রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করলেন সারা বিশ্বের নেতারা। তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন।
বিজ্ঞাপন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার স্ত্রী জিল বাইডেন বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ''রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্যই যুক্তকাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এরকম সুসম্পর্ক রয়েছে। তার মর্যাদার কোনো তুলনা ছিল না। তিনি ১৪ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।'' বাইডেন পরে ব্রিটিশ দূতাবাসে গিয়ে তাঁর শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন।
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেস বলেছেন, তিনি শোকাহত। রাজপরিবার, সরকার ও যুক্তরাজ্যের মানুষের প্রতি তিনি সমবেদনা জানিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি টুইট করে বলেছেন, রানির মৃত্যুতে তিনি শোকাহত।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিন ব্রিটেনের রাজা চার্লসকে টেলিগ্রাম পাঠিয়ে বলেছেন, এই ক্ষতি অপূরণীয়। চার্লস যেন এই সময়ে শক্ত থাকেন এবং সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন।
১৫ জন প্রধানমন্ত্রীর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
প্রয়াত যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। দীর্ঘ জীবনে তার কাছে ১৪ প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। লিজ ট্রাস ১৫তম প্রধানমন্ত্রী।
ছবি: Frank Augustein/PA Wire/dpa/picture alliance
যুক্তরাজ্যের ইতিহাস
১৭২১ সাল থেকে এখনো পর্যন্ত যুক্তরাজ্য শাসন করেছেন ৭৯ জন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে শপথগ্রহণ করেছেন ১৪ জন প্রধানমন্ত্রী। লিজ ট্রাস পঞ্চদশতম। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রাস এলিজাবেথের সঙ্গে স্কটল্যান্ডের প্রাসাদে দেখা করেছেন। তবে শপথবাক্য পাঠ করা হয়নি এখনো। বরিস জনসনই শেষ প্রধানমন্ত্রী যিনি রানির কাছে শপথ নিয়েছেন।
ছবি: Dominic Lipinski/AFP/Getty Images
রানির জন্ম
১৯২৬ সালে দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম। ৭০ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের রানি ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম বক্তৃতা করেছিলেন তিনি। বিবিসি রেডিও-তে তা শোনা গেছিল। এই ছবিটি ১৯৩৬ সালে তোলা।
ছবি: picture-alliance/Zumapress
চার্চিলের শপথ
১৯৪০ থেকে ৪৫ সাল পর্যন্ত রাজা ষষ্ঠ জর্জের অধীনে প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব সামলেছেন উইনস্টন চার্চিল। সে সময়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল। ১৯৫১ থেকে ৫৫ সালের সময়পর্বে চার্চিল শপথ নেন দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে। রানি হিসেবে চার্চিলই এলিজাবেথের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
ছবি: picture-alliance/akg-images
রানি হওয়ার কথা ছিল না
বাবা প্রিন্স অ্যালবার্ট, ডিউক অব ইয়র্ক ছিলেন রাজা পঞ্চম জর্জের ছোটছেলে। রাজা হওয়ার কথা ছিল অষ্টম এডওয়ার্ডের। কিন্তু তিনি বিবাহ বিচ্ছিন্নাকে বিয়ে করায় রাজা হতে পারেননি। ১৯৩৬ সালে ছোটছেলে হয়েও ব্রিটেনের রাজা হন প্রিন্স অ্যালবার্ট। এলিজাবেথের বাবা।
ছবি: PA Wire/empics/picture alliance
বড় মেয়ে সিংহাসনের দাবিদার
প্রিন্স অ্যালবার্টের বড় মেয়ে ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ফলে পরবর্তী সিংহাসনের দাবিদার ছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই সেইভাবে তৈরি করা হয়েছে তাকে।
ছবি: ZUMA Wire/IMAGO
ফিলিপ মাউন্টব্যাটনের সঙ্গে বিয়ে
দূরসম্পর্কের ভাই ফিলিপ মাউন্টব্যাটনের সঙ্গে দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিয়ে হয় ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর। ছেলে চার্লসের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর।
ছবি: Mary Evans Picture Library/picture alliance
রাজার মৃত্যু
১৯৫২ সালে মৃত্যু হয় রাজার। এলিজাবেথ তখন কেনিয়ায়। তড়িঘড়ি দেশে ফিরে আসেন তিনি। রাজা অবশ্য এর আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। এলিজাবেথ কাজ বুঝে নিতে শুরু করেছিলেন অনেক আগে থেকেই। রাজার মৃত্যুর পর রাজদণ্ড হাতে নেন রানি।
ছবি: PA Wire/empics/picture alliance
আয়রন লেডির রানি
যুক্তরাজ্যের অন্যতম এবং বিতর্কিত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার। তিনিও রানির কাছে শপথ নিয়েছিলেন। ১৯৭৯ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য শাসন করেছেন থ্যাচার। তার আমলে যুক্তরাজ্যে বহু পরিবর্তন এসেছে। উদার অর্থনীতির দিকে হেঁটেছে রানির দেশে। আবার ট্রেড ইউনিয়নের উপর খাঁড়া নেমে এসেছে।
ছবি: AP
রানিকে নিয়ে বিতর্ক
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। কমনওয়েলথ, ভারতীয় উপমহাদেশ সর্বত্র ঘুরেছেন তিনি। একসময় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সন্তানদের সময় দেন না। তার স্বামীও একসময় এমন অভিযোগ করেছিলেন।
ছবি: ZUMAPRESS.com/picture alliance
স্বামীর কাজে অন্ধ
স্বামী ডিউক অব এডেনবরার বহু ভুল তিনি দেখেও দেখেন না বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তবে সবচেয়ে বড় বিতর্ক হয়েছে প্যারিসে যুবরানি ডায়নার গাড়ি দুর্ঘটনার পর। ডায়নার চালচলন পছন্দ ছিল না রানির।
ছবি: Hannibal Hanschke/EPA/picture alliance/dpa
মেগানের অভিযোগ
ছোট নাতি হ্যারির স্ত্রী মেগান সম্প্রতি রাজপরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সরাসরি বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ এনেছেন। যা নিয়ে রাজপরিবারে বহু আলোড়ন হয়েছে।
ছবি: Henry Nicholls/AP Photo/picture alliance
৭০ বছর পূর্তি এবং স্বামীর মৃত্যু
২০২১ সালের ৯ এপ্রিল স্বামী ডিউক অব এডিনবরার মৃত্যু হয়। ২০২২ সালে ছিল রানির শানকালের ৭০ বছর পূর্তি। উৎসব হলেও তাতে খুব জৌলুস ছিল না।
লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পর স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে গিয়ে রানির সঙ্গে দেখা করেন। আনুষ্ঠানিকতা না হলেও রানি তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। এই প্রথম বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে রানি কোনো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথমবার দেখা করলেন।
ছবি: Jane Barlow/ ASSOCIATED PRESS/picture alliance
বালমোরালেই মৃত্যু
বালমোরাল প্রাসাদেই মৃত্যু হলো সাত দশকের দাপুটে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। বস্তুত, রানি ভিক্টোরিয়ার চেয়েও বেশি সময় ধরে তিনি যুক্তরাজ্যের সর্বোচ্চপদে বসে ছিলেন।
ছবি: Jane Barlow/AP Photo/picture alliance
14 ছবি1 | 14
জার্মানির প্রতিক্রিয়া
জার্মানির নেতারা যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মধ্যে সম্পর্ক ভালো করার ক্ষেত্রে রানির ভূমিকার কথা স্মরণ করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি কীভাবে কাজ করেছেন, সেটাও জানিয়েছেন জার্মানির নেতারা।
চ্যান্সেলর শলৎস বলেছেন, ''জার্মানি সহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে রানি এলিজাবেথ ছিলেন অনুপ্ররণা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পর তিনি যেভাবে যুক্তরাজ্য ও জার্মানির মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করেছেন, তা কখনো ভোলার নয়। তার অভাব আমরা অনুভব করব।'' তার রসিকতাবোধের কথাও উল্লেখ করেছেন শলৎস।
প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার জানিয়েছেন, ''তাঁর বিপুল অভিজ্ঞতা ছিল, স্বাভাবিক কর্তৃত্ব ছিল, এক অসাধারণ কর্তব্যবোধ ছিল, তাই তিনি আমাদের স্মৃতিতে থেকে যাবেন।'' তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনিই পুনর্মিলনের হাত বাড়িয়েছিলেন।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক বলেছেন, তিনি ছিলেন তার দেশের শক্তি ও আস্থার প্রতীক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পর তার ভূমিকার জন্য জার্মানি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ: পাসপোর্ট ছাড়াই দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো পর্যটক
২১শে এপ্রিল ৯৬ বছরে পা রাখলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজসিংহাসনে রানি৷ সেই সুবাদে ইতিহাসের পাতার অন্যতম পর্যটকও তিনি৷ বলতে গেলে সারা বিশ্বই ভ্রমণ করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷
ছবি: John Macdougall/Getty Images/AFP
সাউথ আফ্রিকায় প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর
১৯৪৭ সালে প্রথমবার বাবা-মায়ের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সফরে সাউথ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন এলিজাবেথ৷ তখনও তিনি রাজকুমারী৷ ব্লুমফন্টেনে এই ছবিটি তোলা হয়েছিল৷ ছবিতে তার পাশে বাবা রাজা জর্জ (ষষ্ঠ), এরপরে রানি এলিজাবেথ (বর্তমান রানির মা), তার বোন রাজকুমারী মার্গারেট৷
ছবি: Mary Evans Picture Library/JEAN/picture alliance
অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি
১৯৫২ সালের শুরুতে এলিজাবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপ কেনিয়া সফরে গিয়েছিলেন৷ সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল তাদের৷ কিন্তু রাজা ষষ্ঠ জর্জ, অর্থাৎ তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে সেই সফরে কাটছাঁট করেছিলেন এলিজাবেথ৷ পরে দ্বিতীয় এলিজাবেথ হলেন রানি ৷ ১৯৫৩ সালে ৬ মাস টানা তিনি বিশ্বভ্রমণ করেছিলেন৷ সেই সময় তিনি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন৷
ছবি: dpa/picture alliance
সর্বত্র স্বাগত
রানি যেখানেই গিয়েছেন, সবাই তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সাদরে গ্রহণ করেছেন৷ ১৯৫৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় তিনি পাপুয়া, নিউ গিনির নৌ সৈনাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন৷এই বিশ্ব ভ্রমণে ১২টি দেশে গিয়েছিলেন তিনি৷ অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও নিউজিল্যান্ড, ফিজি দ্বীপপুঞ্জ এবং টোঙ্গা সফর করেছিলেন৷ তিনি বাড়ির কাছাকাছি অনেক দেশেও ভ্রমণ করেছেন৷
ছবি: UPI/dpa/picture alliance
জার্মানিতে গাছ লাগানো
১৯৬৫ সালের ১৮ থেকে ২৮ মে জার্মানিতে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ ভ্রমণের সময়, তিনি বার্লিনের টিয়ারগার্টেনের ইংলিশ গার্ডেনে একটি গাছ রোপণ করেছিলেন৷ তার সঙ্গে ছিলেন বার্লিনের তৎকালীন মেয়র ভিলি ব্রান্ড্ট (রানির ডানদিকে) এবং প্রিন্স ফিলিপ ( খুঁটির বাম দিকে) তারপর থেকে তিনি জার্মানিতে আরো চারবার রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন৷ ২০১৫ সালে শেষবার তিনি জার্মানিতে এসেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Philipp
ব্যাংককে এক রাত
থাইল্যান্ডের রানি সিরকিটের সঙ্গে (ছবিতে হলুদ পোশাকে) ১৯৭২ সালে সাক্ষাৎ হয়েছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের৷ সিরকিটের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তার মেয়ে রাজকুমারী অ্যানি এবং তার স্বামীও সঙ্গে ছিলেন৷ এই জাতীয় দূর-দূরান্তের ভ্রমণেও রানির কোনো পাসপোর্ট লাগেনি৷ আসলে তার পাসপোর্টের প্রয়োজন নেই৷
ছবি: Horst Ossinger/picture alliance
চায়ের আমেজ
রাজপরিবারের এক মুখপাত্র ব্যাখ্যা করেছিলেন যে রানির পাসপোর্ট থাকা অপ্রয়োজনীয়৷ কারণ, যুক্তরাজ্যের সমস্ত পাসপোর্ট রানির নামে ইস্যু করা হয়৷ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের এই ছবিটি ১৯৭৫ সালে জাপানের কিয়োটোতে কাতসুরা ইম্পেরিয়াল ভিলার বাগানে একটি চা চক্রে যোগদানের সময় তোলা৷ বেড়ানোর সময় নিজের চায়ের কেটলি সঙ্গে রাখেন রানি৷
ছবি: AP
নিজের রক্ত বহন!
চায়ের কেটলিই শুধু নয়, চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নিজের রক্তের সরবরাহও রানির সঙ্গে থাকে৷ রানি এবং তার সঙ্গে ভ্রমণ করা মানুষজনের খাবারের কোনো অভাব হয় না৷ ওপরের ছবিটি ১৯৮৩ সালে ভারত ভ্রমণের সময়ের৷ রানির সঙ্গে সবসময় তিনজন চিকিৎসক থাকেন, যারা স্থানীয় ক্লিনিকগুলি আগে থেকেই পরিদর্শন করেন৷
ছবি: dpa/picture alliance
ব্যাংককে দ্বিতীয় রাত
১৯৯৬ সালে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ব্যাংককে গিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ৷ ক্রাউন প্রিন্সেস সিরিন্ডহর্নের সঙ্গে চুলালংকন বিশ্ববিদ্যালয় সফর করেছিলেন রানি৷ সেই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছিলেন রাজকুমারী৷ সেটি ছিল রাজা ভূমিবলের সিংহাসনে আসীন হওয়ার ৫০তম বছর৷ রানি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন৷
ছবি: Stillwell/epa/dpa/picture alliance
ক্যানাডার অনুরাগী
১৯৯৭ সালের জুনে উত্তর-পূর্ব ক্যানাডার ল্যাব্রাডর অঞ্চলে এলিজাবেথ সফর করেন৷ তাঁবুতে এলিজাবেথ আসার পরও ইনুইট মহিলারা বসে ছিলেন, যা রানির জন্য বেশ অস্বাভাবিক ছিল৷ তিনি ইনুইট প্রধান পল রিচের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন৷ সাধারণত ক্যানাডায় থাকতে বেশ পছন্দ করেন রানি৷ তিনি ২৭ বার ক্যানাডা সফর করেছেন–অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে এই সংখ্যাটা অনেক বেশি৷
ছবি: dpa/picture alliance
সিনেমার সেটে রানি
১৯৯৭ সালে চেন্নাই শহরে ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা কমল হাসানের সঙ্গে সিনেমার সেটে গিয়েছিলেন রানি৷ সেই সময়ে তিনি রাজকীয় ইয়ট ব্রিটানিয়ায় সফরে যেতে পারতেন৷ তার সেই সফরের দুই মাস পর, ১৯৫৪ সাল থেকে ব্যবহৃত ১৩০ মিটার জাহাজটি বাতিল করা হয়৷ এখন এটি একটি জাদুঘর৷
ছবি: dpa/picture alliance
মনোমুগ্ধকর পোশাক
বেড়ানোর সময় রঙিন পোশাক পরতে ভালোবাসেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ বিশেষ করে হ্যাট তার খুব পছন্দের৷ বছরে প্রায় ৭০টি হ্যাট পরেন তিনি৷ ১৯৯৯ সালে পূর্ব আফ্রিকার মোজাম্বিকের রাজধানী মাপুতো সফরে গিয়ে এই সাদা হ্যাট পরেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ একটি ঐতিহ্যবাহী নাচের দল রানিকে স্বাগত জানিয়েছিল৷ আফ্রিকা সফরের সময় মোজাম্বিকই ছিল পর্যটনের সমাপ্তি কেন্দ্র৷
ছবি: Zieminski/dpa/picture alliance
অন্য উপহার
২০০৮ সালে তার একমাত্র স্লোভাকিয়া সফরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইংল্যান্ড এবং স্লোভাকিয়ার আইস-হকি গেমের ‘পুক ড্রপ’ করেছিলেন৷ তিনি বেশ কিছু অদ্ভুত উপহার পেয়েছেন৷ ক্যামেরুন তাকে উপহার দিয়েছিল একটি হাতির শাবক৷ ব্রাজিল থেকে দুটি শ্লথ উপহার পেয়েছিলেন তিনি৷ প্রাণীগুলির স্থান হয় লন্ডন চিড়িয়াখানায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাড়ির মতো জায়গা নেই
যেখানে হৃদয়, সেখানেই রয়েছে ঘর৷ রানি এলিজাবেথের দায়িত্বগুলির মধ্যে রয়েছে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার প্রাসাদে হাউস অফ লর্ডসে বক্তৃতা দেওয়া৷ গ্রেট ব্রিটেনের সংসদীয় রাজতন্ত্রের বার্ষিক ‘হাইলাইট’ হলো সার্বভৌম সিংহাসন থেকে রানির বক্তৃতা৷ ২০২১ সালের ১১ মে-র ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন আলোকচিত্রী৷
ছবি: CHRIS JACKSON/AFP/AFP via Getty Images
13 ছবি1 | 13
মোদীর প্রতিক্রিয়া
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে বলেছেন, ''২০১৫ ও ২০১৮ সালে আমি রানি এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করি। সেই স্মৃতি আমি কখনো ভুলব না। তার উষ্ণতার কথাও ভুলব না। তিনি আমাকে তার বিয়েতে মহত্মা গান্ধী যে রুমাল উপহার দিয়েছিলেন, সেটা দেখিয়েছিলেন।''
মোদী বলেছেন, ''রানি এলিজাবেথকে সময় মনে রাখবে। তিনি তার দেশ ও জনগণকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা ভোলার নয়। তার মৃত্যুতে আমি ব্যথিত।''
ইউরোপের শ্রদ্ধাঞ্জলি
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেছেন, তিনি ছিলেন ফ্রান্সের বন্ধু। গত ৭০ বছর ধরে তিনি ছিলেন ব্রিটেনের ধারাবাহিকতার প্রতীক।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্টিন বলেছেন, ''আয়ারল্যান্ডের সরকারের পক্ষ থেকে আমি গভীর শোকপ্রকাশ করছি। যুক্তরাজ্যের মানুষ তাদের প্রিয় রানিকে হারালো। তিনি ২০১১ সালে আয়ারল্যান্ডে এসেছিলেন। তখন আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।''
ক্যামেরায় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৭০ বছর
ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সিংহাসন আরোহণের ৭০ বছর পূরণ হয়েছে৷ এ উপলক্ষ্যে যুক্তরাজ্যজুড়ে চারদিন ধরে চলেছে ‘প্লাটিনাম জুবিলি’ অনুষ্ঠান৷ ছবিঘরে দেখুন তার কিছু চিত্র৷
ছবি: Chris Jackson/Pool Photo via AP/picture alliance
হাস্যোজ্জ্বল রানি
ব্রিটেনের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘায়ু এবং সবচেয়ে বেশিদিন রাজত্ব করা শাসক রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ ১৯২৬ সালে জন্ম নেয়া এলিজাবেথ মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটেনের সিংহাসনে আরোহণ করেন ১৯৫২ সালে৷ এখন রানির বয়স ৯৬ বছর৷
ছবি: Frank Augstein/AP Photo/picture alliance
রাজপরিবার
চারদিনের আয়োজনের শেষ দিনে রানি এলিজাবেথের সঙ্গে হাজির হয়েছিলেন রাজপরিবারের অন্য সদস্যরাও৷ লন্ডনে বাকিংহাম প্যালেসের ব্যালকনিতে রানির সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন যুবরাজ চার্লস, তার স্ত্রী কামিলা, প্রিন্স উইলিয়ামস ও তার স্ত্রী ক্যাথরিন, এবং তাদের তিন সন্তান প্রিন্স জর্জ, প্রিন্সেস শার্লট ও প্রিন্স লুইস৷
ছবি: Frank Augstein/AP Photo/picture alliance
সাজসজ্জার সমারোহ
চার দিনের আয়োজনে পুরো লন্ডনকে সাজানো হয়েছিল রঙবেরঙের উপকরণ দিয়ে৷ রাস্তার পাশেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল রানির নানা প্রতিমূর্তি৷
ছবি: Zoe Katzayiannaki/DW
প্লাটিনাম জুবিলি প্যারেড
রানির প্রতি সম্মান জানিয়ে বাকিংহাম প্যালেসের সামনে আয়োজন করা হয় পিপল প্যারেড৷ ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সেজে, যুক্তরাজ্যের পতাকা হাতে যোগ দেন সাধারণ মানুষও৷ এছাড়া নানা পাপেটের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় রানির শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্ত৷
ছবি: Frank Augstein/AP/Pool/AP/picture alliance
সামরিক প্যারেড
রানির সম্মানে আয়োজিত প্যারেডে অংশ নেয় ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীও৷ এসময় বাহিনীর নিয়মিত সদস্যদের পাশাপাশি ছিলো সামরিক ব্যান্ডও৷
ছবি: Henry Nicholls/REUTERS
শিশু গায়কদল
আয়োজনের একটি অংশ ছিল সাংস্কৃতিক নানা অনুষ্ঠান৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে শিশুদের একটি গায়কদলকে কোরাস গাইতে৷ এর পাশাপাশি বিখ্যাত নানা শিল্পীর গান শুনতে এবং কাছ থেকে দেখতে ছিল হাজারো জনতার ভিড়৷
ছবি: Frank Augstein/AFP
রাজকীয় বাহন
সোনায় মোড়ানো রানির ঘোড়ার গাড়ি প্রদক্ষিণ করে পুরো প্যারেড জুড়ে৷ আটটি ঘোড়ায় টানা এই গাড়ি ১৭৬০ সালে শুরু হয়ে তৈরি করতে সময় লেগেছিল দুই বছর৷ রাজা তৃতীয় জর্জ এই গাড়ি তৈরির আদেশ দিয়েছিলেন৷ তবে গাড়িটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা শাসক স্বাভাবিকভাবেই দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷
ছবি: HANNAH MCKAY/AFP
হলোগ্রামে রানি
স্বর্ণযানে রানি ছিলেন না৷ কিন্তু রানির একটি প্রতিকৃতি হলোগ্রামের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় সেখানে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে ৭০ বছর আগে সিংহাসনে আরোহণ করা তরুণি এলিজাবেথকে৷
ছবি: Ben Stansall/AFP
ছিলেন রাজনীতিবিদরাও
রাষ্ট্রীয় এই আয়োজনে স্বভাবতই সব শ্রেণী পেশার মানুষদের পাশাপাশি ছিলেন রাজনীতিবিদরাও৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্যারেড উপভোগ করতে সাবেক রাগবি তারকা মাইক টিন্ডালের সঙ্গে রয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও৷
ছবি: Chris Jackson/REUTERS
9 ছবি1 | 9
ইইউ-র প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন বলেছেন, তিনি ব্রিটেনের মানুষ ও রাজপরিবারের প্রতি গভীর শোক জানাচ্ছেন।
বাকি বিশ্বনেতাদের শোকবার্তা
ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ''তিনি আমাদেরও রানি ছিলেন। ক্যানাডার মানুষের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা ছিল।'' নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আর্ডেন জানিয়েছেন, তারা জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ জানিয়েছেন তিনি শোকাহত। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি বলেছেন, তিনি ছিলেন মহান ও দয়ালু শাসক।
এছাড়াও বিশ্বের প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান তাদের শোকের কথা জানিয়েছেন।