বাংলাদেশের সাভারে রানা প্লাজা ধসে নিহত মোট ১,১৪৩ জনের মধ্যে ১১২ জনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি৷ ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাব৷ কিন্তু কেন?
বিজ্ঞাপন
জাতীয় ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির প্রধান অধ্যাপক ড. শরীফ আখতারুজ্জামান জানান, রানা প্লাজা ধসে নিহত অজ্ঞাত ৩২২টি মৃতদেহ ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়৷ লাশের ডিএনএ প্রোফাইল তৈরির পর লাশ শনাক্ত করতে ৫৪১টি পরিবার থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়৷ তাদের সঙ্গে মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০০টি লাশ শনাক্ত করা গেছে৷ কিন্তু ১০ জনের ডিএনএ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে মিলে যাওয়ায়, তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না৷
তিনি জানান, ‘‘রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় নিহত ১,১৩৪ জনের মধ্যে ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়াই ৮০০টির বেশি লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ এ সব পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অশনাক্ত লাশগুলোর ডিএনএ মিলে যেতে পারে৷ সরকার যদি আগ্রহী হয়, তবে তাদেরও ডিএনএ পরীক্ষা করাতে পারে৷''
এই পরিস্থতিতে ড. শরীফ পরবর্তী যে কোনো দুর্ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অস্থায়ী মর্গ তৈরি করে নিহত ব্যক্তিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করার পর লাশ হস্তান্তরের পরামর্শ দেন৷
সাভারে ‘রানা প্লাজা’ ধসে বহু হতাহত
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷
ছবি: Reuters
আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল
২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টায় সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত নয় তলা ‘রানা প্লাজা’ ধসে পড়ে৷ সাভার মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকালে ফাটল দেখা দেয়ার পরপরই ওই ভবনে থাকা চারটি গার্মেন্ট কারখানা ও ব্যাংক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল৷ তবে ২৪ এপ্রিল সকালে কারখানায় আবার কাজ শুরু হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বহু হতাহত
১০ মে সকাল পর্যন্ত ধসে পড়া রানা প্লাজা থেকে ১০৩৬টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ এসব লাশের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিকদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই’
ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, ব্যাপক ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে৷ এমন ধ্বংসস্তূপ সরানোর মতো প্রয়োজনীয় যন্ত্র নেই৷ এ কারণে উদ্ধারকাজ চালাতে সমস্যা হচ্ছে৷
ছবি: Reuters
এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন
সাভারে ধসে পড়া বহুতল ভবনে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিরা৷ সকালে ভবন ধসের পরপরই স্থানীয়রা উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে আসেন৷ এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন৷
ছবি: Reuters
রক্ত চাই
ধ্বংসস্তুপ থেকে থেকে উদ্ধার করা শত শত আহতের জন্য প্রচুর রক্ত প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ এজন্য ব্লগ, ফেসবুকের মাধ্যমে সকলকে রক্ত দানে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সংগঠনও রক্ত সংগ্রহে নেমেছে৷
ছবি: Reuters
জোর করে ঢোকানোর অভিযোগ
আগের দিন ভবনে ফাটল দেখা দেয়ায় ঐ ভবনে থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যেতে না চাইলেও মালিকরা তাদেরকে জোর করে ঢুকিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে৷
ছবি: Reuters
ইমারত বিধিমালা মানা হয়নি
‘রানা প্লাজা’ ইমারত বিধিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর৷ বুধবার দুপুরে তিনি ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন৷ বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷'' (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
হরতাল প্রত্যাহার
উদ্ধার তৎপরতা নির্বিঘ্ন এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার পথে বাঁধা দূর করতে হরতাল প্রত্যাহার করেছে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
ছবি: Harun Ur Rashid
সরকারের আশ্বাস
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷
ছবি: dapd
খালেদার শোক প্রকাশ
ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷ উদ্ধারকাজ যথাযথভাবে চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷ খালেদা জিয়া শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন৷
ছবি: Reuters
10 ছবি1 | 10
এ নিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসক হারুন অর রশীদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘যাঁদের লাশ ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া আত্মীয়স্বজনকে দেয়া হয়েছে, তাঁদের ডিএনএ পরীক্ষা এখন করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার৷ শুধু তাঁদের আত্মীস্বজনই নয়, নিহতদেরও ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে৷ কারণ যাঁদের লাশ দেয়া হয়েছে, লাশটি যে তাঁদের স্বজনদের নয় – তা দুই দিক থেকেই ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে৷ যা একটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার৷ এছাড়া যাঁরা লাশ নিয়ে গেছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এখন ডিএনএ পরীক্ষা করাতে রাজী হবেন বলে মনে হয় না৷'' ঢাকার জেলা প্রশাসক বলেন, ‘‘যে ৮০০টি লাশ ডিএনএ পরীক্ষা ছাড়া হস্তান্তর করা হয়েছে, তা যে সব ঠিক আছে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না৷ কিছু ভুল হতেই পারে৷ তবে এ নিয়ে এখন আর কিছু করার নেই৷''
হারুন অর রশীদ জানান, ‘‘ডিএনএ পরীক্ষায় যাঁদের লাশ শনাক্ত হয়েছে, তাঁদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, জুড়াইনের কবরস্থানে গিয়ে কবর চিহ্নিত করেও দেয়া হয়েছে৷''
তাঁর কথায়, ‘‘ডিএনএ পরীক্ষায় তারা ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন ডিএনএ ল্যাবকে৷ এরপর অবশ্য নতুন করে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ নেই৷ তবে সরকার সিদ্ধান্ত নিলে আলাদা কথা৷''