গাজা এবং মিশরের মধ্যবর্তী রাফাহ সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র বিদেশি এবং আহত গাজার নাগরিকদের যেতে দেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বহু আলোচনার পর বুধবার শেষপর্যন্ত খুলে দেওয়া হয় রাফাহ সীমান্ত। আগে এই সীমান্ত দিয়ে গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠানো হলেও বেসামরিক মানুষকে সীমান্ত পার করে মিশরে যেতে দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবার গাজার শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েল হামলা চালানোর পর বুধবার ওই সীমান্ত বেসামরিক মানুষের জন্য খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল। তবে সকলে সীমান্ত পার করতে পারছেন না। বিদেশি নাগরিক এবং গাজার আহত বেসামরিক মানুষদেরই কেবল মিশরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।
গাজায়আটকে পড়া জার্মান নাগরিকদের একটি বড় দল বুধবার রাফাহ সীমান্ত পার করে মিশরে প্রবেশ করেছে। কায়রোয় জার্মান দূতাবাসের কর্মীরা সীমান্তে গিয়ে জার্মান নাগরিকদের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তবে কতজন জার্মান নাগরিক সীমান্ত পার করেছেন তার কোনো সংখ্যা জার্মান দূতাবাসের কর্মীরা সংবাদমাধ্য়মকে দেননি। হামাসের হাতে পণবন্দি কোনো জার্মান নাগরিককেও বুধবার ছাড়া হয়নি। তবে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লাগাতার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
গাজায় যে পরিমাণ মানবিক সহায়তা যাচ্ছে
গত সপ্তাহান্তে রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো শুরু হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের?
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কত ট্রাক সহায়তা?
সপ্তাহান্তে সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর গাজায় শনিবার ২০ ট্রাক এবং রোববার ১৪ ট্রাক মিলিয়ে মোট ৩৪ ট্রাক সহায়তা পাঠানো হয়৷ সোমবার আরো ৪০টি ট্রাকে সহায়তা পাঠানোর খবর পাওয়া যায়৷ এরপর আর কোনো সহায়তার ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি৷
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে?
জানা গেছে ট্রাকে করে খাবার পানি, ওষুধ, খাবার এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল৷ প্রবেশ পথে ট্রাকগুলোকে যাচাই-বাছাই করছে ইসরায়েলের নিরাপত্তারক্ষীরা৷ সহায়তার নামে যেন কোনো অস্ত্র প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যই ট্রাকগুলোতে তল্লাশি চালায় ইসারায়েলি কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Ahmed Gomaa/Xinhua/IMAGO
কী দরকার গাজাবাসীর?
দাতা সংস্থাগুলো বলছে, গাজার সাধারণ মানুষের নিত্য চাহিদা মেটাতে দিনে অন্তত একশ ট্রাক সহায়তা প্রয়োজন৷ খাবার, ওষুধ ছাড়াও জ্বালানি সহযোগিতা দেওয়ার আহ্বান ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থাগুলোর৷ গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় পানির সংকট তৈরি হচ্ছে৷ তাছাড়া হাসপাতালগুলোকে চালু রাখতে প্রয়োজন জ্বালানি৷
ছবি: Hatem Ali/AP/picture alliance
জ্বালানি সরবরাহ করা হচ্ছে?
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, জ্বালানি নিয়ে ৬টি ট্যাংকার রাফাহ ক্রসিং অতিক্রম করেছে যদিও স্বতন্ত্র সূত্র থেকে এটি নিশ্চিত করা যায়নি৷ তবে ফিলিস্তিনের একজন মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এমন তথ্যের কথা অস্বীকার করেছে৷ এদিকে, ফিলিস্তিনের বেসামরিক বিষয়ক ইসরায়েলের ডিফেন্স বডির পক্ষ থেকে বলা হয়, জাতিসংঘের একটি তেলের ডিপো থেকে হাসপাতালে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছে৷
ছবি: Mohammed Abed/AFP/Getty Images
অপেক্ষমাণ সহায়তা
সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে গাজায় প্রবেশের লক্ষ্যে কয়েক দিন ধরে সহায়তার ট্রাক অপেক্ষমাণ রয়েছে৷ জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা জানায়, গাজা সীমান্তে সংস্থাটির এক হাজার টন খাদ্য সরবরাহের অপেক্ষায় রয়েছে৷
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
সহায়তায় কোন কোন দেশ
ফিলিস্তিনীদের সহায়তায় এরইমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিশরে সহায়তা পাঠিয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, রাশিয়া, তুরস্ক এবং রুয়ান্ডাসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ৷
ছবি: Mohammed Asad/AP Photo/picture alliance
জার্মানির অর্থ সহায়তা বৃদ্ধি
গাজার বসবাসরত সাধারণ মানুষের জন্য ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বাড়তি সহায়তা ঘোষণা করেছে জার্মানি৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেন৷ জার্মানির এই সহয়তা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রমে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য বেয়াবকের৷
ছবি: Annette Riedl/dpa/picture alliance
7 ছবি1 | 7
দুই রাষ্ট্রের পক্ষে পোপ
যুদ্ধবিরতির আবেদন জানিয়ে আগেই মুখ খুলেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। এবার দুই রাষ্ট্রের তত্ত্বকে সমর্থন করে বিবৃতি দিলেন তিনি। পোপের বক্তব্য, চলতি সংঘাত এড়াতে গেলে দুই রাষ্ট্রের পরিকল্পনা করতেই হবে। নইলে কোনোপক্ষকেই শান্ত রাখা যাবে না। তবে জেরুজালেমকে বিশেষ স্টেটাস বা গুরুত্ব দিয়ে এই দুই রাষ্ট্র থেকে আলাদা রাখার কথা বলেছেন তিনি।
আকস্মিক সংঘাতে অসহায় ফিলিস্তিন
হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের পাল্টা আঘাতে পরিস্থিতি এমন যে গাজা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মরিয়া কয়েক লাখ মানুষ৷ কিন্তু যে কোনো মুহূর্তে মৃত্যুর ঝুঁকি সত্ত্বেও মিশর সীমান্ত বন্ধ থাকায় তারা এখন মহাবিপদে৷ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
তিন লাখ মানুষ ঘরছাড়া
২৩ লাখ মানুষের ভূখণ্ড গাজা এখন আতঙ্কের নগরী৷ জাতিসংঘের মানবিক বিষয়াদি সম্পর্কিত সংস্থা অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ বা ওচা) জানিয়েছে, গাজায় মৃত্যুভয়ে ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে৷ সংঘাতের ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত গাজা-র অন্তত তিন লাখ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়েছে বলে জানিয়েছে তারা৷
ছবি: Majdi Fathi/NurPhoto/picture alliance
স্কুলঘরে আশ্রয়
অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ওসিএইচএ বা ওচা) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া তিন লাখ গাজাবাসীর দুই তৃতীয়াংশই এখন জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ ওপরের ছবিতে এক স্কুলে আশ্রয় নেয়া একটি পরিবার৷
ছবি: Rola Farhat/DW
ধ্বংসস্তূপ ডিঙিয়ে শান্তির সন্ধানে
ইসরায়েল থেকে উড়ে আসা মিসাইলের আঘাতে ধসে পড়েছে ঘর-বাড়ি৷ চারপাশে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন৷ তার মাঝেই কয়েকজনের বাঁচার পথ খোঁজার চেষ্টা৷
ছবি: Abed Rahim Khatib/dpa/picture alliance
রাফা সীমান্তে বাধা
জাতিসংঘ জানাচ্ছে, সোমবার গাজা থেকে রাফা সীমান্ত হয়ে মিশরে প্রবেশ করে অন্তত ৮০০ মানুষ৷ কিন্তু সেদিন সীমান্তে কড়াকড়ি শুরু হওয়ায় অন্তত ৫০০ জন মিশরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়৷
ছবি: Abed Rahim Khatib/dpa/picture alliance
সীমান্তে কড়াকড়ি
গাজার এক পাশে মিশর অন্য তিন পাশে সাগর অথবা ইসরায়েল৷ মিশর সরকার চায় না সেই দেশে গাজাবাসীর ঢল নামুক৷ তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত শান্তি ফেরানোর আহ্বান জানিয়ে সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছেন৷
ছবি: Abed Rahim Khatib/dpa/picture alliance
তবুও মরিয়া আতঙ্কিত মানুষ...
রাফা সীমান্ত বন্ধ করেও গাজার অসহায় মানুষদের মিশরে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না৷ এমনকি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে অক্ষম মানুষরাও প্রাণ বাঁচাতে পৌঁছে যাচ্ছেন রাফা সীমান্তে৷ ওপরের ছবিতে হুইল চেয়ারে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়া এক গাজাবাসী৷
ছবি: Ibraheem Abu Mustafa/REUTERS
6 ছবি1 | 6
ইটালির এক টেলিভিশন চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় স্পষ্ট করে নিজের অভিমত প্রকাশ করেছেন পোপ। তার মতে ওসলো অ্যাকর্ড মেনে দুই দেশ তৈরির সময় এসে গেছে। একমাত্র এই উপায়েই সাম্প্রতিক সংঘাত রুখে দেওয়া সম্ভব।
দুইটি বিষয় নিয়ে বিশেষ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পোপ। এক, চলতি সংঘাতে বহু বেসামরিক প্রাণ যাচ্ছে। ৭ অক্টোবরের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি। অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিসিমেসিজম বা ইহুদিবিরোধী বিদ্বেষ নতুন করে জন্ম নিচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। দ্রুত এর সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
ব্লিংকেন-সালমান বৈঠক
অ্যামেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং আরব আমিরাতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী যুবরাজ খালিদ বিন সালমান আল সৌদ মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন। ওয়াশিংটনে গিয়ে যুবরাজ খালিদ বৈঠক করেছেন ব্লিংকেনের সঙ্গে। মধ্য প্রাচ্যে কীভাবে শান্তি ফেরানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পর দুইজনই জানিয়েছেন, শুক্রবার তারা একত্রে ইসরায়েল যেতে পারেন। সংঘাত শুরু হওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ইসরায়েল যাচ্ছেন ব্লিংকেন।