রামনবমীর দিন প্রথম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায়। অভিযোগ, মিছিলকারীদের সঙ্গে প্রথমে বচসা পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আরো কিছু জনতা। উত্তেজনা এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, পুলিশের গাড়ি পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে হুগলির রিষড়ায়। হওড়ার শিবপুরে। অন্যদিকে বিহারে খোদ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে। এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার ছিল রামনবমী। ওই দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মিছিল বার হয়। পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় মিছিল হয়েছে। সর্বত্রই মিছিলের সঙ্গে ছিল পুলিশ এবং দাঙ্গা প্রতিরোধের পুলিশ। তা সত্ত্বেও হাওড়ার ঘটনা আটকানো যায়নি। পরে হাওড়ার শিবপুরেও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। একদিন পরে হুগলির রিষড়াতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এই সমস্ত অঞ্চলেই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। তবে বিভিন্ন এলাকায় এখনো চাপা উত্তেজনা আছে।
চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট থেকে জানানো হয়েছে, ''এলাকায় পুলিশ রুট মার্চ করছে। ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত রিষড়ায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে।''
রিষড়ার ঘটনার জন্য পুলিশ এখনো পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। আরো কিছু ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে। অন্যদিকে হাওড়ার ঘটনাতেও বেশ কিছু দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এক বছর আগে জ্বলে পুড়ে গিয়েছিল যে অঞ্চল, সেখানে আবার প্রাণ ফিরছে। কিন্তু আতঙ্ক থেকেই গেছে। তখন আর এখনের ছবি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWদাঙ্গা বিধ্বস্ত এই নারী অস্থায়ী ক্যাম্পে বসে কেঁদে ফেলেছিলেন। পরিবারের কাউকে তখনো খুঁজে পাননি তিনি।
ছবি: DW/S. Ghoshএই নারীও দীর্ঘদিন ক্যাম্পে ছিলেন। বেশ কয়েকমাস আগে ঘরে ফিরে এসেছেন। নতুন করে রং করছেন বাড়ির দেওয়াল। কিন্তু চোখে মুখে এখনো আতঙ্ক।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWদাঙ্গার সময় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এই গ্যারাজে। বহু গাড়ি নষ্ট হয়েছিল। পালিয়ে গেছিলেন সকলে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWএক বছর পরে গ্যারাজের মালিকানার হাত বদল হয়েছে। বিয়েবাড়ি হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে গ্যারাজটি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWদাঙ্গার সময় খাবার ছেড়ে পালাতে হয়েছিল কেয়ারটেকারকে। পুরো ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল দাঙ্গাকারীরা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWনতুন করে রং হয়েছে ঘরে। নতুন কেয়ারটেকার এসেছেন। খাট পেতেছেন সেই একই জায়গায়। ঘরে না থাকলে তালা দিয়ে রাখেন নতুন কেয়ারটেকার। ভয়ে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWআগুনে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বাড়িটি। ছবি তোলার সময়েও বিভিন্ন জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWএক বছর পরেও এলাকায় ফেরেননি এই বাড়ির কেউ। একই অবস্থায় ধ্বংসাবশেষ হয়ে পড়ে আছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWসমস্ত কিছু লুঠ করে ঠেলা গাড়িটা পর্যন্ত ভেঙে দিয়ে গিয়েছিল দাঙ্গাকারীরা। যাওয়ার আগে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWএক বছর পরে ছন্দে ফিরেছে জীবন। নতুন ঠেলা গাড়ি আবার রাখা হয়েছে দরজার পাশে। ওই গাড়িতে করেই প্রতিদিন জিনিস বিক্রি করেন বাড়ির মালিক।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWইটবৃষ্টি হয়েছে দুই দিক থেকেই। জাফরাবাদের এই রাস্তাটি দেখলে মনে হতো যুদ্ধক্ষেত্র।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWএক বছর পরে ওই রাস্তায় কংক্রিট ঢালা হয়েছে। জনজীবন স্বাভাবিক হয়েছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWএকের পর এক দোকানে ঢুকে সমস্ত কিছু লুঠ করেছিল দাঙ্গাকারীরা। মুস্তাফাবাদের একটি দোকানও আস্ত ছিল না।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWনতুন করে দোকান খুলেছেন স্থানীয় মানুষ। যা গেছে, তার ক্ষতিপূরণ এখনো মেলেনি। কোনোমতে পসরা সাজিয়ে আছেন তাঁরা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWরাজস্থান থেকে এসে পাঁচিলের ধারে অস্থায়ী ঘর বানিয়েছিলেন এই বাঞ্জারা। খুলেছিলেন ছোট্ট চায়ের দোকান। দাঙ্গাকারীরা তাঁকেও ছাড়েনি।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWলাল পাঁচিলের ধারে নতুন করে ঘর বানিয়েছেন বাঞ্জারারা। তবে এখনো আতঙ্কে ভুগছেন। রাতের অন্ধকারে ফের কেউ আগুন লাগিয়ে দেবে না তো?
ছবি: Syamantak Ghosh/DWবড় রাস্তার ধারে এই টায়ার বাজারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক লাখ টাকার টায়ার নষ্ট হয়েছিল। বহু ব্যবসায়ীর মাথায় হাত পড়েছিল।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWফের খুলেছে টায়ার বাজার। খুলেছে দোকান। কিন্তু এখনো দাঙ্গার ক্ষতি সামলে উঠতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWদাঙ্গার সময় এমনই ছিল জাফরাবাদ, মুস্তাফানগর, শিববিহারের চেহারা। রাস্তাজুড়ে শুধুই ধ্বংসস্তূপ।
ছবি: Syamantak Ghosh/DWএক বছর পর স্বাভাবিক হয়েছে রাস্তাঘাটের চেহারা। গাড়ি-ঘোড়া চলছে স্বাভাবিক ছন্দে। তবে মানুষের মনে আতঙ্ক এখনো থেকে গিয়েছে।
ছবি: Syamantak Ghosh/DW গোটা ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি বলেছেন, 'দাঙ্গাবাজরা কখনোই গণতন্ত্রকে হারাতে পারবে না।' দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্ব ঘটনার এএনআই তদন্ত দাবি করেছে।
বিহারের অবস্থা
বিহারের বিহার শরিফ এবং নালন্দা অঞ্চলেও একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে। সাসারাম, বিহার শরিফ, এবং নালন্দা অঞ্চলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। একাধিকবার এই সমস্ত অঞ্চলে সংঘর্ষ হয়েছে। নালন্দায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভা ছিল। সংঘর্ষের জন্য তা শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়। বিহার পুলিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ঘটনায় বেশ কিছু বাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। বহু মানুষ আহত হয়েছেন। দুইজন পুলিশও আহত হয়েছেন।
পুলিশের ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল নবীনচন্দ্র ঝা, জেলা শাসক ধর্মেন্দ্র কুমার, এলাকার এসপি বিনীত কুমার-- সকলেই রুট মার্চে অংশ নিয়েছেন। পরিস্থিতি আপাতত অনেকটাই স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে বিহারের প্রশাসন।
বস্তুত, বিহার শরিফ অঞ্চলটি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর এলাকায় কী করে এত সংঘর্ষ হচ্ছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই)