রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক৷ এর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হচ্ছে৷ জানা গেছে, রানার প্রকাশ্য বৈধ সম্পদের চেয়ে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদের পরিমাণই বেশি৷
বিজ্ঞাপন
আদালতের নির্দেশে রানার কিছু সম্পদ অবশ্য বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ইতিমধ্যেই৷ এর মধ্যে রয়েছে রানা প্লাজার ১৮ ভাগ, রানা টাওয়ারের ১৪ ভাগ এবং রানার গ্রামের বাড়ির ১৭৪ শতাংশ জমি৷ কিন্তু বাস্তবে রানার আরো বিপুল পরিমাণ স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পদ আছে৷
দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক-এর সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন যে, তাঁরা রানার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন৷ তাঁদের তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷ তাই দ্রুত তাঁরা এই অবৈধ সম্পদ নিয়ে রানার বিরুদ্ধে মামলা করবেন৷
মৃত্যুকূপ থেকে যেভাবে ফিরলেন রেশমা
সাভারে ধসে পড়া ভবন থকে ১৭ দিন পর উদ্ধার করা হয় জীবিত রেশমাকে৷ এই সতের দিন তিনি কিভাবে কাটিয়েছেন? প্রশ্ন অনেকের মনে৷ চলুন উত্তর খোঁজা যাক৷
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
সুস্থ আছেন রেশমা
সাভারে ধসে পড়া ভবন থকে ১৭ দিন পর উদ্ধার করা হয় জীবিত রেশমাকে৷ তিনি এখন সুস্থ আছেন৷ কিন্তু ধসে পড়া রানা প্লাজার মধ্যে কিভাবে সতের দিন কাটিয়েছেন তিনি? প্রশ্ন অনেকের মনে৷ চলুন ছবিতে উত্তর খোঁজা যাক৷
ছবি: Reuters
উদ্ধার অভিযান
১০ মে স্থানীয় সময় বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকর্মী রাজ্জাক ধসে পড়া ভবনের মধ্যে বেঁচে থাকা একজন মানুষের উপস্থিতি টের পান৷ সেই মানুষটি রেশমা৷ তিনি একটি ভাঙা পাইপ দিয়ে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন এবং তাঁকে বাঁচানোর অনুরোধ জানান৷ এরপর রড কেটে ভিতরে ঢুকে বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে রেশমাকে বাইরে নিয়ে আসা হয়৷
ছবি: Getty Images/STRDEL
যেভাবে টিকে ছিলেন রেশমা
১৭ দিন রেশমা কি খেয়ে টিকে ছিলেন সেই প্রশ্ন অনেকের৷ উদ্ধারকর্মী রাজ্জাক জানান, ‘‘রেশমা যে তলায় আটকে ছিলেন সেটা অন্যান্য তলার মতো মিশে যায়নি৷ সেখানে হাঁটা-চলা এবং নড়া-চড়া করার কিছুটা সুযোগ ছিল৷ রেশমা তাঁকে জানান যে, ঐ জায়গায় বিভিন্ন ধরনের শুকনা ও জুস জাতীয় খাবার ছিল, যা তিনি খেয়েছেন৷ ৭ মে শুকনা খাবার শেষ হয়ে যায় আর রসালো খাবার যায় পচে৷ ফলে শেষের দু’দিন ধরে তিনি অভুক্ত ছিলেন৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/STRDEL
চিকিৎসকের ব্যখ্যা
ধ্বংসস্তূপের নীচে রেশমার এই ১৭দিন বেঁচে থাকার ঘটনাকে ডয়চে ভেলের কাছে ব্যাখা করেছেন মিটফোর্ড হাসপাতালের চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. মনি লাল আইচ৷ তিনি বলেন, ‘‘রেশমা ১৭ দিনে হৃদরোগ বা নিউরোলোজিক্যাল সমস্যায় পড়তে পারতেন৷ হয়ত মানসিক জোর এবং বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছার কারণেই তাঁকে সেই সমস্যায় পড়তে হয়নি৷ আর গবেষণায় প্রমাণিত যে নারীদের মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি৷’’
ছবি: Reuters
গোটা বিশ্বে আলোড়ন
রেশমাকে ১৭ দিন পর জীবিত উদ্ধারের খবরে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি হয়৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত সাভারে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এই তরুণীকে দেখতে যান৷ রেশমাকে কেউ যাতে মানসিকভাবে পীড়া না দেয় সেজন্যও সবাইকে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা৷
ছবি: dapd
তৃতীয় নারী রেশমা
১৭ দিন ধরে অন্ধকারে ডুবে থাকা রেশমাকে উদ্ধারের খবরের সঙ্গে একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বিবিসি৷ এতে দেখা যাচ্ছে, এর আগে পাকিস্তানে একই রকম পরিস্থিতিতে নাকাশা বিবি নামক এক নারী পচা খাবার আর পানি খেয়ে টিকে ছিলেন ৬৩ দিন৷ আর হাইতির ইভান্স মোনসিজনাক টিকে ছিলেন ২৭ দিন৷ এই সময়ের পর তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: Getty Images
পরিবারের সঙ্গে দেখা
রেশমার মা জোবেদা খাতুন, দুই ভাই ও বোন আসমা গত কয়েকদিন ধরেই রয়েছেন সাভারে৷ হাসপাতালে রেশমার সঙ্গে দেখা করেছেন তারা৷ রেশমার বড় ভাই জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘‘বর্তমানে রেশমা ভালো আছে, সুস্থ আছে৷’’
ছবি: Reuters
বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
এদিকে, সাভারে ভবন ধসে মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে৷ গত ২৪ এপ্রিল ভবন ধসের পর ১২ মে অবধি উদ্ধার করা হয়েছে ১,১২৭ টি মৃতদেহ৷ নিহতদের মধ্যে ঠিক কতজন নারী আর কতজন পুরুষ – সেই হিসেব এখন আরা জানা যাচ্ছে না৷ অনেক মরদেহ পচে গেছে৷ গোটা বিশ্বে স্মরণকালের মধ্যে ভয়াবহতম ভবন ধস এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তবুও কি সতর্ক আমরা?
সাভার ভবন ধসের পর কতটা সতর্ক হয়েছে বাংলাদেশ? এই প্রশ্ন অনেকর মনে৷ বিশেষ করে, যে পোশাক খাত বাংলাদেশকে গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তুলছে, সেই খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তায় সরকার কতটা সচেষ্ট? সর্বশেষ খবর হচ্ছে, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক শিল্পের যে নেতিবাচক ‘ইমেজ’ তৈরি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতেই এই পদক্ষেপ৷
ছবি: Reuters
‘আমাদের ব্যর্থতার প্রতীক’
শান্তিতে নোবেল জয়ী বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনূস গত ৯ মে একটি নিবন্ধের একাংশে লিখেছেন, ‘‘সাভার ট্র্যাজেডি জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতার প্রতীক৷ রানা প্লাজার ফাটল ফেটে ভবন ধসে দেখিয়ে দিলো আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় যে বিশাল ফাটল ধরেছে সেটা আমলে না নিলে জাতিও এরকম ধসের ভেতর হারিয়ে যাবে৷’’
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
জানা গেছে, সাভার শহরে রানার আরো একটি বাড়ি, দুটি তেল কল, সাভারের বাইরে দুটি আধুনিক ইটভাটা, সাভারে দুটি প্লট এবং ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকার খোঁজ পাওয়া গেছে৷ এছাড়া তাঁর বেনামে বেশ কয়েকটি অংশীদারি ব্যবসার কথাও জানা গেছে৷ এছাড়া রানা প্লাজা ও রানা টাওয়ারের মালিকানা যথাক্রমে ১৮ এবং ১৪ ভাগ দেখানো হলেও, বাস্তবে বাকি শেয়ারও রানার৷ তিনি বেনামে এ সব শেয়ার তাঁর দখলে রেখেছেন৷
সাভারের সাংবাদিক নাজমুল হুদা ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘একটি মহল রানার অবৈধ সম্পদ রক্ষায় নানাভাবে চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছে৷ তারা অংশীদারি ব্যবসা থেকে রানার নাম গোপন করতে চাইছে৷''
তিনি জানান, ‘‘রানা সাভারে অস্ত্র এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন৷ এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও আছে৷ এই অবৈধ ব্যবসার টাকা তিনি নগদে রাখতেন৷ ব্যাংকে রাখতেন না৷''
রানা প্লাজায় আহতদের সহায়তায় জার্মানিতে প্রদর্শনী
রানা প্লাজা ধসে আহত পোশাক শ্রমিকদের সহায়তায় জার্মানির বিলেফেল্ড শহরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী৷ একটি গির্জায় আয়োজিত এই প্রদর্শনী থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় হবে আহত শ্রমিকদের সহায়তায়৷
ছবি: DW/A. Islam
বিলেফেল্ডে প্রদর্শনী
জার্মানির বিলেফেল্ড শহরের একটি গির্জায় ২৬ জানুয়ারি প্রদর্শন করা হয় একদল পোশাক শ্রমিকের ছবি, যাঁরা রানা প্লাজা ধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত৷ প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য, ২০১৩ সালের ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এ সব মানুষ সম্পর্কে জার্মানদের জানানো৷ পাশাপাশি তাঁদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ৷
ছবি: DW/A. Islam
শুধু ছবি নয়
বিলেফেল্ডে গির্জার পাশের সম্মেলন কক্ষে পোশাক শ্রমিকদের বিভিন্ন ছবির পাশেই শোভা পাচ্ছিল কিছু টি-শার্ট৷ সাদা এই টি-শার্টের উপরে লেখা রয়েছে ‘ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন’৷
ছবি: DW/A. Islam
উৎসুক দৃষ্টি
একটি ছবির ক্যাপশনের দিকে প্রদর্শনীতে আগত দর্শকদের উৎসুক দৃষ্টি৷
ছবি: DW/A. Islam
ছিলেন বাঙালিরাও
বিলেফেল্ডে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছবি প্রদশনীটি দেখতে গির্জায় হাজির হন৷ সাভারে পোশাক শ্রমিকদের করুণ পরিণতিতে স্বাভাবিকভাবেই ব্যথিত তাঁরা৷
ছবি: DW/A. Islam
গির্জার ভেতরে
গির্জায় রবিবার প্রার্থনা সভা চলাকালে বাংলাদেশের এই ছবিটিসহ আরো কয়েকটি ছবি প্রদর্শন করা হয় প্রার্থনা কক্ষের ভেতরেই৷ বাংলাদেশ সম্পর্কে জার্মানির আমজনতাকে ধারণা দেওয়ার ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ স্থানীয় গণমাধ্যমেও সাড়া জাগিয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
আয়োজকের কথা
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে স্বেচ্ছাসেবী ব্যার্নহার্ড হ্যার্টলাইন প্রদর্শনীর আয়োজন করেন৷ ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা জানতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন তিনি৷ উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এগারোশ’র বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হন, যাঁদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক৷
ছবি: DW/A. Islam
অর্থ যাচ্ছে স্নেহা ফাউন্ডেশনে
ব্যার্নহার্ড হ্যার্টলাইন জানান, প্রদর্শনী থেকে সংগৃহীত অর্থ স্নেহা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের সহায়তায় খরচ করা হবে৷ ফাউন্ডেশনটি ৩০ জন নারী পোশাক শ্রমিকের দীর্ঘমেয়াদি পুর্নবাসনের দায়িত্ব নিয়েছে, যাঁরা ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এবং মা৷
ছবি: DW/A. Islam
7 ছবি1 | 7
রানার এই বিপুল পরিমাণ টাকা সাভারে কয়েকজন প্রভাবশালীর কাছে আছে বলে তিনি জানান৷ তাঁরা রানার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত৷ তাছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টেও রানার টাকা আছে৷ নাজমুল জানান, ‘‘রানা তাঁর নামে ৮ তলা রানা প্লাজা নির্মাণ করেছেন কোনো ব্যাংক ঋণ ছাড়াই৷ এ থেকেই তাঁর অর্থ বা বিত্তের পরিমাণ বোঝা যায়৷'' রানা আটক হওয়ার পর তাঁর ইটভাট, তেল কল, অংশীদারি ব্যবসা সবই চালু আছে বলে জানান তিনি৷
গত বছরের ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে ১,১৩৫ জন শ্রমিক নিহত হন৷ রানা ঘটনার সময় ভবনের নীচ তলায় তাঁর অফিসেই ছিলেন৷ সেখান থেকে বের হয়ে তিনি প্রভাবশালীদের সহায়তায় পালিয়ে যাওয়ার পর, সীমান্ত এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়৷ যুবলীগের এই নেতা আওয়ামী লীগের গত পাঁচ বছরে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন৷ অভিযোগ আছে, রানা প্লাজার জমি তিনি নাম মাত্র দামে জোর করে লিখিয়ে নিয়েছিলেন৷