কোটায় পড়তে গেছিলেন এই ছাত্র। এই নিয়ে কোটায় এবছর ২৮ জন ছাত্র আত্মহত্যা করলো।
বিজ্ঞাপন
পশ্চিমবঙ্গের ছেলে ফরিদ। রাজস্থানের কোটায় অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল এন্ট্রান্সের জন্য তৈরি হতে গেছিল সে। কোটার একটি কোচিংয়ে পড়ছিল। মঙ্গলবার সকালে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, সে আত্মহত্যা করেছে।
রাজস্থানের কোটা কার্যত একটি কোচিং শহরে পরিণত হয়েছে। আইআইটি এবং মেডিক্যাল এন্ট্রান্সের কোচিং দেওয়া হয় শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। হাজার হাজার ছাত্র গোটা দেশ থেকে সেখানে যান কোচিং নিতে। অভিযোগ, কোচিংগুলিতে ছাত্রদের উপর প্রবল চাপ দেওয়া হয়।
আত্মহত্যার সাতকাহন
জীবন সুন্দর৷ যত কষ্টই থাকুক বেঁচে থাকা তবু আনন্দের৷ তবু অনেকেই বেছে নেয় আত্মহননের পথ৷ ছবিঘরে থাকছে আত্মহত্যা নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান...
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg
বাংলাদেশে এক বছরে ১৪ হাজার!
আঁচল ফাউন্ডেশন ২০২১ সালের মার্চ মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, করোনাকালে এক বছরে সারা বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন আত্মহত্যা করেছেন৷ ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩টি জাতীয় পত্রিকা, ১৯টি স্থানীয় পত্রিকা, হাসপাতাল ও থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/W. Sabawoon
নারীর সংখ্যা বেশি
তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি৷ মোট আত্মহত্যার ৫৭ শতাংশ, অর্থাৎ ৮ হাজার ২২৮জনই ছিলেন নারী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone USA Falkenberg
বেশি আত্মহত্যা যে বয়সে
আঁচল ফাউন্ডেশনের সেই প্রতিবেদনে আত্মহত্যাপ্রবণ বয়সের ধারণাও উঠে আ্সে৷ সেখানে বলা হয়, আত্মঘাতী হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সি ছিলেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ৩৫ শতাংশ এবং ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সি ১১ শতাংশ। সেই সময় সবচেয়ে কম আত্মহত্যা করেছিলেন ৪৬ থেকে ৮০ বছর বয়সিরা- ৫ শতাংশ।
ছবি: Colourbox
বড় কারণ
২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা হয়েছে পারিবারিক সমস্যার কারণে৷ ওই সময়ে মোট আত্মহত্যার ৩৫ শতাংশই ছিল পারিবারিক সমস্যাজনিত কারণে৷ এর বাইরে ২৪ শতাংশ সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে এবং যথাক্রমে ৪ ও ১ শতাংশ আর্থিক সংকট ও লেখাপড়া নিয়ে দুর্ভাবনা বা পরীক্ষায় ব্যর্থতার কারণে কারণে আত্মহত্যা করেছিল। তবে ৩২ শতাংশ মানুষের আত্মহত্যার কারণ থেকে যায় অজ্ঞাত৷ এই তথ্যগুলোও আঁচল ফাউন্ডেশনের৷
ছবি: Steve Helber/AP/picture alliance
৪০ সেকেন্ডে একজন
ডাব্লিউএইচও-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি চল্লিশ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে৷
২০২১ সালের জুনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক প্রতিবেদনে জানায়, সারা বিশ্বে বছরে অন্তত সাত লাখ তিন হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা হয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে৷
ছবি: Fotolia/Photographee.eu
আত্মহত্যা : পাপ ও ‘অপরাধ’
সব ধর্মেই আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে৷ ধর্মমতে আত্মহনন করা মহাপাপ৷ আইনও আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করে৷ আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচিত করা বাংলাদেশের আইনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৩০৬ ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে আত্মহত্যায় সহায়তা করা ব্যাক্তির ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে৷
ছবি: Mike Simons/Getty Images
7 ছবি1 | 7
চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকেই আত্মহননের পথ খুঁজে নেন। বস্তুত, এবছর এখনো পর্যন্ত ২৮ জন ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। ফরিদ সর্বশেষ। শুধু তা-ই নয়, দেশের আইআইটি-গুলিতেও প্রবল চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। আইআইটি-গুলিতেও আত্মহত্যার ঘটনা লেগে আছে।
মন-সমাজবিদ মোহিত রণদীপ ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''প্রথমত, এমন পড়ার চাপ দেওয়াই উচিত নয়, যার জেরে ছাত্ররা আত্মহত্যা করবেন। দ্বিতীয়ত, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ট্রেনিং যদি এতই ভয়াবহ হয়, তাহলে ওই ট্রেনিং সেন্টার বা কোচিং সেন্টারগুলিতে মনোবিদ রাখা দরকার।'' এই মনোবিদেরা নিয়মিত ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটি খেয়াল রাখতে পারেন বলে মনে করেন মোহিত। বস্তুত, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ছাত্রদের উপর এত চাপ দেওয়া হচ্ছে! প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ধরন বদলানোর কথাও বলছেন কেউ কেউ।
মোহিতের দাবি, কোটায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ওই কোচিং সেন্টারগুলিতে প্রশাসনের ভিজিলেন্স শুরু করা উচিত। কোচিং সেন্টারগুলি আদৌ ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত এবং প্রয়োজনে সেন্টারগুলির লাইসেন্স বাতিল করা উচিত। এক বছরে যখন ২৮ জন ছাত্র আত্মহত্যা করেন, তখন বোঝা যায়, ওই জায়গা পড়াশোনার উপযুক্ত নয়।