1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ মার্চ ২০১৮

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে ঢাকায় প্রথম গণহত্যা শুরু করে৷ আর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ওই রাতেই প্রথম প্রতিরোধ শুরু হয়৷ সাড়ে তিনঘণ্টার সেই প্রতিরোধ যুদ্ধের কথা জনিয়েছেন তিন মুক্তিযোদ্ধা৷

প্রতীকী ছবিছবি: Journey/R. Talukder

শাহজাহান মিয়া ছিলেন ওয়্যারলেস অপারেটর৷ আবু শামা ছিলেন অস্ত্রাগারের দায়িত্বে একজন পুলিশ কনস্টেবল৷ আর আব্দুল আলী পুলিশের তৎকালীন আইজি তসলিম উদ্দিনের বডিগার্ড৷ থাকতেন রাজারবাগে৷ তারা তিনজনই ডয়চে ভেলেকে জানান, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরই ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি চলছিল৷ ২৫ মার্চ বিকেল থেকেই রাজারবাগের আশেপাশের সড়কে ট্রাকে করে রেকি করে পাকিস্তানি বাহিনী৷ আর রাত ৯টার পরই খবর আসে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ হতে পারে

তখন রাজারবাগের অস্ত্রাগার খুলে চার শতাধিক অন্ত্র নিয়ে রাজারবাগের পুলিশ সদস্যরা রাজারবাগ এবং আশাপাশ এলাকায় পজিশন নেয়৷ রাত সাড়ে ১১টায় দ্বিতীয় দফা পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে অস্ত্রাগারের সব অস্ত্র বিলি করা হয় পুলিশ সদস্যদের মাঝে৷ এরপর রাত সাড়ে ১১টার কিছু পরে তারা রাজাররবাগের দিকে আসতে শুরু করলে পথেই প্রতিরোধের মুখে পড়ে৷ 

Abu Sama.mp3 - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘‘রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী চামেলিবাগে প্রথম পুলিশ ব্যারিকেডের মুখে পড়ে৷ সেখানেই দুই পাকসেনা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়৷ এটাই ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রথম বুলেট৷ আমি এবং ওয়্যারলেস অপারেটর মনির তখন ওয়্যারলেস রুমে চলে যাই৷ সেখানে একটি ওয়্যারলেস বার্তা আমি লিখে তা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ১৯ জেলা, ৩৬টি সাব ডিভিশন এবং সব পুলিশ লাইন্সে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে জানিয়ে দিই৷ বার্তাটা ছিল: ‘দ্য বেস ফর অল স্টেশন পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ, কীপ লিসেনিং, ওয়াচ, উই আর অলরেডি অ্যাটাক্ড বাই পাক আর্মি, ট্রাই টু সেভ ইয়োরসেলফ্, ওভার এন্ড আউট৷' আমি বেশ কয়েকেবার ম্যাসেজটি ট্রান্সমিট করি৷ তখন চারদিকে হাজার হাজার গুলির শব্দ৷ আমরাও তখন অন্ত্র নিয়ে পুলিশ লাইনের চার তলার ছাদে চলে যায়৷''

আবু শামা বলেন, ‘‘২৫ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমরা রাজারবাগ অস্ত্রাগারের সামনে স্বাধীন বাংলাদেশের পাতাকা উত্তোলন করি৷ স্লোগান দেই বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর৷ জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু৷ তখন অস্ত্রাগারের দায়িত্বে থাকা সুবেদার আবুল হাসেম অস্ত্রাগারে তালা মেরে চাবি আর আই মফিজ সাহেবের কাছে রেখে পালিয়ে যান৷ আমরা খবর পাই ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনী বের হয়েছে৷ তখন আমরা মফিজ সাহবেবের বাসায় দৌড়ে গিয়ে চাবি নিয়ে আসি৷ তিনি চাবি দিতে চাননি৷ আমরা জোর করে চাবি এনে অস্ত্রাগার খুলে দিই৷ রাইফেল নিয়ে আমরা পজিশনে চলে যাই৷ অস্ত্রাগার তালা মেরে দেয়া হয়৷ রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাদের ওপর যখন চূড়ান্ত আক্রমণ শুরু হয় তখন আমরা পাগলা ঘণ্টা বাজাই৷ তখন বাকি যারা ছিলেন তারাও বের হয়ে এসে অস্ত্রাগার ভেঙ্গে বাকি অস্ত্র হাতে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা আমরা প্রতিরোধ চালিয়ে যাই৷ লড়াই করি৷ এই সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ভিতরে ঢুকতে পারেনি৷ সাড়ে তিন ঘণ্টায় আমাদের গুলি ফুরিয়ে যায়৷ আমাদের গুলি বন্ধ হয়ে যায়৷ এরপর চারটি ব্যারাকে পাকিস্তানি বাহিনী আগুন ধরিয়ে দেয়৷'' 

Abdul Ali.mp3 - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

তিনি বলেন, ‘‘সারারাত তারা গুলি ও কামানের গোলা ছোড়ে৷''

তৎকালীন আইজিপি'র বডিগার্ড আব্দুল আলী বলেন, ‘‘রাত ১১টা ৩০ মিনিটে আমি বঙ্গবন্ধুর ছেলের (শেখ কামাল) মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা পাই৷ আর তখন পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে ফোর্স জমায়েত করি৷ তখন চাবি না পেয়ে রাইফেল দিয়ে অস্ত্রাগারের তালা ভাঙ্গা হয়৷ আমি নিজেই অস্ত্রাগারে ঢুকে সহকর্মীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিই৷ রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজারবাগের কাছে যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পৌঁছে যায় তখন আমরা রাজারবাগ থেকে গুলি ছুড়ে যুদ্ধ শুরু করি৷ তারা কামান ও ট্যাংকের গোলা ছোড়ে৷ আমরা ৩০৩ রাইফেল দিয়ে জবাব দিই৷''

এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘‘২৬ মার্চ ভোরে পাকিস্তানি বাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ভিতরে প্রবেশ করে পুলিশ লাইনের চারতলা ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকের নীচে আমরা অনেকে লুকিয়ে ছিলাম৷ আরো বিভিন্ন জায়গায় ২০/২৫ জনকে পায় তারা৷ বাকিরা বাইরে চলে যেতে সক্ষম হয়৷ আমাদের আটক করে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয়৷ আমরা তখন অনেক পুলিশ সদস্যদের লাশ পরে থাকতে দেখি৷ দেড়শ'র মত পুলিশ সদস্য প্রাণহারান৷''

আব্দুল আলী বলেন, ‘‘আমাদের ২৮ মার্চ পর্যন্ত বন্দি রাখা হয়৷ এই সময়ে আমাদের কোন খাবার, এমনকি পানিও দেয়া হয়নি৷ এরপর আমাদের ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার ই এ চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ আমাদের সেখান থেকে ছেড়ে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট দিনে কাজে যোগ দিতে বলা হয়৷ কিন্তু আমরা তা করিনি৷ আমরা পালিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেই৷'' 

Sahajahan Mia.mp3 - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

তারা তিনজনই প্রথমে ভারতে যান৷ সেখান থেকে ফের বাংলাদেশে প্রবেশ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন৷

শাহজাহান মিয়া তাঁর তিন ভাইকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন৷ যুদ্ধ করেন ৯ নম্বর সেক্টরে৷ তাঁর এক ভাই মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হন৷ আর আবু শামা ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে গুরুতর আহত হন৷ আব্দুল আলি মেঘালয়ে প্রথমে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন৷ এরপর ময়মনসিংহ এলকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন৷

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা তিনজনই চাকরিতে যোগ দেয়ার পর অবসরে যান৷ তবে এরমধ্যে আব্দুল আলীকে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল৷ আব্দুল আলী বলেন, ‘‘১৯৭৭ সালে জিয়ার সময়ে স্পেশাল মার্শাল ল' ট্রাইবুন্যালে আমাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়৷ ২৫ মার্চ রাজারবাগে পাগলাঘণ্টা বাজান, অস্ত্রাগার ভাঙ্গা এইসব অপরাধে আমাকে তখন ফাঁসিতে ঝোলানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়৷ পরে চাকরিচ্যুতির শর্তে আমি প্রাণে বেঁচে যাই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ