অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণ শুরু হওয়ার পর এবারই প্রথম উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন। যোগী আদিত্যনাথ সেখান থেকেই লড়তে চেয়েছিলেন।
বিজ্ঞাপন
১০ ফেব্রুয়ারি সাত পর্বে শুরু হবে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। এবারের উত্তরপ্রদেশে ভোটের হাওয়া অনেকটাই ঘুরপাক খাচ্ছে ধর্মের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম বিধানসভা নির্বাচন ভারতের অন্যতম বৃহত্তম রাজ্যের। শুধু অযোধ্যাই নয়, বারাণসী, মথুরার মন্দির-মসজিদ বিতর্কও এবারের ভোটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। স্বভাবতই মনে করা হয়েছিল, এই পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশ বিজেপির কাণ্ডারি তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যা থেকে লড়বেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি সেখান থেকে লড়ছেন না। দাঁড়াবেন তার পুরনো জায়গা গোরক্ষপুর থেকেই। গোরক্ষপুর আর্বান আসনে বিজেপির প্রার্থী তিনি।
কেন অযোধ্যা নয়
বিজেপির অন্দরের বার্তা, শেষপর্যন্ত অযোধ্যা থেকে লড়তে চেয়েছিলেন যোগী। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘ঠিক যে কারণে নিজের রাজ্য গুজরাত ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাশী থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়েন, ঠিক সে কারণেই নিজের গোরক্ষপুর ছেড়ে অযোধ্যা থেকে লড়তে চেয়েছিলেন যোগী। মেরুকরণের ভোটে যোগীর অযোধ্যা থেকে দাঁড়ানো অবশ্যই একটি স্টেটমেন্ট হতো।’’
অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজো
অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে। পাঁচ অগাস্ট ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রুপোর ইট প্রতিষ্ঠা করবেন গর্ভগৃহে।
ছবি: AFP/S. Kanojia
আমন্ত্রিত ১৭৫ জন
করোনাকালে এই অনুষ্ঠান করা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। মন্দিরের পুরোহিত করোনায় আক্রান্ত। অমিত শাহেরও করোনা হয়েছে। কিছু নিরাপত্তা রক্ষীরও। তাই নিমন্ত্রিতের সংখ্যা কাটছাঁট করে ১৭৫-এ নামিয়ে আনা হয়েছে। মূল মঞ্চে থাকার কথা পাঁচজনের। প্রধানমন্ত্রী, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যপাল, আরএসএস প্রধান এবং ট্রাস্টের প্রধান নিত্যগোপাল দাসের। বাকিরা সামনে দূরত্ব বজায় রেখে বসবেন।
ছবি: IANS
মুসলিম অতিথি
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন মামলাকারী ইকবাল আনসারি। আমন্ত্রিতদের মধ্যে তাঁকেই প্রথম কার্ড পাঠানো হয়। আনসারি জানিয়েছেন, তিনি অবশ্যই যাবেন। মামলার রায় এসে গেছে। বিরোধ এখন অতীতের ঘটনা। শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ওয়াসিম রিজভি এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জুফার ফারুকিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ছবি: IANS
সারা দেশ থেকে জল ও মাটি
ভূমিপুজো অনুষ্ঠানের জন্য দেশের সব প্রধান নদী থেকে জল এসেছে অযোধ্যায়। এসেছে ভারতের বিভিন্ন তীর্থস্থানের মাটি। অযোধ্যার পাশ দিয়ে বয়ে চলা সরযূর জল তো আছেই। ভূমিপুজোর পর মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে। মন্দির হবে তিন তলা। গর্ভগৃহের উপর থাকবে শিখর, যা ১৬১ ফুট উঁচু। পাঁচটি গম্বুজ থাকবে। পুরো মন্দির হবে পাথরের তৈরি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
আবার ২৮ বছর পর
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এই প্রথমবার অযোধ্যায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আঠাশ বছর আগে তিনি অযোধ্যায় গিয়েছিলেন মুরলী মনোহর জোশীর সঙ্গে। ভাষণও দিয়েছিলেন। তারপর আর যাননি। এ বার প্রথমে তিনি যাবেন হনুমান গড়ির মন্দিরে। রামের আগে বজরঙ্গবলীর পুজো দিতে হয়, এই রীতি মেনে সেখানে পুজো দিয়ে যাবেন মূল অনুষ্ঠানে। ভূমিপুজো করবেন বারাণসী থেকে আসা পুরোহিতরা।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
কঠোর নিরাপত্তায় মোড়া
অযোধ্যা এখন কঠোর নিরাপত্তায় মোড়া। বস্তুত লখনউ থেকে অযোধ্যা যেতে গেলেই কিছুটা দূর পর পর পুলিশের ব্যারিকেড। যাঁরা যাচ্ছেন, পরিচয়পত্র দেখিয়ে যেতে হচ্ছে। নাম লিখে রাখা হচ্ছে। শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তায় কোনো ফাঁক রাখা হচ্ছে না।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
হলুদের ছোঁয়া
অযোধ্যায় এখন নজর কাড়ছে হলুদ রং। প্রধানমন্ত্রী যে পথ দিয়ে যাবেন, তাতে রয়েছে হলুদ তোড়ন। দুইপাশে হলুদ পতাকা। কিছু বাড়িতেও পড়েছে হলুদের পোচ। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের দাবি, পুরসভা এই কাজ করেছে জ্যোতিষী ও বিশেষজ্ঞদের কথা মেনে। হলুদ না কি শক্তির প্রতীক। শুধু হলুদ নয়, অযোধ্যায় এখন রং-এর মেলা। হলুদ ও গেরুয়া তো আছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে সবুজ, নীল, মেরুন সহ একাধিক রং।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
এক লাখ ১১ হাজার লাড্ডু
ভূমিপুজো উপলক্ষে তৈরি হচ্ছে এক লাখ ১১ হাজার লাড্ডু। ভূমিপুজো শেষ হলেই যা বিলি করা হবে। ফলে অযোধ্যায় লাড্ডুর কারিগররা চূড়ান্ত ব্যস্ত। দেশি ঘি, বেসন ও চিনি সহযোগে বানানো হয় এই লাড্ডু।
ছবি: IANS
বিশেষ কৌটায় লাড্ডু বিলি
লাড্ডু বিলি করা হবে বিশেষ টিফিন কৌটায়। করোনার কারণে অযোধ্যাবাসীরা বাড়িতে বসে টিভিতেই অনুষ্ঠান দেখবেন। তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারে লাড্ডুর কৌটো।
ছবি: IANS
সেজে উঠেছে অযোধ্যা
সেজে উঠেছে অযোধ্যা। ঝকঝকে রাস্তা। অনেক রাস্তা চওড়া হয়েছে। নতুন করে পিচ পড়েছে। চারদিকে পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন। রাতে সরযূর তীরে বাড়ি ও মন্দির নানা রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে। অন্য তীর থেকে দেখলে বোঝা যায়, কতটা রঙিন করে তোলা হয়েছে অযোধ্যাকে।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R. Kumar Singh
9 ছবি1 | 9
বিজেপির আরেক কেন্দ্রীয় নেতা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, যোগী চাইলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যোগীকে অযোধ্যা থেকে লড়তে দিতে চাননি। তার সবচেয়ে বড় কারণ, অযোধ্যা আসনটি যোগীর জন্য কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে বিজেপি থিংকট্যাঙ্কের যথেষ্ট সংশয় আছে। সে কারণেই তাকে গোরক্ষপুর থেকে লড়ার পরামর্শই দেওয়া হয়েছে। বস্তুত, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশের দাবি, পরামর্শ নয়, যোগীকে কার্যত এই নির্দেশই দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশ্যে অবশ্য এবিষয়ে কেউ কোনো কথা বলছেন না। বরং আসরে নামানো হয়েছে অযোধ্যা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ৮৪ বছরের আচার্য সত্যেন্দ্র দাসকে। সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, যোগী আদিত্যনাথের অযোধ্যা থেকে দাঁড়ানো উচিত হবে কি না, এ বিষয়ে ‘রামলালা’র কাছে জানতে চেয়েছিলেন তিনি। রামলালা নির্দেশ দিয়েছেন, যোগীর সেখান থেকে দাঁড়ানো উচিত হবে না। উল্লেখ্য, রামলালা অযোধ্যা মন্দিরের মূল বিগ্রহ।
আচার্যের দাবি, মন্দির তৈরির জন্য বেশ কিছু অযোধ্যাবাসীর জমি নেওয়া হয়েছে। ফলে সকলে যোগীকে ভোট দিতে না-ও পারেন। সে কারণেই তিনিও যোগীকে অযোধ্যায় না দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অযোধ্যার মুসলিম সম্প্রদায়ও যে বিজেপিকে ভোট দেবে না, তা মোটামুটি স্পষ্ট। ফলে সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ভোটে দাঁড়ানো মোটেই ঠিক হতো না। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যে ভাষায় অযোধ্যার প্রধান পুরোহিত বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করেছেন তা অভূতপূর্ব। এবং এই ব্যাখ্যা থেকেই স্পষ্ট, শুধু অযোধ্যা নয়, গোটা উত্তরপ্রদেশেই বিজেপির লড়াই এবার খুব সহজ নয়।