলতে চায় না। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ''রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই বিষয়ে আমি কিছু বলব না।''
'নারীদের পিস হোমে কতদিন রাখা যাবে?'
রাজভবনে 'পিস হোম' খোলা নিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''এভাবে সন্দেশখালি থেকে উঠিয়ে এনে নারীদের কতদিন রাজভবনে রাখা যাবে? তারপর তো তাদের আবার সন্দেশখালিতে ফিরতে হবে, তখন কী হবে?''
আশিসের মতে, ''সমস্যাটা হলো আইন-শৃঙ্খলার, গুণ্ডামির, অত্যাচারের, নারী নির্যাতনের। তাকে সেভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। এভাবে রাজভবনের তিনটি ঘর খুলে দিয়ে তার কি কোনো সমাধান হতে পারে?''