ইউরোপের ১৩টি শহরে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার নানান পদ দিয়ে নৈশভোজের আয়োজন করেছে জাতিসংঘ৷ খাবার চেখে দেখা ছাড়াও এই আয়োজনের উদ্দেশ্য সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান৷
বিজ্ঞাপন
উৎসব করার মতো কিছুই ঘটেনি৷ তা-ও বিরাট ভোজের আয়োজনে ব্যস্ত বার্শাঙ্ক হাজ ইউনেস৷ হুম্মুস, মউটাবাল (বেগুনের এক রকম সালাদ), ভেড়া ও মুরগির মাংস সবই আছে মেন্যুতে৷ ২,০০০ কিলোমিটার দূরে তাঁর দেশ সিরিয়ায় ঘরে অতিথি এলে এ সব খাবার দিয়েই সাধারণত আপ্যায়ন করা হয়৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে ইউনেস পালিয়েছেন আগেই৷ গ্রিসে এসেছেন বছরখানেক আগে৷ বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষ্যে এখন গ্রিসের একটি রেস্টুরেন্টে তাঁর রান্নাপ্রতিভা দেখাচ্ছেন স্থানীয় এক রাঁধুনিকে সঙ্গে করে৷ ২ বর্গমিটারের রান্নাঘরে ১৪টি পদ তৈরিতে ব্যস্ত তিনি আর রেস্তোরাঁর প্রধান রাঁধুনি ফটিস ফটিনগ্লোউ৷
খুব মন দিয়ে কাজ করেন ইউনেস৷ তাঁর আশা, এই খাবারগুলো সবাইকে তাঁর দেশের অসহায় হাজারো মানুষের কথা মনে করিয়ে দেবে৷
‘‘আমি তাঁদের মনে করিয়ে দিতে চাই, এখানে অনেক সিরীয় শরণার্থী আছে৷ আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, এই সিরীয়দের সাহায্য দরকার৷’’
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ইউনেস শখের রাঁধুনি নয়৷ সিরিয়ায় যুদ্ধ চলার সময় উত্তর-পূর্ব কুর্দি শহর আমুডা ছেড়ে তিনি ইরাকে পালিয়ে যান৷ এরপর সেখানকার হোটেলে প্রথমে ওয়েটার ও পরে রাঁধুনি হিসেবে কাজ করে কিছু অর্থ উপার্জন করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান৷ নৌকায় করে তুরস্ক পৌঁছান গত বছরের মার্চে৷
রান্নার এই আয়োজন থেকে একটি বার্তা দিতে চান ইউনেসের গ্রিক সঙ্গী ফটিনোগ্লোউও৷
তিনি মনে করেন,‘‘এদের জীবনে যা ঘটেছে, তা আমাদের যে কারো জীবনেই ঘটতে পারে৷’’ ‘‘আমরা মনে করি, রসুঁইঘরে কোনো ভেদাভেদ নেই৷ কোনো শরণার্থী নেই৷ আমরা সবাই এক, সবাই মানুষ৷’’
জেডএ/এসিবি (রয়টার্স)
শরণার্থী সংকটের কিছু আইকনিক ছবি
ইউরোপে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের ছবি গোটা বিশ্বে ছড়িয়েছে এবং মানুষের মতামত সৃষ্টিতে প্রভাব বিস্তার করেছে৷ অভিবাসন এবং অভিবাসনের ফলে সৃষ্ট ভোগান্তির এত ছবি আগে দেখেনি বিশ্ব৷
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Morenatti
লক্ষ্য: টিকে থাকা
অনিশ্চিত যাত্রার ধকল সামলাতে হয় শারীরিক এবং মানসিকভাবে৷ ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচতে হাজার হাজার সিরীয় নাগরিক তুরস্ক হয়ে গ্রিসে জড়ো হয়েছেন৷ সে দেশের তিনটি দ্বীপে এখনো দশ হাজারের মতো শরণার্থী বসবাস করছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস অবধি ছয় হাজার নতুন শরণার্থী এসেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Messinis
পায়ে হেঁটে ইউরোপে
২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ গ্রিস ও তুরস্ক থেকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করেছে৷ ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, অর্থাৎ বলকান রুট ব্যবহার করে তাদের এই যাত্রার অধিকাংশই ছিল পায়ে হেঁটে৷ অভিবাসীদের এই যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়, যখন রুটটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েকটি দেশ সীমান্তে বেড়া দিয়ে দেয়৷
ছবি: Getty Images/J. Mitchell
বৈশ্বিক আতঙ্ক
এই ছবিটি গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে৷ তিন বছর বয়সি সিরীয় শিশু আয়লান কুর্দির মরদেহ তুরস্কে সমুদ্রতটে ভেসে ওঠে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং শরণার্থী সংকটের প্রতীকে পরিণত হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/DHA
বিশৃঙ্খলা এবং হতাশা
শেষ সময়ের ভিড়৷ ইউরোপে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুনে ক্রোয়েশিয়াতে এভাবে ট্রেনে এবং বাসে উঠতে দেখা যায় অসংখ্য শরণার্থীকে৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে হাঙ্গেরি সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং শরণার্থীদের জন্য কন্টেইনার ক্যাম্প তৈরি করে৷
ছবি: Getty Images/J. J. Mitchell
বিবেকবর্জিত সাংবাদিকতা
হাঙ্গেরির এক সাংবাদিক এক শরণার্থীকে ল্যাং মেরে ফেলে দেয়ার ভিডিও নিয়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ সার্বিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন হাঙ্গেরির একটি এলাকার সেই ঘটনায় আলোচিত সাংবাদিকের চাকুরি চলে যায়৷
ছবি: Reuters/M. Djurica
উন্মুক্ত সীমান্ত নয়
২০১৬ সালের মার্চে বলকান রুট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর সীমান্তগুলোতে আরো আবেগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়৷ হাজার হাজার শরণার্থী বিভিন্ন সীমান্তে আটকা পড়ে এবং তাদের সঙ্গে বর্বর আচরণের খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন স্থান থেকে৷ অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে৷
ধুলা এবং রক্তে ঢাকা এক শিশু৷ পাঁচবছর বয়সি ওমরানের এই ছবিটি প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে৷ আয়লান কুর্দির ছবির মতো এই ছবিটিও গোটা বিশ্বকে আরেকবার নাড়িয়ে দেয়৷ সিরীয়ায় গৃহযুদ্ধ কতটা বিভৎস পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং সিরীয়রা কতটা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, তার এক প্রতীক হয়ে ওঠে ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Aleppo Media Center
অজানা নতুন ঠিকানা
গ্রিক-ম্যাসিডোনিয়া সীমান্তের ইডোমিনিতে নিজের মেয়েকে কোলে নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটছেন এক সিরীয় নাগরিক৷ ইউরোপে তাঁর পরিবার নিরাপদ থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল তাঁর৷ ডাবলিন রেগুলেশন অনুযায়ী, একজন শরণার্থী প্রথম ইউরোপের যে দেশে প্রবেশ করেন, সে দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করতে হবে৷ ফলে যারা আরো ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের অনেককে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Reuters/Y. Behrakis
সহযোগিতার আশা
বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রবেশের কারণে জার্মানি অভিবাসন নীতি আরো কড়া করে ফেললেও এখনো শরণার্থীদের প্রথম পছন্দ জার্মানি৷ ইউরোপের আর কোনো দেশ জার্মানির মতো এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থী নেয়নি৷ ২০১৫ সালে সঙ্কট শুরুর পর থেকে দেশটি ১২ লক্ষ শরণার্থী নিয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা
ইউরোপে শরণার্থী প্রবেশের সংখ্যা চলতি বছর কমেছে, তবে থেমে যায়নি৷ বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে মরছে অনেকে৷ বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছর এখন অবধি সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে প্রায় দু’হাজার মানুষ৷ গতবছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার৷