রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রশ্ন নেই: বেয়ারবক
১৫ জুলাই ২০২২
ইউক্রেনের একটি শহরে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় মৃত অন্তত ২৩ জন। অন্যদিকে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক বলেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে না।
বিজ্ঞাপন
বালিতে জি২০ বৈঠকে বসেছেন বিশ্বের ২০টি দেশের অর্থমন্ত্রী এবং অর্থসচিবেরা। বৃহস্পতিবার সেখানে রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সামনে প্রেসিডেন্ট পুটিনকে এক হাত নিয়েছেন মার্কিন মন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন। রাশিয়ার জন্য গোটা বিশ্ব আজ আর্থিক সংকটের মুখে বলে দাবি করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, জেনেট বলেছেন, যুদ্ধের নামে হাজার হাজার সাধারণ বেসামরিক মানুষের উপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া, যা এক কথায় বর্বরতা।
এর আগে উদ্বোধনী ভাষণে ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রীও যুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলেছেন। বলেছেন, যুদ্ধের জন্য বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হয়েছে, বিশ্ব এক ভয়াবহ আর্থিক মন্দার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর জন্য রাশিয়ার ঘাড়ে দায় চাপিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার হামলা
বৃহস্পতিবার রাতে ফের রাশিয়াকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে আক্রমণ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বিশ্বনেতাদের কাছে তার আবেদন, আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়াকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা হোক।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
বস্তুত, রাশিয়া ফের একটি ইউক্রেনের শহরে মিসাইল হামলা চালিয়েছে। তাতে অন্তত ২৩ জন বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে জেলেনস্কি জানিয়েছেন। মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা আছে। এখনো ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মৃতদেহ খোঁজা চলছে। ঘটনাটি ঘটেছে ভিনিতশিয়ায়।
এদিন একইসঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগও তুলেছেন জেলেনস্কি। আন্তর্জাতিক আদালতের বিশেষ ট্রাইবুনালে এবিষয়ে ইউক্রেন তাদের বক্তব্য জানাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বেয়ারবকের মন্তব্য
গ্যাস নেওয়ার জন্য জার্মানি কি রাশিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে? বিভিন্ন মহলে এ প্রশ্ন উঠেছে। বৃহস্পতিবার এক বক্তৃতায় জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক স্পষ্ট জানিয়েছেন, আপাতত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার কোনো প্রশ্নই নেই। তিনি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা শিথিল করলে জার্মানিকে বিভিন্ন তরফে ব্ল্যাকমেলের শিকার হতে হবে।
এদিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছেন বেয়ারবক। গোটা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটের জন্য তিনি রাশিয়াকে দাযী করেছেন।