দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী ছিলেন রাজনীতি থেকে দূরে থাকা একজন ছাত্রবান্ধব শিক্ষক৷ ছোট কাগজ বের করতেন৷ চালাতেন সাংস্কৃতিক সংগঠন৷
ছবি: DW
বিজ্ঞাপন
[No title]
This browser does not support the audio element.
শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রাজশাহী মহানগরের শালবাগান এলাকায় নিজের বাসার কাছে অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যা কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা৷ পুলিশ বলছে তাঁকে জঙ্গি স্টাইলেই হত্যা করা হয়েছে৷ আর আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে সাইট ইন্টেল গ্রুপ৷
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. রকিবুল আলম সোহান গত চার বছর ধরে অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী'র সাংস্কৃতিক এবং সমাজ সংস্কারমূলক কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে জানান, অধ্যাপক সিদ্দিকী ‘কোমলগান্ধার' নামে একটি ছোট কাগজ বের করে আসছিলেন প্রায় ১০/১২ বছর ধরে৷
তিনি বলেন, ‘‘অনিয়মিত এই কাগজে ছাত্রদের লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ছাপা হত৷ স্যার নিজেও লিখতেন৷ এছাড়া বিশ্ববাংলা নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন চালাতেন তিনি৷ আর এ সবের খরচ তিনি নিজেই যোগাতেন৷''
বিশ্ববাংলা নামে সাংস্কৃতিক সংগঠনে কবিতা আবৃত্তিসহ নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র যেমন: ঢোল, তবলা, বাঁশি এ সবের চর্চা হতো৷ ইংরেজি বিভাগেই এই সংগঠনটির কার্যক্রম চালাতেন তিনি৷
অধ্যাপক বিভিন্ন জনপদে ঘুরে লোকসাহিত্য সংগ্রহ করতেন৷ এ সবের ভিডিওচিত্রও ধারণ করতেন৷ লোকসাহিত্যেও ওপর একটি ভিডিওচিত্র নির্মাণের ইচ্ছাও ছিল তাঁর, জানান সোহান৷
তিনি বলেন, ‘‘খেলাধুলার প্রতি তাঁর ব্যাপক আগ্রহ ছিল৷ বিভাগের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তিনিই ছাত্রদের সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিতেন৷ আর গ্রামীণ খেলার প্রতি আর ছিল টান৷ তিনি তাঁর নিজ গ্রামে প্রতিবছর ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করতেন৷ আর পুরস্কারও দিতেন নিজের অর্থে৷''
নিহত অধ্যাপক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের প্রতি তেমন আগ্রহী ছিলেন না৷ ব্লগও লিখতেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি থেকে দূরে থাকা, সংস্কৃতিমনা এবং ছাত্রবান্ধব একজন শিক্ষকের কোনো শত্রু থাকতে পারে আমরা তা চিন্তাও করতে পারছি না৷''
এদিকে, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন জানিয়েছেন, ‘‘অতীতে যেভাবে ব্লগারদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, একই কায়দায় অধ্যাপক রেজাউল করিমরকে হত্যা করা হয়েছে৷ এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডে কোনো জঙ্গি গোষ্ঠী জড়িত৷''
এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃত করে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা শাহদাত হোসেন জানান, একই মোটর সাইকেলে আসা দুই যুবক অধ্যাপককে কুপিয়ে পালিয়ে যায়৷
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও একাধিক অধ্যাপক খুন হয়েছেন৷ ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর খুন হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম৷ ২০০৬ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের৷ দু'দিন পর ক্যাম্পাসের বাসার পাশের ম্যানহোলের ভেতরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়৷ আর ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসকে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
বাংলাদেশে জঙ্গি হামলার শিকার যারা
চলতি বছর ইসলামপন্থিরা একের পর এক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ এতে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কয়েকজন৷ চলুন জানা যাক ২০১৫ সালের কবে, কারা হামলার শিকার হয়েছেন...৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্লগার খুন
একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে খুন হন ব্লগার এবং লেখক অভিজিৎ রায়৷ কমপক্ষে দুই দুর্বৃত্ত তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ এসময় তাঁর স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর আহত হন৷ বাংলাদেশি মার্কিন এই দুই নাগরিককে হত্যার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’৷ পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বাড়ির সামনে খুন
ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে হত্যা করা হয় ঢাকায়, গত ৩০ মার্চ৷ তিন দুর্বৃত্ত মাংস কাটার চাপাতি দিতে তাঁকে কোপায়৷ সেসেময় কয়েকজন হিজরে সন্দেহভাজন দুই খুনিকে ধরে ফেলে, তৃতীয়জন পালিয়ে যায়৷ আটকরা জানায়, তারা মাদ্রাসার ছাত্র ছিল এবং বাবুকে হত্যার নির্দেশ পেয়েছিল৷ কে বা কারা এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছে জানা যায়নি৷ বাবু ফেসবুকে ধর্মীয় উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে লিখতেন৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সিলেটে আক্রান্ত মুক্তমনা ব্লগার
শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরে ব্লগার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ গত ১২ মে সিলেটে নিজের বাসার কাছে খুন হন নাস্তিক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার অনন্ত বিজয় দাস৷ ভারত উপমহাদেশের আল-কায়েদা, যাদের সঙ্গে ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’-এর সম্পর্ক আছে ধারণা করা হয়, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷ দাস ডয়চে ভেলের দ্য বব্স জয়ী মুক্তমনা ব্লগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/EPA/Str
বাড়ির মধ্যে জবাই
ব্লগার নিলয় চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি নিলয় নীল নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন, হত্যা করা হয় ঢাকায় তাঁর বাড়ির মধ্যে৷ একদল যুবক বাড়ি ভাড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে ৮ আগস্ট তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে৷ নিজের উপর হামলা হতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চেয়েছিলেন নিলয়৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে সহায়তা করেনি৷ ‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে, তবে তার সত্যতা যাচাই করা যায়নি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জগিংয়ের সময় গুলিতে খুন বিদেশি
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে জগিং করার সময় ঢাকার কূটনৈতিক এলাকায় খুন হন ইটালীয় এনজিও কর্মী সিজার তাবেলা৷ তাঁকে পেছন থেকে পরপর তিনবার গুলি করে দুর্বৃত্তরা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছে জিহাদিদের অনলাইন কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা একটি সংস্থা৷ তবে বাংলাদেশে সরকার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে ‘এক বড় ভাইয়ের’ তাঁকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/ A.M. Ahad)
রংপুরে নিহত এক জাপানি
গত ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও৷ মুখোশধারী খুনিরা তাঁকে গুলি করার পর মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়৷ ইসলামিক স্টেট এই হত্যাকাণ্ডেরও দায় স্বীকার করেছে, তবে সরকার তা অস্বীকার করেছে৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন না যে তাঁর দেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীটির উপস্থিতি রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হোসনি দালানে বিস্ফোরণ, নিহত ১
গত ২৪ অক্টোবর ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হোসনি দালানে শিয়া মুসলমানদের আশুরার প্রস্তুতির সময় বিস্ফোরণে এক কিশোর নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হন৷ বাংলাদেশে এর আগে কখনো শিয়াদের উপর এরকম হামলায় হয়নি৷ এই হামলারও দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট, তবে সরকার সে দাবি নাকোচ করে দিয়ে হামলাকারীরা সম্ভবত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-র সদস্য৷ সন্দেহভাজনদের একজন ইতোমধ্যে ক্রসফায়ারে মারা গেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ঢাকায় প্রকাশক খুন
গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দু’টি স্থানে কাছাকাছি সময়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়৷ এতে খুন হন এক ‘সেক্যুলার’ প্রকাশক এবং গুরুতর আহত হন আরেক প্রকাশক ও দুই ব্লগার৷ নিহত প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনের সঙ্গে ঢাকায় খুন হওয়া ব্লগার অভিজিৎ রায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আনসার-আল-ইসলাম’ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
প্রার্থনারত শিয়াদের গুলি, নিহত ১
গত ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বগুড়ায় অবস্থিত একটি শিয়া মসজিদের ভেতরে ঢুকে প্রার্থনারতদের উপর গুলি চালায় কমপক্ষে পাঁচ দুর্বৃত্ত৷ এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন নিহত হন এবং অপর তিন ব্যক্তি আহত হন৷ তথকথিত ইসলামিক স্টেট-এর সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা দাবি করা স্থানীয় একটি গোষ্ঠী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে৷