1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রানা প্লাজা: ট্রমায় আক্রান্ত আহতরা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৩ এপ্রিল ২০১৫

রানা প্লাজা ধসে আহতদের একটি অংশ এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি৷ কেউ কেউ পঙ্গু হয়ে গেছেন৷ অন্তত ৫০ ভাগ এখনো গুরুতর ট্রমায় আক্রান্ত বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম৷

Bangladesch Textilfabrik Jahrestag Rana
ছবি: DW/M. Mamun

আন্না বেগম (১৭) ধসে পড়া রানা প্লাজার ফ্যান্টম গার্মেন্টস এ কাজ করতেন৷ ভবন ধসে তিনি তার ডান পা হারিয়েছেন৷ পা হারিয়ে পঙ্গু হওয়ার পর তিনি চিকিত্‍সা শেষে হাসপাতাল ছাড়েন৷ কিন্তু এরপর তার ভিতরে মানসিক অস্বাভিকতা দেখা দেয়৷ কোনো শব্দ শুনলে ভয়ে চিত্‍কার করে ওঠেন৷ ঘুমাতে গেলে মনে করেন উপরে টিনের চালা ভেঙে পড়বে৷ আর কোনো কারণে দুর্ঘটনার কথা মনে পড়লে নিজেকে অপরাধী ভেবে বিড় বিড় করে কী যেন বলেন৷ আন্না তাঁর পরিবারে সঙ্গে এখনো সাভারের একটি টিনশেড বস্তিতে থাকেন৷ তিনি জানান, ‘‘আমার ভয় হয়৷ কোন কিছু ভাল লাগেনা৷ মনে হয় আমার ওপর সবকিছু ভেঙে পড়বে৷''

আন্নার মা শাফিয়া বেগম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘একেতো আমার মেয়ে পঙ্গু হয়ে গেছে৷ তার ওপর এই অস্বাভাবিক আচরণ৷ মেয়েকে নিয়ে যে কী করব ভেবে পাচ্ছি না৷'' তিনি জানান, মেয়েকে নিয়ে তিনি সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের চিকিত্‍সা কেন্দ্র-সিআরপিতে চিকিত্‍সা করিয়েছেন৷ কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে৷ কিন্তু কৃত্রিম পা তাঁর মেয়েকে কেন জানি আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে৷

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শারীরিক পঙ্গুত্বের সঙ্গে আন্না বেগম এখন মানসিক রোগে আক্রান্ত৷ তার এখন গভীর ট্রমা৷ দীর্ঘমেয়াদি চিকিত্‍সা এবং পুনর্বাসন ছাড়া তাকে এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়৷'' তিনি বলেন, ‘‘সে এখনও ভীত এবং অবসাদগ্রস্ত৷ নানা কারণে তার ভিতরে যখন পুরনো স্মৃতি ফিরে আসে তখন সে অস্বাভাবিক আচরণ করে৷''

তাজুল ইসলাম জানান, ‘‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট রানা প্লাজা ধসের পর ৬ মাস পর বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের ওপর একটি জরিপ চালায়৷ জরিপে দেখা যায়, ৯০ ভাগ শ্রমিকই প্রাথমিক ট্রমায় আক্রান্ত৷ পরে আরেকটি জরিপে দেখা যায়, কমপক্ষে ৪০ ভাগ শ্রমিক ‘গুরুতর ট্রমায়' আক্রান্ত৷''

তিনি জানান, ‘‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিউটের পক্ষ থেকে পরে ফলো আপ করা হয়৷ তাতেও দেখা যায় গুরুতর ট্রমায় আক্রান্ত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় একই আছে৷''

‘মনোসামাজিক সহায়তা কেন্দ্র' নামে একটি প্রতিষ্ঠান কেয়ারের সহায়তায় ট্রমায় আক্রান্ত ৫০০শ' আহত শ্রমিককে চিকিত্‍সা ও কাউন্সিলিং করিয়েছে৷ কেন্দ্রের পরিচালক ও মনোসামাজিক চিকিত্‍সক দেওয়ান সাফায়েত আহমেদ ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা ৫০০ জনকে বাছাই করার আগে একটি জরিপ করি৷ আর আমাদের পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে রানা প্লাজায় আহতদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে পাঁচজন ট্রমায় আক্রান্ত৷ তাঁর মতে, রানা প্লাজার ঘটনায় ২,৪৩৮ জনের মধ্যে অর্ধেকই এখনো গুরুতর ট্রমায় ভুগছেন৷''

ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আহতদের মধ্যে বড় একটি অংশ এখন ভয় পাওয়া, দুঃস্বপ্ন দেখা, অপরাধবোধসহ নানা ধরনের মানসিক রোগে আক্রান্ত৷ আর এটা তাদের আরো গুরুতর মানসিক রোগের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ এর সঠিক চিকিত্‍সা না হলে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না৷ এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা স্থায়ী হতে পারে৷ আর তারা অবসাদ ও হতাশা থেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন৷''

রানা প্লাজার ঘটনার পর অ্যাকশন এইডের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে শ্রমিকদের ৫৫ ভাগ এখনো বেকার৷ তারা কোনো কাজ পাননি অথবা তাদের কাজ করার দক্ষতা কমে গেছে৷ আর যারা আহত হয়েছেন তাদের কাজ দিতে মালিকদের অনীহা আছে বলে প্রতিবদেনে বলা হয়৷ চলতি মাসেই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত আহত পোশাক শ্রমিক শিউলি বেগম (২১) জানান, ‘‘আমি কাজ নেয়ার পরও কাজ করতে পারিনি৷ আমার হাত-পা কাঁপে৷ কোন শব্দ হলে ভয় পাই৷ মনে হয় যেন ভবন ভেঙে পড়বে৷''

আর একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা ডয়চে ভেলেকে বলেন মোবারক মিয়া (২৩)৷ তিনি বলেন, ‘‘ভবন ধসের ছয় ঘণ্টা পরই আমাকে উদ্ধার করা হয়৷ প্রাথমিক চিকিত্‍সার পর আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়৷ ছয় মাস পর আমি আরেকটি পোশাক কারখানায় কাজ নিলেও শেষ পর্যন্ত কাজ করতে পারিনি৷'' কেন পারেননি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘মেশিনে হাত দিলেই আমার শরীর কাঁপে৷ বিদ্যুৎ চলে গেলে ভয় পাই৷ সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলে মনে হয় পড়ে যাব৷''

ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘দুঃসহ স্মৃতি তাদের তাড়া করছে৷ তাদের মধ্যে অপরাধ বোধও কাজ করছে৷ কারণ তাদের চোখের সামনেই তাদের সহকর্মী মারা গেছে৷ কেউ কাউকে সহায়তা করতে পারেননি৷''‘

তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা হচ্ছে আহতরা এখন আর এক জায়গায় নেই৷ সমন্বিতভাবে তাদের চিকিত্‍সা এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷ তবে এখনো সময় আছে৷ তাদের সমন্বিতভাবে চিকিত্‍সা এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়ার৷ নয়তো তারা আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না৷''

প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক নিহত ও প্রায় আড়াই হাজারের শ্রমিক আহত হন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ