গত দেড় মাসে এই নিয়ে রান্নার গ্যাসের দাম দুই বারে ১০০ টাকা বাড়ল। এর আগে গত ২২ মার্চ গ্যাসের দাম ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। উত্তরপ্রদেশ-সহ দেশের পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলপ্রকাশের পরে দুইবার বাড়ল রান্নার গ্যাসের দাম।

পশ্চিমবঙ্গে গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম বেড়ে হলো এক হাজার ২৬ টাকা। এই প্রথমবার রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার এত দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

সরকারি তথ্য বলছে, মনমোহন সরকারের শেষ বছরে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মোদী সরকারের প্রথম বছরেই যা কমে দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। ২০২১-২২-এর প্রথম নয় মাসে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকির অর্থ এসে দাঁড়ায় প্রায় দুই হাজার ৭০৬ কোটি টাকায়।

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, ‘‘ইউপিএ সরকারের আমলে প্রতি সিলিন্ডারে ৮২৭ টাকা করে ভর্তুকি দেওয়া হত। উপভোক্তাকে দাম দিতে হতো ৪১৪ টাকা। আজ ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে গ্যাসের দাম হাজারে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

বিপিএল তালিকাভুক্ত যে গরিব পরিবারগুলিকে উজ্জ্বলা যোজনায় বিনা পয়সায় গ্যাসের সংযোগ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার, গ্যাসের দাম বাড়ায় আজ তারা সমস্যায় পড়েছেন।

বারে বারে বাড়ছে গ্যাসের দাম, তাই উনুন আর কাঠপাতার জ্বালানিতেই আবার ফিরবেন গ্রাম বাংলার অধিকাংশ নিম্নআয়ের মানুষজন? অনেকে এখনই অর্থাভাবে সিলিন্ডার আর ওভেন বিক্রিও করে দিচ্ছেন।

বুনা খটিক জানালেন ৬০০ টাকা থেকে গ্যাস নেওয়া শুরু করেছিলেন, আজ তা হাজার ছাড়িয়েছে। আবার স্টোভে রান্না শুরু করতে হবে, কিন্তু রেশনে কেরোসিনের দরও অগ্নিমূল্য।

শুধুমাত্র নিম্নআয়ের মানুষজনই নন, মধ্যবিত্তদের কপালেও ভাঁজ। গৃহবধূ ইন্দ্রানী মুখোপাধ্যায় বলছেন তিনি মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছেন। হাজার টাকার ওপরে গ্যাসের দাম মুখের কথা নয়। কিন্তু তাতেও বিদ্যুতের বিল বাড়বে।

গত দু’মাসে হোটেল-রেস্তরাঁয় ব্যবহারের বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের দামও ৪৫৭.৫০ টাকা বেড়েছে। নীল রঙের সিলিন্ডারগুলি হলো বাণিজ্যিক সিলিন্ডার।

আরসালান হোটেলের ম্যানেজার মহম্মদ নাসির বললেন, খাবারের নানান উপকরণের দাম তো বাড়ছেই, সঙ্গে গ্যাসের দামও যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে খাবারের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকেনা।

বেড়েছে অটোরিকশার জ্বালানির দামও। অটোচালক মানস ঘোষ বললেন, ''সাত মাসে কেজি প্রতি প্রায় তিরিশ টাকা বেড়েছে সিএনজি-র দাম। এভাবে বাড়তে থাকলে আমাদের ভাড়া বাড়াতে হবে, ভাড়া বাড়ালে প্যাসেঞ্জার কমে যাবে। শেষমেশ আমাদেরই ক্ষতি।''

গ্যাস এবং পেট্রল-ডিজেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে মুখর প্রায় সব বিরোধীদলই, কিন্তু সেই প্রতিবাদে কোনো হেলদোল নেই কেন্দ্রীয় সরকারের।