1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘কাঁদলো সবাই’

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৪ এপ্রিল ২০১৪

নিলয় সরকার৷ বয়স ২৭ বা ২৮৷ রানা প্লাজা ধসে একটি চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গেছে৷ অন্য চোখটা দিয়েও ঝাপসা দেখেন৷ রানা প্লাজা ধসের বর্ষপূর্তিতে মঞ্চে উঠে চোখ হারানোর যন্ত্রণায় কথা বলতে পারছিলেন না৷ কান্নার তোড়ে গলা ধরে আসছিল...

Bangladesch Textilfabrik Jahrestag Rana
ছবি: DW/M. Mamun

একটা সময় নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না, কেঁদে ফেললেন উচ্চ স্বরে৷ চোখের পানিতে বললেন ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার কথা৷ কণ্ঠে অভিযোগ নিয়ে বললেন, ‘‘সরকার নাকি সাহায্য দিয়েছে৷ কিন্তু আমি কোনো টাকা পাইনি৷ এখন দুই চোখে আমার দুনিয়া কেবলই অন্ধকার৷''

শুধু নিলয় নন, তাঁর সাথে কাঁদলেন উপস্থিত লোকজন, মন্ত্রী, ব্যবসায়ী নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা সবাই৷ নিলয়ের মতো রায়হান কবিরও উঠেছিলেন মঞ্চে৷ রানা প্লাজা ধসে কবির হারিয়েছেন তাঁর একটা পা৷ কৃত্তিম পা যদিও লাগানো হয়েছে, কিন্তু তাতে এখনো ততটা অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেননি৷ মঞ্চে উঠেই পা হারানোর বেদনা নিয়ে কেঁদে ফেললেন তিনিও৷ ক্ষোভ, হতাশা আর কষ্ট নিয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বললেন, ‘‘সারা জীবনের জন্য যাঁর সাথে ঘর বেঁধেছিলাম, পা কাটা যাওয়ায় পর সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেছে৷ এখন আমি কেবলই একা৷''

উপস্থিত কেউই এদিন আবেগ ধরে রাখতে পারেননি৷ বিজিএমইএ ভবনে বৃহস্পতিবার দুপুরে রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় আহত-নিহতদের স্মরণে যে শোক সভার আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানেই নিলয়-রায়হানরা কথা বলেন৷

সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে কাঁদেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও৷ অনুষ্ঠানটির প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি৷ অশ্রুসজল নয়নে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘‘রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকরা এসেছেন৷ এসেছে ফুলের মতো এতিম বাচ্চারা৷ এদের চোখে পানি দেখে নিজেকে সংবরণ করা কঠিন৷ আসুন এদের পাশে দাঁড়াই৷''

তিনি বলেন, ‘‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে৷ যেন এ ধরনের দুর্ঘটনা আর না ঘটে৷'' তাঁর অভিযোগ, পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রাকে বাধা দিতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে৷ সবাই মিলে এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে৷

সভায় বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম, বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন৷

সাভারের রানা প্লাজার স্থানটি যেন হয়ে উঠেছে সমাধিস্থল৷ বৃহস্পতিবারও ভবনের পুরো জায়গাটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা ছিল৷ এটা পার হয়ে ভেতরে গিয়ে হারানো স্বজনদের স্মরণে কেউ কেউ আগরবাতি জ্বেলেছেন৷ কেউ ছিটিয়ে দিয়েছেন গোলাপজল৷ স্বজনের আত্মার শান্তি কামনা করছেন তাঁরা৷ দুই হাত তুলে মোনাজাত করছেন৷

নিহত স্ত্রী খালেদার ছবি নিয়ে এসেছেন বরিশালের জসিমউদ্দিন৷ এক বছর আগে এভাবেই ছবি নিয়ে স্ত্রীকে খুঁজেছিলেন তিনি৷ লাশও পাওয়া গিয়েছিল৷ এরপর বরিশালে দাফন করেছিলেন তাঁকে৷ সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতাও পেয়েছিলেন৷ কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁরই এক আত্মীয় সেই অর্থ মেরে দিয়েছেন৷ আট বছরের ছেলে রাফিউ ইসলাম আর আড়াই বছরের ছেলে নাফিউ ইসলামের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাই অনেকটাই উৎকণ্ঠিত জসিমউদ্দিন৷

রানা প্লাজা ধসের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দিনটিকে স্মরণ করতে হাজারো শোকার্ত মানুষ সমবেত হন সাভারের রানা প্লাজা সংলগ্ন এলাকায়৷ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীরাসহ নিহত ও আহতদের স্বজনদের ঢল নামে সেখানে৷ এতে করে বন্ধ হয়ে যায় রানা প্লাজা সংলগ্ন সড়ক৷ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সম্বলিত ব্যানার, লিফলেট, কালো পতাকা, কালো ব্যাজ, জাতীয় পতাকা ও প্রতীকী কাফনের কাপড় নিয়ে হাজির হন অনেকে৷ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও রানার বিচারের দাবিতে মহাসড়কে মিছিল ও সমাবেশ করেন পোশাক শ্রমিকরা৷ এ সময় তাঁরা সোহেল রানার ফাঁসির দাবি করেন৷ পাশাপাশি রানার জমি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তা বণ্টনের দাবি জানান৷ এছাড়া জুরাইন কবরস্থানে যেসব লাশ দাফন হয়েছে, সেখানেও ফুল দিয়েছেন স্বজনরা৷

এদিকে রানা প্লাজায় হতাহত শ্রমিকদের স্মরণে শোক র‌্যালি শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, নতুন করে নিখোঁজ শ্রমিকের কোনো তথ্য পাওয়া গেলে বিজিএমইএ তাঁদের দায়ভার ও সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসন করতে প্রস্তুত৷ তিনি বলেন, ‘‘রানা প্লাজার শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্য বিজিএমইএ সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করেনি৷ তাঁদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে৷ যদি কারো চিকিৎসার দরকার হয় তা করাতেও প্রস্তুত বিজিএমইএ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ