রাজ্যসভায় স্থলসীমান্ত বিল পাস
৬ মে ২০১৫বিলটি পাসের মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার ৪২ বছরের ছিটমহল সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে৷ স্বাভাবিকভাবেই এতে আনন্দে ভাসছে উভয় দেশের ১৬২টি ছিটমহলের নাগরিকরা৷ খবরটি প্রচার হওয়ার পরই উল্লসিত হয়ে ওঠেন তাঁরা, হয় মিষ্টি বিতরণ৷
ভারতের জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় স্থল সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংসদকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম৷ বুধবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্থলসীমান্ত চুক্তি পাসের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এই অভিনন্দন জানান৷ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের প্রধান বাধা কেটে গেছে৷ আশা করছি, বাকি প্রক্রিয়াগুলোও দ্রুত সম্পন্ন হবে৷ আর এর মাধ্যমে দু'দেশের ছিটমহলে যেসব নাগরিক আছেন, তাঁরা তাঁদের অধিকার ফিরে পাবেন৷
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার সভাপতি মফিজার রহমান বুধবার টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজ্যসভায় বিলটি পাস হওয়ার পর ছিটমহলবাসীরা মেতে উঠেছেন আনন্দ-উল্লাসে৷ যাঁর যাঁর কাজ ফেলে সবাই চলে এসেছেন মহাসড়কের ধারের ছিটমহল অফিসের সামনে৷'' এ সময় তাঁরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানিয়ে একে-অপরকে মিষ্টিমুখ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘উভয় দেশের ১৬২টি ছিটমহলের সকলেই এই খবরে খুশি৷''
নীলফামারীর পুটিমারী সমন্বয় কমিটির সভাপতি তছলিম উদ্দিন টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘ দিনের সমস্যার সমাধান হবে – এমন আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম৷ ভারতের রাজ্যসভায় বিলটি অনুমোদন হওয়ার পর আমরা নতুন করে আবার আশায় বুক বেধেছি৷ আর কয়েকটি ধাপ পার হলেই আমাদের সব সমস্যার সমাধান হবে৷ আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হয়ে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করব৷''
তবে খানিকটা আশঙ্কার কথাও বলেন তছলিম উদ্দিন৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এখনও আশ্বস্ত হতে পারছি না৷ কারণ কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ জোটের আমলে এই বিলটি মন্ত্রীসভা বৈঠকে পাস হলেও বিজেপির কারণে পার্লামেন্টে উঠেনি৷ এবার রাজ্যসভায় বিলটি পাস হলেও এখন যাবে লোকসভায়৷ এরপর রাষ্ট্রপতি বিলে স্বাক্ষর করলে, তবেই সংবিধান সংশোধন হয়ে ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ ফলে বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া এখনও বাকি আছে৷''
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সীমান্ত চুক্তি বিল নিয়ে নানা অনিশ্চয়তা দেখা দেয়৷ শেষ পর্যন্ত চুক্তিটি পার্লামেন্টে পাস হবে কিনা – তা নিয়েও নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল৷ এর কারণ ছিল আসামকে চুক্তি থেকে বাদ রাখার সরকারি পরিকল্পনা৷ বিজেপির আসাম শাখার আপত্তির কারণেই আসামকে বাদ রেখে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধনী বিল রাজ্যসভায় তুলতে চেয়েছিল মোদী সরকার৷ কিন্তু আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও বিরোধীদল কংগ্রেসের আপত্তির মুখে সরকার এই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে৷ স্থলসীমান্ত চুক্তিতে আসামকে যুক্ত করেই সংবিধান সংশোধনী বিল অনুমোদন করেছে ভারত সরকার৷ মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংবিধান সংশোধনী খসড়া বিল অনুমোদন করা হয়৷
প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন৷ ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য একটি ‘প্রটোকল' স্বাক্ষর করা হয়৷ কিন্তু এর বাস্তবায়নের জন্য ভারতের সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন না হওয়ায়, ৪২ বছর ধরে ব্যাপারটি ঝুলে রয়েছে৷ দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময় এবং সাড়ে ৬ কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিত করাই এই স্থলসীমান্ত চুক্তির লক্ষ্য৷ এর মাধ্যমে সাড়ে ৬ কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমানা চিহ্নিত করা হবে৷ ছিটমহলগুলোর মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি (৭১১০ একর জমি) এবং বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি (১৭১৬০ একর) জমি বিনিময় হবে৷ এছাড়া অপদখলীয় জমির মধ্যে মেঘালয়, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অধীন সীমান্তে ২,০০০ একর জমি এবং আসামের ২৬৮ একর জমির অধিকারী হবে বাংলাদেশ৷