মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এফবিআই-এর সাবেক পরিচালক জেমস কোমির কাছে তিনবার জানতে চেয়েছিলেন, তাঁকে নিয়ে তদন্ত চলছে কিনা৷ যুক্তরাষ্ট্রের টিভি চ্যানেল এনবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই কথা জানান৷
বিজ্ঞাপন
‘‘আমি আসলে তাঁকে (কোমি) জিজ্ঞেস করেছিলাম, হ্যাঁ৷ আমি বলেছিলাম, ‘যদি সম্ভব হয়, আপনি কি আমাকে জানাবেন, আমাকে নিয়েও তদন্ত চলছে কিনা?''' এনবিসিকে বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ এক ডিনারে তাঁদের মধ্যে এ সব কথা হয় বলে জানান তিনি৷ কোমির উত্তর প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘‘তিনি (কোমি) বলেন, ‘আপনাকে নিয়ে তদন্ত হচ্ছে না৷'' দু'জনের মধ্যে টেলিফোন আলাপে বাকি দু'বার কোমির কাছে একই বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন বলেও সাক্ষাৎকারে জানান তিনি৷
মঙ্গলবার জেমস কোমিকে এফবিআই-এর পরিচালকের পদ থেকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প৷ এক্ষেত্রে রাশিয়ার বিষয়টিও তাঁর মাথায় ছিল বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি৷ ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার প্রভাব নিয়ে তদন্ত করছে এফবিআই৷ কোমি ছিলেন তার প্রধান৷
এদিকে, নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকা জেমস কোমির দু'জন সহকর্মীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার সপ্তাহখানেক পর ট্রাম্প কোমিকে হোয়াইট হাউসে ব্যক্তিগত ডিনারে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন৷ সেই সময় ট্রাম্প কোমির কাছে জানতে চান, তিনি (কোমি) তাঁর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করবেন কিনা৷ কোমি তখন সেটি করতে অস্বীকার করে ট্রাম্পকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি (কোমি) তাঁর সঙ্গে সবসময় সৎ থাকবেন৷
সেদিনের আলোচনা বরখাস্তের একটি কারণ হতে পারে বলে কোমি এখন বিশ্বাস করছেন, বলে দাবি নিউ ইয়র্ক টাইমসের৷
নিউ ইয়র্ক টাইমস অবশ্য বলছে, ট্রাম্প এনবিসির কাছে যে ডিনারের কথা বলেছেন, আর কোমির দু'জন সহকর্মী যে ডিনারের কথা উল্লেখ করছেন, দু'টো একই কিনা তা নিশ্চিত নয়৷ তবে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দু'জন একবারই ডিনারে অংশ নেন বলে নিউ ইয়র্ক টাইমস বিশ্বাস করে৷
এদিকে, এনবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, কোমি তাঁর চাকরি বাঁচাতে নিজেই ডিনারের আবেদন করেছিলেন৷ তবে কোমির দুই সহকর্মী নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ট্রাম্পই কোমির সঙ্গে ডিনার করতে চেয়েছেন৷
কোমির কাছে ট্রাম্পের আনুগত্য চাওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে নিউ ইয়র্ক টাইমসে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র সারাহ হুকাবে স্যান্ডার্স৷ তিনি বলেন, ‘‘ট্রাম্প কখনই কারও কাছে তাঁর প্রতি আনুগত্যের দাবি করবেন না, শুধু দেশ ও তাঁর মহান নাগরিকদের প্রতি কারও আনুগত্য চাইতে পারেন৷''
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, নিউ ইয়র্ক টাইমস)
১০০ দিনে ট্রাম্প কথা রেখেছেন কি?
নির্বাচনি প্রচারের সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জনতার সঙ্গে ১০০ দিনের চুক্তির কথা বলেছিলেন৷ প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি সেই চুক্তি মেনে সব প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন কি? এতগুলি নির্বাহী আদেশের পর সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Brendan Smialowski
‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল, নতুন স্বাস্থ্য বিমা চালু
তীব্র বিদ্বেষ নিয়ে পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে চালু করা স্বাস্থ্য বিমা কাঠামো বাতিল করে আরও অনেক কার্যকর এক পালটা ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের রিপাবলিকান দলের মধ্যেই বিরোধিতার মুখে আপাতত পিছু হঠতে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. McNew
কর ব্যবস্থার সংস্কার
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই কর ব্যবস্থার সংস্কারের ঘোষিত লক্ষ্যে একের পর এক সময়সীমা স্থির করেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য এক বিশদ প্রস্তাবমালা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প৷ তবে প্রথম ১০০ দিনে তিনি এ ক্ষেত্রে কিছু করে উঠতে পারেননি৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
কর্মসংস্থানে জোয়ার
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, কর ব্যবস্থার সংস্কার ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ সরকারি বিধিনিয়ম কমাতে পারলেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জোয়ার আসবে৷ এখনো সে কাজে অগ্রগতি ঘটেনি৷ যেটুকু সাফল্য এসেছে, তার দাবিদার হবার নৈতিক অধিকার আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters/A. P. Bernstein
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর
অনুপ্রবেশ রুখতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ট্রাম্প৷ বলেছিলেন, তার ব্যয়ভার মেক্সিকোকেই বহন করতে হবে৷ সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে তিনি এক নির্বাহী আদেশও জারি করেছেন৷ এবার তার ব্যয়ভারের জন্য কংগ্রেসের দ্বারস্থ হচ্ছেন ট্রাম্প৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল প্রবল প্রতিরোধের হুমকি দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/J.Sullivan
আইএস ধ্বংস করার অঙ্গীকার
ক্ষমতায় আসার ৩০ দিনের মধ্যে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে পুরোপুরি নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিন্তু সমালোচকদের মতে, এখনো পর্যন্ত ওবামার আমলের নীতিই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷ সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও আইএস বহাল তবিয়তেই আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Militant Website Turkistan Islamic Party
অভিবাসনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি
প্রচারের সময় ট্রাম্প সংবিধানের তোয়াক্কা না করে সব মুসলিমদের অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অঙ্গীকার করেছিলেন৷ তারপর সুর নরম করে কিছু মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণ কার্যত বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেন৷ কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপে সেই উদ্যোগ থমকে গেছে৷ বেআইনি অভিবাসীদের তাড়ানোর ক্ষেত্রেও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Huffaker
মুক্ত বাণিজ্যের বিরোধিতা
উত্তর অ্যামেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ‘ন্যাফটা’র বর্তমান শর্তগুলির চরম বিরোধিতা করে নতুন করে সেটি সাজানোর উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ মেক্সিকো ও ক্যানাডার সঙ্গে এই নিয়ে কোন্দলও শুরু হয়েছে৷ তবে আপাতত কোনো রদবদল হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি৷