রামজন্মভূমি নিয়ে ভারতীয় রাজনীতি বহু দিনই সরগরম। এ বার তাতে নতুন মাত্রা দিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। দাবি করলেন, রাম নেপালি।
বিজ্ঞাপন
ভারতের রাজনৈতিক আবর্তে রামচন্দ্রকে নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। পৌরাণিক এই চরিত্রকে নিয়ে ভারতের মূলস্রোতের রাজনীতিতে বহু উত্থানপতন ঘটেছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটেছে। এবং পরবর্তীকালে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে মামলা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও সেই বিতর্ক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়নি। কিন্তু নেপালের কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী সেই বিতর্ককে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিলেন। দাবি করলেন, রাম নেপালি ছিলেন। তাঁর জন্মস্থানও নেপালেই, ভারতে নয়।
সোমবার নিজের বাসভবনে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্ম ওলি। সেখানেই তিনি দাবি করেন, রামজন্মভূমি হিসেবে যে অযোধ্যার কথা বলা হয়, তা আসলে ভারতে নয়, নেপালে। রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে বীরগঞ্জের কাছে অযোধ্যা বলে একটি জায়গা আছে। এরপরেই রামকে নেপালি বলে দাবি করেন তিনি। এখানেই থেমে থাকেননি ওলি। তাঁর অভিযোগ, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি সমস্ত ক্ষেত্রেই ভারত নেপালের উপর দাদাগিরি করে। সে কারণেই নেপালের সংস্কৃতিকেও নিজের বলে দাবি করে। ওলির স্পষ্ট বক্তব্য, নেপালের ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।
বাবরি মসজিদ: প্রতিষ্ঠা, ভাঙচুর, মামলা, রায়
হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের জন্মস্থান, রাম মন্দির, নাকি মোগল সম্রাট বাবরের আমলে নির্মিত একটি মসজিদ? বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৩ সাল থেকে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ চলেছে, যা চরমে ওঠে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বরে৷
ছবি: dpa - Bildarchiv
১৫২৮ সালে নির্মাণ
রামায়ণ-খ্যাত অযোধ্যা শহর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ফৈজাবাদ জেলায় অবস্থিত৷ তারই কাছে রামকোট পর্বত৷ ১৫২৮ সালে সেখানে সম্রাট বাবরের আদেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যে কারণে জনমুখে মসজিদটির নামও হয়ে যায় বাবরি মসজিদ৷ আবার এ-ও শোনা যায়, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের আগে এই মসজিদ ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান' বলেও পরিচিত ছিল৷
ছবি: DW/S. Waheed
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
বাবরি মসজিদ নিয়ে সংঘাত ঘটেছে বার বার৷ অথচ ফৈজাবাদ জেলার ১৯০৫ সালের গ্যাজেটিয়ার অনুযায়ী, ১৮৫২ সাল পর্যন্ত হিন্দু এবং মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ই সংশ্লিষ্ট ভবনটিতে প্রার্থনা ও পূজা করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. E. Curran
সংঘাতের সূত্রপাত
প্রথমবারের মতো হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত৷১৮৫৯ সালে ব্রিটিশ সরকার দেয়াল দিয়ে হিন্দু আর মুসলমানদের প্রার্থনার স্থান আলাদা করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran
হিন্দুদের দাবি
আওয়াধ অঞ্চলের বাবর-নিযুক্ত প্রশাসক ছিলেন মির বকশি৷ তিনি একটি প্রাচীনতর রাম মন্দির বিনষ্ট করে তার জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে হিন্দুদের দাবি৷
ছবি: AP
বেআইনিভাবে মূর্তি স্থাপন
১৯৪৯ সালের ২৩শে ডিসেম্বর – বেআইনিভাবে বাবরি মসজিদের অভ্যন্তরে রাম-সীতার মূর্তি স্থাপন করা হয়৷
ছবি: DW/S. Waheed
নেহরুর ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
রাম-সীতার মূর্তি স্থাপনের পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লভ পন্থকে চিঠি লিখে হিন্দু দেব-দেবীদের মূর্তি অপসারণ করার নির্দেশ দেন, তিনি বলেন ‘‘ওখানে একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে’’৷
ছবি: Getty Images
মসজিদের তালা খোলার আন্দোলন
১৯৮৪ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে৷ ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধীর সরকার ঠিক সেই নির্দেশই দেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
দুই সম্প্রদায় মুখোমুখি অবস্থানে
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে৷ ১৯৮৬ সালে মসজিদের তালা খুলে সেখানে পূজা করার অনুমতি প্রার্থনা করে হিন্দু পরিষদ৷ অন্যদিকে, মুসলমানরা বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করেন৷
ছবি: AP
‘রাম রথযাত্রা'’
১৯৮৯ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভিএইচপি বিতর্কিত স্থলটিতে (মন্দিরের) ‘শিলান্যাস'-এর অনুমতি পায়৷ ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবীণ নেতা লাল কৃষ্ণ আডভানি ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে দশ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ‘রাম রথযাত্রা'’ শুরু করেন৷
ছবি: AP
১৯৯২
১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর এল কে আডভানি, মুরলি মনোহর যোশি, বিনয় কাটিয়াসহ অন্যান্য হিন্দুবাদী নেতারা মসজিদ প্রাঙ্গনে পৌঁছান৷ ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি, শিব সেনা আর বিজেপি নেতাদের আহ্বানে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাবারি মসজিদে হামলা চালায়৷ ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা৷
ছবি: AFP/Getty Images
সমঝোতার উদ্যোগ
২০০২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী দু’পক্ষের সমঝোতার জন্য বিশেষ সেল গঠন করেন৷ বলিউডের সাবেক অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহাকে হিন্দু ও মুসলমানদের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়৷
ছবি: AP
শিলালিপি কী বলে
পুরাতাতত্বিক বিভাগ জানায়, মসজিদের ধ্বংসাবশেষে যে সব শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়, তা থেকে ধারণা করা হয়, মসজিদের নীচে একটি হিন্দু মন্দির ছিল৷ আবার ‘জৈন সমতা বাহিনী'-র মতে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের নীচে যে মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটি ষষ্ঠ শতাব্দীর একটি জৈন মন্দির৷
ছবি: CC-BY-SA-Shaid Khan
বিজেপি দোষী
বিশেষ কমিশন ১৭ বছরের তদন্তের পর ২০০৯ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দেয়৷ প্রতিবেদনে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপিকে দোষী দাবি করা হয়৷
ছবি: AP
এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তার রায়ে জানান, যে স্থান নিয়ে বিবাদ তা হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া উচিত৷ এক তৃতীয়াংশ হিন্দু, এক তৃতীয়াংশ মুসলমান এবং বাকি অংশ নির্মোহী আখড়ায় দেওয়ার রায় দেন৷ রায়ে আরো বলা হয়, মূল যে অংশ নিয়ে বিবাদ তা হিন্দুদের দেয়া হোক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হিন্দু ও মুসলমানদের আবেদন
হিন্দু ও মুসলমানদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের সেই রায় বাতিল করে৷ দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, বাদী বিবাদী কোনো পক্ষই জমিটি ভাগ করতে চান না৷
ছবি: AP
ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়
ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের কণ্টকিত ইতিহাসে বাবরি মসজিদে হামলা একটি ‘কলঙ্কিত অধ্যায়’৷ গুটি কয়েক হিন্দু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দিনটিকে সূর্য দিবস বলে আখ্যায়িত করলেও বেশিরভাগ ভারতীয় দিনটিকে ‘কালো দিন’ বলে উল্লেখ করেন৷ অনেকেই বলেন, এই ঘটনায় দেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি একেবারে ভূলুন্ঠিত হয়েছিল৷
ছবি: AP
মন্দিরের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়
ভারতের অযোধ্যার এক বিতর্কিত জমি নিয়ে কয়েক দশক অপেক্ষার পর ৯ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত৷ রায়ে ওয়াকাফ বোর্ডের আর্জি এবং নির্মোহী আখড়ার জমির উপর দাবি দুটোই খারিজ করে দেন বিচারকরা৷ বিতর্কিত সেই জমিতে একটি ট্রাস্টের অধীনে মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত৷ পাশাপাশি, একটি মসজিদ গড়তে কাছাকাছি অন্য কোথাও মুসলমানদের পাঁচ একর জমি দিতেও বলা হয়েছে রায়ে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Armangue
17 ছবি1 | 17
দীর্ঘ দিন ধরে নেপালের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক ভারতের। নেপালের বহু বিষয়ে ভারত সরাসরি সাহায্য করে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে সেই নেপালের সঙ্গেই ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ তিক্ত হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভারত নেপাল সীমান্তে একটি রাস্তা উদ্বোধনের পর। নেপালের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ভারত যে রাস্তা বানিয়েছে তা নেপালের ভূখণ্ডে ঢুকে গিয়েছে। এরপরেই রাতারাতি নেপালের সংসদে দেশের মানচিত্র সংক্রান্ত একটি বিল পাশ করান ওলি। সেখানে ভারত-নেপাল সীমান্তের তিনটি জায়গাকে নেপাল নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ বলে চিহ্নিত করে। যা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। এর কিছু দিন পর দূরদর্শন ছাড়া ভারতের সমস্ত বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকেও নেপালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন ওলি। পুরো বিষয়টি নিয়ে নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যেও বিভেদ তৈরি হয়েছে। দলের প্রধান তথা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ড ওলির কাজকে সমর্থন করেননি। দলের মধ্যে খানিক একাই হয়ে পড়েছেন ওলি। তারই মধ্যে তাঁর এই নতুন বিবৃতি। যাকে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই রাজনৈতিক বলে মনে করছেন।
ইতিহাসের অধ্যাপক অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ''ওলির এই দাবি ঐতিহাসিক ভাবে অর্থহীন। ঠিক যেমন অর্থহীন রামকে নিয়ে গেরুয়া শিবিরের রাজনীতি। যে কোনও মহাকাব্যেরই একটা ব্যপ্তি থাকে। তার বিবিধ ভার্সন এবং ব্যাখ্যা। রামায়ণের ক্ষেত্রেও তা সত্য। রামের মতো পৌরাণিক চরিত্রকে নিয়েও তাই নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। শুধু তাই নয়, রামায়ণ অনুযায়ী রামের জন্ম অযোধ্যায়। এখন যে জায়গাটিকে অযোধ্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তা গোরখপুরের কাছে। গোরখপুর থেকে নেপালের সীমান্ত খুব বেশি নয়। ওলি যে জায়গার কথা বলছেন, তাও সীমান্ত থেকে খুব দূরে হওয়ার কথা নয়। যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন নেপাল, ভারতের আলাদা অস্তিত্ব ছিল না। ফলে সবটাই মিলেমিশে ছিল। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক মানচিত্র দিয়ে মহাকাব্যের ব্যাপ্তিকে ধরা অসম্ভব। ফলে এই কথাগুলোরই কোনও অর্থ হয় না। এবং এই বিষয়গুলি নিয়ে তর্ক করারও মানে হয় না।''
ইতিহাস যা-ই বলুক, রাম-রাজনীতি চলছে এবং চলবে। ওলির বক্তব্যে তাই ক্ষুব্ধ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। অযোধ্যা মামলায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অন্যতম পক্ষ ছিল। রামলালার মামলাও তাদেরই করা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় সভাপতি বিষ্ণু সদাশিব কোকজে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''ওলি যা বলেছেন, তা আমরা কোনও দিন শুনিনি, পড়িওনি। একজন কমিউনিস্ট নেতার কাছ থেকে রামায়ণের কথা আমরা শুনতেও চাই না। তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ সব কথা বলেছেন।''
বাবরি মসজিদ ভাঙার ২৭ বছর: প্রতিবাদ অব্যাহত
অযোধ্যা মামলার রায়দানের পরেও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদ অব্যাহত৷ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভাঙা হয়েছিল মসজিদের কাঠামো৷ প্রতিবারের মতো এ বারেও দিল্লি থেকে কলকাতা, সর্বত্রই হলো মিটিং মিছিল প্রতিবাদসভা৷
ছবি: DW/S. Ghosh
জামা মসজিদে প্রতিবাদ
জুম্মার নমাজের পরে দিল্লি জামা মসজিদের বাইরে অনুষ্ঠিত হয় বিশাল প্রতিবাদ সভা৷ দিল্লির মাটিয়ামহলের প্রাক্তন বিধায়ক শোয়েব ইকবাল সেখানে বলেন, যাঁরা মসজিদ ভাঙলেন তাঁদের শাস্তি কবে হবে?
ছবি: DW/S. Ghosh
প্রতিবাদে ছোটরাও
জামা মসজিদের প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়েছিল ছোটরাও৷ তাদেরও হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা 'বিচার চাই'৷
ছবি: DW/S. Ghosh
প্রতিবাদ মিছিল
সভার শেষে মহল্লায় মহল্লায় মিছিলও করেও প্রতিবাদকারীরা৷ তাতে যোগ দেন রাস্তার দুধারে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষ৷
ছবি: DW/S. Ghosh
মান্ডি মিছিল
বেশ কয়েকটি মুসলিম সংগঠন এবং মানবাধিকার সংগঠন মান্ডি হাউস থেকে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে৷ সেখানেও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে সরব হন আন্দোলনকারীরা৷
ছবি: DW/S. Ghosh
তোমার আমার পাপ
মান্ডি হাউসের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন বিশিষ্টজনেরাও৷ তাঁদের সকলেরই বক্তব্য, যে ভাবে মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল তা লজ্জার৷ পাপ৷
ছবি: DW/S. Ghosh
চলো যন্তরমন্তর
মান্ডি হাউস থেকে মিছিলকারীরা এ দিন পৌঁছে যান যন্তর মন্তর৷ জানিয়ে দেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান জানালেও, তাঁদের প্রতিবাদ বন্ধ হবে না৷ অভিযুক্তদের শাস্তি দিতেই হবে৷
ছবি: DW/S. Ghosh
পিছিয়ে নেই কলকাতাও
এ দিন দিল্লির মতোই কলকাতাতেও বিশাল মিছিল হয় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিবাদে৷ ১২টি সংগঠন এক সঙ্গে মিছিলে পা মেলান৷
ছবি: Debjani Chowbe
পাশে অনেকেই
বিজেপি দাবি করছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর অযোধ্যা নিয়ে আর কোনও কথা বলা উচিত নয়৷ কিন্তু বাম এবং কংগ্রেসের বক্তব্য, যাঁরা অন্যায় করেছিলেন, তাঁদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন বন্ধ হবে না৷
ছবি: DW/S. Ghosh
8 ছবি1 | 8
বিজেপি আরও কড়া ভাষায় ওলির বক্তব্যের নিন্দা করেছে। যুব বিজেপির অন্যতম সম্পাদক সৌরভ সিকদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''বেজিং যা বলতে বলছে, ওলি তাই বলছেন। চীন ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলিকে ভারতের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। ওলি সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন। তাই মানচিত্র বদলে, রামকে নেপালি বলে ভারতের সঙ্গে বিতর্ক তৈরির লাগাতার চেষ্টা চালাচ্ছেন।'' তাঁর আরও বক্তব্য, রামায়ণ বলে, সীতা মিথিলার মেয়ে। মিথিলা ভারত-নেপাল সীমান্তে সীতামড়ির কাছে। ফলে সীতাকে নেপালের বললে এত হইচই হতো না। কিন্তু অযোধ্যার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুললে বোঝা যায়, তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।
সিপিএমের প্রবীণ নেতা নীলোৎপল বসু অবশ্য এই বিতর্কে ঢুকতে রাজি নন। তাঁর বক্তব্য, রামায়ণের অসংখ্য ভার্সন। ঐতিহাসিকরা এ নিয়ে গবেষণা করতে পারেন। কিন্তু এর সঙ্গে রাজনীতি মেলানোর কোনও অর্থ হয় না। কমিউনিস্ট নেতা ওলি কেন রামরাজনীতির মধ্যে ঢুকলেন, সে বিষয়ে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি নীলোৎপলবাবু। যদিও বাবরি মসজিদ এবং রামজন্মভূমি বিতর্কে বরাবরই স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে এ দেশের বাম দলগুলি। বিষয়টি নিয়ে সংকীর্ণ রাজনীতির বরাবরই বিরোধিতা করেছে তারা।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, যে কায়দায় ভারতে রামজন্মভূমি চিহ্নিত করা হয়েছে, তা প্রশ্নাতীত নয়। একজন পৌরাণিক চরিত্র কী ভাবে আদালতে মামলা করেন, তা নিয়েও প্রচুর আলোচনা এবং জলঘোলা হয়েছে। কোনও পৌরাণিক চরিত্রের বাস্তব জন্মভূমি চিহ্নিত করা যায় কি না, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বহু বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছে। রামকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা নিয়েও আলোচনা কম হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালের প্রধানমন্ত্রী তথা কমিউনিস্ট নেতা ওলি যে মন্তব্য করেছেন, তা ইতিহাস চর্চার উদ্দেশ্যে করেননি, রাজনৈতিক অভিসন্ধি থেকেই করেছেন। ভারত-নেপাল বর্তমান সম্পর্কের প্রেক্ষিতেই এ কথা বলে বিতর্ক আরও একটু উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।