আরজি কর মামলার ষষ্ঠ শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় নির্দেশ দিয়েছিলেন, হাসপাতাল এবং স্কুলের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় যেন সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের ডিউটি দেওয়া না হয়। রাজ্যকে এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
রাজ্য সরকারের সূত্র জানিয়েছে, পুজোর আগেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কাজে পাঠানো হয়েছে পুলিশকর্মীদের। কিন্তু রাজ্যের অন্য হাসপাতালগুলি থেকে সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের এখনো সরানো সম্ভব হয়নি।
কেন এখনো সিভিক ভল্যান্টিয়ার
কলকাতা এবং রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন করে সিভিক ভল্যান্টিয়ার কাজ করেন। মূলত হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্যই তাদের সেখানে বহাল করা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতাল থেকে ওই সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের সরিয়ে স্থায়ী পুলিশকর্মী নিয়োগ করার মতো পরিস্থিতি এই মুহূর্তে পুলিশে নেই বললেই চলে। কারণ রাজ্যে প্রায় ছয় হাজার পুলিশকর্মীর পদ শূন্য। বহুদিন ধরেই সেখানে কোনো নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের সরিয়ে পুলিশকর্মী নিয়োগ করার মতো জনবল নেই।
সে ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীদের ওই জায়গায় ব্যবহার করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের সরানো যাচ্ছে না।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে। সাবেক আইপিএস অফিসার সন্ধি মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ''কেন দীর্ঘদিন ধরে পুলিশে নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে। কেন ছয় হাজার পদে নিয়োগ হয়নি?'' বস্তুত, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অনেক কম খরচে অস্থায়ী পদে সিভিক ভল্যান্টিয়ার নিয়োগ করে রাজ্য সরকার কাজ চালানোর চেষ্টা করছিল। সিভিক ভল্যান্টিয়ার দিয়ে পুলিশের শূন্যপদ পূরণের চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর যা আর করা সম্ভব নয়।
একদিকে 'দ্রোহ', অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নাচ
হাজার হাজার জনতার দ্রোহের কার্নিভাল দেখলো শহর কলকাতা। শাসকের কার্নিভালে নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শেষ লগ্নে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ
হাই কোর্টে তখন বিচারপতি রবি কিসান কপূরের এজলাস চলছে। ধর্মতলায় জমায়েত জমাট বাঁধছে ধীরে ধীরে। কোর্টে শুরু হয় শুনানি। যুক্তি পাল্টাযুক্তি চলতে থাকে, উত্তেজনা বাড়তে থাকে অনশনমঞ্চে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পাশাপাশি দুই কার্নিভাল
দুপুর ২টো ৫৩ মিনিট। বিচারপতি নির্দেশ দিলেন, দ্রোহের কার্নিভাল করা যাবে। রেড রোডের পুজো কার্নিভালের সঙ্গে তার কোনও সংঘাত নেই। ঘোষণা মাত্র উদ্বেলিত জনতা পুলিশের দাঁড় করানো ব্যারিকেডের ফাঁক দিয়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ঢুকে পড়েন। কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশও কার্যত ‘বাধ্য’ হয় ব্যারিকেডের শিকল খুলে দিয়ে তা সরিয়ে দিতে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
হাজার হাজার প্রতিবাদী জনতা
জলস্রোতের মতো জনস্রোত ধেয়ে আসতে থাকে রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের দিকে। খানিকক্ষণের মধ্যেই উপচে পড়ে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শাঁখ, ঢাক আর স্লোগান
ঢাকের বাদ্যি, শাঁখের আওয়াজ, স্লোগানে স্লোগানে তখন মুখরিত হয়ে উঠতে থাকে কলকাতার চেনা 'মিটিং সরণি'।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সব লেন ভরে যায় মানুষে
ভরে যায় দুটো লেনই। জনস্রোত এগোতে থাকে সামনের দিকে। যে অংশে ব্যারিকেড এবং পুলিশ প্রহরা মোতায়েন রাখা হয়েছিল, সেখানেও ঢুকে পড়ে জনস্রোত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
জমায়েতের বিভিন্ন অংশ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়তে থাকে। ব্যারিকেডের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ কর্মীদের সামনে গিয়ে সাধারণ মহিলারা নানা ধরনের কটাক্ষ করতে শুরু করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডাক্তারদের পাশে আরো কিছু মঞ্চ
দ্রোহের কার্নিভাল ডেকেছিল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স। তবে তাতে জুড়ে গিয়েছিল আরও কিছু মঞ্চ। যে মঞ্চগুলিতে বামেদের নিয়ন্ত্রণ আছে। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের জমায়েতে সংগঠিত ভিড়ের ছবি দেখা গেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ছিলেন না নেতারা
তবে সিপিএমের প্রথম সারির নেতারা কেউ জমায়েতে যাননি। জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা সমাবেশে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানিয়েছিল বামফ্রন্ট। যা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অনশন মঞ্চ থেকেই বলেছিলেন, কেউ যেন আন্দোলন 'হাইজ্যাক' করার চেষ্টা না করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী
একদিকে যখন দ্রোহের কার্নিভাল চলছে রাসমণি রোডে, তখন ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রেড রোডে শুরু হয়েছে সরকারি কার্নিভাল। ঢাকের তালে তালে অভিনেত্রীদের হাত ধরে নাচলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ফুটবল নিয়ে খেললেন
মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাতে একটি ফুটবল নিয়ে কিছুক্ষণ খেললেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর তা ছুঁড়ে দিলেন সামনের রাস্তায়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সেরা পুজোর গান
মুখ্যমন্ত্রীর লেখা পুজোর গান চললো কার্নিভালে। জানানো হলো, এবছরের সেরা পুজোর গান নির্বাচিত হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই গান। কারা তা নির্বাচন করেছেন, তা অবশ্য জানায়নি সরকার।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কালো বেলুন দিয়ে দ্রোহ
অন্যদিকে, গুচ্ছ গুচ্ছ কালো বেলুনের বন্দোবস্ত করেছিলেন দ্রোহের উদ্যোক্তারা। আশা করা হয়েছিল আকাশে ওড়ানোর পর বেলুনগুলো পাশেই সরকার আয়োজিত পুজো কার্নিভালের ওপর দিয়ে উড়ে যাবে। প্রতিবাদ আর শোকের বার্তা বয়ে নিয়ে যাবে আকাশপথে। তবে হাওয়ার গতি অন্যদিকে থাকায় বেলুনগুলি বিপরীত দিকে চলে যায়।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শহর-গ্রাম একাকার
শহর ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো হয়েছিলেন মানুষ। কেউ প্রতিবাদের গান গাইতে গাইতে কেউ কেউ বা দলবদ্ধভাবে নাচের মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঢাকিদের প্রতিবাদ
দেখা গেল একদল ঢাকি এসেছেন তাদের প্রতিবাদ জানাতে। প্রতিবাদে আসা সাধারণ মানুষ তাদের হাত থেকে কাঠি নিয়ে বাজাতে শুরু করেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বাহারি পোস্টার
বিভিন্ন সংগঠন থেকে মানুষ এসেছিলেন এই কার্নিভালে। দ্রোহের এই কার্নিভালে পোস্টারেও ছিল অভিনবত্ব। ‘ভাবছ ভয় পেয়ে ঘরে ঢুকে যাবে? চাপ আছে বস’ । সরল ভাষায় লেখা এই পোস্টার মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
জনতার দখলে ধর্মতলা
সন্ধে নামার পরে ভিড় আরও বাড়ে। গোটা ধর্মতলা চত্বর তখন উৎসাহী জনতার দখলে। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে তখন মুখরিত কলকাতার প্রাণকেন্দ্র।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মানববন্ধন
রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে কার্নিভাল চলাকালীনই ধর্মতলায় শুরু হয়ে যায় জুনিয়র ডাক্তারদের ডাকা মানববন্ধন। সন্ধ্যার পর আরও ভিড় বাড়তে থাকে। অবরুদ্ধ হয়ে যায় ডোরিনা ক্রসিং থেকে ধর্মতলা। সেই জমায়েতেও দেখা যায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আছড়ে পড়ছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মানববন্ধনের মাঝে প্রতিমা
পুজো কার্নিভালে প্রতিমা প্রদর্শন শেষে উত্তর কলকাতামুখী কয়েকটি ক্লাবের লরি এই পথেই ফিরছিল। পথের দু-পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানবশিকলের মাঝ খান দিয়ে যাওয়া পুজো কার্নিভালের দুর্গা প্রতিমাকেও শুনতে হয়েছে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান। রাজ্যের মন্ত্রী তথা শ্রীভূমির ক্লাবকর্তা সুজিত বসুর গাড়ির উদ্দেশ্যেও ক্ষোভ উগরে দেয় মানববন্ধনে দাঁড়ানো জনতা।
ছবি: Subrata Goswami/DW
18 ছবি1 | 18
এর আগে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের আইন-শৃঙ্খলাজনিত কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের হাসপাতাল, স্কুলের মতো সংবেদনশীল জায়গায় ডিউটি দেওয়া যাবে না। তাহলে এই লক্ষাধিক সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের কোন কাজে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
উল্লেখ্য, আরজি কর কাণ্ডে এখনো পর্যন্ত যে প্রধান অভিযুক্ত, সেই সঞ্জয় রায় একজন সিভিক ভল্যান্টিয়ার। ফলে প্রথম দিন থেকেই হাসপাতালে সিভিক ভল্যান্টিয়ার নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টেও এবিষয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওই নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে, কীভাবে সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের নিয়োগ হয়, তাদের যোগ্যতা কী, তাদের বেতন কত?
রাজ্য পুলিশের এক অফিসার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, রাজ্যে পুলিশের যে সংখ্যা, তাতে প্রতিটি হাসপাতালে পুলিশকর্মী নিয়োগ করা প্রায় অসম্ভব। নতুন করে পুলিশ নিয়োগ করে তাদের ট্রেনিং দিয়ে তৈরি না করা পর্যন্ত সিভিক ভল্যান্টিয়ারদের পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
বস্তুত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই আরজি কর হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হয়েছে। তার পাশাপাশি সেখান থেকে ২৯ জন সিভিক ভল্যান্টিয়ারকে সরিয়ে পুলিশকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু বাকি হাসপাতালগুলিতে এখনই তা করা সম্ভব নয়।