রাজস্থান হাতছাড়া হতে পারে কংগ্রেসের
১৪ জুলাই ২০২০রাজস্থানে এখন রাজনৈতিক থ্রিলার চলছে। সাসপেন্স, ড্রামা, নায়কের হুঙ্কার, বিরোধী শক্তির পেশী আস্ফালন সব আছে। সেই সঙ্গে আছে, ঘন ঘন পট পরিবর্তন। একদিকে মোদী-শাহের বিজেপি এবং তার সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন গত দুই বছর ধরে উপ মুখ্যমন্ত্রী থাকা শচিন পাইলট। তাঁর দাবি, তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের ১৬ জন বিধায়ক আছেন। শচিন পাইলট মুখ্যমন্ত্রী হতে চান। উপ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে থাকতে তিনি নারাজ।
উল্টোদিকে আছেন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট। তাঁর সঙ্গে সনিয়া-রাহুল-প্রিয়ঙ্কা সহ পুরো কংগ্রেস পার্টি। শচিন পাইলট হলেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। প্রিয়ঙ্কা সোমবার বন্ধুকে কংগ্রেসে ধরে রাখতে চেষ্টার ত্রুটি করেননি। অন্তত চারবার ফোনে কথা বলেছিলেন। একটাই অনুরোধ ছিল, কংগ্রেসে থেকে যাচ্ছেন বলে শচিন বিবৃতি দিন। বাকিটা সামলে নেবেন প্রিয়ঙ্কা।
কিন্তু এ তো আর শোলের সেই জয়-বীরুর বন্ধুত্ব নয় যা 'তাঁরা জীবনে ভাঙবেন না বলে শপথ নিয়েছেন। এ হলো রাজনৈতিক বন্ধুত্ব। সেখানে বন্ধুত্ব টিকে থাকে দেয়া-নেয়ার ওপর। মুখ্যমন্ত্রী করতে না পারলে আর বন্ধুত্ব কীসের। এমনকী চিদম্বরমের মতো প্রবীণ নেতাকেও শচিন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী করুন, থাকব। না হলে? সেটা চিদম্বরমকে না বললেও বার্তাটা সোজা। না হলে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েসরকার গড়বেন শচিন।
শচিনকে আরেকবার সুযোগ দিতে মঙ্গলবার আবার পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। শচিন ও তাঁর সঙ্গে থাকা আরও ১৫ বিধায়ক তাতে যোগ দেননি। তার পরেই শচিনকে উপ মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। আশা না দেখে কংগ্রেসই প্রথম আঘাত হেনেছে।
রাজস্থানে ২০০ সদস্যের বিধানসভায় বিজেপি জোটের সঙ্গে আছে ৭৬ জন বিধায়ক। তার সঙ্গে শচিনের ১৬ জন যোগ হলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৯২ জন। তাঁদের কাছে এখনও গরিষ্ঠতা নেই। আরও নয়জন বিধায়ক দরকার। দুই জনকে তারা পেয়ে গেছে। ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টির দুই বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপির দিকে ঢলে পড়েছেন। বাকি এখন সাত জন। কোথা থেকে আসতে পারে এতজন বিধায়ক?
অশোক গোহলটকে সমর্থন করছেন ১০ জন নির্দল বিধায়ক। তার মধ্যে সাতজন বিজেপির দিকে চলে গেলেই তাঁর খেলা শেষ। রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ, এই সব সময় কোটি কোটি টাকার খেলা চলে। ফলে নির্দলরা উল্টোদিকে চলে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু খেলাটা এখানেই শেষ নয়। শচিন সহ কংগ্রেসের যে ১৬ জন বিধায়ক দলের হুইপ না মেনে বিদ্রোহ করেছেন, তাঁরা দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে দলবদল আইন অনুসারে বিধায়কপদ যাবে। তখন কী হবে? তাঁদের আবার উপ নির্বাচনে জিতে আসতে হবে।
কিন্তু সেটা পরের কথা। তাঁরা আগে কংগ্রেস সরকারের পতন চাইছেন। এটাই হলো রাজনীতি। এতদিন ধরে যে দল করেছেন, তাঁর বাবাও যে দল করতেন, তার সরকার ফেলার জন্য পণ করে বসেছেন শচিন পাইলট। আপাতত ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছেন অশোক গেহলট। তাই কংগ্রেসের হাত থেকে আরেকটা রাজ্য হাতছাড়া হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)