রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় প্রথম মামলার বিচার শুরু হয়েছে৷ বিধি না মেনে ভবন নির্মাণের অভিযোগে দায়ের করা এ মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে চায় রাষ্ট্রপক্ষ৷ তবে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা অযথাই বিলম্ব করতে চাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা বলছেন, সময় নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও তাঁরা সাক্ষীদের যথাসময়ে হাজির করে দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি করতে চান৷ আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে তাতে তাদের সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে৷ তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে তারা খালাসও পেতে পারেন৷
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর উপকন্ঠে সাভারে আট তলা ভবন (রানা প্লাজা) ধসে পড়ে৷ ভবনের পাঁচটি ফ্লোরে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ছিল৷ ওই ধসের ঘটনায় এক হাজার ১৩৫ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়৷ আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন এক হাজারেরও বেশি মানুষ৷ এদের অধিকাংশই ওই ভবনের বিভিন্ন গার্মেন্টসে কাজ করা শ্রমিক৷ রানা প্লাজা ধসের চার দিন পর যশোরের বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার হন সোহেল রানা৷
বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের পাশে জার্মানি
রানা প্লাজা বিপর্যয়ের দেড় বছর পর জার্মানি যে ‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’ চালু করেছে, সে উপলক্ষ্যে ফেডারাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার বাংলাদেশ যান৷ নিজের চোখে দেখেন সেখানকার মানুষ ও তাঁদের উন্নয়নকে৷
ছবি: DW/S. Burman
‘মেড ইন বাংলাদেশ’
রানা প্লাজা বিপর্যয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গার্মেন্টস রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷ চালু হয়েছে ‘‘অ্যাকর্ড’’, ‘‘অ্যালায়েন্স’’ এবং ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ মতো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, যার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের গার্মেন্টস ওয়ার্কারদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা৷
ছবি: DW/S. Burman
একযোগে
জার্মান উদ্যোগের লক্ষ্য হলো, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এক করা৷ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’-এ যোগ দিয়েছে ও ইতিমধ্যেই একাধিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করেছে৷ জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার তাদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং এই আশা প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য সংস্থাও এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে৷
ছবি: DW/S. Burman
মোটরসাইকেলে
প্রায় দেড়’শ নতুন লেবার ইনস্পেক্টরদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে, কারখানাগুলোর পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য৷ কোনো সংকট ঘটলে যানজট এড়িয়ে চটজলদি অকুস্থলে পৌঁছানোর জন্য তাদের মোটরসাইকেল দেওয়া হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Burman
লুডো খেলাও সচেতনতা বাড়ায়
গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা প্রধানত মহিলা, নিজেদের আইনি দাবিদাওয়া সম্পর্কে তাঁদের বিশেষ ‘জানকারি’ নেই৷ কাজেই কারখানায় ‘‘মহিলাদের কাফে’’ সৃষ্টি করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সেই সঙ্গে বিনোদনের জন্য লুডো খেলা৷
ছবি: DW/S. Burman
কাজের জায়গায়
পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম৷ দিনে দশ থেকে চোদ্দ ঘণ্টা কাজ৷ ‘‘টেক্সটাইলস পার্টনারশিপ’’ এই অনলস কর্মীদের কাজের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে চায়৷
ছবি: DW/S. Burman
রাজনীতিও শামিল
বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গাজিপুরের ডিবিএল গ্রুপের ফ্যাক্ট্রিতে জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলারের সঙ্গে যোগ দেন এবং সহযোগিতা সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য সরকারের উদ্যোগ বিশেষভাবে প্রয়োজন৷
ছবি: DW/S. Burman
মিনি ফায়ার ব্রিগেড
গ্যার্ড ম্যুলার গাজিপুরে ডিবিএল গ্রুপের কারখানার নতুন ‘খুদে দমকল বাহিনীর’ উদ্বোধন করেন৷ এই ফায়ার ব্রিগেড এক কিলোমিটার ব্যাসের এলাকার মধ্যে অগ্নি নির্বাপণে সক্ষম৷ ম্যুলারের সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷
ছবি: DW/S. Burman
চাইল্ড কেয়ার
শ্রমিক কল্যাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কারখানা প্রাঙ্গণে ডে-কেয়ার সেন্টার সৃষ্টি করে মহিলা শ্রমিকদের শিশুসন্তানদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/S. Burman
সবে মিলে করি কাজ
জার্মান সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা, মালিকপক্ষ, বিদেশি ক্রেতা এবং অপরাপর সংশ্লিষ্টরা সকলে একত্রিত হয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন৷
ছবি: DW/S. Burman
লক্ষ্য
বাংলাদেশ বর্তমানে ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের গার্মেন্টস রপ্তানি করে থাকে৷ সরকার সেটাকে ২০২১ সাল – অর্থাৎ দেশের পঞ্চাশতম বার্ষিকীর মধ্যে ৫০ বিলিয়নে দাঁড় করাতে চান৷ জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার গত ৭ই অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন৷
ছবি: DW/S. Burman
10 ছবি1 | 10
এই প্রাণহানির ঘটনায় হত্যার অভিযোগে একটি, ইমারত বিধি না মেনে রানা প্লাজা নির্মাণের অভিযোগে একটি এবং দুদক-এর পক্ষ থেকে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়৷ এর মধ্যে ইমারত বিধির মামলাটি দায়ের করেন রাজউক কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন৷ মঙ্গলবার থেকে সেই মামলার বিচারকাজই শুরু হয়েছে৷
রানাসহ ১৮ আসামির বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় করা এ মামলার তদন্তে ভবনের নকশায় ত্রুটি, অনুমোদন না নিয়ে উপরের দিকে সম্প্রসারণ এবং নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের তথ্য উঠে আসে৷
১৯৫২ সালে প্রণীত ইমারত নির্মাণ আইনের ১২ ধারা অনুযায়ী করা অভিযোগপত্রে মোট ১৮ জনকে আসামি করা হয়৷ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী করা হয় মোট ১৩০ জনকে৷
এছাড়া সাভার থানার এসআই ওয়ালী আহমেদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন৷ দু'টি মামলারই তদন্ত শেষে গত বছরের ১ জুন আসামীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ৷ হত্যা মামলার চার্জশিটে রানাসহ ৪১ জনকে আসামী করা হয়৷ আগামী জুলাই মাসে এই হত্যা মামলারও বিচার শুরু হওয়ার কথা৷ এছাড়া দুর্নীতিদমন কমিশনের দায়ের করা মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন৷
বিধি না মেনে ভবন নির্মাণের অভিযোগে দায়ের করা মামলার বিচার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে৷ ওই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অতিরিক্ত পিপি আনোয়ারুল কবির বাবুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা ও মাসহ ১৮ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত৷''
বাবুল
ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মুস্তাফিজুর রহমান মঙ্গলবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এ মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর জন্য ২৩ আগস্ট শুনানির দিন ঠিক করে দেন৷ এ মামলার আসামি ১৮ আসামির মধ্যে ১৩ জন এদিন এজলাসে উপস্থিত ছিলেন৷ বাকিরা মামলার শুরু থেকেই পলাতক৷ পিপি জানান, উপস্থিত ১৩ আসামি আদালতের প্রশ্নের জবাবে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ‘ন্যায়বিচার' চান৷ তাদের পক্ষে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হলে বিচারক তা নাকচ করে বিচার শুরুর আদেশ দেন৷
আসামিদের মধ্যে আছেন ভবন মালিক সোহেল রানা, তার বাবা আব্দুল খালেক, মা মর্জিনা বেগম, সাভার পৌরসভার মেয়র মো. রেফাতউল্লাহ, পৌরসভার সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার হাজি মোহাম্মদ আলী, পৌরসভার সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান রাসেল, সাইট ইঞ্জিনায়ার মো. সারোয়ার কামাল, ওই ভবনের ভাড়াটে নিউ ওয়েভ বটমসের চেয়ারম্যান বজলুস সামাদ আদনান, এমডি মাহমুদুর রহমান তাপস, ইথার টেক্সের এমডি আনিসুর রহমান এবং ফ্যান্টম অ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম অভিযোগ গঠনের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ এছাড়া সাভার পৌরসভার সাবেক সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, সাবেক টাউন প্ল্যানার ফারজানা ইসলাম, মাহবুব আলম, রেজাউল ইসলাম ও ভবন নির্মাণে ঠিকাদারির দায়িত্বে থাকা নান্টু পলাতক রয়েছেন৷
ফিরে দেখা: আগুন, ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক খাত
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক ইউরোপ, অ্যামেরিকার প্রায় সব শপিং মলেই পাওয়া যায়৷ পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি৷ আর এই খাত যেসব দুর্ঘটনায় ক্ষতির মুখে পড়েছে সেগুলো থাকছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters
২৫.০২.২০১০: ‘গারিব এন্ড গারিবে’ আগুন
সুইডেনের একটি জনপ্রিয় ফ্যাশন চেইনের জন্য কাপড় তৈরি করার সময় আগুনে প্রাণ হারান গারিব এন্ড গারিব ফ্যাক্টরির কমপক্ষে ২১ শ্রমিক৷ নিহতদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন নারী আর কারখানাটি ছিল গাজীপুরে৷
ছবি: Imago/Xinhua
১৪.১২.২০১০: দ্যাটস ইট স্পোর্টসওয়ারে আগুন
সে আগুন প্রাণ হারান কমপক্ষে ২৯ ব্যক্তি, আহত অন্তত ২০০৷ হাম্মিম গ্রুপের কারখানাটি আধুনিক ভবনে অবস্থিত হলেও অভিযোগ রয়েছে অগ্নি নির্বাপকের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা তাতে ছিল না৷ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পোশাক উৎপাদন হতো কারখানাটিতে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/AP
২৪.১১.২০১২: তাজরীন ফ্যাশনসে আগুন
ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশন ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত কমপক্ষে ১১২, আহত কয়েকশত৷ নয় তলা ভবনটিতে আগুন লাগার পর অনেক পোশাক কর্মী লাফিয়ে পড়তে গিয়েও প্রাণ হারান৷ কেউ কেউ হয়েছেন জীবন্ত দগ্ধ৷ ভবনটির জরুরী বাইরে যাওয়ার গেটগুলো হয় বন্ধ ছিল, অথবা ব্যবহার অনুপযোগী ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাজরীনের মালিকের বিচার শুরু
আশার কথা হচ্ছে, তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও তাঁর স্ত্রীসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়েছে৷ ঢাকার একটি আদালতে বিচার কাজ চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১৪.০৪.২০১৩: রানা প্লাজা ধস
ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজা ভবন ধসে প্রাণ হারান কমপক্ষে ১,১৩৮ ব্যক্তি, আহত কয়েক হাজার৷ ইতিহাসের অন্যতম বড় দুর্ঘটনা এটি৷ রানা প্লাজা ধসে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো ন্যায্য ক্ষতিপূরণ পাননি৷ এই ঘটনায় দায়ীদের বিচার নিয়েও গড়িমসি চলছে৷
ছবি: Reuters
০৯.০৫.২০১৩: মিরপুর টেক্সটাইল ফ্যাক্টরিতে আগুন
মিরপুরে পোশাক কারখানায় আগুনে নিহত হয় কমপক্ষে আট ব্যক্তি৷ সেই ঘটনায় পোশাক কারখানাটির বাংলাদেশ অংশের প্রধান এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তাও প্রাণ হারান বলে দাবি করেছে, পোশাক রপ্তানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ৷ দ্রষ্টব্য: গ্যালারিটি তৈরিতে ক্লিন ক্লোদস ক্যাম্পেইন থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters
6 ছবি1 | 6
সাত বছরের কারাদণ্ড কি যথেষ্ট? আসামিদের কী শাস্তি হলে আপনার মনে হয়? লিখুন নীচের ঘরে৷