লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও নাগরিকত্ব বিল পাস হল৷ বিলের পক্ষে পড়েছে ১২৫ ও বিপক্ষে পড়েছে ১০৫ ভোট৷ ফলে এই বিল পাস করতে রাজ্যসভাতেও কোনও অসুবিধা হয়নি নরেন্দ্র মোদী সরকারেরর।
বিজ্ঞাপন
রাজ্যসভাতেও সহজেই নাগরিকত্ব বিল পাস হয়ে গেল। বিরোধী দলগুলি বিরুদ্ধে ভোট দিল ঠিকই, কিন্তু তা সরকারকে হারাবার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এ বার রাষ্ট্রপতির সম্মতি ও সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার পরেই নাগরিকত্ব সংশোধন আইন চালু হয়ে যাবে। তখন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, ক্রিশ্চানরা নাগরিকত্ব পাবেন।
রাজ্যসভায় বুধবার ছ-ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বিল নিয়ে বিতর্ক হয়েছে৷ মাঝে মাঝেই তর্ক-বিতর্কে উত্তাল হয়েছে রাজ্যসভা৷ তার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ''নাগরিকত্ব বিল নিয়ে কারও ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। এই বিল কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য আনা হচ্ছে না। বরং নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য আনা হয়েছে৷ মুসলিমদের নাগরিকত্ব নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই৷ কোনও ধর্মের লোকেদের সঙ্গে সরকার অন্যায় করবে না৷ ''
দেশ জুড়ে ছাত্র আন্দোলন
নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে ভারত জুড়ে শুরু হয়েছে ছাত্র আন্দোলন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগরিকত্ব বিলে আগুন দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্ররা। অনশনে বসেছে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও।
ছবি: Studentenwerk der Universität Aligarh, D. Choubey
এনআরসি মানছি না
মঙ্গলবার বিকেল থেকেই নাগরিকত্ব বিল এবং এনআরসির বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছে কলকাতার ছাত্ররা।
ছবি: Studentenwerk der Universität Aligarh, D. Choubey
রাস্তায় প্রতিবাদ
কলকাতার রাস্তা অচল করে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে। তাদের দাবি, নাগরিকত্ব বিল অগণতান্ত্রিক। এই বিল আইন হলে আন্দোলন আরও বাড়বে বলেই হুমকি দিয়েছে ছাত্ররা।
ছবি: Studentenwerk der Universität Aligarh, D. Choubey
ছবি: Studentenwerk der Universität Aligarh, D. Choubey
আলিগড়ের আন্দোলন
মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলন শুরু করে ছাত্ররা। বুধবার তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ১৪৪ ধারা অমান্য করে ছাত্ররা বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
ছবি: Studentenwerk der Universität Aligarh, D. Choubey
আমরণ অনশন
পুলিশ এফআইআর করলেও প্রতিবাদে অনড় ছাত্ররা। বুধবার সকাল থেকে তারা অনশন আন্দোলন শুরু করেছে। বুধবার সকালে ডাইনিং হল ফাঁকা পড়ে থাকে।
ছবি: Studentenwerk der Universität Aligarh, D. Choubey
5 ছবি1 | 5
কংগ্রেস সাংসদ দিগ্বিজয় সিং তাঁর আশঙ্কার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ''দেশের মুসলিমরা এনআরসি ও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ভয়ে আছেন৷'' অমিত শাহর জবাব হল, ''কারও আশঙ্কিত হওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই৷ গত কয়েক বছরে তিন দেশের ৫৬৬ জন মুসলিমকে সরকার নাগরিকত্ব দিয়েছে।'' তার আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটাও জানিয়েছিলেন, ''রাজনীতি করতে গিয়ে কেউ যেন বিভেদ সৃষ্টি না করেন। তা হলে তার ফল ভয়ঙ্কর হবে।''
রাজ্যসভার বিরোধী নেতা ও কংগ্রেস সাংসদ গুলাম নবি আজাদের সমালোচনা ছিল, ''স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, পুরো দেশ এই বিল মেনে নিয়েছে। তা হলে অসমের কিছু এলাকায় কেন সেনা টহল দিচ্ছে? গুয়াহাটি সহ কিছু জায়গায় কেন প্রবল বিক্ষোভ চলছে? কেন বাসে আগুন ধরানো হয়েছে? মণিপুর, মেঘালয়, ত্রিপুরা, অরুণাচল সর্বত্র বিক্ষোভ কেন হচ্ছে? এভাবেই নোটবন্দি, তিন তালাক, জিএসটি, ৩৭০ পাস করিয়েছে সরকার। দেশের লোকের নজর যাতে কৃষক সমস্যা, কর্মসংস্থানের মতো বিষয় থেকে লোকের নজর অন্যদিকে ঘোরাতে অমিত শাহ এই কৌশল নিয়েছেন৷''
কংগ্রেস সাংসদ পি চিদম্বরম অবশ্য বলেছেন, ''আমি মনে করি এখানেই সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এরপর বিষয়টি আদালতে যাবে। আমি নিশ্চিত, বিচারপতিরা এই বিল খরিজ করে দেবেন৷ '' অমিত শাহর জবাব ছিল, ''যে কেউ আদালতে যেতে পারেন। তাতে ভয় পাওয়ার কী আছে? আমি মনে করি, আদালত বলবে আইন একেবারে ঠিক আছে৷ '' প্রবল বিরোধিতা করেও হেরে যাওয়ার পর তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনের মন্তব্য, ওদের দিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে, বিরোধীদের দিকে নৈতিকতা আছে৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক কেন
ভারতের সংসদে পেশ হলো নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। পেশ করলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। উত্তাল সংসদ। প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি এই বিল সংবিধান সম্মত? দেখে নেব কেন এই বিতর্ক?
ছবি: REUTERS/A. Hazarika
নাগরিকত্ব আইন
১৯৫৫ সালে ভারতের সংসদে পাশ হয় নাগরিকত্ব বিল। সেখানে বলা হয়, বিদেশিরা যদি এ দেশের নাগরিক হতে চান, তা হলে অন্তত ১১ বছর এ দেশে বসবাস করতে হবে। নাগরিকত্ব আইনে ধর্মের কোনো উল্লেখ ছিল না।
ছবি: DW/P. Mani Tiwari
সংশোধনী বিল
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনের প্রসঙ্গটি তোলে। ২০১৬ সালে তারা প্রথম নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল তৈরি করে। সেখানে পুরোনো আইনে বেশ কিছু সংশোধনের কথা বলা হয়।
ছবি: Reuters
সংশোধনে ধর্ম
নরেন্দ্র মোদী সরকার সংসদে যে বিল পেশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, চাকমা, জৈনদের এ দেশে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে। এবং তাঁদের নাগরিকত্বের অধিকার দেওয়া হবে।
ছবি: PIB Govt. of India
বিজেপির ব্যাখ্যা
বিজেপি-র বক্তব্য হল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে অত্যাচারিত হয়ে সে দেশের সংখ্যালঘুরা ভারতে আসেন। তাই তাঁদের দ্রুত এ দেশে নাগরিকত্ব দিতে চায় সরকার। ১১ বছর নয়, ৫ বছর তাঁরা এ দেশে থাকলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ছবি: DW/P. Mani
ধর্ম কেন
বিরোধীদের প্রশ্ন, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এভাবে ধর্মের উল্লেখ করে আইন তৈরি কি আদৌ সম্ভব? প্রতিবেশী দেশ থেকে কেউ এ দেশে নাগরিকত্ব চাইলে ভারত অবশ্য়ই তাঁকে সাহায্য় করবে। কিন্তু তার সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।
ছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay
সংসদ উত্তাল
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করার পরেই সরব হয় বিরোধী পক্ষ। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, ধর্মের ভিত্তিতে এ ভাবে আইন সংশোধন বিরোধীরা মেনে নেবে না। এর ফলে মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। যা ভারতের সংবিধান বিরোধী।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
এরপর কি এনআরসি
বিরোধীদের প্রশ্ন, এরপর কি গোটা দেশে আসামের মতো জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি করবে সরকার? গোটা দেশ জুড়ে তৈরি হবে অসংখ্য ডিটেনশন ক্যাম্প?