1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজ্যের দিকে দিকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনা, তদন্ত কোন পথে?

পায়েল সামন্ত পশ্চিমবঙ্গ
১৭ অক্টোবর ২০২৪

রাজ্যজুড়ে আরজি কর কাণ্ড নিয়ে আন্দোলন চলছে। তারই মধ্যে জেলায় জেলায় ঘটে চলেছে একাধিক ধর্ষণ খুনের ঘটনা। উঠছে বিচারের দাবি। মানুষের আস্থা নেই পুলিশে।

কৃষ্ণনগরে ধর্ষণ-খুন
কৃষ্ণনগরে নাগরিক সমাজের প্রতিবাদছবি: Satyajit Shaw/DW

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। তার বিচারের দাবিতে আন্দোলনে এখনো চলছে। এরই মধ্যে নারী হত্যার আরো ঘটনা সামনে আসছে।

কুলতলির পর এবার কৃষ্ণনগর, বরাবাজারে দেহ উদ্ধার ঘিরে উত্তেজনা।

ক্রাইম সিন নিয়ে প্রশ্ন

কৃষ্ণনগরের ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠেছে। তার অ্যাসিডে পোড়া দেহ উদ্ধার হয়েছে পুলিশ সুপারের দপ্তরের ৩০০ মিটারের মধ্যে। কিন্তু সেখানেই কি খুন করা হয়েছে ছাত্রীকে, এই সন্দেহ ঘোরাফেরা করছে।

তদন্তকারীদের অনুমান, অন্য কোথাও অপরাধ ঘটিয়ে পুজো মণ্ডপে ছাত্রীর দেহ ফেলে রেখে যায় দুষ্কৃতীরা। অর্থাৎ অকুস্থল একটি নয়, একাধিক। এই ঘটনায় পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ছাত্রীর প্রেমিক রাহুল বসুকে। বেঙ্গালুরুর একটি হোটেলে সে কাজ করে।

মাস চারেক আগে রাহুলের সঙ্গে ছাত্রীর পরিচয়। সে একবার বেঙ্গালুরু গিয়েছিল রাহুলের ডাকে। তদন্তে উঠে এসেছে, রাহুল মৃতাকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিল। সেই টাকা ছাত্রী ফেরাতে পারেনি। এই টাকার জন্য অপরাধ, না সম্পর্কের টানাপোড়েনে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

কুলতলিতে বিক্ষোভ অব্যাহতছবি: Satyajit Shaw/DW

ময়নাতদন্তে চাবিকাঠি

মঙ্গলবার রাত দশটার পর অপরাধ ঘটেছে বলে তদন্তকারীদের অনুমান। সেই সময় রাহুলের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন দেখছে পুলিশ। এই দুজনের দুই বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সন্দেহের বৃত্তে রয়েছে ছাত্রীর হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাস। সেখানে লেখা হয়, তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। এই স্ট্যাটাস কি ছাত্রীর দেয়া না অন্য কারো? এই বার্তা থেকে যদি আত্মহত্যার ইঙ্গিত মেলে, তাহলে মৃতার মুখ অ্যাসিডে পোড়া কেন, দেহ কেন বিবস্ত্র, এই বিষয়গুলি পুলিশকে ভাবাচ্ছে। একইসঙ্গে জোরালো হয়েছে গণধর্ষণের অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার কল্যাণীর হাসপাতালে ছাত্রীর দেহের ময়নাতদন্ত হয়। এর রিপোর্ট থেকে অনেকটাই ছবি স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা নমুনা সংগ্রহ করবেন অকুস্থল থেকে।

এদিন ধৃতকে আদালতে পেশ করা হয়। আরো চারজনকে আটক করা হয়েছে। প্রেমিকের বাবা, মা ও এক বন্ধু ছাড়াও মৃতার এক বান্ধবীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

মৃতার পরিবার পুলিশের তদন্তে আস্থা রাখতে পারছে না। তারা সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছে। এনিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানাতে চলেছে পরিবার।

প্রশাসন কীভাবে অপরাধের মোকাবিলা করছে তা অপরাধীরা লক্ষ্য করে: ডা. সুবর্ণ গোস্বামী

This browser does not support the audio element.

পুরুলিয়ায় গ্রেপ্তারি শূন্য

পুরুলিয়া জেলার বরাবাজারে নদীর চরে বুধবার এক তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়। বালির নীচে পোঁতা ছিল দেহ।

স্থানীয় বাসিন্দারা নদীর ধারে রক্তের দাগ দেখতে পান। সেই দাগ চর পর্যন্ত চলে গিয়েছিল। তরুণীর প্যান্ট ও ওড়নার কিছু অংশ বালির উপরে দেখা যাচ্ছিল। পুলিশ বালি খুঁড়ে দেহ উদ্ধার করে। মৃতার মুখ থেঁতলে দেয়া হয়েছিল।

এই তরুণীর পরিচয় ২৪ ঘণ্টা পরেও জানতে পারেনি পুলিশ। ১৫ কিলোমিটার দূরে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড। সেখানকার থানাতেও দেহের ছবি পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বৃহস্পতিবার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। তরুণীর উপর যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল কি না, তা প্রাথমিক রিপোর্টে স্পষ্ট হতে পারে।

কুলতলিতে ধর্ষণই

দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে উত্তাল হয়ে ওঠে এক নাবালিকার মৃত্যু ঘিরে। এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। গ্রামবাসী পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দেয়। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা গ্রামে এলে তাদের উপর চড়াও হয় জনতা।

এই ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলেছে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। যদিও পুলিশ সরকারিভাবে একথা জানায়নি। ৪ অক্টোবর ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের পরের দিন ময়নাতদন্ত হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, শ্বাসরোধ করে খুন করার আগে ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। অভিযুক্ত তরুণকে দ্রুত গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে প্রতি নয় মিনিটে একটি যৌন নির্যাতন ঘটে। এক্ষেত্রে গ্রেপ্তারি অনেক ক্ষেত্রে হলেও সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা মামলার তুলনায় নগণ্য। এই কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করেন।

তরুণীর দেহ নিয়ে যাচ্ছে পুলিশছবি: Satyajit Shaw/DW

আর জি কর আন্দোলনে সিনিয়র চিকিৎসকদের অন্যতম প্রতিনিধি ডা. সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, "সমাজে অপরাধ থাকে। কিন্তু অপরাধীরা লক্ষ্য করে, প্রশাসন কীভাবে অপরাধের মোকাবিলা করছে। অপরাধ করলে যদি সঠিক বিচার হয়, তাহলে অন্য দুষ্কৃতীরা কিছুটা সমঝে চলে। কিন্তু তারা যদি দেখে যে প্রশাসন অপরাধীদের পক্ষ নিচ্ছে, তাহলে অপরাধীরা উৎসাহিত হয়।"

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ, সংশয় প্রায় প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রে উঠে আসে। সেটা পশ্চিমবঙ্গ হোক বা অন্য রাজ্যে। আর জি করের ঘটনায় তথ্য প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে পদ ছাড়তে হয়েছে। সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে টালা থানার সাবেক ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে।

রাজ্যের সাবেক পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম কৃষ্ণনগরের ঘটনার পর বলেন, "পুলিশকে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখে কাজ করতে হবে। সেই স্বাধীনতা পুলিশকে দিতে হবে। নইলে পুলিশ অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করার আগে দেখবে অভিযুক্তরা শাসক দলের কি না। প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আগে উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। তাই নির্যাতিতার পরিবার পুলিশে ভরসা রাখতে পারছে না। তদন্ত যদিও বা ঠিক পথে এগোয়, পরিবার শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় সংস্থার অধীনে তদন্ত চাইছে। এর দায় কিন্তু জনতার নয়।"

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ