1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রামুর হামলা এবং ফেসবুক

৩ অক্টোবর ২০১২

রাতের আধারে বৌদ্ধ বসতিতে হামলা৷ মন্দির ভাঙচুর, বৌদ্ধদের ঘরে আগুন৷ বাংলাদেশের কক্সবাজারের রামুতে শনিবার রাতে ঘটে গেল তাণ্ডব৷ পঁচিশ হাজার মানুষ নাকি বৌদ্ধদের উপর হামলায় অংশ নিয়েছিল৷

ছবি: AFP/Getty Images

শনিবার রাতে রামুতে হামলায় অংশ নিয়েছিল ‘পঁচিশ হাজার' মানুষ৷ বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে এই সংখ্যা৷ আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থাগুলোও জানিয়েছে, কয়েক হাজার মানুষ বৌদ্ধদের উপর হামলায় অংশ নেয়৷

আক্রমণকারীদের এই সংখ্যাটির দিকেই আঙুল তুলেছেন ব্লগার ইমতিয়াজ মাহমুদ৷ আমরাবন্ধু ব্লগে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রথমত ফেসবুকে একটা কিছু পোস্ট হয়েছে সেটা দেখে রামুতে এত মানুষ এইভাবে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, এটা আমি বিশ্বাস করব না৷ দেশ যতই ডিজিটাল হোক, রামুতে ফেসবুকের এত ইয়ে হয়েছে সেটা আমাকে বলতে আসবেন না৷ দ্বিতীয়ত: রামু বাজারে এতগুলি মানুষ জড়ো করা মোটামুটি একটা কঠিন কাজ৷ দুয়েকদিন সময় না দিলে শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়া গেলেও রামু বাজারে মধ্যরাতে একসাথে পঁচিশ হাজার শক্ত সমর্থ পুরুষ মানুষ জড়ো করা যাবে না৷''

ইমতিয়াজ মাহমুদের নিবন্ধ অনুযায়ী, বৌদ্ধ মন্দিরে এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত এবং এটা শুধুমাত্র ফেসবুকে একটি ছবি ট্যাগের ভিত্তিতে নয়৷ এই মত প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন যুক্তিও দেখিয়েছেন তিনি৷ পুরো বিষয়টিকে নিবন্ধে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এই ব্লগার৷

ব্লগাররা ইতিপূর্বেও বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ প্রদর্শন করেছেনছবি: DW

ব্লগ ব্ল্যাক আউট

কমিউনিটি ব্লগ সাইট আমারব্লগ ডটকম বৌদ্ধদের উপর হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক ব্লগ ব্ল্যাক আউট পালন করেছে৷ এই প্রসঙ্গে আমার ব্লগের সঞ্চালক সুশান্ত দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘ব্লগাররা এমনভাবে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিল, যাতে সবাই বুঝতে পারে, আমরা তাদের (বৌদ্ধদের) জন্য কিছু একটা করেছি৷ সঙ্গে সঙ্গে আমরা কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করলাম এবং সবাই বললো আমরা ২৪ ঘণ্টা ব্লগে কিছুই লিখবো না৷ এটাই আমাদের প্রতিক্রিয়া৷''

শুরুতে ২৪ ঘণ্টা ব্লগ ব্ল্যাক আউটের ঘোষণা প্রদান করলেও পরে তা কমিয়ে ছয় ঘণ্টা করে আমার ব্লগ কর্তৃপক্ষ৷ এই প্রসঙ্গে সুশান্ত বলেন, ‘‘প্রথমে ২৪ ঘণ্টার পরিকল্পনা ছিল আমাদের, পরবর্তীতে আমরা ব্লগারদের অনুরোধে ছয় ঘণ্টা ব্ল্যাক আউট পালন করেছি৷''

প্রসঙ্গত, রামুতে বৌদ্ধদের উপর হামলার পরপরই এই ঘটনার পেছনে বিরোধী দলের হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত প্রদান করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর৷ কোনো গ্রেপ্তার ছাড়া একজন মন্ত্রীর এধরনের তাৎক্ষণিক মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন সুশান্ত৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি, ব্লগাররা কোনোভাবেই আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রাথমিক মন্তব্য ভালোভাবে নেয় নি৷ কারণ, উনি প্রথমে বলেছেন, বিএনপি'র এমপি এটার সঙ্গে জড়িত৷ ভালো কথা৷ উনি যদি সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করতেন, সেটা অবশ্যই ভালো একটি কাজ হতো৷ কিন্তু উনি সেটা করেননি৷ যেহেতু উনি শুধু প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, কোনো পদক্ষেপ নেননি, সেজন্য ব্লগাররা, বিশেষ করে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা কেউই সন্তুষ্ট নন৷''

যে ফেসবুক থেকে নাকি সব কিছুর সূচনাছবি: picture-alliance/dpa

ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড়

রামুতে বৌদ্ধদের উপর হামলার প্রতিবাদে ফেসবুকেও সরব ছিলেন অনেকে৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এই বিষয়ে অসংখ্য মতামত জানিয়েছেন আমাদের শ্রোতা পাঠকরা৷ রাসেল শিকদার লিখেছেন, ‘‘আমার মতে এ ধরণের হামলা করা যুক্তি যুক্ত হয় নি৷ এক জন খারাপ হতে পারে তাই বলে তো সবাই খারাপ না৷ আমার মনে হয় এর সাথে অন্য কোনো একটা শক্তি কাজ করছে৷''

বাঁধন রুদ্র নামের অপর এক পাঠক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের উপর এরকম অত্যাচার করা মোটেও ঠিক হয়নি৷ বিষয়টি সমঝোতার মাধ্যমে ও সমাধান করা যেত৷ গণতান্ত্রিক এই দেশে কারো উপর হামলা বা অত্যাচার করার অধিকার কারো নেই৷''

সাংবাদিক, ব্লগার আরিফ জেবতিক ফেসবুকে আরো একটি বিষয় তুল ধরেছেন৷ তাঁর মতে, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ তিনি লিখেছেন, কোনো এক অদ্ভুত কারণে আমরা বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনকে এড়িয়ে যাচ্ছি, যে পরিমাণ মনোযোগ এই ইস্যুতে দেয়া দরকার মিডিয়া, সুশীল সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সে পরিমাণ মনোযোগ এখানে দেয়া হচ্ছে না৷ কিন্তু আমরা যতই অন্ধ হয়ে থাকি না কেন, প্রলয় রোধ করা যাবে না৷''

উল্লেখ্য, রামু এবং অন্যান্য অঞ্চলে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৪টি মামলা হয়েছে৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮৫ ব্যক্তিকে৷ এছাড়া রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজিবুল হককে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সরিয়ে দেয়া হয়েছে৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ