সম্প্রতি সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে অ্যামেরিকা। তদন্তের আশ্বাস সাউথ আফ্রিকার।
বিজ্ঞাপন
গত ডিসেম্বর মাসে রাশিয়ার পতাকা লাগানো একটি জাহাজ সাউথ আফ্রিকার বন্দরে এসে দাঁড়ায়। তাতে অস্ত্র মজুত করে দেয় সাউথ আফ্রিকা। এরপর জাহাজটি রাশিয়ার দিকে রওনা হয়। এমনই অভিযোগ করেছে অ্যামেরিকা। ওয়াশিংটনে সাউথ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এবিষয়ে জানতে চেয়েছে অ্যামেরিকা। সাউথ আফ্রিকা এখনো এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
পুটিনের বিরুদ্ধে এক সংবাদপত্রের অভিনব লড়াই
ভিডিও গেমের সহায়তায় কি কখনো সংবাদ পরিবেশন করা যায়? একেবারে অসম্ভব মনে হলেও ফিনল্যান্ডের একটি সংবাদপত্র কিন্তু তা-ই করে দেখিয়েছে৷ রাশিয়ায় পৌঁছে দিয়েছে তারা ইউক্রেন যুদ্ধের খবর৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
ছবি: Helsingin Sanomat/Reuters
রাশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা
ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘যুদ্ধ’ বলে না রাশিয়া৷ ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর ভ্লাদিমির পুটিন বলেছিলেন, রাশিয়া ইউক্রেনে একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করেছে৷ তারপর থেকে ইউক্রেন যুদ্ধকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ হিসেবেই বর্ণনা করছে পুটিন প্রশাসন৷ রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমও সেই ‘নিয়ম’ মেনেই সংবাদ পরিবেশন করছে৷
ছবি: SPUTNIK via REUTERS
কাউন্টার-স্ট্রাইক দিয়ে পাল্টা আঘাত!
কাউন্টার-স্ট্রাইক আসলে একটি ভিডিও গেমের নাম৷ ২০১২ সালে এই গেমটি নিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রের ভাল্ভ কর্পোরেশন৷ খুব অল্প সময়ে প্রায় সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই শুটার গেম রাশিয়ার কিশোর, তরুণদেরও খুব প্রিয়৷ রুশ নাগরিকদের কাছে ইউক্রেন যুদ্ধের খবর পৌঁছে দিতে তাই এই ভিডিও গেমের সহায়তা নিয়েছে ফিনল্যান্ডের একটি দৈনিক৷
ছবি: Helsingin Sanomat/Reuters
হেলসিংগিন সানোমাট
সংবাদপত্রটির নাম হেলসিঙ্গিন সানোমাট৷ ফিনল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই দৈনিকই সংবাদ পরিবেশনে ভিডিও গেম ব্যবহার করে এখন সংবাদ শিরোনামে৷ ছবির এই মানুষটির নাম আন্তেরো মুক্কা৷ হেলসিঙ্গিন সানোমাটের এডিটর-ইন-চিফ তিনি৷
ছবি: Anne Kauranen/Reuters
হেলসিঙ্গিন সানোমাটের ব্যর্থ ‘অভিযান’
পুটিন সরকার রাশিয়ার গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের কিছুদিন পরই রাশিয়ার মানুষদের কাছে ইউক্রেনের খবর পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করে হেলসিঙ্গিন সানোমাট৷ কিন্তু রুশ ভাষায় লেখা সেসব খবর বেশিদিন রাশিয়ার মানুষের কাছে যেতে পারেনি৷ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই খবরগুলো ‘ব্লক’ করে দেয় রুশ কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Helsingin Sanomat/Reuters
সংবাদ পরিবেশনে কেন ভিডিও গেম?
স্বাভাবিক নিয়মে যে রাশিয়ায় ইউক্রেনের সংবাদ পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হওয়ার পর কী ভেবেছিল হেলসিঙ্গিন সানোমাট? বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে সে কথাই বলেছেন আন্তেরো মুক্কা, ‘‘ রাশিয়ায় গণমাধ্যম এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম৷ তবে মনে হচ্ছিল নতুন কোনো উপায়ে হয়ত রাশিয়ার মানুষদের জন্য ইউক্রেনের নির্ভরযোগ্য খবর পরিবেশন করা সম্ভব৷’’ আর সেই নতুন উপায়ের নামই এখন কাউন্টার-স্ট্রাইক৷
ছবি: Anne Kauranen/Reuters
যেভাবে নিষেধের দেয়াল ভাংলো হেলসিঙ্গিন সানোমাট
ফিনল্যান্ডের দৈনিকটি প্রথমে ইউক্রেনের স্লাভিচ শহরের একটি ম্যাপ তৈরি করে৷ ম্যাপটির নাম দেয়া হয় ‘ডি ভয়না’৷ রুশ ভাষায় ‘ভয়না’ শব্দের অর্থ যুদ্ধ৷ শহরের নাম ‘ডি ভয়না’ দিয়ে আসলে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহার না করে রুশদের কাছে যুদ্ধের খবরই পৌঁছে দেয় হেলসিঙ্গিন সানোমাট৷ ‘ডি ভয়না’র আসল কাজ ছিল এক গোপন কুঠুরিকে আড়াল করা যে কুঠুরিতে রয়েছে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ধ্বংসলীলা এবং নিষ্ঠুরতার অনেক খবর৷
ছবি: Helsingin Sanomat/Reuters
6 ছবি1 | 6
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সাউথ আফ্রিকা কোনো পক্ষ নেয়নি। বরং তারা মধ্যবর্তী অবস্থান নিয়েছে। কোনো পক্ষকেই ভোট দেয়নি। কিন্তু তারা গোপনে রাশিয়াকে সমর্থন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এবং সে কারণেই সম্পূর্ণ গোপনে তারা রাশিয়াকে অস্ত্র দিয়েছে বলে অ্যামেরিকার অভিযোগ।
অ্যামেরিকার দাবি, গত ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে সাউথ আফ্রিকার সবচেয়ে বড় নৌঘাঁটি সাইমন টাউনে রাশিয়ার পতাকা লাগানো একটি জাহাজ এসে দাঁড়ায়। অথচ জাহাজটির সেখানে দাঁড়ানোর কথা নয়। কারণ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সাউথ আফ্রিকা ট্রাকে করে অস্ত্র নিয়ে গিয়ে ওই জাহাজে ভর্তি করেছে বলে অ্যামেরিকা নিশ্চিত।
বিধ্বস্ত ইউক্রেনে যেমন কাটছে জীবন
কবে, কিভাবে শেষ হবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জানা নেই কারো৷ অনেকেই আক্রান্ত এলাকা থেকে সরে গিয়েছেন৷ অনেকে ছেড়েছেন ইউক্রেন৷ কিন্তু অনেকেই বিধ্বস্ত ইউক্রেনেই মৃত্যুর আশঙ্কা মাথায় নিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন৷ ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা৷
ছবি: VIOLETA SANTOS MOURA/REUTERS
ধ্বংসপ্রাপ্ত দালান
গালিনা স্লেপকোর বয়স ৬৪ বছর৷ এই বয়সে ভিটেমাটি ছেড়ে কোথাও গিয়ে নতুন জীবন শুরু করাটাও তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷ রাশিয়ার দখল করে নেয়া দনেৎস্ক অঞ্চলে তার এই বাড়িটির এক পাশের দেয়াল রাশিয়ার মর্টার শেলের আঘাতে ধসে গেছে৷ এই অবস্থাতেই তাকে কাটাতে হয়েছে শীতকাল৷
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে
পুরো ইউক্রেন যুদ্ধটাই যেন থেমে আছে বাখমুতে৷ কৌশলগতভাবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মর্যাদার লড়াইয়ের কারণে এই এলাকা দখলে নিতে চায় দুই পক্ষই৷ বাখমুতের চাসিভ ইয়ার গ্রামে এখনও হাতেগোণা কয়েকজন বাসিন্দা রয়ে গেছেন জীবনের ঝুঁকির তোয়াক্কা না করেই৷ তাদের একজনকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে৷
ছবি: Kai Pfaffenbach/REUTERS
মুহুর্মুহু বোমাবর্ষণ
যেকোনো সময় পালটে যেতে পারে পরিস্থিতি৷ দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুতে এখন চলছে চূড়ান্ত লড়াই৷ দুই পক্ষের সেনারাই দখল-পুনর্দখলের চেষ্টায় রত৷ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলের সুপারমার্কেটে এসে পড়েছে একটি মর্টার শেল৷ আগে এক হামলায় আহত এক নারীকে দেখা যাচ্ছে কান্না করতে৷ বাখমুতে এখন প্রতিটি মুহূর্তই জীবন-মরণের লড়াই৷
ছবি: ALEXANDER ERMOCHENKO/REUTERS
সরবরাহ সংকট
যুদ্ধের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট দেখা দিয়েছে৷ স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুৎ ও জলের মতো অতিপ্রয়োজনীয় সেবাও এখন বিলাসিতা৷ হাতের কাছে যা পাওয়া যায়, তা দিয়েই প্রয়োজন মিটিয়ে কোনোরকমে টিকে থাকার লড়াই করছেন বাসিন্দারা৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বিধ্বস্ত সামরিক বিমান থেকে ধাতব দ্রব্য নিয়ে যাচ্ছেন দুজন৷ সেটিকেই কোনো কাজে লাগানোর চিন্তা রয়েছে তাদের৷
ছবি: OLEKSANDR KLYMENKO/REUTERS
একটি রক্তাক্ত চশমা
এই ছবিটিই অনেক কথা বলে দেয়৷ কস্তিয়ানতিনিভকা নামের একটি আবাসিক এলাকায় ভয়াবহ বোমা হামলায় মারা যান অনেকেই৷ কেউ ছিলেন বাসায়, কেউ বাজারে, কেউ রাস্তায়৷ হয়তো একজন বাসিন্দার রক্তমাখা চশমা এখনও পড়ে রয়েছে মাঠের পাশে৷ পৃথিবীকে আর দেখা হবে না তার৷
ছবি: VIOLETA SANTOS MOURA/REUTERS
জ্বালানি সংকট
ঠিক পেছনেই একটি গাড়ি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে৷ এখন বাখমুতের রাস্তায় গাড়ি চালানো অনেক কারণেই আঁতকে ওঠার কারণ৷ একে তো জ্বালানি জোগাড় করাই কষ্ট ও ব্যয়সাধ্য৷ অন্যদিকে, যেকোনো সময় হতে পারে মর্টার বা বিমান হামলা৷ ফলে রাস্তায় বের হয়ে কেউই নিশ্চিত টার্গেটে পরিণত হতে চান না৷ ফলে দোকানে যেতেও বেশিরভাগের ভরসাই নিজের পা, বড়জোর বাইসাইকেল৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
ত্রাণ সহায়তা
প্রায় পুরো অঞ্চলই ধ্বংসপ্রায়৷ ফলে বাখমুতের সকল অফিস-আদালত, দোকানপাট প্রায় বন্ধ৷ যেসব গুটিকয়েক দোকান খোলা রয়েছে, অনেকেই সেখান থেকে জিনিস কেনার সামর্থ্য নেই৷ ফলে যেসব বাসিন্দা এখনও বাখমুতে রয়ে গেছেন তাদের অনেকের নির্ভর করতে হচ্ছে ত্রাণের ওপর৷ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা ঝুঁকি নিয়েই যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে ত্রাণ সরবরাহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: KAI PFAFFENBACH/REUTERS
জীবন-মৃত্যুর দোলাচল
এই ছবিটি খারকিভের৷ রাশিয়া দখলে নেয়ার পর ইউক্রেনের সেনারা আবার এই এলাকা পুনর্দখলে নিয়েছে৷ কিন্তু কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটি দখলে মরিয়া রুশবাহিনী৷ ফলে এখনও প্রায়ই বোমাবর্ষণ চলছে এখানে৷ রুশ মিসাইলে ধ্বংস হওয়া একটি বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক নারী৷ মনে ভয়, যেকোনো মুহূর্তে আবারও হতে পারে নির্বিচার হামলা৷
ছবি: Sofiia Gatilova/REUTERS
প্রিয়জন হারানোর বেদনা
একসঙ্গেই থাকা, একসঙ্গেই কাজ৷ কদিন আগেও বন্ধুর চেয়েও বেশি ছিলেন ইভান সোরোকিনের সহকর্মী৷ কর্মরত অবস্থাতেই বিমান হামলায় মারা যান এই গাড়ি মেরামতকর্মী৷ বন্ধুকে শেষ বিদায় জানানোর আগে তার মরদেহ আনা হয়েছে তার কাজের জায়গাতেই৷
ছবি: ALEXANDER ERMOCHENKO/REUTERS
9 ছবি1 | 9
জেলেনস্কির বক্তব্য
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কাউন্টার অফেনসিভ বা পাল্টা আক্রমণের পথে এখনই যাচ্ছে না ইউক্রেনের সেনা। তবে তার প্রস্তুতি চলছে। ইউক্রেনের যত জমি রাশিয়া দখল করে রেখেছে, তার পুরোটাই পুনর্দখল করা হবে বলে এদিন জানিয়েছেন জেলেনস্কি। কিন্তু এখনই পাল্টা আক্রমণে যাওয়া সম্ভব নয় বলে তার অভিমত। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, আরো বেশ কিছু অস্ত্র প্রয়োজন, আর্মার্ড ভেহিক্যাল প্রয়োজন। সেগুলি ছাড়া পাল্টা আক্রমণে গেলে প্রচুর সেনার মৃত্যু হবে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
অন্য এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবাও একই কথা বলেছেন। তবে কুলেবা জানিয়েছেন, পাল্টা আক্রমণ হবেই। এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
এদিকে ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, গত একবছরে পশ্চিমা দেশগুলির থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ মিলেছে। পশ্চিমা দেশগুলি জানিয়েছে, প্রয়োজনে আরো সাহায্য করা হবে ইউক্রেনকে। পাশাপাশি রাশিয়াকে ফের যুদ্ধ বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, পাল্টা আক্রমণের প্রসঙ্গ তুলে জেলেনস্কি কি ক্রাইমিয়াও পুনর্দখলের কথা বলছেন? সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি অবশ্য এই বিষয়টি স্পষ্ট করেননি।