1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রানা প্লাজায় আহতদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার অবনতি

২৪ এপ্রিল ২০২২

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহতরা এখনো মানবেতর জীবন-যাপন করছেন৷ তাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়াগুলো এখন আরো স্পষ্ট হচ্ছে৷ তাদের অনেকেরই কাজ করার মত সক্ষমতা নেই৷ কেউ কেউ ভিক্ষা করতেও বাধ্য হচ্ছেন৷

আহত হন দুই হাজার ৫০০ শ্রমিকছবি: picture-alliance/dpa/A. Abdullah

আহতদের মধ্যে এক হাজার ৪০০ শ্রমিক নিয়ে কাজ করছে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ৷ তাদের মধ্যে ২০০ শ্রমিককে গত ৯ বছর ধরে নিবিঢ়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তারা৷ এবারো ওই ২০০ জনের জনের ওপর জরিপ করেছে তারা৷ জরিপে দেখা গেছে আহত শ্রমিকদের ৫৬.৫ ভাগের শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটেছে৷ গত বছর এই সংখ্যাটি ছিলো শতকরা ১৪ ভাগ৷ আহতরা এখনো কোমর, পিঠ, মেরুদণ্ড, মাথা ও হাত-পায়ের নানা সমস্যায় ভুগছেন৷

গত এক বছরে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত বেড়ে ৪৮.৫ ভাগ হয়েছে৷ এক বছর আগে ছিলো ১২.৫ ভাগ৷ জরিপে আহতদের অর্থনৈতিক চিত্রও ফুটে উঠেছে৷ তাদের ৫৩ ভাগ এখনো কোনো কাজ পাননি বা কাজ করতে পারছেন না৷ যে ৪৩ ভাগ কাজ পেয়েছেন তারা যে সবাই পোশাক কারখানায় কাজ পেয়েছেন তা নয়৷ অনেকেই পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন৷ যারা কাজ পাননি তাদের ৬৭ ভাগ শারীরিক অক্ষমতার কারণে কাজ করতে পারেন না৷ ১০  শতাংশ মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন৷

কেউ কাজ দিতে চায় না: হাওয়া বেগম

This browser does not support the audio element.

হাওয়া বেগমের(৪২) বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপেজেলায়৷ রানা প্লাজার নিউ ওয়েভ গার্মেন্টস-এ তিনি কাজ করতে৷ তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন৷ তার স্বামী অসুস্থ৷ এক ছেলে আছে সেও বেকার৷ হাওয়া বেগম জানান, তার এখন চলা ফেরায় কষ্ট হয়৷ কোনো কাজ করতে পারেন না৷

তিনি বলেন, ‘‘গ্রামের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু সেখানে টিকতে পারিনি৷ আমার কোনো ঘর বাড়ি নাই৷ গ্রামের লোকজন চাইলে টাকা পয়সা দেয় না৷ তাই আবার সাভার চলে এসেছি৷ এখানে চেয়ে চিন্তে কিছু পাওয়া যায়, তাই দিয়ে চলি৷''

‘ডান পা অবশ হয়ে গেছে’

This browser does not support the audio element.

তিনি রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েছিলেন৷ এখনো তার, হাত, পা, হাঁটু ও পেটে ব্যথা৷ তিনি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না৷ দাঁড়িয়ে থাকলে মাথা ব্যথা করে৷ তিনি জানান, ‘‘কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর একটি হোটেলে কাজ নিয়েছিলাম৷ কিন্তু আবার অসুস্থ হয়ে পড়ি৷ আর সব দিন আমি কাজ করতে পারি না৷ তাই কেউ কাজ দিতে চায় না৷''

এরকম আরেকজন আহত শ্রমিক শিউলি খানম(৪০)৷ তিনি প্রায় পঙ্গু হয়ে গেছেন৷ ডান পা অবশ হয়ে গেছে৷ মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছিলেন৷ তার চিকিৎসা তো ঠিকমত হয়নি, তার উপর এখন এর প্রভাবে পুরো শরীরই অবশ হওয়ার পথে৷ তিনি মাথা ও মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়েছিলেন৷ স্বামী নেই৷ মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে আছেন৷ বাড্ডা এলকায় থাকেন৷ ঠিকমত ভাড়াও দিতে পারেন না৷

‘কোনো রকম বেঁচে আছি, আমার মেরুদণ্ড ভাঙা’

This browser does not support the audio element.

রানা প্লাজার আহত শ্রমিক মাহমুদুল হাসান হৃদয়(৩৫) বলেন, ‘‘আমার এখন আর জীবন বলতে কিছু নেই৷ কোনো রকম বেঁচে আছি৷ আমার মেরুদণ্ড ভাঙা৷ বুকের পাঁজর ভেঙে ভিতরে ঢুকে গেছে৷ এখন ডান পায়ে কোনো শক্তি পাই না, অবশ হয়ে গেছে৷ ধীরে ধীরে শরীরের অন্য অঙ্গেও নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ টয়টেলে গেলে ব্লিডিং হয়৷''

তার বাড়ি সাভারেই৷ আট শতক জমি ছিলো তাও চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন৷ এখন তার সহায় সম্বল বলে আর কিছু নেই৷ কোনো কাজও করতে পারেন না৷ দুই ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে ভাইয়ের বাসায় থাকেন৷ রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত আরো অনেক শ্রমিকের গল্পটা একই রকম৷

‘খাবার ঠিক মতো না পাওয়ায় শারীরিক সমস্যা আরো বেড়ে গেছে’

This browser does not support the audio element.

জরিপ বলছে, আহতদের মধ্যে যারা কাজ পেয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র ১৪.৫ শতাংশ পোশাক কারখানায় ফিরে যেতে পেরেছেন৷ আরও ৮ শতাংশ টেইলারিং এর সাথে জড়িত আছেন৷ বাকিরা এখন পেশা বদলে গৃহকর্মী, দিনমজুরি, কৃষিকাজ, বিক্রেতা এবং গাড়ি চালানোর মতো পেশায় যুক্ত হয়েছেন৷ কেউ কেউ ভিক্ষাও করছেন৷

করোনা মহামারিতে তাদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে৷ অনেকের আয় আগের চেয়ে কমে গেছে৷ আহতদের ৩৬ শতাংশের পারিবারিক আয় এখন মাসে পাঁচ হাজার টাকার কম এবং ৩৪ শতাংশের ১০ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে৷

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবীর বলেন, ‘‘আহত শ্রমিকদের দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসার আওতায় রাখা হয়নি৷ ফলে তাদের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে৷ শ্রমিকরা বলেছেন, আহত হওয়ার পর এখন তাদের শরীরে আরো নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ মানসিক সমস্যা হচ্ছে৷ যেগুলো আগে ছিলো না৷ দীর্ঘ মেয়াদে যে প্রতিক্রিয়া হবে তা তাদের চিকিৎসা পরিকল্পনার মধ্যে তখন রাখা হয়নি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘অনেকে কাজ পেয়েছে কিন্তু তারা সবাই তো আর পোশাক কারখানায় পায়নি৷ তাদের আয় কমে গেছে৷ খাদ্য সংকটে পড়েছে৷ খাবার ঠিক মতো না পাওয়ায় শারীরিক সমস্যা আরো বেড়ে গেছে৷''

’আহতদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসার কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি’

This browser does not support the audio element.

রানা প্লাজা নিয়ে কাজ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্ট্যাডিজ-এর অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন৷ তিনি  বলেন, ‘‘রানা প্লাজার ঘটনার পর কাঠামোগত উন্নয়নে জোর দেয়া হয়৷ আইএলওর প্রতিবেদনের পর তাদের আর্থিক সহায়তাও দেয়া হয়, সেটা ভালো৷ কিন্তু আহতদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসার কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি৷ ৯ বছরে আহতদের বয়স বেড়েছে, শারীরিক জটিলতাও বেড়েছে৷ তাদের অনেকেরই কাজ নেই৷ কাজ করতে পারেন না৷ তার প্রভাবও পড়ছে৷ তারা তখনই ট্রমাটাইজ ছিলেন৷ পরিস্থিতির কারনে ট্রমা আরো বেড়েছে৷''

তার কথা, ‘‘সরকারের কাছে এখন আর হয়তো কোনো জরিপও নেই যে আহতরা কোথায় কেমন আছে৷ এটার একটা জরিপ করে তাদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসার আওতায় নেয়া দরকার৷ তাদের চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল৷ এর ব্যয় তাদের নিজেদের পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়৷''

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ভবন ধ্বসে এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক নিহত হন৷ আহত হন দুই হাজার ৫০০ শ্রমিক৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ