বাংলাদেশের পরিবেশকামী জনগণের বিরোধীতার মুখে রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ভারতের সরে আসা উচিত বলে মনে করছে ভারতের পরিবেশবাদীরাও৷ এতে সুন্দরবনের সংবেদনশীল পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে, অভিঘাত পড়বে জনজীবনেও৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের জাতীয় তাপবিদ্যুৎ কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদের যৌথ উদ্যোগে কয়লা-ভিত্তিক এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়ে এখন দেখা দিয়েছে ঘোর বিতর্ক৷ ভারতের পরিবেশবিদ শায়ন চৌধুরির অভিমত, বাংলাদেশের সুন্দরবনের মতো সংবেদনশীল এলাকায় প্রস্তাবিত ১৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে বিশ্ব হারাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য৷ শুধু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র আবাসভূমিই নয়, সুন্দরবনে রয়েছে অসংখ্য দুর্লভ প্রজাতির জৈব-চেন, যা পরস্পরের সঙ্গে শৃঙ্খলাবদ্ধ৷ সেই চেন বা শৃঙ্খল যদি একবার নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সব জৈববৈচিত্র্যই বিপন্ন হয়ে পড়বে৷ ইকো-সিস্টেম সুরক্ষিত রাখতে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণ আজ একটা আন্তর্জাতিক ইস্যু৷ উন্নয়ন বা দেশের আর্থিক বিকাশের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ এটা হলো জীবনের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী বা সংবেদনশীলতার প্রশ্ন৷ মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ছে৷ শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভবিষ্যত জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ভারতেও চলছে কয়লা-ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলন৷ এর বিকল্প হিসেবে জোর দেওয়া উচিত সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ শক্তির ওপর৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোরালো যেসব আন্দোলন
ফেসবুক বা টুইটারের মাধ্যমে প্রতিবাদ থেকে গড়ে উঠেছে তীব্র আন্দোলন৷ আরব বসন্ত থেকে হালের সুন্দরবন বাঁচাও আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি আদায়ে সোচ্চার মানুষ৷ এমন কিছু আন্দোলনের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Pacific Press/M. Hasan
শাহবাগ আন্দোলন
ঘটনা ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩৷ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে এর প্রতিবাদে এবং কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে জড়ো হন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা৷ ফেসবুকে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আপামর জনতা নেমে আসেন রাস্তায়৷ গড়ে ওঠে প্রতিবাদ৷ দেশের অনেক স্থানেই গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ৷ ঐ বছরই ১২ ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়৷
ছবি: Reuters
নির্ভয়া কাণ্ডে প্রতিবাদ
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে বাসে গণধর্ষণের শিকার হন জ্যোতি নামের এক তরুণী৷ চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটি জানার পর রাস্তায় নেমে আসে সর্বস্তরের মানুষ৷ গড়ে ওঠে প্রতিবাদ৷ ধর্ষণবিরোধী আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়৷
ছবি: Reuters
আরব বসন্ত
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়া প্রথম শুরু হয়েছিলো ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময়৷ ২০১০ সালে টিউনিশিয়ার মোহামেদ বুয়াজিজি নামের এক ফেরিওলা গায়ে আগুন ধরিয়ে প্রতিবাদ জানান শাসকের বিরুদ্ধে৷ ২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বেন আলির পতন হয়৷ মিশর, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন, টিউনিশিয়া ও বাহরাইনে প্রতিবাদ আন্দোলন চরম রূপ ধারণ করে৷ তবে, আরব বসন্তের একটি ভয়াবহ রূপ ইসলামি জঙ্গিবাদ, তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের উত্থান৷
ছবি: AP
#BringBackOurGirls
২০১৪ সালের ঘটনা৷ জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম নাইজেরিয়ার একটি স্কুল থেকে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রীকে অপহরণ করে৷ ঘটনা ঘটে ১৪ এপ্রিল৷ তার একদিন পর সেটা নিয়ে রিপোর্ট করে এএফপি৷ কিন্তু তখনও বিষয়টা বিশ্বের নজর কাড়তে পারেনি৷ পরে টুইটারে শুরু হয় বহুল আলোচিত #bringbackourgirls বা ‘আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে আনো’ প্রচারণা৷ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে টুইট হয় ৫ লাখ বার৷
ছবি: Twitter
#UmbrellaRevolution
২০১৪ সালে পূর্ণ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দাবিতে হংকং-এ যে বিক্ষোভে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা৷ ছাতা হাতে তারা এই প্রতিবাদ জানায়৷ অভিনব এই প্রতিবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ‘আমব্রেলা রেভোলিউশন’ নামে৷
ছবি: Reuters/B. Yip
#IfTheyGunnedMeDown
২০১৪ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ফার্গুসন শহরে পুলিশের গুলিতে মারা যায় কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউন৷ নিরস্ত্র ব্রাউনকে গুলি করে হত্যা করে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা উইলসন৷ এর প্রতিবাদে স্মরণকালের ভয়াবহতম বিক্ষোভ শুরু হয় ফার্গুসনে৷ টুইটারে প্রতিবাদ জানানো হয় #IfTheyGunnedMeDown লিখে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/T. Maury
‘সুন্দরবন বাঁচাও’
বাংলাদেশের সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ অরণ্যে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে চলছে সামাজিক আন্দোলন৷ গত এক মাস ধরে সাধারণ মানুষ এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে৷ টুইটারে ব্যবহার করা হচ্ছে #savesundarbans৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Pacific Press/M. Hasan
7 ছবি1 | 7
ভারতের মধ্যপ্রদেশের গজামারা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে জাতীয় তাপবিদ্যুৎ কর্পোরেশনকে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরোধিতায় অনুমতি দেয়নি রাজ্য সরকার৷ তাঁদের আশঙ্কা, কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত উড়ন্ত ছাই, কয়লা গুঁড়ো, বিষাক্ত গ্যাসে আশেপাশের কৃষিজমির একটা বড় অংশ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে৷ একই বিতর্ক ছত্তিশগড় রাজ্যেও৷ ঝাড়শুকুদা জেলার লখনপুরে প্রস্তাবিত চার হাজার মেগাওয়াটের অতিকায় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করার দাবি উঠেছে৷ তাঁদের আশঙ্কা, মহানদীর জল নেওয়া হলে দেখা দেবে জলাভাব৷ স্থানীয় জনজীবনে দেখা দেবে বিপর্যয়৷
শুধু তাপবিদ্যুতের প্রল্পই নয়, ভারতে পরামাণু বিদ্যুৎ নিয়েও একই সমস্যা৷ স্থানীয় বাসিন্দারা এবং পরিবেশ সংস্থাগুলির আন্দোলন ক্রমশই জোরদার হয়ে উঠছে৷ বছর দুই আগে ফরাসি সহযোগিতায় মহারাষ্ট্রের জাইতাপুরে প্রস্তাবিত প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াটের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ সহিংস হোয়ে উঠলে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়৷ পশ্চিমবঙ্গের হরিপুরে একই কারণ দেখিয়ে রাজ্য সরকার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দিতে অস্বীকার করে৷ জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রের বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে জনজীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে অসামরিক পরমাণু বিদ্যুৎ দপ্তরের বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয় সুপ্রিম কোর্টে৷ তাপবিদ্যুৎ বা পরমাণু বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সরকারের পরিবেশ রিপোর্টের নিরপেক্ষতার দিকেও আঙুল উঠেছে৷
বাংলাদেশের রামপাল যৌথ বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো শ্রীলঙ্কাতেও ভারতীয় সহযোগিতায় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের পক্ষে-বিপক্ষে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ কারণটা একই, সেই পরিবেশ-দূষণ৷ এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কা সরকার দ্বিধাবিভক্ত৷ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, পরিবেশগত দিক থেকে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাঞ্ছনীয় না হলেও দেশের আশু প্রয়োজনে তা বাতিল করা যায় না৷ বিপক্ষবাদীদের বক্তব্য, কয়লার বদলে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ব্যবহার করা হচ্ছে না কেন? সরকারের যুক্তি, সেটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে৷ ফলে সরকারকে দিতে হবে বিরাট ভরতুকি সেটা বহন করা কঠিন হবে৷
বর্ষায় আরো সুন্দরী সুন্দরবন
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ বা শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবন৷ এই বনের প্রধান গাছটির নাম সুন্দরী৷ আর তার থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ৷ ঋতুতে ঋতুতে এ বনের চরিত্র বদলায়৷ তবে সুন্দরবন সবচেয়ে বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বর্ষাকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে, ধান দিলাম মেপে’
বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সুন্দরবনে বর্ষা আসে মে মাসে আর সেই বর্ষাকাল চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷ অবশ্য জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত এখানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়৷ সুন্দরবন অঞ্চলে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৬৪০-২০০০ মিমি৷ তবে বনের পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে বৃষ্টিপাত তুলনামূলকভাবে বেশি৷
ছবি: DW/M. Mamun
দিনে দু’বার জোয়ার-ভাটা
প্রতিদিন দু’বার করে জোয়ার-ভাটা হয় সুন্দরবনে, যা কিনা বাংলাদেশ ও ভারত – প্রতিবেশী এই দুই দেশের বিশাল উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত৷ এখানে সবচেয়ে বড় জোয়ার হয় পূর্ণিমা ও অমাবস্যায়৷ তবে বর্ষাকালে জোয়ারের উচ্চতা থাকে সবচেয়ে বেশি৷ এ সময় বনের বেশিরভাগ অংশই প্লাবিত হয়, ডুবে যায় সবকিছু৷
ছবি: DW/M. Mamun
খাবারের সন্ধানে হরিণসাবক
জোয়ারের পানিতে সুন্দরবন প্লাবিত হলে হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গাগুলোয় আশ্রয় নেয়৷ এরপর জোয়ারের পানি নেমে গেলে খাবারের সন্ধানে নেমে পড়ে তারা৷ আর ঠিক সেই মুহূর্তটার জন্য অপেক্ষা করে থাকেন বহু পর্যটক – বন্যপ্রাণী দেখবেন বলে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ষার জন্য বিশেষ ‘প্যাকেজ’
বর্ষায় সুন্দরবনে পর্যটকের আনাগোনা বেশ কম৷ এ বনে পর্যটনের মৌসুম মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ৷ তবে বর্ষার সুন্দরবনকে দেখতে কিছু কিছু ভ্রমণপিয়াসী মানুষ এখানে আসেন বটে৷ আর সেই সব পর্যটকদের চাহিদার কারণেই সম্প্রতি দু-একটি বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থা বর্ষাকালে সুন্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থা করছে, দিচ্ছে বিশেষ ‘প্যাকেজ’৷
ছবি: DW/M. Mamun
তারপরেও পরিত্যক্ত বহু এলাকা
বর্ষা মৌসুমে প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের একটি পর্যটক ট্রেল৷ এ সময়ে পর্যটকের যাতায়াত না থাকায় এই হাঁটা পথের ওপরে জমা হয়েছে বিভিন্ন গাছের ফল৷ আসলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য হলেও, বেশ কিছু ফল গাছও আছে সুন্দরবনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরী বন সুন্দরবন
জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ভেসে আসে এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী গাছের ফল৷ ভেসে যায় আশেপাশের কোনো এলাকায়৷ তবে সুন্দরী গাছের বন সুন্দরবনে এমন একটা দৃশ্যের দেখা পাওয়া যায় কেবলমাত্র বর্ষাকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
জঙ্গলের বিস্তার, সুন্দরেরও
জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা সুন্দরী ফলের অংশ বিশেষ ভাটার সময় জঙ্গলে থেকে যায়৷ তারপর সেখান থেকেই অঙ্কুর গজায়, গাছ হয়, ফুল ফোটে, ফল দরে৷ এভাবেই বিস্তার ঘটে সুন্দরী গাছ এবং তার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনের৷ প্রকৃতির এ নিয়মেই বেড়ে উঠেছে সুন্দরবনের বেশিরভাগ বনাঞ্চল৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরবনের বানর
সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা বানর৷ ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় এই বনে বেড়াতে গেলে তাই এদের চোখে পড়বেই৷ কখনও একা একা, আবার কখনও দঙ্গল বেধে ঘুরে বেড়ায় এরা৷ তবে বৃষ্টির সময় এদের গাছের ডালেই আশ্রয় নিতে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
চলে লুকোচুরির খেলা...
বর্ষাকালে সুন্দরবনে চলে রোদ আর বৃষ্টির লুকোচুরি৷ ঝকঝকে রোদের মধ্যে হঠাৎ করেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখা যায় এখানে৷ গাড় হয়ে ওঠে নদীর জল, বনের সবুজে পড়ে ছায়া৷ কখনো কখনো মেঘের ভেতর থেকেই সূর্য উঁকি মারে, অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হয় বনজুড়ে৷
ছবি: DW/M. Mamun
‘লাল-নীল-সবুজের মেলা বসেছে’
কখনও আবার তুমুল বৃষ্টিপাতের মধ্যে হঠাৎ করেই ঝকঝকে নীলাকাশ দেখা যায় সুন্দরবনে৷ বৃষ্টিধৌত বনে সূর্যের আলো তখন ভিন্ন পরিবেশের সৃষ্টি করে৷ ঝলমল করে ওঠে নদী, বনের গাছ৷ বৃষ্টি একটু ধরলে আস্তে আস্তে নদীর ধারে চড়তে আসে বানর, হরিণ, এমনকি বাঘ মামাও৷
ছবি: DW/M. Mamun
বর্ষার এক ভিন্ন চিত্র
সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া বন্যপ্রাণী অভয়রাণ্যে বৃষ্টিস্নাত এক ‘গ্রেটার ইয়োলোনেইপ’ বা বড় হলদেসিঁথি কাঠঠোকরা৷ নানা রকম পাখির নিরাপদ আবাসস্থল এই সুন্দরবন৷ প্রায় ৪০০ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি রয়েছে সুন্দরী গাছের এ বনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুন্দরবনের সুন্দরী হাঁস
সুন্দরবনের কটকা বনাঞ্চলের বড় কটকার খালে চোখে পড়ে ‘মাস্কড ফিনফুট’ বা সুন্দরী হাঁস৷ এর আরেক নাম কালোমুখ প্যারা পাখি৷ বাংলাদেশের সুন্দরবন ও মিয়ানমারে এ হাঁসের বিচরণ সবচেয়ে বেশি৷ সারা পৃথিবীতে বর্তমানে এ পাখির সংখ্যা এক হাজারেরও কম৷ লাজুক স্বভাবের সুন্দরী হাঁসের বৃহত্তম আবাসস্থলও সুন্দরবন৷
ছবি: DW/M. Mamun
জেলেদের জীবন
সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী জয়মনি জেলে পল্লীর পাশে পশুর নদীতে চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করছেন জেলেরা৷ সুন্দরবনের পাশে গড়ে ওঠা ভ্রাম্যমাণ এ জেলে পল্লীর জেলেরা সুন্দরবন ও তার আশেপাশে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের পর...
সুন্দরবনের শেলা নদীতে চলছে তেলবাহী ট্যাংকার ও মালবাহী জাহাজ৷ গত ডিসেম্বরে প্রায় ৫৮ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে জাহাজ ডুবির পরও এ রুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়নি৷ এছাড়া সাম্প্রতিক বাঘশুমারিতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ার কারণ হিসেবেও এই নৌ-রুটটিকে দায়ী করা হচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
14 ছবি1 | 14
ভারতের নাগরিক সমাজ কী বলছে? পরিবেশ সচেতন অনেকেই মনে করছেন ঘরে-বাইরে যখন এই নিয়ে এত গণঅসন্তোষ, তখন বিদেশের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ভারত সরে আসছে না কেন? ভৌগলিক দিক থেকে সুন্দরবনের একটা অংশ ভারতের৷ বাংলাদেশের সুন্দরবনে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে তার অভিঘাত অবধারিতভাবে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে এসে পড়বে৷ তা সত্ত্বেও ভারত এই প্রকল্পে এত আগ্রহী কেন? তাহলে কি বুঝতে হবে যে অন্য কোনো স্ট্র্যাটিজিক কারণ আছে? বৈদেশিক সুসম্পর্কের ভিতটা তাহলে কি আলগা হয়ে যাবে? যদি তাই হয়, তাহলে ইকো-সিস্টেমের নির্দেশিকা মেনে তা করা হচ্ছে না কেন? সুন্দরবন থেকে ২৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে তা করা এমন কোনো কঠিন কাজ নয় বলেই মনে করছে ভারতের পরিবেশবাদীরা৷
সুন্দরবনের গায়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলে আরও অনেক ক্ষতিকর দিক আছে৷ ১০ লাখেরও বেশি গরিব পরিবারের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল সুন্দরবনের ওপর, যাঁদের একটা বড় অংশ মত্সজীবি এবং বনসম্পদ আহরণকারী৷ যেমন মধু, ঘাস, পাতা ইত্যাদি৷ সুন্দরবনের বাদাবন, সামুদ্রিক তুফান এবং জলোচ্ছ্বাস রোধে এক প্রাকৃতিক বর্মের কাজ করে৷ শুধু তাই নয়, সুন্দরবনের খাঁড়িগুলি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং জলজ প্রাণীর আঁতুড় ঘর, যা বিলুপ্ত হবার আশংকা অমূলক নয়৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷