ন্যাটোতে কোনোভাবেই ইউক্রেনকে নেওয়া যাবে না। রাশিয়ার এই দাবির জবাবে লিখিত বিবৃতি পাঠিয়েছে অ্যামেরিকা ও ন্যাটো। আলোচনার সম্ভাবনা।
বিজ্ঞাপন
রাশিয়াকে এবার লিখিত বিবৃতি দিল ন্যাটো এবং অ্যামেরিকা। চিঠিতে কী লেখা হয়েছে, তা সাংবাদিকদের কাছে প্রকাশ করা হয়নি। ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ জানিয়েছেন, ইউক্রেন সীমান্তে যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তারা দ্রুত তার সমাধান চাইছেন। সে কারণেই চিঠির বয়ান প্রকাশ করা হলো না। তাদের আশা, রাশিয়া চিঠির জবাবে আলোচনায় বসতে সম্মত হবে।
ইউক্রেন অস্ত্র পাচ্ছে, আরও চায়
২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখল করার পর সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে ইউক্রেন৷ সম্প্রতি রাশিয়া সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোয় উত্তেজনা তৈরি হয়েছে৷ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে৷ তবে আরও দরকার, বলছে ইউক্রেন৷
২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার অস্ত্র সহায়তা দিয়েছে৷ এর মধ্যে আছে জ্যাভলিন অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল (ছবি), টহল বোট, হামভি, স্নাইপার রাইফেল, ড্রোন, রাডার সিস্টেম, নাইট ভিশন ও রেডিও ইকুইপমেন্ট৷
কয়েক ব্যাচ বায়রাকটার টিবিটু ড্রোন বিক্রি করেছে৷ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের ডনবাস এলাকায় রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে এগুলো ব্যবহৃত হয়েছে৷
ছবি: Murat Cetinmuhurdar/Turkish Presidency/handout/picture alliance / AA
জার্মানি
ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে৷ তবে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে যে ৫১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে তার একটা অংশ দিচ্ছে জার্মানি৷
ছবি: Sean Gallup/Getty Images
ইউক্রেন আরও যা চায়
যুক্তরাষ্ট্র থেকে হেলিকপ্টার, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও হালকা সাঁজোয়া যান চায়৷ নরওয়ে থেকে চায় সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম৷ এছাড়া মাঝারি ও স্বল্প রেঞ্জের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমও চায় ইউক্রেন৷
ছবি: DARKO BANDIC/AFP via Getty Images
6 ছবি1 | 6
রাশিয়ার দাবি
গত মঙ্গলবার রাশিয়া সীমান্ত সংঘাত নিয়ে তাদের স্পষ্ট অভিমত জানিয়েছিল। তাদের দাবি ছিল, কোনোভাবেই ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না। অ্যামেরিকা এবং ন্যাটোকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। জানাতে হবে, ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার বিষয়ে ইউক্রেনের রাস্তা সবসময়ের জন্য বন্ধ। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার দাবি ছিল, পূর্ব ইউরোপে যেভাবে অ্যামেরিকা এবং ন্যাটো সৈন্য মোতায়েন করছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। সরিয়ে নিতে হবে যুদ্ধ জাহাজ এবং বিমান।
রাশিয়ার এই দাবির জবাবেই চিঠি পাঠিয়েছেন ন্যাটো এবং অ্যামেরিকা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন অবশ্য একটি কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। ন্যাটোয় ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রাশিয়া যে প্রতিশ্রুতি চেয়েছে, তা মানা সম্ভব নয়। ন্যাটোর দরজা সকলের জন্যই খোলা। রাশিয়াকে এবিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বলা হয়েছে, ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করলে পূর্ব ইউরোপে অ্যামেরিকা এবং ন্যাটো যে সেনা মোতায়েন করেছে, তা প্রত্যাহার করা হবে। ব্লিংকেন আশা প্রকাশ করেছেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী হবেন। চিঠিতে নিজেদের মত স্পষ্ট করে উল্লেখ করে ন্যাটোর বক্তব্য নথিভুক্ত করা হয়েছে বলে ব্লিংকেন এবং ন্যাটোর প্রধান জানিয়েছেন।
পূর্ব ইউক্রেনের বিভাজন রেখায় বাড়ছে উত্তেজনা
রাশিয়ার সঙ্গে চরমে উঠেছে ইউক্রেনের সংঘাত৷ রাশিয়া সীমান্তে ন্যাটোর সেনা মোতায়েন উত্তেজনা বাড়িয়েছে৷ ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক তত্পরতা বাড়িয়েছে মস্কো৷ অন্যদিকে ইউক্রেনও পিছিয়ে নেই৷ প্রস্তুত রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
রুশ-ইউক্রেন উত্তেজনা
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর একজন সেনাকে দেখা যাচ্ছে৷ দনেত্স্ক এলাকার হরলিভকাতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত তিনি৷ রুশপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিভাজন রেখার কাছে বন্দুকধারী সেনার ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন একজন আলোকচিত্রী৷
ছবি: Anna Kudriavtseva/REUTERS
সেনার প্রস্তুতি
রাশিয়ার গুপ্তচররা ইউক্রেনের ভিতরে ঢুকে যুদ্ধের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ৷ যদিও রাশিয়া এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ দনেত্স্ক এলাকায় রাশিয়াকে রুখতে প্রস্তুত রয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী৷
প্রত্যেক ইউক্রেনীয় সেনাই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত৷ যে কোনো মুহূর্তে যুদ্ধ শুরু হতে পারে, মানসিকভাবে এমন প্রস্তুতি রয়েছে তাদের৷
ছবি: Anna Kudriavtseva/REUTERS
প্রস্তুত ‘নোঁ দ্য গ্যার ইয়াকুট’
লুহানস্ক এলাকায় পোপাসনা শহরে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী ভোলোদিয়ার সেনারাও প্রস্তুত৷ এরা ‘নোঁ দ্য গ্যার ইয়াকুট’ নামে পরিচিত৷
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
সামরিক অবস্থান শনাক্ত
দনেত্স্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিএনআর) এক অস্ত্রধারী জঙ্গির (মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী) ছবিও ধরা পড়েছে চিত্রসাংবাদিকের ক্যামেরায়৷ সামরিক অবস্থান খতিয়ে দেখে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারাও৷
ছবি: Alexander Ermochenko/REUTERS
প্রতিপক্ষের মোকাবিলায়
লুহানস্ক এলাকায় পোপাসনায় রয়েছেন ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেনা আন্দ্রে৷ নোঁ দ্য গ্যার দ্রুইদ হিসেবে পরিচিত আন্দ্রেও মানসিকভাবে প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছেন৷
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেনা
লুহানস্কে বরফ ঢাকা পথে হেঁটে চলেছেন ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সেনারা৷ সামরিক বিন্যাস নিয়ে তৈরি তারা৷ একদিকে জারি হাই অ্যালার্ট, অন্যদিকে সেনা মোতায়েন৷ যুদ্ধের দামামা কি বেজে গেল? রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ কী? উঠে আসছে এই প্রশ্নগুলি৷
ছবি: Maksim Levin/REUTERS
8 ছবি1 | 8
রাশিয়া অবশ্য প্রথম থেকেই নিজেদের বক্তব্যে অবিচল। তাদের বক্তব্য, ইউক্রেনকে কোনোভাবেই ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তাদের এই মত না মানা পর্যন্ত সীমান্ত থেকে তারা সেনা প্রত্যাহার করবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল। বস্তুত, শেষ ন্যাটোর বৈঠকে রাশিয়া জানিয়েছিল, তাদের দাবিগুলি না মানলে পরবর্তী ন্যাটোর বৈঠকেও তারা যোগ দেবে না।
এদিকে ইউক্রেন সীমান্তে গত কয়েকদিনে উত্তেজনা আরো বেড়েছে বলেই ইউক্রেনের দাবি। রাশিয়া সেনা মহড়া শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেনের ভিতরে তারা সেনা পাঠায়নি। নিজেদের আত্মরক্ষার তাগিদেই সীমান্তে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির চুক্তি
এরই মধ্যে রাশিয়া জানিয়েছে, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ইউক্রেন, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসা খুবই কঠিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ২০১৪ সালের চুক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ওই চুক্তিতে স্থির হয়েছিল, পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির নীতি মেনে চলবে।
বস্তুত, পূর্ব ইউক্রেনের সীমান্তে দুই দেশই যুদ্ধের জন্য সেনা সাজিয়ে রেখেছে। তারপরেও রাশিয়ার এই বক্তব্য আলোচনার রাস্তা খোলা রাখছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।