গোপন ক্যামেরার সামনে হাত পেতে টাকা নিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-নেত্রীরা৷ সেই স্টিং অপারেশন যিনি করেছিলেন, সেই সাংবাদিক স্যামুয়েল ম্যাথুকেই প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করেছিল পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
এবার সেই মামলার তদন্তে তৎপর হলো সিবিআই৷ সারদা কেলেঙ্কারির অন্যতম সন্দেহভাজন, কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার, বর্তমানে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান রাজীব কুমার এখনো অধরা৷ তবে সিবিআই বসে নেই, এবার তারা তৎপর নারদা দুর্নীতি নিয়ে৷
‘‘ডিজি সিআইডি নিজেই পলাতক!’’ (প্রতীকী ছবি)
আচমকাই গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত, আইপিএস অফিসার সৈয়দ মহম্মদ হুসেন মির্জাকে৷ স্টিং অপারেশনে দেখা গিয়েছিল, তিনিই শাসকদলের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন শিল্পপতির ছদ্মবেশে থাকা সাংবাদিক ম্যাথুকে৷
গত সপ্তাহের শেষে হঠাৎ সৈয়দ মহম্মদ হুসেন মির্জাকে গ্রেপ্তারের পর সিবিআই তিন দফায় জেরা করে মুকুল রায়কে৷ একদা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা, মমতা ব্যানার্জির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং বিশ্বস্ত মুকুল রায় এখন বিজেপিতে৷ মুকুলকে একদফা জেরার পর ধৃত আইপিএস মির্জার সামনে মুখোমুখি বসিয়ে তাদের একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়৷ এরপর রবিবার মির্জাকে নিয়ে সিবিআই অফিসাররা যান মুকুল রায়ের ফ্ল্যাটে৷
নারদার স্টিং অপারেশনে স্যামুয়েলের সঙ্গে মুকুলকে টাকা দেওয়া নেওয়া নিয়ে কথা বলতে শোনা গিয়েছিল৷ তারপর মুকুল রায়কে দেড় কোটি টাকা দিয়েছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন মির্জা৷ কীভাবে সেই টাকা হাতবদল হয়েছিল, তার পুনরাভিনয় করানো হয় মির্জাকে দিয়ে৷ সেই পর্ব মিটে যাওয়ার পর মুকুল রায় জোর গলায় দাবি করেছেন, তিনি যে টাকা নিয়েছিলেন, তার কোনো প্রমাণ নেই৷ বাকি নেতা-নেত্রীদের টাকা নেওয়ার ভিডিও থাকলেও তার অমন কোনো ভিডিও কেউ দেখাতে পারবেন না৷
ভারতের কোন রাজনৈতিক দল কতটা ধনী?
২০১৬-১৭ সালে ভারতের সাতটি জাতীয় দলের আয় ছিল মোট ১,৫৯৯ কোটি টাকা৷ এদের মধ্যে বিজেপির অঙ্কটা ছিল সবচেয়ে ওপরে– ১, ০৩৪.২৭ কোটি টাকা৷ এবারে দেখা যাক কোন দল কতটা ধনী...
ছবি: DW
ভারতীয় জনতা পার্টি
দিল্লির এক সংস্থা এডিআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এক বছরের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টির এক হাজার কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে৷ অবশ্য এর জন্য ৭১০ কোটি টাকা দলের খরচ হয়েছে৷ ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে বিজেপির আয় ৮১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
কংগ্রেস
রাজনীতির প্রভাবের মতোই তহবিলের ক্ষেত্রেও কংগ্রেস বিজেপির থেকে অনেক পিছিয়ে৷ ২০১৬-১৭ সালে কংগ্রেস দলের আয় হয়েছে ২২৫ কোটি টাকা, যেখানে এর জন্য খরচ হয়েছে ৩২১ কোটি টাকা৷ মানে খরচ আয়ের চেয়ে ৯৬ কোটি টাকা বেশি৷ এক বছর আগের তুলনায় দলের আয় ১৪ শতাংশ কমেছে৷
ছবি: Reuters/A. Dave
বহুজন সমাজ পার্টি
মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি এক বছরের মধ্যে ১৭৩ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা আয় করেছে৷ এর জন্য ৫১ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে৷ ২০১৬-১৭-তে এই দলের আয় ১৭৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়েছে৷ দলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ লোকসান হয়েছে বটে, কিন্তু আমদানি বাড়ছে৷
ছবি: DW/S. Waheed
ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টি
শরদ পাওয়ারের এ দলের আয় ২০১৬-১৭ তে ৮৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়েছে৷ ২০১৫-১৬ তে যেখানে এই দলে ৯ দশমিক ১৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে, ২০১৬-১৭ তে এই আয় বেড়ে ১৭ দশমিক ২৩ কোটি টাকা হয়েছে৷ এনসিপি মূলত মহারাষ্ট্র্রের রাজনৈতিক দল, কিন্তু অন্য রাজ্যে এর উপস্থিতি রয়েছে এবং এটি একটি জাতীয় দল৷
ছবি: AP
তৃণমূল কংগ্রেস
তথ্য বলছে, ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের আয় ৮১ দশমিক ৫২ শতাংশ পড়তির দিকে ছিল৷ জাতীয় দলের যোগ্যতা সম্পন্ন এই দলের আয় ৬ দশমিক ৩৯কোটি টাকা এবং খরচ ছিল ২৪ দশমিক ২৬ কোটি টাকা৷ লোকসভাতে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট এই তৃণমূল কংগ্রেস ২০১১ থেকে পশ্চিমবঙ্গে রাজত্ব করছে৷
ছবি: DW
সিপিএম
২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ সালের মধ্যে সীতারাম ইয়েচুরির নেতৃত্বে সিপিএম দলের আয় ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ কম হয়েছে৷ ২০১৬-১৭ সালে দলে ১০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে, যেখানে খরচ হয়েছে ৯৪ কোটি টাকা৷ সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য সিপিএমের রাজনৈতিক প্রভাব বেশ স্তিমিত৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dutta
সিপিআই
জাতীয় দলগুলির মধ্যে সবচেয়ে কম আয় সিপিআইয়ের৷ ২০১৬-১৭ সালে দলে ২ দশমিক ০৭৯ কোটি টাকা আয় হয়েছে, যেখানে খরচ হয়েছে ১ দশমিক ৪ কোটি টাকা৷ লোক সভা এবং রাজ্যসভাতে সিপিআইয়ের একজন করে সাসংদ আছে৷ কেরালাতে এই দলের ১৯ বিধায়ক এবং পশ্চিমবঙ্গে ১ বিধায়ক রয়েছে৷
ছবি: DW/S.Waheed
সমাজবাদী পার্টি
অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি ২০১৬-১৭ সালের ৮২.৭৬ কোটি টাকা আয় করে সবচেয়ে ধনী জাতীয় দল৷ কীভাবে? এর জন্য দলের ১৪৭ দশমিক ১ কোটি টাকার কাছাকাছি খরচ হয়েছে৷ মানে দল আয় থেকে বেশি ব্যয় করেছে! কাজেই ধনী তো বটেই!
ছবি: DW
তেলেগু দেশম পার্টি
অন্ধ্রপ্রদেশের শাসনের দায়িত্বে থাকা তেলেগু দেশম পার্টি ২০১৬-১৭ সালে ৭২ দশমিক ৯২ কোটি টাকা আমদানি করেছে৷ এর জন্য খরচ হয়েছে ২৪ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা৷ দলের দায়িত্ব চন্দ্রবাবুর হাতে, তিনি এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বটে!
ছবি: picture-alliance/dpa/Str
এআইডিএমকে এবং ডিএমকে
তামিলনাড়ুর শাসক দলের আসনে থাকা এআইডিএমকে ২০১৬-১৭ সালে ৪৮ দশমিক ৮৮ কোটি টাকা আয় করেছে যেখানে খরচ ছিল ৮৬ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা৷ এর প্রতিদ্বন্দ্বী ডিএমকে ২০১৬-১৭ সালের ভেতর আয় করেছে ৩ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা৷ যেখানে এদের খরচ ছিল ৮৫ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এআইএমআইএম
সঞ্চয়ের কথা যদি বলেন, তাহলে আসাদউদ্দীনের এআইএমআইএম দলের নাম সবার আগে৷ ২০১৬-১৭ তে ৭ দশমিক ৪২ কোটি টাকা আয় এবং এর জন্য খরচ মাত্র ৫০ লাখ৷ মানে দল ৯৩ শতাংশ লাভ করেছে!
ছবি: Imago/Hindustan Times/S. Mehta
11 ছবি1 | 11
রাজ্যের রাজনৈতিক মহলের ধারণা, প্রাক্তন তৃণমূল, এখন বিজেপি মুকুল রায়কে দিয়ে নারদার তদন্ত শুরু হলেও আসলে তৃণমূলের বাকি নেতা-নেত্রীদের কাছে পৌঁছতে চাইছে সিবিআই, যেটা সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তে সম্ভব হয়নি৷ কারণ, এই তদন্তের মূল যোগসূত্র, আইপিএস অফিসার রাজীব কুমার এখনো অধরা৷ পুলিসের ওপর মহলে যদিও রাজনৈতিক কারণে রাজীব কুমারের এই হয়রানি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে৷ মমতা ব্যানার্জির সরকারের নির্দেশ মানতে বাধ্য হওয়ার খেসারত গিয়েই একজন সৎ ও দক্ষ পুলিশ অফিসারকে এভাবে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন উঠে আসছে৷
আরো প্রশ্ন উঠছে, রাজীব কুমারই কি সারদা তদন্তের সাফল্যের চাবিকাঠি? অনেকের ধারণা, ‘‘সরকার ওঁকে বাঁচাতে চাইছে, উনি সরকারকে বাঁচাতে চাইছেন৷'' ডয়চে ভেলেকে এমনটিই বললেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য৷ তাঁর মতে, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের প্রধান যিনি, সেই ডিজি সিআইডি নিজেই পলাতক! রাজ্য সরকার এবং পুলিশের কর্মদক্ষতা এতে এক হাস্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে৷