1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্র্যাজেডির এক বছর

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৪ এপ্রিল ২০১৪

গত বছরের ২৪শে এপ্রিল সাভারে যেন নেমে এসেছিল ‘রোজ কেয়ামত'৷ রানা প্লাজা ধসে নিহত হয়েছিলেন ১,১৩৫ জন পোশাক শ্রমিক৷ গুরুতর আহত এক হাজারেরও বেশি৷ আহতদের অনেকে আজও আতঙ্কগ্রস্ত৷ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পাননি ক্ষতিগ্রস্তরাও৷

ছবি: Imago/Xinhua

গোলাপী বেগম (৩০) কাজ করতেন আটতলা রানা প্লাজার চারতলায়, একটি গার্মেন্টস কারখানায় ৷ ভবন ধসের তিন দিন পর তাঁকে উদ্ধার করা হয়৷ তাঁর ডান হাত, ডান পা-সহ শরীরের একাংশ অবশ হয়ে গেছে৷ গত রবিবার তিনি তাঁর এক আত্মীয়ের সহায়তায় রানা প্লাজার সামনে আসেন৷ তখনই কথা হয় তাঁর সঙ্গে৷

গোলাপী বেগম জানান, এখন আর তাঁর কোনো চিকিত্‍সা হচ্ছে না৷ চিকিত্‍সা খরচ আর ক্ষতিপূরণ বাবদ তিনি মোট দেড় লাখ টাকা পেয়েছেন৷ মোহাম্মদ আমিনুল এবং রাজ্জাকেরও একই অবস্থা৷ তাঁরা এখন আর কাজ করতে পারেন না৷ ঐ ঘটনার পর তিন-তিনটি পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছিলেন৷ কিন্তু কোনোটাতেই তিন দিনের বেশি কাজ করতে পারেননি৷ ভয়ে হাত-পা কাঁপছিল৷ তাঁরাও সব মিলিয়ে দেড় লাখ টাকার বেশি সহায়তা পাননি৷

রহিমা হেম তাঁর নিহত মেয়ে রীমা আক্তারের ক্ষতিপূরণের জন্য ঘুরছেন৷ তিনি প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকা পেয়েছেন৷ অন্যদিকে ফেরদৌসি বেগম এখনও তাঁর ছেলে মহিদুলের খোঁজ পাননি৷ ডিএনএ পরীক্ষাও হয়নি তাঁর৷ সব মিলিয়ে রানা প্লাজা ধসে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের মধ্যে এখন চরম হতাশা৷ এক বছরেও কোনো প্রতিশ্রুতিরই তেমন বাস্তবায়ন হয়নি৷

প্রাপ্ত হিসাব মতে, গত এক বছরে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ বিজিএমইএ ১৪ কোটি টাকা খরচ করে দায়িত্ব শেষ করেছে৷ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১২৭ কোটি টাকা জমা হয়েছে৷ যার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ২২ কোটি টাকা মাত্র৷ আর চার কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক তহবিল গঠন নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়৷ সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের পরিবার ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পায়নি৷ এমনকি কে কত ক্ষতিপূরণ পাবেন, তা-ও চূড়ান্ত হয়নি এখনও৷ এরই মধ্যে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে পিছটান দিয়েছে৷

ক্ষতিপূরণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে একটি তহবিল গঠিত হলেও, অনেক ক্রেতা প্রদিষ্ঠান এতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷ ফলে চার কোটি ডলারের এই তহবিলে এখন পর্যন্ত ক্রেতাদের মাত্র দেড় কোটি ডলার জমা পড়েছে৷ অবশ্য এর বাইরে ‘প্রাইমার্ক' আলাদা করে দিয়েছে ৯০ লাখ ডলার৷ এ থেকে ক্ষতিপূরণের অংশ হিসেবে শ্রমিকদের অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া শুরু হয়েছে৷

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ-এর (বিলস) সহকারী নির্বাহী পরিচালক সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘সব পক্ষই ক্ষতিপূরণকে একটি দান হিসেবে নিয়েছে৷ দায়িত্ব নিয়ে কেউ কাজ করছে না৷ ফলে পুরো প্রক্রিয়াটি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷''

বিজিএমইএ-র সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম দাবি করেন, ‘‘আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকেই সামর্থ অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, আহতদের চিকিত্‍সাসহ বিভিন্ন কাজ করেছে বিজিএমইএ৷''

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি-র নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন, ‘‘বিজিএমইএ যা করছে, তা লজ্জাজনক৷ মালিকদের সংগঠনের সামর্থ মাত্র সাড়ে ১৪ কোটি টাকা, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়৷''

সমালোচনায় মুখর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে৷ রানা প্লাজা ধসের এক বছর পেরিয়ে গেলেও অনেক ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার এখনও পুনর্বাসিত হননি বলে বুধবার মন্তব্য করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এশিয়া বিভাগের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন৷ তিনি বলেন, ‘‘আহত শ্রমিকদের সহায়তা দানে এবং নিহত শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হলে আন্তর্জাতিক গার্মেন্টস ব্র্যান্ডগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে৷''

ক্ষতিপূরণের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে একটি তহবিল গঠিত হলেও, অনেক ক্রেতা প্রদিষ্ঠান এতে আগ্রহ দেখাচ্ছে নাছবি: Reuters

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘ধসে পড়া রানা প্লাজায় যে পোশাক কারখানা ছিল সেগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল অ্যামেরিকা ও ইউরোপভিত্তিক পাঁচটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান৷ কিন্তু তারাও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকদের পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য যথেষ্ট আর্থিক সহায়তা দেয়নি৷''

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সভাপতিত্বে ৪০ মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল৷ কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে৷ রানা প্লাজায় অবস্থিত পোশাক কারখানাগুলোর সঙ্গে ব্যবসায়িকভাবে জড়িত ছিল না এমন কিছু প্রতিষ্ঠানও তহবিলে অনুদান দিয়েছে৷ অথচ রানা প্লাজায় উত্‍পাদিত পোশাকের গায়ে নিজেদের ব্র্যান্ডের লেভেল লাগানো প্রায় ১৫টি প্রতিষ্ঠান তহবিল গঠনে ভূমিকা রাখেনি৷

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর মতে, ব্যবসা ও মানবাধিকার প্রসঙ্গে জাতিসংঘের নির্দেশিকা অনুযায়ী: ‘‘কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থাকলে এবং সেসব প্রতিষ্ঠানে কোনো দুর্যোগ ঘটলে অথবা শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তার দায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে৷''

তাই যে প্রতিষ্ঠান তহবিলে অনুদান দেয়নি তাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য নোটিস দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ