রানা প্লাজা ধস থেকে বেঁচে যাওয়া শতকরা ৫৫ ভাগ শ্রমিক গত দু'বছরেও কোনো কাজ পাননি৷ তাঁর বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন৷ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশনএইডের এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
আর দু'বছরেও ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা পাননি তারা৷
অ্যাকশনএইডের ‘পোস্ট রানা প্লাজা: হোয়্যার উই স্ট্যান্ড' শীর্ষক এই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের ৫৫ শতাংশ এখনো বেকার৷ বাকি ৫৪ শতাংশ শ্রমিক দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতেই এখন হিমশিম খাচ্ছেন৷ শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে না পারার বড় কারণ শারীরিক প্রতিকন্ধকতা৷ ৬৯ শতাংশ শ্রমিক নানা জটিলতায় ভুগছেন৷ ১৫ শতাংশ পছন্দসই কাজ পাচ্ছেন না৷ আর ৭ শতাংশ শ্রমিককে এখনো রানা প্লাজার আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে৷'
চলতি বছরের ১৩ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত রানা প্লাজা ধসে আহত এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারের দুই হাজার ২০০ জনের ওপর এ সমীক্ষা চালান হয়৷ এক হাজার ৪১৪ জন আহত শ্রমিক ও নিহত শ্রমিকের পরিবারের ৭৮৬ জনের সঙ্গে কথা বলেছে অ্যাকশনএইড৷
সমীক্ষা অনুযায়ী, আহত শ্রমিকদের ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ মনে করেন তাদের শারীরিক অবস্থা অনেকটা ভালো হয়েছে৷ তবে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ বলেছেন, তাদের অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে৷ আর এক দশমিক ৫ শতাংশ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন৷ ৬১ দশমিক ২ শতাংশ শ্রমিককে এখনো চিকিত্সকের কাছে যেতে হয়৷ প্রতি মাসে গড়ে একজন শ্রমিককে চিকিত্সা বাবদ ব্যয় করতে হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা৷ ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের মানসিক অবস্থা এখনো স্বাভাবিক হয়নি৷ ৫৯ শতাংশ শ্রমিকের আতঙ্ক ও হতাশা রয়েছে৷ ছয় দশমিক ৬ শতাংশ পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন৷
সমীক্ষায় আহত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত, মানসিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতিসহ রানা প্লাজার ঘটনায় ন্যায়বিচারের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে৷ সমীক্ষায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৮৬ জন রানা প্লাজার মালিক এবং ২৫০ জন কারখানা মালিকের শাস্তি দাবি করেছেন৷ এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত চার্জশিট দিতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷
এদিকে দুই বছরেও শ্রমিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা পুরো পাননি৷ তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে চলছে নানা টালবাহানা৷
আইএলও-র নেতৃত্বে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যে তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেখানে এখন পর্যন্ত ২৪ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেছে৷ এখনো ৬ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি আছে৷ শ্রম অধিকার বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিলসের হিসাব অনুযায়ী, দুই বছরে ২,৯০৯ জনকে ৭০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ৷ ক্ষতিপূরণের জন্য পাঁচ হাজার শ্রমিক আবেদন করলেও বাকিদের ক্ষতিপূরণের আওতায় আনা হয়নি৷
শ্রম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রধান ইসরাফিল আলম এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সব শ্রমিক যাতে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পায় তার জন্য কাজ করছি৷ আশা করি আগামী জুন-জুলাই মাসের মধ্যে সব ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে৷''তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি অনেক শ্রমিক এখনো বেকার আছে৷ যারা আর কাজ করতে পারবেন না তাদের জন্য পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে৷ আর যারা কর্মক্ষম আছেন কিন্তু নান ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের নিয়ে আমরা পোশাক কারখানার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি৷''
আর রানা প্লাজার ঘটনায় মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘‘বিচার প্রক্রিয়া খুবই হতাশাজনক অবস্থায় আছে৷ শ্রম আইনে আমরা নয়টি মামলা করেছি৷ সেগুলোর অগ্রগতি নেই৷''
বিজিএমইএ-র সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজীম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রানা প্লাজায় হতাহত ৪৫ শ্রমিকের সন্তানের লেখাপড়া ও ভরণপোষণের দায়িত্ব বিজিএমইএ নিয়েছে৷ অনেক আহত শ্রমিককে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে৷ ভবন ধসে হতাহতদের সঙ্গে বিজিএমইএ নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে৷ এখন পর্যন্ত ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিজিএমইএ-র পক্ষ থেকে অনুদান দেয়া হয়েছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘শ্রমিকরা আমাদের লোক, তাদের জন্য আমাদের আন্তরিকতা ও চেষ্টার কমতি নাই৷''
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ শ্রমিক নিহত ও প্রায় আড়াই হাজারের শ্রমিক আহত হন৷ আর ধসের সময় সেখানে কমপক্ষে ৫,০০০ শ্রমিক পাঁচটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন৷
রানা প্লাজায় আহতদের সহায়তায় জার্মানিতে প্রদর্শনী
রানা প্লাজা ধসে আহত পোশাক শ্রমিকদের সহায়তায় জার্মানির বিলেফেল্ড শহরে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী৷ একটি গির্জায় আয়োজিত এই প্রদর্শনী থেকে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় হবে আহত শ্রমিকদের সহায়তায়৷
ছবি: DW/A. Islam
বিলেফেল্ডে প্রদর্শনী
জার্মানির বিলেফেল্ড শহরের একটি গির্জায় ২৬ জানুয়ারি প্রদর্শন করা হয় একদল পোশাক শ্রমিকের ছবি, যাঁরা রানা প্লাজা ধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত৷ প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য, ২০১৩ সালের ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এ সব মানুষ সম্পর্কে জার্মানদের জানানো৷ পাশাপাশি তাঁদের সহায়তায় অর্থ সংগ্রহ৷
ছবি: DW/A. Islam
শুধু ছবি নয়
বিলেফেল্ডে গির্জার পাশের সম্মেলন কক্ষে পোশাক শ্রমিকদের বিভিন্ন ছবির পাশেই শোভা পাচ্ছিল কিছু টি-শার্ট৷ সাদা এই টি-শার্টের উপরে লেখা রয়েছে ‘ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন’৷
ছবি: DW/A. Islam
উৎসুক দৃষ্টি
একটি ছবির ক্যাপশনের দিকে প্রদর্শনীতে আগত দর্শকদের উৎসুক দৃষ্টি৷
ছবি: DW/A. Islam
ছিলেন বাঙালিরাও
বিলেফেল্ডে বসবাসরত বাঙালিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছবি প্রদশনীটি দেখতে গির্জায় হাজির হন৷ সাভারে পোশাক শ্রমিকদের করুণ পরিণতিতে স্বাভাবিকভাবেই ব্যথিত তাঁরা৷
ছবি: DW/A. Islam
গির্জার ভেতরে
গির্জায় রবিবার প্রার্থনা সভা চলাকালে বাংলাদেশের এই ছবিটিসহ আরো কয়েকটি ছবি প্রদর্শন করা হয় প্রার্থনা কক্ষের ভেতরেই৷ বাংলাদেশ সম্পর্কে জার্মানির আমজনতাকে ধারণা দেওয়ার ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ স্থানীয় গণমাধ্যমেও সাড়া জাগিয়েছে৷
ছবি: DW/A. Islam
আয়োজকের কথা
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালে স্বেচ্ছাসেবী ব্যার্নহার্ড হ্যার্টলাইন প্রদর্শনীর আয়োজন করেন৷ ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা জানতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন তিনি৷ উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসে এগারোশ’র বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হন, যাঁদের অধিকাংশই পোশাক শ্রমিক৷
ছবি: DW/A. Islam
অর্থ যাচ্ছে স্নেহা ফাউন্ডেশনে
ব্যার্নহার্ড হ্যার্টলাইন জানান, প্রদর্শনী থেকে সংগৃহীত অর্থ স্নেহা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকদের সহায়তায় খরচ করা হবে৷ ফাউন্ডেশনটি ৩০ জন নারী পোশাক শ্রমিকের দীর্ঘমেয়াদি পুর্নবাসনের দায়িত্ব নিয়েছে, যাঁরা ভবন ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এবং মা৷
ছবি: DW/A. Islam
7 ছবি1 | 7
পোশাক শ্রমিকদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত
বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আমাদের ঢাকা প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ স্বপন সম্প্রতি গিয়েছিলেন একটি পোশাক কারখানায়৷ তাঁর অভিজ্ঞতা ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
অনিশ্চিত ভবিষ্যত
ঢাকার পূর্ব রামপুরার টিএম গার্মেন্টস-এর এই কর্মীরা জানেন না তাঁদের ভবিষ্যত৷ কারণ তাঁদের এখানে শ্রম আইন এবং মজুরি বোর্ড পুরোপুরি কার্যকর নেই৷ তাঁদের অগ্নিনিরাপত্তাও পর্যাপ্ত নয়৷ এমনকি ভবনটিও পুরনো৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সংসার চালানো কষ্টকর
টিএম গার্মেন্টস-এর পোশাক কর্মী সুফিয়া বেগম যে বেতন পান তা দিয়ে সংসার চালান কষ্টকর৷ তবুও তার এরচেয়ে বেশি কিছু করার সুযোগ নেই৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
সর্বনিম্ন বেতনও পান না
সর্বনিম্ন বেতন ৩০০০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও রাহেলা আক্তার তা পান না৷ তাঁকে বেতন দেয়া হয় ২৫০০ টাকা৷ সে নতুন বলেই তাঁকে নাকি কম বেতন দেয়া হয়৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
নতুন, তাই বেতন কম
সুমি বেগমেরও বেতন অনেক কম৷ কারণ তিনিও নতুন৷ খরচে পোষায় না বলে তাঁরা পাঁচজন মিলে একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকেন৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
গেটে তল্লাশি
এই পোশাক কর্মীদের গার্মেন্টস-এ প্রবেশ এবং বের হওয়ার আগে গেটে তল্লাশী চালানো হয়৷ আর ‘ফ্রেশ’ হতে গেলেও বলে যেতে হয়৷ আর ফিরতে যদি একটু দেরি হয়, তাহলে মেলে গালমন্দ৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ
ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করেন এঁরা৷ তাপ ওপর মেশিনপত্রও পুরনো৷ কাজ করতে গিয়ে পুরনো মেশিনপত্রের কোনো ক্ষতি হলে কখনো কখনো জরিমানাও করা হয় তাঁদের৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
রঙিন স্বপ্ন
রঙিন পোশাক আর রঙিন স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসেন কুড়িগ্রামের মৌসুমী৷ পোশাক কারখানায় কাজ নেয়ার পর ধীরে ধীরে তাঁর স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসছে৷
ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan
শ্রমিকরা অপুষ্টির শিকার
আছিয়া বেগমকে দেখেই বোঝা যায় তিনি অপুষ্টির শিকার৷ সকাল-সন্ধ্যা গার্মেন্টস-এ কাজ করেও তিনি জোটাতে পারেন তাঁর প্রয়োজনীয় খাবার৷