প্রথমে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এলো পাকিস্তানের দিক থেকে। আকাশেই তা ধ্বংস হতে দেখলাম। রাতভর চললো গোলাগুলি।
জম্মুর কাছে আখনুর সীমান্তে সারারাত ধরে চললো গোলা-গুলি। ছবি: Ap Photo/picture alliance
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার রাতে জম্মু পৌঁছানোর পরই দেখলাম, আকাশে একের পর এক আগুনের গোলা। আর তা পরমুহূর্তেই তা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আকাশেই। ভারতের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র এভাবেই নিস্ক্রিয় করলো। চোখের সামনে।
তখন সাইরেন বাজছে। পুরো শহরে ব্ল্যাক আউট। সমানে শুনতে পাচ্ছিলাম গোলা-গুলির আওয়াজ। জম্মুর কাছেই আখনুর সীমান্ত। ফলে গোলা ও গুলির শব্দ খুবই স্পষ্ট। গোলাগুলি শুরু হতেই সাইরেন বাজতে থাকলো। এই গোলাগুলির শব্দ থামলো ভোর সাড়ে চারটের সময়।
এর মধ্যে হোটেলে চলে এসেছি। হোটেল তখন দ্রুত বন্ধ করে দিচ্ছে সবকিছু। সব ঘর থেকে আবাসিকদের নিচে নামিয়ে এনে বলা হলো, যতক্ষণ সাইরেন বাজবে, নিচে থাকতে হবে। বেসমেন্টে নিয়ে যাওয়া হলো আমাদের।
সাইরেন থামার পর বলা হলো, ঘরে যাওয়া যাবে, কিন্তু আলো জ্বালানো যাবে না। জানালার পর্দা সরানো যাবে না। আবার সাইরেন বাজলে নিচে আসতে হবে। পরে যখন আবার সাইরেন বাজলো, তখন জানানো হলো, প্রয়োজন হলেই নিচে আসতে হবে। কোনো আলো জ্বালানো চলবে না। ততক্ষণে গুলি-গোলার আওয়াজ আরো বেড়ে গেছে।
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, কলকাতার স্কুলে মক ড্রিল
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে বুধবার তার প্রশিক্ষণ পেলো কলকাতার চারটি স্কুলের পড়ুয়া সহ আরো অনেকে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
দিল্লি পাবলিক স্কুলে
দিল্লি পাবলিক স্কুলের একটি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সেই মহড়া চলছে। শেখানো হচ্ছে, কোনো ধরনের আক্রমণ হলে নিজেকে এবং অন্যদের বাঁচানোর জন্য কী করতে হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন এই প্রশিক্ষণ?
২২ এপ্রিল পহেলগামে জঙ্গি হানায় ২৬ জন ভারতীর মৃত্যুর পর থেকে ভারত-পাক সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়। ৭ ও ৮ মে-র দিবাগত রাতে পাকিস্তানের নয়টি জায়গায় আক্রমণ চালায় ভারত। বুধবার রাতে ভারতের ১৫টি শহরে পাকিস্তান হামলা করার চেষ্টা করে এবং সেই আক্রমণ প্রতিহত করা হয় বলে ভারত জানিয়েছে। তবে সরকার আগে থেকেই এই নিরাপত্তা মহড়ার কথা জানিয়েছিল। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম এই নিরাপত্তা মহড়া হলো।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
যে কোনো পরিস্থিতিতে সুরক্ষিত রাখার শিক্ষা
কেবলমাত্র যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি নয়, যে কোনো সংকটকালীন পরিস্থিতিতেই কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায় তার জন্যেও চলে প্রশিক্ষণ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
লা মার্টিনিয়ার স্কুলে
কলকাতার মিন্টো পার্ক অঞ্চলের লা মার্টিনিয়ার গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই প্রশিক্ষণ পেয়েছে। তাদের শেখানো হয়েছে সুরক্ষিত থাকার কৌশল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ধোঁয়া মোকাবিলা
প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে, জরুরি পরিস্থিতিতে ধোঁয়া এবং গ্যাসের সাথে কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় তা শিখেছে শিক্ষার্থীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে
শত্রুপক্ষের হামলার সময় ডেস্কের নিচে লুকিয়ে থাকতে শেখানো হয়েছে এই প্রশিক্ষণে। কোনো আক্রমণ হলে নিরাপদ জায়গার খোঁজের শিক্ষা এভাবেই দেখানো হয়েছে পড়ুয়াদের।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
রেলকর্মীদের প্রশিক্ষণ
স্কুল ছাড়া অন্যত্রও চলে এই প্রশিক্ষণ। উপরের ছবিতে রেলকর্মীদের জরুরি পরিস্থিতিতে ধোঁয়া এবং গ্যাস মোকাবিলা করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কীভাবে অন্যদের উদ্ধার করতে হবে
সরকারি কর্মীদের শেখানো হয়, কীভাবে বিপদের সময় অন্যদের উদ্ধার করতে হবে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বাঁচানোর চেষ্টা কীভাবে করতে হয়
কলকাতার ডিআরএম স্পোর্টস গ্রাউন্ডে জরুরি মহড়ার আয়োজন করেছিল ভারতীয় রেলওয়ের শিয়ালদহ ডিভিশনের নাগরিক প্রতিরক্ষা দল। সেখানে শেখানো হয়, জরুরি পরিস্থিতিতে কীভাবে অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করতে হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
9 ছবি1 | 9
ব্ল্যাক আউট, গোলাগুলির নিরন্তর শব্দ, অন্ধকারের মধ্যে ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র, সবমিলিয়ে এই ছিল জম্মুর রাতের ছবি।
সকালে আমরাও বের হলাম পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। রাস্তায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরপর ব্যারিকেড। সেনা টহল দিচ্ছে। থমথমে পরিবেশ। তখনো দোকানপাট খোলেনি। মানুষজন বাড়িতেই। রাস্তায় শুধু পুলিশ, সেনা ও আধা সামরিক বাহিনী এবং আমাদের মতো সামান্য কিছু সাংবাদিক।