অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে থাকবেন না চার প্রমুখ শঙ্করাচার্য। তাদের মতে, অর্ধসমাপ্ত মন্দির উদ্বোধন করা যায় না।
বিজ্ঞাপন
উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ, গুজরাতের দ্বারকা, ওড়িশার পুরী এবং কর্নাটকের শ্রীঙ্গেরির শঙ্করাচার্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ২২ জানুয়ারি তারা অযোধ্যায় থাকবেন না। উত্তরাখণ্ডের জ্য়োর্তিপীঠের শঙ্করাচার্য বলেছেন, সনাতন ধর্ম অনুযায়ী অর্ধসমাপ্ত মন্দিরের উদ্বোধন করা যায় না। রামমন্দিরের নির্মাণ এখনো শেষ হয়নি। তাই তিনি না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জ্যোর্তিপীঠের শঙ্করাচার্য যা বললেন
উত্তরাখণ্ডের জ্য়োর্তিপীঠের ৪৬তম শঙ্করাচার্য অভিমুক্তেস্বরানন্দ সরস্বতী বলেছেন, তার এই সিদ্ধান্তকে মোদীবিরোধী বলে দেখা হতে পারে। কিন্তু এর সঙ্গে মোদী-বিরোধিতার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি শাস্ত্রবিরোধী হতে চান না বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ''শঙ্করাচার্যদের দায়িত্ব হলো, ধর্মীয় শাস্ত্র অনুসরণ করা এবং দেখা যে এই শাস্ত্র যাতে ঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়।''
অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজো
অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। পাঁচ অগাস্ট ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রুপোর ইট প্রতিষ্ঠা করবেন গর্ভগৃহে।
ছবি: AFP/S. Kanojia
আমন্ত্রিত ১৭৫ জন
করোনাকালে এই অনুষ্ঠান করা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। মন্দিরের পুরোহিত করোনায় আক্রান্ত। অমিত শাহেরও করোনা হয়েছে। কিছু নিরাপত্তা রক্ষীরও। তাই নিমন্ত্রিতের সংখ্যা কাটছাঁট করে ১৭৫-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। মূল মঞ্চে থাকার কথা পাঁচজনের। প্রধানমন্ত্রী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, আরএসএস প্রধান এবং ট্রাস্টের প্রধান নিত্যগোপাল দাসের। বাকিরা সামনে দূরত্ব বজায় রেখে বসবেন।
ছবি: IANS
মুসলিম অতিথি
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন মামলাকারী ইকবাল আনসারি। আমন্ত্রিতদের মধ্যে তাঁকেই প্রথম কার্ড পাঠানো হয়। আনসারি জানিয়েছেন, তিনি অবশ্যই যাবেন। মামলার রায় এসে গেছে। বিরোধ এখন অতীতের ঘটনা। শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভি এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জুফার ফারুকিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ছবি: IANS
সারা দেশ থেকে জল ও মাটি
ভূমিপুজো অনুষ্ঠানের জন্য দেশের সব প্রধান নদী থেকে জল এসেছে অযোধ্যায়। এসেছে ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থানের মাটি। অযোধ্যার পাশ দিয়ে বয়ে চলা সরযূর জল তো আছেই। ভূমিপুজোর পর মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে। মন্দির হবে তিন তলা। গর্ভগৃহের উপর থাকবে শিখর, যা ১৬১ ফুট উঁচু। পাঁচটি গম্বুজ থাকবে। পুরো মন্দির হবে পাথরের তৈরি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
আবার ২৮ বছর পর
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এই প্রথমবার অযোধ্যায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আঠাশ বছর আগে তিনি অযোধ্যায় গিয়েছিলেন মুরলী মনোহর জোশীর সঙ্গে। ভাষণও দিয়েছিলেন। তারপর আর যাননি। এ বার প্রথমে তিনি যাবেন হনুমান গড়ির মন্দিরে। রামের আগে বজরঙ্গবলীর পুজো দিতে হয়, এই রীতি মেনে সেখানে পুজো দিয়ে যাবেন মূল অনুষ্ঠানে। ভূমিপুজো করবেন বারাণসী থেকে আসা পুরোহিতরা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
কঠোর নিরাপত্তায় মোড়া
অযোধ্যা এখন কঠোর নিরাপত্তায় মোড়া। বস্তুত লখনউ থেকে অযোধ্যা যেতে গেলেই কিছুটা দূর পর পর পুলিশের ব্যারিকেড। যাঁরা যাচ্ছেন, পরিচয়পত্র দেখিয়ে যেতে হচ্ছে। নাম লিখে রাখা হচ্ছে। শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তায় কোনো ফাঁক রাখা হচ্ছে না।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
হলুদের ছোঁয়া
অযোধ্যায় এখন নজর কাড়ছে হলুদ রং। প্রধানমন্ত্রী যে পথ দিয়ে যাবেন, তাতে রয়েছে হলুদ তোড়ন। দুইপাশে হলুদ পতাকা। কিছু বাড়িতেও পড়েছে হলুদের পোচ। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের দাবি, পুরসভা এই কাজ করেছে জ্যোতিষী ও বিশেষজ্ঞদের কথা মেনে। হলুদ না কি শক্তির প্রতীক। শুধু হলুদ নয়, অযোধ্যায় এখন রং-এর মেলা। হলুদ ও গেরুয়া তো আছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে সবুজ, নীল, মেরুন সহ একাধিক রং।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
এক লাখ ১১ হাজার লাড্ডু
ভূমিপুজো উপলক্ষে তৈরি হচ্ছে এক লাখ ১১ হাজার লাড্ডু। ভূমিপুজো শেষ হলেই যা বিলি করা হবে। ফলে অযোধ্যায় লাড্ডুর কারিগররা চূড়ান্ত ব্যস্ত। দেশি ঘি, বেসন ও চিনি সহযোগে বানানো হয় এই লাড্ডু।
ছবি: IANS
বিশেষ কৌটায় লাড্ডু বিলি
লাড্ডু বিলি করা হবে বিশেষ টিফিন কৌটায়। করোনার কারণে অযোধ্যাবাসীরা বাড়িতে বসে টিভিতেই অনুষ্ঠান দেখবেন। তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারে লাড্ডুর কৌটো।
ছবি: IANS
সেজে উঠেছে অযোধ্যা
সেজে উঠেছে অযোধ্যা। ঝকঝকে রাস্তা। অনেক রাস্তা চওড়া হয়েছে। নতুন করে পিচ পড়েছে। চারদিকে পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন। রাতে সরযূর তীরে বাড়ি ও মন্দির নানা রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে। অন্য তীর থেকে দেখলে বোঝা যায়, কতটা রঙিন করে তোলা হয়েছে অযোধ্যাকে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
9 ছবি1 | 9
তিনি জানিয়েছেন, ''শাস্ত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, মন্দিরের কাজ সম্পূর্ণ না হলে তার উদ্ঘাটন করা যায় না। এত তাড়াহুড়ো করার কোনো কারণ নেই। অসমাপ্ত মন্দিরে ঈশ্বরের মূর্তি স্থাপনের পরিকল্পনা ঠিক নয়। সবচয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, মন্দির অসমাপ্ত থাকা অবস্থায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।''
পুরীর শঙ্করাচার্যের বক্তব্য
পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী জানিয়েছেন, তিনি তার পদের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন। তিনি বলেছেন, ''আমি সেখানে গিয়ে কী করব? মোদীজি উদ্বোধন করবেন, মূর্তি ছোঁবেন, আর আমি সেখানে দাঁড়িয়ে হাততালি দেব?''
টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, পুরীর শঙ্করাচার্য জানিয়েছেন, ''রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠান পুরোটাই রাজনৈতিক শো হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন আসছে বলে এরকম একটা ইভেন্ট করা হচ্ছে। যখন মন্দির নির্মাণের কাজ চলছে, তখন মন্দিরের উদ্বোধনে আমি সায় দিতে পারিনি। তাই সেখানে যাচ্ছি না।''
গুজরাটের দ্বারকাপীঠের মন্ত্রী ব্রক্ষ্মচারী নরয়ানন্দ আউটলুককে বলেছেন, ''মন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে শঙ্করাচার্যর কোনো আপত্তি নেই। তিনি খুশি। তবে তাকে বেশ কিছু প্রটোকল অনুসরণ করতে হয়। আর সেসময় তার আগে থেকে নির্ধারিত কিছু সূচি আছে। দ্বারকাতেও আছে। তাই তিনি অযোধ্য়া যতে পারবেন না।''
মুসলিম শিল্পীর গড়া রামমূর্তি শোভা পাবে অযোধ্যার রাম মন্দির চত্বরে
05:35
যাচ্ছেন না কংগ্রেস নেতারা
কংগ্রেস জানিয়ে দিয়েছে, তাদের কোনো নেতা অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিন যাবেন না। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সংসদীয় দলের চেয়ারম্যান সোনিয়া গান্ধী ও লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, তারা কেউই অযোধ্যায় যাবেন না।
কংগ্রেস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ''ধর্ম হলো মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু বিজেপি-আরএসএস এটাকে একটা রাজনৈতিক ইভেন্ট বানিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে অসমাপ্ত মন্দিরের উদ্বোধন করা হচ্ছে। কংগ্রেস শ্রীরামকে শ্রদ্ধা করে। ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়কেও তারা মানে। কিন্তু আরএসএস-বিজপি ইভেন্টে তারা যাবে না।''
তিন রাজ্যে ছুটি
আগামী ২২ জানুয়ারি রামমন্দির উদ্বোধন ও শ্রীরামের মূর্তির প্রাণপ্রতিষ্ঠার দিনে ছুটি ঘোষণা করেছে ভারতের তিন রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, অসম ও ছত্তিশগড়। তিনটি রাজ্যই বিজেপি শাসিত।
সারা দেশে তো বটেই, নিউ ইয়র্কের টাইম স্কোয়ারেও রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠান লাইভ দেখা যাবে।