সুন্নি-শিয়া সংঘাত ইরাকের রামাদি শহরকে ইসলামিক স্টেট মুক্ত করার কাজ জটিল করে তুলছে৷ ডয়চে ভেলের রাইনার জলিচ মনে করছেন, এই সংঘাত পুরো আরব বিশ্বকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
পেন্টাগন মুখপাত্র কর্নেল স্টিভ ওয়ারেন মনে করেন, রামাদির পতন আইএস এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবশ্যই একটি প্রতিবন্ধকতা৷ তবে এটাকে বেশি বড় করে দেখার কিছু নেই৷ কারণ রামাদিকে আবার আইএস এর নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে আনা হবে৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও আশা করছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রামাদি ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে৷
সামরিক শক্তিমত্তার দিকে দিয়ে বিবেচনা করলে হয়ত এই দুজন ঠিকই বলছেন৷ গত আট মাস ধরে আকাশ থেকে চালানো অভিযানের কারণে আইএস যে দুর্বল হয়ে পড়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ এই জঙ্গিদের অবৈধ আয়ও সীমিত হয়ে পড়েছে৷ ফলে ইতিমধ্যে কোবানি ও টিকরিট তাদের হাতছাড়া হয়ে গেছে৷ এবং সম্ভবত রামাদিও তারা বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে না৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, কিসের বিনিময়ে এই সাফল্য আসবে?
আইএস বিরোধী লড়াইয়ের আঁচ জার্মানিতে
গত জুন মাসে ইরাকের মোসুল দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট (আইএস বা আইসিস)৷ চরমপন্থি ইসলামি সংগঠনটির লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যের একটা অংশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা৷ এদিকে আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আঁচ লেগেছে জার্মানিতেও৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
জার্মানিতে সংঘর্ষ
সুদূর ইরাক ও সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিদের তৎপরতার আঁচ জার্মানিতেও দেখা যাচ্ছে৷ উত্তরের হামবুর্গ ও সেলে শহরে মঙ্গলবার (০৭.১০.১৪) কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে উগ্রপন্থি মুসলমানদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Markus Scholz
গনসচেতনতার উদ্যোগে বাধা
জার্মানিতে বসবাসরত কুর্দি ও ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের তৎপরতা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়াতে গত কয়েক মাস ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করেছে৷ কখন উগ্রপন্থিরা তাদের বাধা দিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/Alexander Koerner
কোবানিতে তীব্র লড়াই
এদিকে সিরিয়ার কোবানি বা আইন আল-আরব শহরে আইএস জঙ্গিদের ব্যাপক হামলা চলছে৷ প্রাণ বাঁচাতে এক লাখেরও বেশি সিরীয় কুর্দি এলাকা ছেড়েছে৷ অধিকাংশই আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী দেশ তুরস্কে৷ আইএস জঙ্গিদের প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কুর্দিদের আধা সামরিক বাহিনী ওয়াইপিজি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/EPA/SEDAT SUNA
আপাতত রক্ষা
কুর্দি এই নারী তাঁর দুই মেয়েকে নিয়ে আইন আল-আরব থেকে পালিয়ে এসেছেন৷ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহরটিতে আইএস-এর হামলা তীব্র হওয়ার পরপরই তাঁরা তুরস্কে আশ্রয় নেন৷
ছবি: DW/Alice Martins
আতঙ্ক
তখনও আইন আল আরব সীমান্তে চলছে তীব্র লড়াই৷ এই কুর্দি পরিবার আইন আল-আরব থেকে এসে তুরস্কের সীমান্তে অপেক্ষা করছে৷ ইরাকে কুর্দি নারীদের আইএস যেভাবে তুলে নিয়ে বিক্রি করেছে, তাড়াতাড়ি পালাতে না পারলে তাঁদেরও একই পরিণতি হতে পারে এই আতঙ্ক গ্রাস করেছে তাঁদের৷
ছবি: DW/Alice Martins
অসহায়ত্ব
তুরস্কেও ভালো নেই আইন আল-আরব ছেড়ে আসা কুর্দিরা৷ খাবারদাবার, এমনকি খাওয়ার পানিও ঠিকমতো জোটে না৷ একটি সংগঠন তাই চাঁদা তুলে পানির বোতল কিনে এনে বিতরণ করছে শরণার্থীদের মাঝে৷
ছবি: DW/Alice Martins
দীর্ঘ অপেক্ষা
প্লাস্টিকের ব্যাগে কিছু খাবার নিয়ে এসেছেন একজন৷ আইন আল-আরব ছেড়ে আসা সিরীয়দের সে খাবারগুলো দিতে চান৷ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে্ তুরস্কের সেনাবাহিনী৷ তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে৷ ওদিকে খাবারের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে শরণার্থীরা৷
ছবি: DW/Alice Martins
যাত্রী চাই
সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে তুর্কি সরকার৷ এক মিনিবাস চালক তাই যাত্রীর অপেক্ষায়৷ শরণার্থীদের কেউ যদি তাঁর মিনিবাসে ওঠেন, তাতে নিজের তো সামান্য কিছু আয় হবেই, শরণার্থীদেরও উপকার হবে৷ জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ লাখ সিরীয় তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে৷
ছবি: DW/Alice Martins
মধ্যপ্রাচ্যে কর্তৃত্ব চায় আইএস
আন্তর্জাতিক ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে আইএস বা আইসিস-এর একসময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল৷ ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর দিকে ইরাকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই চলছে তখনই আইএস-এর জন্ম৷ সংগঠনটির লক্ষ্য সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, ফিলিস্তিন এবং জর্ডান মিলিয়ে বেশ বড় একটা অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আইএস-এর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ আর ইরাকে নুরি আল-মালিকির সাবেক সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট বিদ্রোহীদেরই পাশে ছিল৷ সিরিয়ায় ন্যাশনাল কোয়ালিশনের মতো কিছু মধ্যপন্থি সংগঠনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে৷ তবে ওবামা সরকার এখন আইএস-এর বিরুদ্ধে৷ জঙ্গি সংগঠনটিকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Matthew Bruch
এবার আইন আল-আরব?
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত আইন আল-আরব সাধারণের কাছে ‘কোবানি’ নামেই পরিচিত৷ তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তের এ শহরের একটা অংশ এখন আইএস-এর দখলে৷ এবার কি তবে আইন আল-আরবও দখল করে নেবে আইএস? তারপর?
ছবি: Aris Messinis/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
মানুষের প্রাণের বিনিময়ে
সবসময়ের মতো এ ধরনের সংঘাতের মূল্য চোকাতে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয় মানুষের জীবন৷ রামাদিতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০০ নারী ও পুরুষের প্রাণ গেছে৷ এছাড়া শহর ছাড়া হয়েছে আরও প্রায় ২৫ হাজার মানুষ৷ আইএস যখন তাদের চোখে তথাকথিত ‘বিশ্বাসঘাতক'দের হত্যা করা শুরু করবে তখন এই সংখ্যা আরও বাড়বে৷
আরব বিশ্ব এমন একটি অঞ্চল যেখানে ক্ষমতা দখল সহ সংঘাত, রক্তপাত ও প্রতিশোধপরায়ণ হওয়ার যুক্তি হিসেবে সুন্নি-শিয়া সংঘাতকে কাজে লাগানো হয়৷ এমন জায়গায় বর্তমান পরিস্থিতি যেন আগুন নিয়ে খেলার মতো৷
যাই হোক, মনে হচ্ছে, নিকট অতীতে হয়ত ইরাক, এমনকি সিরিয়া থেকেও আইএসকে সরানো যাবে৷ কিন্তু তারপরও কি ঐ অঞ্চলে শান্তি আসবে? আইএস এর মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর হুমকি সবসময় থেকেই যাবে৷ কারণ শিয়া-সুন্নি সংঘাতের মতো বিষয়গুলো কীভাবে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানো যায় তা তারা ভালো করেই জানে৷
ধর্মীয় মতবাদ ও উপজাতি ভিত্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের কারণে একের পর এক আরব রাষ্ট্রের পতন হচ্ছে এবং তা বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই৷
প্রয়োজন আঞ্চলিক সহযোগিতা
পরিস্থিতির উন্নয়নে আরব রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে এবং এর সঙ্গে ইরান ও তুরস্কের মতো নন-আরব রাষ্ট্রগুলোকে যুক্ত করতে হবে৷ এ ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক মান উন্নয়নের চেষ্টা করতে হবে৷ ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলো ঐসব দেশের তরুণদের আর আকৃষ্ট করতে পারবে না৷ এছাড়া আরব বিশ্বের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে ধর্ম ও উপজাতি ভিত্তিক বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে হবে, যেন জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো এর সুবিধা নিতে না পারে৷