গতমাসে জার্মান সংসদে নিজের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর ফল্কার কাউডারকে হারিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ শনিবার তাঁর সিডিইউ দলের তরুণ কর্মীদের সংগঠন ‘ইয়ুঙ্গে উনিয়ন' বা জেইউ-র সম্মেলনেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে৷
জেইউ-র সম্মেলনেও সেই ধারণা পরিষ্কার হয়েছে৷ বক্তারা ম্যার্কেলের সমালোচনা করলেও দলের জন্য এখনো যে নতুন নেতৃত্বের সময় আসেনি, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন৷
জেইউ নেতা পাউল সিমিয়াক ম্যার্কেলের প্রতি দলকে আধুনিক করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ তাঁর এই আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন সম্মেলনে উপস্থিত কর্মীরা৷
জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যে ম্যার্কেলের ‘খ্রিস্টীয় গণতন্ত্রী দল' সিডিইউর সহযোগী দল হচ্ছে সিএসইউ৷ আগামী রবিবার ঐ রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তবে সবশেষ জরিপে দেখা গেছে, সিএসইউ-র জনপ্রিয়তা এবার রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে৷
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সিএসইউ দল একাই বাভারিয়ার সরকার পরিচালনা করেছে৷ কারণ, দলটি প্রায় ৫০ শতাংশের মতো ভোট পেতো৷ কিন্তু সবশেষ জরিপ বলছে, সিএসইউ এবার ৩৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে৷ রবিবারের নির্বাচনে যদি জরিপের ফলাফলের প্রতিফলন ঘটে, তাহলে এবার জোট সরকারের দিকে যেতে হতে পারে৷
যেভাবে জার্মান শিখছেন উদ্বাস্তুরা
একদল রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বন শহরের রাস্তা, বাজারঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জার্মান ভাষাশিক্ষার কাজে৷ সেই সঙ্গে জার্মানির মানুষজন ও সংস্কৃতিও কিছুটা চেনা হয়ে যাচ্ছে৷ একেই বলে বোধ হয় ‘প্রোঅ্যাকটিভ’ পন্থায় ভাষা শেখা!
ছবি: DW/M. Hallam
উদ্বাস্তুদের জন্য ভাষাশিক্ষার পাঠক্রম
জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া এক কথা, এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করা আরেক কথা৷ কারণ তার জন্য প্রয়োজন জার্মান ভাষা শেখা৷ সেটা তো শুধু ক্লাসরুমের বেঞ্চিতে বসেই নয়, বাস্তব ও ব্যবহারিক জীবনেও জার্মান ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছু শেখা যায় – যেমন বন শহরের পথেঘাটে৷
ছবি: DW/M. Hallam
‘ইন্টেগ্রেশন কোর্স’
বিদেশি-বহিরাগতকে সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা, সমাজের অংশ করে তোলাকে জার্মানে বলে ‘ইন্টেগ্রেশন’৷ এসিবি লিঙ্গুয়া ল্যাঙ্গুয়েজ স্কুল রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য একটি বিশেষ ইন্টেগ্রেশন কোর্স চালু করেছে৷ সেই কোর্স অনুযায়ী পড়ুয়াদের মাঝেমধ্যে ক্লাসরুম ছেড়ে পথে বেরিয়ে অচেনা পথচারী বা দোকানিদের জার্মানে প্রশ্ন করতে বলা হয়েছে: ‘আচ্ছা, এটা কী ফল? ঐ সবজিটার নাম কী?’
ছবি: DW/M. Hallam
আনারসের আর্বি যেন কী?
দেখলে চিনতে পারার কথা৷ দামটা না লিখলেও চলে, কিন্তু ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে...৷
ছবি: DW/M. Hallam
পরীক্ষায় নকল নয়, তবে শর্টকাট চলে
ছাত্রদের বলে দেওয়া হয়েছে মোবাইল ব্যবহার না করতে, বরং রাস্তা বা অন্যান্য খোঁজখবরের জন্য মানুষজনকে জার্মানে প্রশ্ন করতে৷ কিন্তু ধরুন যদি বাসাম-এর মতো কাউকে পাওয়া যায়, যে জার্মান আর আর্বি, দু’টো ভাষাই জানে, তাহলে তো পোয়াবারো!
ছবি: DW/M. Hallam
বেটোফেন যেন কবে জন্মেছেন?
লুডভিশ ফান বেটোফেন সম্ভবত বন শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত সন্তান৷ জন্মেছিলেন ১৭৭০ সালে, শহরের মূল চত্বরের কাছের একটি গলিতে বেটোফেনের জন্মের বাড়ি না দেখলে, বন-এ কিছুই দেখা হলো না৷ রাদওয়ান আয়ুজ ও তাঁর ছেলে আলি অতিকষ্টে বেটোফেনের জন্মের তারিখটা খুঁজে বার করেছেন৷
ছবি: DW/M. Hallam
রাস্তাঘাট চেনা
টিমকে হয়ত বলে দেওয়া হয়েছে, ‘ফ্রিডেন্সপ্লাৎস’, মানে শান্তির চত্বরে যাও৷ অথবা ৬০৮ নম্বর বাস কোথায় যাচ্ছে? পরের বাসটা আসবে কখন? বাসটা আবার থামে একটি উদ্বাস্তু আবাসের কাছে, যেখানে দলের অনেকের বাস৷
ছবি: DW/M. Hallam
বন থেকে চিঠি
কোথাও বসে পোস্টকার্ড লেখা হলো ক্লাসের নতুন কাজ৷ তার জন্যে পোস্ট অফিসে গিয়ে স্ট্যাম্প কিনে, পোস্টকার্ডে সেঁটে পোস্ট করতে হবে৷ স্ট্যাম্পের ‘রিসিট’ রেখে দিতে হবে৷
ছবি: DW/M. Hallam
পয়েন্ট মানেই ‘প্রাইজ’
এরপরেও ডয়চে ভেলের রিপোর্টার যে দলটির সাথে ছিলেন, তাঁরা খুব ভালো ফলাফল করতে পারেনি – সম্ভবত রিপোর্টারের কচকচানি, তার ওপর আবার রিপোর্টারকে কোনো প্রশ্নের উত্তর জিগ্যেস করা চলবে না, এই কারণে৷
ছবি: DW/M. Hallam
8 ছবি1 | 8
বাভারিয়া রাজ্যে সিএসইউ দলের এই খারাপ পরিস্থিতির জন্য দলের অনেক কর্মী ম্যার্কেলকেই দায়ী করেন৷ তাই জেইউ-র সম্মেলনে ম্যার্কেল যখন বক্তব্য দিতে মঞ্চে উঠছিলেন তখন সিডিইউ-র তরুণ কর্মীরা দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানালেও সিএসইউ'র কর্মীরা বসেই থাকেন৷ শুধু তাই নয়, ম্যার্কেলের আধ ঘণ্টার বক্তব্যের সময় সিএসইউ'র কর্মীদের কেউ মোবাইলে চোখ রেখেছেন, আর কেউ সংবাদপত্র পড়েছেন৷
এমনকি মাটিয়াস ব্যুটগ্যার নামে সিএসইউ দলের এক কর্মী উঠে দাঁড়িয়ে ম্যার্কেলকে বলেন যে, তাঁর (ম্যার্কেল) নেতৃত্বে দল এগিয়ে যাবে বলে তিনি আর মনে করছেন না৷
সম্মেলন শেষে ব্যুটগ্যার ডয়চে ভেলেকে বলেন, সবশেষ সংসদ নির্বাচনে সিডিইউ-সিএসইউ জোটের খারাপ ফলাফলের পর গত এক বছর ধরে দলের অনেকেই বিষয়টি (ম্যার্কেলের নেতৃত্ব) নিয়ে খোলাখুলি মন্তব্য করছেন৷
সিএসইউ-র আরেক কর্মী টোমাস হাসলিঙ্গার ডয়চে ভেলেকে বলেন,ম্যার্কেলের প্রতি হতাশার কারণ তাঁর নেয়া শরণার্থী নীতি৷ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর নীতির কারণেই অস্ট্রিয়া থেকে অনেক শরণার্থী বাভারিয়ায় প্রবেশ করেছিল৷ ‘‘তাঁর সিদ্ধান্ত ঠিক, না ভুল ছিল, সে মূল্যায়ন আমি করব না৷ কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, ঐ নীতির কারণে মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে,'' বলেন তিনি৷ শরণার্থীবিরোধী দল ‘জার্মানির প্রতি বিকল্প' বা এএফডি দলের আজকের উত্থানের জন্যও ম্যার্কেলকে দায়ী করেন হাসলিঙ্গার৷
সিএসইউ'র মতো সিডিইউ'র তরুণ কর্মীরাও ম্যার্কেলের সমালোচনা করেছেন৷ তবে তারপরও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের সময় এখন নয় বলেও মনে করেন তাঁরা৷
বেন নাইট/জেডএইচ
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে উদ্বেগ এবং উদ্যোগ
জার্মানিতে প্রতিদিনই বাড়ছে অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলও বলেছেন, বছর শেষে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে৷ জার্মানির ওপর চাপ এত বেশি না রেখে, ইইউভুক্ত অন্য দেশগুলোকেও শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Zavoral
সমালোচনা ও চাপের মুখে ম্যার্কেল
অভিবাসন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে ম্যার্কেল সরকারের উদ্যোগ ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি৷ তারপরও জার্মানিতে ম্যার্কেল সমালোচিত৷ সরকার বিরোধীদের একটা অংশ মনে করে, ম্যার্কেল প্রশাসন ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করে সংকট ঘণীভূত করছে৷ জার্মানিতে শরণার্থী বিরোধী ক্ষোভও দেখা দিয়েছে৷ সব মিলিয়ে শরণার্থী ইস্যু নিয়ে বেশ চাপে আছে ম্যার্কেল সরকার৷
ছবি: Reuters/H. Hanschke
সবচেয়ে বড় সংকট!
ক’দিন আগেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় সংকট মনে করা হতো গ্রিসের অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে৷ সেই বিপর্যয় এখনো কাটেনি৷ তবে আতঙ্কে আরো বড় হয়ে উঠেছে শরণার্থী সংকট৷ জার্মানিতে প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বৃদ্ধির চাপ৷ জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল একাধিকবার বলেছেন, ইউরোপে গ্রিসের চেয়ে বড় সংকট হয়ে দেখা দিতে পারে শরণার্থী ইস্যু৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Dilkoff
করণীয়
বর্তমান হারে চলতে থাকলে ২০১৫ সালে আগত শরণার্থীর সংখ্যা যে বছর শেষে ৮ থেকে ১০ লাখ দাঁড়াবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ রবিবার ম্যার্কেল বলেছেন, এতদিন শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়ে এলেও এ হারে চাপ বাড়তে থাকলে আগামীতে জার্মানির পক্ষে খুব বেশি ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে না৷ ইইউভুক্ত অন্য সব দেশকে তাই দ্রুত আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ এ লক্ষ্যে জরুরি বৈঠক আয়োজনের জন্য ইইউ-র প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/I. Fassbender
নড়েচড়ে বসছে ইইউ
ইউরোপীয় ইউনিয়ন শরণার্থী সংকট মোকাবিলার জন্য দু’সপ্তাহের মধ্যে সদস্য দেশগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি বৈঠকের আয়োজন করবে৷ ইইউ-ও মনে করে, ব্যাপক হারে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন সংকটকে ভয়াবহ করে তুলছে৷
ছবি: Getty Images/Afp/A. Tzortzinis
জার্মানিতে শরণার্থী বিরোধী ক্ষোভ
জার্মানির কিছু অঞ্চলে শরণার্থীদের প্রতি ক্ষোভ, অসন্তোষ বেশ বেড়েছে৷ শরণার্থী শিবিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেই চলেছে৷ এ পর্যন্ত ১০০টি এমন ঘটনা ঘটেছে৷ গত সপ্তাহান্তে ড্রেসডেনের কাছের হাইডেনাউ শহরে শরণার্থীবিরোধীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে৷ সংঘর্ষে ৩০ জন পুলিশ আহত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Meyer
সাধারণ মানুষ শরণার্থীদের পাশে
জার্মানির অধিকাংশ মানুষই শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল৷ নানা স্থানে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় শরণার্থীদের সহায়তায় এগিয়ে আসছে৷ ড্রেসডেনে শরণার্থীবিরোধী বিক্ষোভের পর ৫ হাজার মানুষ নেমে আসে রাস্তায়৷ শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় যুদ্ধ কিংবা অভাবের তাড়ণায় মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং এশিয়া থেকে আসা অসহায় মানুষদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন তাঁরা৷ ওপরে শরণার্থীদের জন্য আয়োজিত এক মেলার ছবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Zavoral
কেউ খাওয়াচ্ছেন স্যুপ
ভিলহাইমের এই তরুণী ঘরে তৈরি ভেজিটেবল স্যুপ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন শরণার্থী শিবিরে৷ নিজে উপস্থিত থেকে সেই স্যুপ খাইয়েছেন শরণার্থীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/G. Fischer
কেউ শেখাচ্ছেন ভাষা
ছবির এই দুই অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছেন সোমালিয়া থেকে৷ বায়ার্নের থানহাউসেনে পৌঁছানোর পর জার্মান ভাষাও শিখতে শুরু করেছেন৷ সাবেক এক জার্মান শিক্ষক নিজের উদ্যোগে স্কুল খুলে ভাষা শেখাচ্ছেন শরণার্থীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Puchner
নাচো-গাও
ড্রেসডেনে নব্যনাৎসি বিরোধী সংগঠন ‘ড্রেসডেন নাৎসিফ্রাই’ শরণার্থীদের জন্য অভিবনব এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল৷ অনুষ্ঠানে অভিবাসনপ্রত্যাশী এবং তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল জার্মানরা একসঙ্গে নেচেছেন, গেয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Willnow
প্রবাসেই সুখী
অনেক শরণার্থীই শুরু করেছেন নতুন জীবন৷ শঙ্কা, উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা সরিয়ে সুযোগ পেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দও করছেন তাঁরা৷ সিরিয়া থেকে আসা এই পরিবারটি অবসর সময়ে চলে যায় সমুদ্র সৈকতে৷ প্রবাসেও তাঁরা বেশ সুখী৷